Friday, March 14, 2025

হতাহতদের উদ্ধারে গিয়ে গুলিবিদ্ধ ইমন, কাতরাচ্ছেন হাসপাতালে। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

হতাহতদের উদ্ধারে গিয়ে গুলিবিদ্ধ ইমন, কাতরাচ্ছেন হাসপাতালে: 

প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৫, ১৪: ৩৪

২০২৪ সালের জুলাইয়ের উত্তাল দিনগুলোর একটি ছিল ১৯ তারিখ শুক্রবার। জুমার নামাজ শেষে রাজধানীর আফতাবনগরের গেটের সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন মো. ইমন কবীর। র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি সুসজ্জিত বাহিনীর মুহুর্মুহু গুলি চলে। একের পর এক মানুষ হতাহত হয়ে লুটিয়ে পড়ছে রাস্তায়। সেই উত্তাল মুহূর্তে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইমন ও তার বন্ধুরা হতাহতদের উদ্ধারে এগিয়ে যান। উদ্ধারের এক পর্যায়ে হঠাৎ একটি গুলি লাগে ইমনের পায়ে। এতে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। ইমনকে উদ্ধার করে তার সহযোদ্ধারা স্থানীয় ‘নাগরিক হাসপাতালে’ নিয়ে যান।

বর্তমানে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি রয়েছেন ইমন। গত আট মাস একাধারে চিকিৎসা নিয়ে চলেছেন যশোর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টের চতুর্থ বর্ষের এই ছাত্র। বাবা মো. হুমায়ুন কবির পেশায় একজন দর্জি। মা স্বপ্না কবির গৃহিণী।

পরিবার জানায়, একমাত্র সন্তান ইমনের বিদেশে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। দেশে চিকিৎসার মাধ্যমে তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়ে ইমন বলেন, ‘আমার পড়ালেখা প্রায় শেষ। সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা। কিন্তু ৫৬ শতাংশ কোটা বহাল থাকলে আমার সরকারি চাকরি হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম। সে কারণে আন্দোলনে যুক্ত হই। এরপর ১৬ জুলাই আবু সাঈদ এবং ১৮ জুলাই মুগ্ধ শহীদ হলে নিজেকে আর সংবরণ করতে পারিনি। সর্বাত্মকভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি।’

এদিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ইমনসহ বেশ কজনকে যখন ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়, তখনকার অবস্থাও ছিল মারাত্মক ভীতিকর। সেই অবস্থার বর্ণনা দিয়ে ইমন বলেন, ‘কারফিউ দুই ঘণ্টার জন্য শিথিল হলেও রাস্তায় কয়েক জায়গায় ব্যারিকেডের মুখে পড়ে অ্যাম্বুলেন্স। এর মধ্যে ছাত্রদের ব্যারিকেডগুলো দ্রুতই সরে গেছে অ্যাম্বুলেন্সে আহতদের দেখে। কিন্তু পথে এক জায়গায় পুলিশ কোনোমতেই সামনে এগোতে দিচ্ছিল না। তারা কেউ কেউ বলছিল, ‘সবগুলোকে নামিয়ে গুলি কর।’ এমন অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সের চালক চরম সাহসিকতার পরিচয় দেন। তিনি সামনে ব্যারিকেড দেওয়া এক পুলিশ সদস্যকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে নিয়ে যান।’

হাসপাতাল এলাকার বর্ণনা দিয়ে ইমন বলেন, ‘আমাকে যখন পঙ্গু হাসপাতালে আনা হয়, তখন সেখানে ছিল লাশের স্তূপ। আহত অবস্থায় কাতরাচ্ছিল বহু মানুষ। বেলা দেড়-দুটার দিকে হাসপাতালে আনলেও সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত স্ট্রেচারে রাখা হয় চিকিৎসা ছাড়াই। এরপর বেড পাওয়া যায়, শুরু হয় চিকিৎসা।’

এদিকে দীর্ঘ আট মাসের চিকিৎসায়ও হাঁটতে পারছেন না এই তরুণ। মাঝে তিন মাস যশোরের বাসায় থাকলেও তাকে আবার ভর্তি হতে হয়েছে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে।

ইমনের বাবা মো. হুমায়ুন কবীর আমার দেশকে বলেন, ‘ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আট লাখের বেশি টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই ফাউন্ডেশন, বিজিবি ও বিএনপির পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন ২০ হাজার টাকা দিয়েছে। বাকি খরচ জুগিয়েছি ধানদেনা করে। এখন আমি নিঃস্ব।’

মা স্বপ্না কবীর বলেন, ‘আমার একটাই সন্তান। ওর স্বপ্ন ছিল বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করবে, বিদেশে যাবে। রোজগার করে আমাদের একটু ভালো রাখবে। কিন্তু সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। ছেলেটার অবস্থা ভালো মনে হচ্ছে না। পায়ের গোড়ালির হাড় ক্ষয়ে যাচ্ছে। যেকোনোভাবে তাকে বিদেশে নিতে হবে।’

হুমায়ুন-স্বপ্না দম্পতির দাবি, তাদের একমাত্র সন্তান ইমনকে সরকারিভাবে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানো হোক।

সূত্র: আমার দেশ 

No comments:

Post a Comment

চাকরির প্রলোভনে বাংলাদেশি নারীদের ভারতে পাচার, বিক্রি হতো পতিতালয়ে। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 চাকরির প্রলোভনে বাংলাদেশি নারীদের ভারতে পাচার, বিক্রি হতো পতিতালয়ে: প্রকাশিত: ০২:৩৩, ১৫ মার্চ ২০২৫ বাংলাদেশ থেকে উচ্চ বেতনে...