Sunday, March 9, 2025

চিকিৎসকের যৌন নির্যাতনের শিকার ২৯৯ নারী-কিশোরী। (BDC CRIME NEWS24

BDC CRIME NEWS24

চিকিৎসকের যৌন নির্যাতনের শিকার ২৯৯ নারী-কিশোরী:

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০৫:৩৯ 

ফ্রান্সে সাবেক এক সার্জনের বিরুদ্ধে ২৯৯ রোগীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্ত ওই চিকিৎসকের নাম জোয়েল লে স্কুয়ার্নেক। শুক্রবার তার বিরুদ্ধে আদালতে বিচার শুরু হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অন্তত ২৯৯ রোগী তার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের বেশিরভাগের বয়স ১৫ বছরের কম। তাদের অজ্ঞান অবস্থায় বা জ্ঞান ফেরার পর তিনি ধর্ষণ করেন।

বাড়িতে আসা শিশুদেরও শিকার বানানোর কথা আদালতে স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত চিকিৎসক। তিনি বলেন, আমি সুযোগ পেলে আমার এক সন্তানের বন্ধুকেও নির্যাতন করতাম। এ ঘটনাকে আদালতে মামলার প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ভুক্তভোগী নারী ওই সময়ে শিশু ছিলেন।

ওই নারী আদালতকে জানান, ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে তিনি তাদের বাড়িতে যাওয়ার সময় নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে একটি কামরায় নিয়ে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয়। এ সময় তার মা ও চিকিৎসকের স্ত্রী ব্সার ঘরে কথা বলছিলেন।

তিনি জানান, কয়েক সপ্তাহ পর তাকে বাথরুমে একা পেয়ে আবারও ধর্ষণ করেন ওই চিকিৎসক। এক কয়েক মাস পর আবারও তাকে তিনি আলাদা করার চেষ্টা করেন। তবে তখন তিনি দৌড়ে মায়ের কাছে ফিরে যান।

অভিযুক্ত চিকিৎসক বলেন, অনেক ঘটনা তার মনে নেই। তবে বাথরুমের ঘটনা মনে করতে পারেন বলে স্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, আমার ছেলে বান্ধবীদের বাড়িদে আনলে আমি তাদের নিপীড়ন করতাম। সেদিন আমি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। যখন তাকে টয়লেটে যেতে দেখি তখন আমি এমনটা ঘটাই।

চিকিৎসকের এ মামলাটি ফরাসি আদালতে অন্যতম বৃহৎ শিশু যৌন নির্যাতনের মামলার একটি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, অপারেশনের সময় তিনি রোগীদের নির্যাতন করেছেন। তার কর্মজীবনের শেষ পর্যন্ত এসব অপরাধের অভিযোগের বিষয়ে কার্যকর কোনো তদন্ত চালু হয়নি।

এর আগে ২০০৫ সালে শিশুদের যৌন নিপীড়নের ছবি রাখার দায়ে তাকে অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ২০১৭ সালে তিনি অবসর নেন। এরপর ছয় বছর বয়সী এক শিশু এক শিশু তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন। এ ছাড়া পুলিশ তার কম্পিউটারে সংরক্ষিত নির্যাতনের ডায়েরি ও অন্যান্য বিবরণ উদ্ধার করে।

সূত্র: কালবেলা 

জেসিআইএলে অবৈধ নিয়োগ- রহস্যজনক খুঁটির জোরে বহাল সিই শহীদুল। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

জেসিআইএলে অবৈধ নিয়োগ-

রহস্যজনক খুঁটির জোরে বহাল সিই শহীদুল:

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে ফ্যাসিস্টদের আমলে নিয়োগ পাওয়া ‘জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি.র (জেসিআইএল) সিই (চিফ এক্সিকিউটিভ) শহীদুল হক বহাল তবিয়তে রয়েছেন। ফ্যাসিস্টের দোসর সালমান এফ রহমানের প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে ৪৭৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় জনতা ক্যাপিট্যাল ইনভেস্টমেন্টে। এটি ঘটে তার আমলেই। জনতা ব্যাংকের বোর্ডে শহীদুলের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে নিয়ম লঙ্ঘন করে এ পদে নিয়োগের বিষয়টি ধরা পড়েছে। কিন্তু রহসজনক খুঁটির জোরে এখনো টিকে আছেন শহীদুল হক। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

সূত্রমতে, নিজের আত্মীয় বলে সিই নিয়োগ দিতে বিধিবিধান এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত তোয়াক্কা করেননি জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. এসএম মাহফুজুর রহমান। তিনি (মাহফুজুর) নিজেও সালমান এফ রহমানের প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো এবং এস আলমকে ঋণের নামে একচেটিয়া লুটপাটের সুযোগ করে দিয়ে ব্যাংকের ভিত্তি পঙ্গু করে দিয়েছেন। ফলে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকের কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।

জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মজিবুর রহমান যুগান্তরকে জানান, জেসিআইএলের সিইর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমলে নিয়েছে। এ নিয়ে ব্যাংকের বোর্ড সভায় আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শহীদুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এর আগে বোর্ড সভায় একটি সিদ্ধান্ত হয়। সেটি হলো নিজ দায়িত্বে সংশ্লিষ্ট পদ থেকে সিই শহীদুল হক পদত্যাগ করবেন। ব্যাংকের হিউম্যান রিসোর্স (এইচআর) বিভাগ থেকে এ বার্তা শহীদুল হককে জানানোর কথা। পরবর্তী আরেক বোর্ড সভায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বোর্ডের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অদৃশ্য কোনো প্রভাব কাজ করছে কিনা সেটি দেখতে হবে। যদিও বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ একমত এ ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শহীদুল হক শনিবার যুগান্তরকে জানান, তাকে পদত্যাগ করতে হবে এমন কোনো বার্তা অফিশিয়ালি পাননি, কেউ তাকে অবহিত করেনি।

জনতা ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি হচ্ছে জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি.। এ প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। জেসিআইএলের সিই পদে নিয়োগের বিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি যুগান্তরের অনুসন্ধানে প্রথমে বেরিয়ে আসে ২৪ নভেম্বর। ইতোমধ্যে প্রায় ৩ মাস কেটেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এই ৩ মাসে জনতা ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট খুব বেশি মুনাফা না করলেও জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত শহীদুলের পেছনে বেতন-ভাতা মাসে মাসে গুনতে হচ্ছে।

জানা যায়, জনতা ব্যাংকের ওই বছরের ৬৩৭তম পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেসিআইএলের সিই নিয়োগের জন্য শহীদুল হকসহ তিন প্রার্থীকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকে তৎকালীন নিয়োগসংক্রান্ত কমিটি। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. এসএম মাহফুজুর রহমান। কমিটির সদস্য ছিলেন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য অজিত কুমার পাল (পরিচালক), অধ্যাপক স্বপন কুমার বালা (প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি এবং জনতা ব্যাংকের সাবেক এমডি আব্দুস ছালাম আজাদ ছিলেন আহ্বায়ক। আরও জানা গেছে, পর্ষদের নিয়োগসংক্রান্ত সিদ্ধান্তের নথি কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করা হয়।

সেখানে প্রথম সুপারিশ ছিল মোহাম্মদ আলী নামের এক প্রার্থী। তার প্রসঙ্গে বলা হয় ‘বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পেশাগত যোগ্যতা, বয়স ও অভিজ্ঞতা যথাযথ রয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংকের অভিজ্ঞতাও যথাযথ রয়েছে। তবে বিকম’র (সম্মান) স্থলে বিকম (পাশ)। দ্বিতীয় প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া প্রসঙ্গে সুপারিশে উল্লেখ করা হয় ‘বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী-পেশাগত যোগ্যতা, বয়স ও অভিজ্ঞতা যথাযথ রয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংকের অভিজ্ঞতাও যথাযথ রয়েছে। তবে স্নাতকত্তোর ডিগ্রি নেই এবং বিকম’র (সম্মান) স্থলে বিকম (পাশ)।

আর সর্বশেষ সুপারিশ করা হয়েছিল শহীদুল হককে। সেখানে বলা হয়, ‘বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পেশাগত যোগ্যতা যথাযথ রয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংকের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। তবে বয়স কম ও মোট ১৫ বছরের অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে। বিকম’র (সম্মান) স্থলে বিকম (পাশ) এবং বিকম (পাশ) তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জনতা ব্যাংকের বিধান অনুযায়ী তিনজন প্রার্থীর মধ্যে কেউ নিয়োগের যোগ্য নন। আবার তিনজন প্রার্থীর মধ্যে তুলনামূলক কম যোগ্য প্রার্থী ছিলেন বর্তমান সিই শহীদুল হক। কিন্তু সব বিধান ভেঙে সিই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল শহীদুল হককে।

তবে নিজের যোগ্যতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা কম-এমন প্রশ্ন অস্বীকার করেছেন জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সিই শহীদুল হক। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘অভিযোগ সঠিক নয়। সব নিয়ম মেনেই আমার নিয়োগ হয়েছে। ইন্টারভিউ, স্কুটিং ও সব ধরনের বিধান অনুসরণ করেই সেটি হয়েছে। প্রয়োজনে অনুসন্ধান করে দেখতে পারে সরকার।’

তবে শর্ত ভেঙে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি জেসিআইএলের সিই নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করছে জনতা ব্যাংকের হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্ট। অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগের বিষয়টি এর আগে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে।

জানা গেছে, শহীদুল হককে ২০২০ সালের শেষদিকে নিয়োগ দেওয়া হয় জনতা ক্যাপিটাল ইনভেস্ট লি.র সিই হিসাবে। এর পরের ২ বছর অর্থাৎ ২০২১ এবং ২০২২ সালে বেক্সিমকো শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে ৪৭৭ কোটি মুনাফা তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এক্ষেত্রে জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে বেক্সিমকোর শেয়ার কারসাজির জন্য। সম্প্রতি এ ঘটনা উদ্ঘাটনের পর জড়িত চার ব্যক্তি ও পাঁচ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৪২৮ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

তবে জনতা ব্যাংকের হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের জিএম (জেনারেল ম্যানেজার) আব্দুল মতিন যুগান্তরকে জানান, জনতা ব্যাংকের বিধিবিধানে স্বাভাবিক বা চুক্তিভিত্তিক যে কোনো নিয়োগের ক্ষেত্রে তৃতীয় শ্রেণির ডিগ্রিপ্রাপ্ত গ্রহণযোগ্য নয়।

সূত্রমতে, অর্থ উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগপত্রে এ প্রসঙ্গে বলা হয়, তৎকালীন সিই হিসাবে শহীদুল হককে নিয়োগের জন্য গঠিত সাক্ষাৎকার কমিটির ৫ সদস্যের মধ্যে ২ জন এক্সটার্নাল সদস্যের যথেষ্ট বিরোধিতার পরেও ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও এমডি এ বিতর্কিত নিয়োগ সম্পন্ন করেন।

সূত্র: যুগান্তর 

Saturday, March 8, 2025

জঙ্গি নাটক সাজিয়ে মিথ্যে মামলায় ফাঁসির আশঙ্কায় তরুণ প্রকৌশলী। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

জঙ্গি নাটক সাজিয়ে মিথ্যে মামলায় ফাঁসির আশঙ্কায় তরুণ প্রকৌশলী:

প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫, ১০: ০২

শেখ হাসিনার শাসনামলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে লেখক-ব্লগার হত্যা মামলাগুলোতে নির্দোষ ব্যক্তিদের ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে একাধিকবার। এমনই এক বিতর্কিত মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয় কম্পিউটার প্রকৌশলী মুজাম্মিল হুসাইন সাইমনকে, যিনি এখন ফাঁসির দণ্ডের অপেক্ষায়।

মামলাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগ কীভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে বিচারিক প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল- তা আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। নির্যাতন, স্বীকারোক্তি আদায় এবং পরিবারকে জিম্মি করার নানা কৌশল প্রয়োগ করে প্রকৌশলী সাইমনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, যেখানে যথাযথ সাক্ষ্য-প্রমাণের ঘাটতি স্পষ্ট।

গ্রেপ্তার ও আসল পরিচয় মুছে ফেলা

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। ঢাকার বাউনিয়া বাদালদি রোডের ‘নিরিবিলি’ নামের ১৬ নম্বর বাড়ি থেকে কম্পিউটার প্রকৌশলী মুজাম্মিল হুসাইন সাইমনকে তার স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানের সামনে থেকে তুলে নেয় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সদস্যরা। সিটিসিসির তৎকালীন প্রধান মনিরুল ইসলামের নির্দেশে এই অভিযান চলে।

গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তিনি একটি ওয়েব ডিজাইন প্রতিষ্ঠানে প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ করতেন। ৪৮ দিন গুম করে রাখার পর একই বছরের ১৯ নভেম্বর তাকে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়, যেখানে সিটিটিসি তাকে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর সদস্য হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়।

তাকে নাস্তিক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়, সমকামী অ্যাক্টিভিস্ট জুলহাজতনয় এবং লেখক-প্রকাশক দীপন হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি হিসেবে দাবি করে পুলিশ। এই নাটকীয় পরিচয় পরিবর্তনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো তার প্রকৃত পরিচয় মুছে ফেলে। এরপরই তছনছ করে দেওয়া হয় মুজাম্মিলের জীবন।

সন্দেহজনক বিচার প্রক্রিয়া ও মৃত্যুদণ্ড

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মুজাম্মিলকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। অথচ আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সাক্ষ্য-প্রমাণের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও ২০২১ সালে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুজিবুর রহমান তাকে এই রায় দেন।

পরিবারের দাবি, সদস্যদের গুম ও নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে মুজাম্মিলকে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়। তিনি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য নন বলে বারবার দাবি করলেও বিচার বিভাগ সেই দাবি উপেক্ষা করেছে।

শেখ হাসিনার পতনের পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট মামলাগুলোর পুনরায় তদন্তের দাবি করেন তার ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল হোসাইন। তিনি বলেন, ‘আমরা হাইকোর্টের নির্দেশে পুনরায় তদন্ত চাই, অথবা দ্রুত উচ্চ আদালতে স্বচ্ছ বিচার দরকার।’

বর্তমানে মুজাম্মিল কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে বন্দি রয়েছেন। তার পরিবারের অভিযোগ, তাকে আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগেও হয়রানি করা হয়েছে। তার ভাই আব্দুল্লাহ আল হোসাইন দাবি করেন, ‘এটা স্পষ্ট যে, আওয়ামী লীগ আমলে বিচার প্রক্রিয়ায় পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে, যেখানে সামান্য সন্দেহে কাউকে ‘জঙ্গি’ হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।’

ভয়াবহ নির্যাতনের মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায

নির্যাতনের মাধ্যমে কীভাবে ব্লগার-লেখক হত্যাকাণ্ডগুলোতে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, তা তুলে ধরেছেন তরুণ প্রকৌশলী মুজাম্মিল। ৩০ জুলাই জেলখানা থেকে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি সিটিটিসি কর্মকর্তাদের দ্বারা চালানো নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর বিবরণ দিয়েছেন। সেই চিঠির কপি ‘আমার দেশ’-এর কাছে রয়েছে।

চিঠিতে মুজাম্মিল লেখেন, ‘গ্রেপ্তারের পর প্রথম মাসজুড়ে আমাকে সার্বক্ষণিক হাত-পা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। এরপর সিটিটিসি কার্যালয়ে স্থানান্তর করে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতন করে ব্লগার-লেখক হত্যাকাণ্ডের মামলায় জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়।

মুজাম্মিল লেখেন, ‘পুলিশ আমাকে জানায়, শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আওতায় আসল অপরাধীদের সবাইকে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যা করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি মহলে সমর্থন পেতে মামলা নিষ্পত্তির জন্য স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি অনিবার্য।’

তিনি লেখেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার সেক্যুলার অনুসারীদের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করায় আমাকে শিবির বা হিযবুত তাহরির সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়। ক্যাম্পাস ছাড়ার পরও ইসলামের পক্ষে সক্রিয় থাকায় সিটিটিসি আমাকে টার্গেট করে।’

স্বীকারোক্তি আদায়ে ক্রসফায়ারের হুমকি

ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি আদায়ে মুজাম্মিলকে ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি। মুজাম্মিল জানান, আটক হওয়ার পর তাকে খাবার ও ঘুম থেকে বঞ্চিত করা হয়। এক মাসেরও বেশি সময় পর গভীর রাতে তাকে স্ট্রেচারে করে একটি নতুন ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে এবং আরো দুই যুবককে আটক রাখা হয়।

প্রকৌশলী মুজাম্মিল বলেন, ‘আমাদের হাতকড়া ও পায়ের বেড়ি খোলা হয়নি। কর্মকর্তারা আমার সহপাঠী আশফাকের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে প্রশ্ন করেন। এরপর ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যার সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করতে বলেন। এ জন্য আমাকে ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া হয় এবং বলা হয়, ‘যদি জবানবন্দি না দাও, তবে ভয়াবহ নির্যাতনসহ ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

শারীরিক নির্যাতনের মধ্যে ছিল হাতকড়া পরিয়ে কয়েক ঘণ্টা গ্রিলে ঝুলিয়ে রাখা, ইলেকট্রিক শক দেওয়া ও শরীরের জয়েন্টে আঘাত করা। সবচেয়ে কষ্টকর ছিল ঠাণ্ডা পানি ঢেলে নির্যাতন।

মুজাম্মিল বলেন, ‘একদিন রাজু নামে এক যুবককে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরদিন তার মৃত্যুসংবাদ জানানো হয়। এরপর সাজিদ নামে আরও এক তরুণও একইভাবে গুম হন এবং তার মৃত্যুসংবাদ আসে। এ ঘটনার পর আমি জীবিত থাকার জন্য এবং আমার পরিবারের কথা ভেবে জবানবন্দি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’

ভাই আব্দুল্লাহ আল হোসাইন বলেন, ‘সিটিটিসি ভয়াবহ নির্যাতনের মাধ্যমে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করে হাসিনার ক্যাঙ্গারু কোর্টে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’

পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট যৌথ প্রযোজনা

অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের মামলায় মুজাম্মিল ৩৪২ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দিতে বলেন, ‘মামলায় আমার নামে যে স্বীকারোক্তি প্রদর্শিত হয়েছে তা আমার নয়, বরং তা তদন্তকারী কর্মকর্তার রচিত মিথ্যা বক্তব্য।’ তিনি বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার কাছ থেকে একটি মাইসেল মোবাইল জব্দ দেখিয়েছেন, যা আমার কাছে ছিল না।

হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট সিসিটিভি ফুটেজে আমাকে দেখা যায়নি। আমার কাছ থেকে জব্দকৃত ল্যাপটপে হত্যাকাণ্ড-সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মামলার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিকটিম স্বয়ং আমার বিরুদ্ধে সাজানো নাটক বলে মন্তব্য করেছেন।’

মুজাম্মিল বলেন, ‘সিটিটিসির সশস্ত্র পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের কক্ষে উপস্থিত অবস্থায় পুলিশের খসড়া দেখে ম্যাজিস্ট্রেট জবানবন্দি লিখে দেন। প্রচণ্ড শারীরিক ও মানসিক চাপের মুখে আমার স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। পরে আরও ৫-৬ জনকে এভাবেই পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট যৌথ প্রযোজনায় বলির পাঁঠা বানানো হয়। এ তিনটি মামলা শুধু ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে নিষ্পত্তি করা হয়। প্রকৃত বাস্তবতা জানার জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলাগুলোর পুনরায় তদন্ত প্রয়োজন।’

সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের ভূমিকা

মুজাম্মিলের লেখা চিঠি বিশ্লেষণে স্পষ্ট হয় যে, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা দাখিল করা হয়েছিল, যেখানে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে দ্রুত সাজা দেওয়া হয়েছিল। মামলার নথি বিশ্লেষণে অনিয়ম স্পষ্ট হলেও মৃত্যুদণ্ডই ছিল একমাত্র ভিত্তি।

মুজাম্মিল জানান, তার বাবার বিরুদ্ধে চাপ ও জেলে যাওয়ার হুমকির মুখে তিনি স্বীকারোক্তি দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনটি ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ প্রেক্ষাপটে বিদেশি রাষ্ট্রের স্বার্থে প্রয়োগ করা হয়।

মুজাম্মিলের দাবি, ‘আমেরিকান দূতাবাস থেকে আগত দুই কর্মকর্তার সামনে আমাকে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়। এরপরই আমার বাবাকে ছেড়ে দেওয়া হয়, কিন্তু আমার ছোট ভাইকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়া হয়।’

মুজাম্মিল বলেন, ‘সিটিটিসির ভাষ্য হলো ‘জঙ্গিবাদ’ আমাদের জন্য অত্যন্ত দরকারি ইস্যু, কারণ এটি আমেরিকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র।’

অভিজিৎ হত্যামামলার প্রধান সাক্ষী যা বললেন

লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ হত্যামামলার অন্যতম সাক্ষী ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হামলার ছবি তোলেন এবং আহত বন্যা আহমেদকে হাসপাতালে নিয়ে যান। আমার দেশ-এর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আসামিরা কাঠগড়ায় ছিল, তবে আমি কাউকে শনাক্ত করতে পারিনি। আমি ঘটনাস্থলে কাউকে দেখিনি।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আমাকে মামলার কাগজ দিয়ে বললেন, ‘এই কাগজে যা লেখা আছে তা বলো।’ আমি বলি, ‘আমি যা দেখেছি, সেটাই বলব।’ এরপরও আমাকে সঠিক তথ্য দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়; কিন্তু আমি আমার দেখা সত্যিটাই বলেছি।’

জীবন আহমেদ আরো বলেন, ‘সাক্ষ্য দিতে আসা এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাকে জানান, পুলিশ তাকে অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিতে পাঠিয়েছে। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না।’

জীবন আহমেদ বলেন, ‘অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী কখনো আদালতে সাক্ষ্য দেননি এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কখনো তার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মামলার স্টেটমেন্টে আমাকে সাধারণ পথচারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল; তবে আমি একজন সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফার।’

জীবন বলেন, ‘আমাকে ৪০ মিনিটের মতো আদালতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল এবং পরে ডিবি অফিসে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইও জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।’

এখন তদন্ত কর্মকর্তা যা বলছেন

মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম আমার দেশকে জানান, আসামি মুজাম্মিল হুসাইন সাইমন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে তিনি মন্তব্য করেন, ‘সাইমন ভালো ছেলে। তার সঙ্গে একসঙ্গে নামাজ পড়েছি।’

শেখ হাসিনার পতনের পর মনিরুল ইসলামকে মিরপুর মডেল থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে মাত্র এক মাস পরই সেখান থেকে সরিয়ে তাকে ডিবিতে বদলি করা হয়।

‘সাইমন তো বলেছেন তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে এবং গুমের পর ব্যাপক নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে’- এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

এ ছাড়া মামলার তদন্ত চলাকালে মুজাম্মিল হুসাইন সাইমনকে সিটিটিসিতে দুই মাস গুম করে রাখার অভিযোগ ওঠে, যা তৎকালীন ডিসি মহিবুলের নির্দেশে করা হয়। এমনকি মনিরুল ইসলামেরও এতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। আমি অসুস্থ। এ মুহূর্তে ট্রেনিংয়ে আছি। চেয়ারে বসে ক্লাস করছি।’

মামলার দুর্বলতার বিষয়ে আইনজীবীদের মন্তব্য

আইনজীবীরা জানান, শুধু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে অভিযুক্তকে সাজা দেওয়া যায় না। সাজা দেওয়ার জন্য অন্তত একটি সমর্থনমূলক সাক্ষ্য বা প্রমাণের প্রয়োজন।

যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ভিজিটিং স্কলার ও মানবাধিকারকর্মী মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দ্বারা পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের হেফাজতে নির্যাতন চালিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। শেখ হাসিনার সরকারে বিচার ব্যবস্থা বর্তমানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।’

মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান আরো বলেন, ‘সব হত্যামামলার পক্ষপাতহীন পুনঃতদন্ত অপরিহার্য। যারা এসব নির্মমতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা উচিত। তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার দক্ষতা ও পেশাদারত্বের মানোন্নয়নের জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।’

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহরিয়ার মাহমুদ বলেন, ‘ভুক্তভোগীর উচিত অবিলম্বে উচ্চ আদালতে রিট করার মাধ্যমে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা এবং জামিন আবেদন করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা। একইসঙ্গে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত।’

সূত্র: আমার দেশ 

Friday, March 7, 2025

সাতকানিয়ায় মব তৈরি করে দুই জামায়াতকর্মী হত্যা- মূল হোতা আওয়ামী সন্ত্রাসী মানিক। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

সাতকানিয়ায় মব তৈরি করে দুই জামায়াতকর্মী হত্যা-

মূল হোতা আওয়ামী সন্ত্রাসী মানিক:

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৫, ১২: ০৩

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ডাকাতের গুজব ছড়িয়ে দুই জামায়াতকর্মীকে হত্যার মূল হোতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম মানিক ও তার সহযোগীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রশাসনে মানিকের প্রভাব এখনো এতটাই যে, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় এখনো হত্যা মামলা হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রসংক্রান্ত একটি মামলা করেই দায় সেরেছে পুলিশ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন মানিক। কিন্তু গোটা দক্ষিণ চট্টগ্রামজুড়ে আলোচনায় আসেন ২০১৫ সালে একটি হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে। ওই বছরের ৭ জানুয়ারি গভীর রাতে এওচিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান হাফেজ আহমদের বাড়িতে হামলা চালান মানিক ও তার সহযোগীরা। মানিক বাহিনীর গুলিতে হাফেজ আহমদ বেঁচে গেলেও নিহত হন তার নিকটাত্মীয় আনোয়ারা বেগম। ওই ঘটনায় হাফেজ আহমদ মানিককে প্রধান আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার এক আসামি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ওই জবানবন্দিতে উঠে আসে মানিকের নাম। ওই ঘটনায় মানিককে ধরতে তার বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। তখন তার ঘর থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গুলি ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনার পর আওয়ামী লীগে মানিকের কদর বাড়তে থাকে। সাতকানিয়ার সাবেক এমপি আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভীর ডান হাত হয়ে ওঠেন মানিক। নদভীর প্রত্যক্ষ মদতে ওই মামলা থেকে মানিকের নাম বাদ দেয় পুলিশ। ২০১৭ সালের ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্রে ব্যাপক সহিংসতার মাধ্যমে কেন্দ্র দখল করে প্রথমবারের মতো ইউপি চেয়ারম্যান হন তিনি। এরপর থেকেই মানিকের নামে বাঘে মহিষে এক ঘাটে পানি খাওয়ার অবস্থা তৈরি হয় সাতকানিয়ায়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সামান্য একজন নির্বাহী সদস্য হলেও তার দাপটে তটস্থ ছিলেন জেলাপর্যায়ের নেতারাও। সাধারণ একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়ে বনে যান কয়েকশ’ কোটি টাকার মালিক।

টাকার উৎস

বৈধ কোনো আয়ের উৎস না থাকা সত্ত্বেও সামান্য একজন ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। কেবিএম ও এইচবিএম ব্রিকস নামে তার মালিকানাধীন দুটি ইটভাটা রয়েছে এওচিয়া এলাকায়। দুটি ভাটার মাঝে মাছের প্রজেক্ট। গ্রামে একাধিক বাড়ির পাশাপাশি চট্টগ্রামের ফিনলে টাওয়ারে রয়েছে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। একাধিক গাড়ি ব্যবহার করতেন তিনি। অবৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি চারটি বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্সও ছিল তার নামে, ৫ আগস্টের পর যা বাতিল করে জেলা প্রশাসন। দেশের বাইরে দুবাইয়ে টাকা পাচার করে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়।

একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, সাতকানিয়া এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির পাশাপাশি কক্সবাজার থেকে ইয়াবা এনে চট্টগ্রামে বিক্রি ও দুবাইয়ের স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের এদেশীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন মানিক চেয়ারম্যান।

পুলিশের সঙ্গে সখ্য

চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ সুপার জেডএ মোর্শেদের হাত ধরে প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেন মানিক। ছনখোলা এলাকার ইটভাটাসংলগ্ন মাছের প্রজেক্টের পাশে রয়েছে তার বাংলো বাড়ি। স্থানীয়দের কাছে এটি মানিক চেয়ারম্যানের জলসাঘর হিসেবে পরিচিত। এখানে নিয়মিত যাতায়াত ছিল সাবেক পুলিশ সুপার জেডএ মোর্শেদ ও নুরে আলম মীনার। জেডএ মোর্শেদ ঢাকার একটি গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন আর নুরে আলম মীনা সবশেষ ৫ আগস্টের আগে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি ছিলেন। শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের যাতায়াত থাকার কারণে স্থানীয় সাতকানিয়া ও বাঁশখালী থানা ছিল মানিকের নিয়ন্ত্রণে। ৫ আগস্টের আগে বিভিন্ন সময় সাতকানিয়া ও বাঁশখালী থানায় তার বিরুদ্ধে তিনটি হত্যাসহ ১৮টি মামলা হয়। কিন্তু সবকটি মামলায় মানিককে বাদ দিয়ে চার্জশিট দেয় পুলিশ।

জলসাঘর-ইটভাটায় হামলা যে কারণে

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে মানিকের জলসাঘর খ্যাত বাগানবাড়ি ও ইটভাটা দুটিতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এওচিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যান জানান, মানিকের ইটভাটায় মাটির জোগান আসত মূলত সরকারি পাহাড় ও সাধারণ মানুষের ফসলি জমি থেকে। ভাটার পাশের বিএনপি-জামায়াতসহ কারো জমি বাদ পড়েনি মানিকের থাবা থেকে। ২০-২২ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী তার সাম্রাজ্য পাহারা দিত। অপকর্মের প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা, আকার-ইঙ্গিতে সমালোচনা করলেও তাকে ইটভাটায় ধরে এনে চালানো হতো নির্মম নির্যাতন। নির্যাতন শেষে অস্ত্রসহ বিভিন্ন মামলা দিয়ে তুলে দেওয়া হতো বাঁশখালী কিংবা সাতকানিয়া থানায়। মানিকের ইটভাটায় শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করা হচ্ছে-এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় ২০২১ সালে। পরবর্তীতে নির্যাতিত ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধেই একাধিক মামলা দায়ের করেন মানিক।

স্থানীয়রা জানান, জলসাঘরে মদ ও মেয়েদের নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ চলত প্রকাশ্যে। তাই মানিকের ভাটা আর বাংলোবাড়ির ওপর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ছিল আগে থেকেই। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর মানুষ সেখানে হামলা চালায়।

মানিক কোথায়

জুলাই বিপ্লবে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ দমনে সক্রিয় ছিলেন মানিক। বিশেষ করে নতুন ব্রিজ ও নিউ মার্কেট এলাকার সহিংসতায় তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বাঁশখালীর এক আত্মীয়র বাড়িতে অবস্থান নেন মানিক। ১২ থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে চট্টগ্রাম শহরের ষোলশহর এলাকার ফিনলে স্কয়ারের বাসায় অবস্থান নেন তিনি। আগস্টের শেষ সপ্তাহে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ঢাকা হয়ে দুবাই চলে যান তিনি।

সবশেষ জোড়া খুন

মানিকের ইটভাটা ও বাংলোবাড়িতে যখন নির্যাতিত মানুষেরা ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন, তখন হাজারো মানুষের ভিড়ে অংশ নিয়েছিলেন জামায়াতকর্মী আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনও। তখনই তাদের হত্যা করার পরিকল্পনা করেন তিনি। গত সোমবার রাতে কৌশলে বিচার করার কথা বলে নেজাম ও ছালেককে ডেকে আনেন মানিকের ভাই আক্কাস। নেজাম ও ছালেকের সিএনজি ছনখোলা এলাকায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে চারপাশের রাস্তায় গাছ ফেলে ব্যারিকেড দেয় মানিকের লোকজন। একপর্যায়ে মামুনের দোকানের সামনে থেকে নেজাম ও ছালেকের ওপর হামলা চালায় তারা। সাধারণ মানুষ জড়ো করতে মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে মব তৈরি করা হয় পরিকল্পিতভাবে।

মামুনের দোকানের পাশের এক পান-সিগারেটের দোকানের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ঘটনার দিন যখন নেজাম ও ছালেককে গণপিটুনি দেওয়া হচ্ছিল, তখন নুরু নামে স্থানীয় এক যুবকের মোবাইল ফোনে ভিডিও কলের মাধ্যমে মানিক ওই ঘটনা দেখেন এবং নির্দেশনা দেন।

চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনায় অনেকটা দায়সারা বক্তব্য দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম শানতু জানান, নিহত নেজাম ও ছালেকের গতিবিধিও ছিল সন্দেহজনক। ৫ আগস্টের পর তারা ওই এলাকায় মোট আটবার গেছে। এর মধ্যে সালিশের নামে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের স্ত্রীকে থাপ্পড়ও মেরেছে। সব মিলিয়ে নেজাম ও ছালেকের ওপরও স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ ছিল। ওই ঘটনাকে পুঁজি করে কেউ মব তৈরির সুযোগ নিয়েছে কি না, সব বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

সূত্র: আমার দেশ 

এক আওয়ামী ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যাংক হিসাবে ১৫ হাজার কোটি টাকার লেনদেন। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

এক আওয়ামী ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যাংক হিসাবে ১৫ হাজার কোটি টাকার লেনদেন:

প্রকাশ: ০০:৩৬, শুক্রবার, ০৭ মার্চ, ২০২৫

এক ইউপি চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে পৃথক মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনি হলেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান লাক মিয়া। তার স্ত্রী মাহমুদা বেগম। গতকাল ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দুটি করা হয়।

দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

তিনি বলেন, ইউপি লাক মিয়ার বিরুদ্ধে ভিজিডি, ভিজিএফ, এলজিএসপি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জোরপূর্বক ভূমি দখল ও মাদক ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। লাক মিয়ার নামে থাকা ২৬৫ দশমিক ৬১ বিঘা জমি আদালতের মাধ্যমে ক্রোক করা হয়েছে, যার দালিলিক মূল্য ৭৫ কোটি ৫২ লাখ ৬০ হাজার ৮০০ টাকা। তার দুটি গাড়িও জব্দ করা হয়েছে।

যেগুলোর মূল্য ২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া ব্যাংক হিসাবে থাকা ১৩ লাখ ১৪ হাজার ৩২২ টাকা অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করা হয়েছে।

দুদক জানায়, ১৯৯০-৯১ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী দুদকের অনুসন্ধানে চেয়ারম্যান লাক মিয়ার এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। আর ২০০৭-০৮ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী তার স্ত্রী মাহমুদা বেগমের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে পৃথক মামলা করা হয়েছে।

দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন জানান, লাক মিয়ার একজন কর্মচারী হচ্ছেন মহসিন মোল্লা। তার মাসিক বেতন ছিল ১২ হাজার টাকা। তার রয়েছে ১৪টি ব্যাংক হিসাব। এসব হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন করেছেন ১০ হাজার ৩২২ কোটি ৭৬ লাখ ৫৮ হাজার ৪৬২ টাকা।

১২ হাজার টাকা বেতনের কর্মচারী হলেও তিনি এনআরবি টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড এবং মেসার্স এনআরবি ট্রেডার্সের মালিক। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসার পর মহসিন মোল্লা ও তার স্ত্রীর নামে নতুন অনুসন্ধান ফাইল খুলে বিস্তারিত অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

দুদক সূত্র জানায়, লাক মিয়ার বিরুদ্ধে চাল, গম ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গিয়ে ওই বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের হদিস পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে সাড়ে ৪০০ বিঘার ওপর জমির সন্ধান পাওয়া গেছে। রাজধানীর বাড্ডা, খিলক্ষেতে একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্রায় ১৫০ কাঠা জমি রয়েছে। এ ছাড়া লাক মিয়ার ব্রাহ্মন্দি ইউনিয়নের ১৪টি মৌজায় (মারুয়াদী, মুড়ালদী, লস্করদী, মুলপান্দী, যাত্রাবাড়ী, দিঘলদী, উজান গোবিন্দী, ফাউসা, বড় মনোহরদী, রিষেরচর, বিনাইরচর, ইদবারদী, নরিংদী ও ছোট মনোহরদী) ৯১ একর ৬৯ শতাংশ ৩৫ অযুতাংশ জমির সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আড়াইহাজার পৌরসভার মধ্যে থাকা তিনটি মৌজায় (কামরাঙ্গীরচর, আড়াইহাজার ও ঝাউগাড়া) ১৭ একর ৯৬ শতাংশ ২১ অযুতাংশ জমি রয়েছে। প্রিমিয়াম ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, পূবালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অর্থ হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ করা হয়েছে। জানা যায়, লাক মিয়া ও তার স্ত্রী মাহমুদা বেগম, সন্তান মিনজু আক্তার ও হাফসা আক্তারের বিরুদ্ধে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করে দুদক। আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৪ অক্টোবর ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আস্সামছ জগলুল হোসেন তা মঞ্জুর করেন এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।

দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, এর আগে ৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের পর লাক মিয়ার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ২৭ আগস্ট তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি দেওয়া হয়। প্রথম দফায় তিনি চিঠি রিসিভ করেও দুদকের ডাকে সাড়া দেননি। এরপর আরও দুই দফায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বরও তিনি হাজির হননি। বরং প্রথম জিজ্ঞাসাবাদের নোটিস পাওয়ার পরপরই তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত থাকা কোটি কোটি টাকা উত্তোলন করেন। এর প্রমাণ দুদকের অনুসন্ধান টিমের হাতে রয়েছে।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন 

Thursday, March 6, 2025

নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২০ দিন করা হচ্ছে: শ্রম উপদেষ্টা (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২০ দিন করা হচ্ছে: শ্রম উপদেষ্টা:

প্রকাশ: ১২:৫৮, বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ, ২০২৫

নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২০ দিন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের শ্রমিকদের কল্যাণ ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শ্রম ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে শ্রম আইনকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।  

উপদেষ্টা বুধবার (৬ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে শ্রম ইস্যুতে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সাথে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা ও ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, সরকার একজন শ্রম অধিকারকর্মীর নেতৃত্বে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শ্রম অধিকার সংস্কার কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছে। এই কমিশন আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের সব শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে শ্রমজীবী মানুষের সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় শ্রম সেক্টরের সমস্যাগুলো পরীক্ষান্তে মার্চ ২০২৫ এর মধ্যে সুপারিশ জমা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকার ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে শ্রম আইন সংশোধন করতে ট্রেড ইউনিয়ন, নিয়োগকর্তা এবং উন্নয়ন অংশীদারদের বিশেষ করে আইএলওসহ সব স্টেকহোল্ডারদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। আমাদের শ্রম আইন সংশোধনের একটি মূল দিক হলো ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন ও কার্যক্রমের সহজিকরণ।

শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব এবং সম্মিলিত দর কষাকষির ওপর গুরুত্বারোপ করে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনকে আরও সহজ এবং স্বচ্ছ করার ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। এছাড়া নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২০ দিন করা হচ্ছে মর্মে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বলেন।

বাংলাদেশ শ্রম আইন এর চলমান সংশোধনী বিষয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন সদস্যদের গোপনীয়তা বজায় রাখার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া শ্রম সংক্রান্ত মামলা জট কমাতে ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’কে কার্যকর করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অন্যান্য মামলাসমূহ পরীক্ষা নিরীক্ষান্তে নিষ্পত্তির কার্যক্রম চলমান আছে।

আগামী ১০ থেকে ২০ মার্চ সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ৩৫৩তম অধিবেশনের আগে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের শ্রম ইস্যুতে এ অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিএনপি-জামায়াত সংঘাত তীব্র হচ্ছে। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

বিএনপি-জামায়াত সংঘাত তীব্র হচ্ছে:

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৫, ১০: ৩৯

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে একসময় ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর যেন দল দুটির মধ্যে দূরত্ব বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে চলা কথার লড়াই এখন রূপ নিয়েছে সংঘর্ষে।

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি স্থানে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের মাঝে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। অনেক এলাকায় দল দুটির মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন ইস্যু ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন পদে নিয়োগ-পদায়ন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কমিটি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাদের মাঝে দ্বন্দ্ব-সংঘাত তীব্র হচ্ছে।

তবে এসব সংঘাতের জন্য একে অপরকে দায়ী করছে দল দুটি। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পরস্পরকে সংযত হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি-জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা। যদিও মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ন্ত্রণ করা দল দুটির জন্য বেশ চ্যালেঞ্জের বিষয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জামায়াতের সঙ্গে বর্তমানে সময়ে বিএনপির দূরত্ব নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আমার দেশকে বলেন, জামায়াত কখন কার সঙ্গে থাকে এটা ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন।

আলাল বলেন, জামায়াত প্রথমে আমাদের সঙ্গে ছিল; পরে ৮৬ সালে জাতীয় পার্টির সঙ্গে নির্বাচন করল। এরপর ৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন করল। পরে আবার আমাদের সঙ্গে এলো। জামায়াত কিছু সময় জলে, কিছু সময় স্থলে, আবার কিছু সময় আকাশপথে থাকে। ফলে তাদের নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন।

তবুও আমরা বলব, জামায়াত আমাদের সমভাবাপন্ন বন্ধু সংগঠন। তারা দূরে সরতে চাইলে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা তাদের শত্রু ও প্রতিপক্ষ মনে করি না। এখন যে দূরত্ব আছে, সেটা সামনে ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে দুই দলের চলমান সাংঘর্ষিক অবস্থানকে বিব্রতকর বলছে বিএনপি। দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আমার দেশকে বলেন, তৃণমূলে জামায়াত ও বিএনপির সঙ্গে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে, যা বিব্রতকর।

আমরা লক্ষ করছি, দেশে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। আমরা আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের বলে দিয়েছি, আমাদের বিরুদ্ধে কেউ যদি অপপ্রচার চালায় ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়, তাহলে তা সংযমের সঙ্গে যেন সমাধান করা হয়।

জামায়াতের উদ্দেশে প্রিন্স বলেন, হঠাৎ করে জামায়াত রহস্যজনক আচরণ করছে। এমন আচরণে আমরা বিস্মিত। দলটি বিভিন্ন সময় বিরূপ বক্তব্য উপস্থাপন করে রাজনৈতিক মাঠে দ্বন্দ্ব ও বিভেদ সৃষ্টি করছে, যা মোটেও কাম্য নয়। তাদের এমন কর্মকাণ্ড থেকে সরে এসে একটি সহনশীল রাজনীতি করার পরামর্শ দেন তিনি।

এদিকে জামায়াত নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতা ভোগ করতে চায় অভিযোগ করে প্রিন্স বলেন, জামায়াত ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। তারা ক্ষমতা ভোগ করতে চায়; কিন্তু নির্বাচন চায় না। নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য সংস্কারের খেলা খেলছে। আমরা বলব, নির্বাচনই হচ্ছে গণতন্ত্রের মুখ্য বিষয়।

তবে দুদলের বর্তমান সংঘাতময় অবস্থান সম্পর্কে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আমার দেশকে বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনায় দেখা যাচ্ছে তা বিএনপি দ্বারাই ঘটছে।

পাবনায় জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপি দুঃখ প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা একে অপরের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশে আমরা ঐক্যের মধ্যেই চলতে চাই। মাঝখানে বিভিন্ন স্থানে যেসব ঘটনা ঘটছে, তা বন্ধ করতে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংযত হওয়া দরকার। আমরা সংঘাত চাই না, ঐক্যবদ্ধভাবে চলতে চাই।’

জানা গেছে, সর্বশেষ গত ৪ মার্চ পাবনার সুজানগরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে বিএনপিতে। এ ঘটনা নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে বিএনপি হাইকমান্ডও। এরই মধ্যে জামায়াত নেতাকর্মীদের মারধরের অভিযোগে বিএনপি, যুব ও ছাত্রদলের চার নেতাকে শোকজ করা হয়েছে।

এর আগে ভোলার দৌলতখানে জামায়াতে ইসলামীর একটি কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। উপজেলার নূর মিয়ার হাট বাজারে ঘটনাটি ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক তোলপাড় হচ্ছে। এ নিয়ে দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যও দেখা গেছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর একটি বক্তব্য নিয়ে ক্ষুব্ধ হয় জামায়াত। একপর্যায়ে রিজভীর বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠায় জামায়াত।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রিজভী ‘জামায়াত যখনই সুযোগ পেয়েছে, বিএনপিকে পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করার চেষ্টা করেছে’ মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেনÑ তা ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। তার এ বক্তব্যের মধ্যে সত্যের লেশমাত্রও নেই। এমন বক্তব্য অন্যায়, অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। তার ওই বক্তব্য বিএনপির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য; জামায়াতে ইসলামীর ক্ষেত্রে নয়।

এর আগেও রিজভীসহ বিএনপির কয়েকজন নেতার বিভিন্ন বক্তব্যে জামায়াত নেতারা প্রতিবাদ জানান। আবার জামায়াত নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতারাও।

দুদলের প্রধান দ্বন্দ্ব যেখানে

জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের বর্তমান দ্বন্দ্বের পেছনে প্রধান ইস্যু হলো আগামী জাতীয় নির্বাচন। জামায়াতের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচন’ এবং পরে ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন’-এর দাবি তোলা হয়। অন্যদিকে বিএনপি যতটুকু সংস্কার সম্ভব, তা করে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের কথা বলে। এমনকি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করা যাবে না বলে কঠোর অবস্থানের কথা জানায় দলটি।

এ ছাড়া নতুন কোনো চাঁদাবাজকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না বলে বক্তব্য দেয় জামায়াত। এটি পরোক্ষভাবে বিএনপিকেই বলা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট মহল দাবি করে। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জামায়াত কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা জানায়। এ নিয়েও দল দুটির মধ্যে চাপা অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।

সূত্রমতে, সরকারি বিভিন্ন নিয়োগ-পদায়নে প্রভাব বিস্তার ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ-মাদরাসার কমিটি দখল নিয়েও বিএনপি-জামায়াতের দ্বন্দ্ব বাড়ছে। সম্প্রতি রাজধানীর কারওয়ান বাজার আম্বরশাহ মসজিদ কমিটি নিয়ে দল দুটির মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

সূত্র জানায়, মসজিদটিতে বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি দুটি কমিটি দেওয়া হয়েছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতে ওয়াকফ প্রশাসক একটি কমিটি দেয়। তবে সেটিও প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির আরেকটি পক্ষ থেকে নতুন একটি কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

একইভাবে বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াত অনেকটা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে ঝিনাইদহের একজন পেশাজীবী জানান, সম্প্রতি ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের একটি পদ নিয়ে স্থানীয় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের মাঝে অস্থিরতা দেখা দেয়। পরে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তা নিরসন হয়। একইভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে দল দুটির মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বিএনপি-জামায়াত সংঘাত প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী আমার দেশকে বলেন, ৫ আগস্টের পর জামায়াত অত্যন্ত কৌশলী পথ বেছে নিয়েছে, যেটা বিএনপি নিতে পারেনি। কৌশলগতভাবে বিএনপিকে পেছনে ফেলে দিয়েছে জামায়াত। যদিও বিগত সময়ে নির্যাতিত ও জিয়াউর রহমানের আদর্শের দল হিসেবে বিএনপিকেই সে জায়গা নেওয়ার কথা ছিল।

অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, বিএনপি মনে হয় কোনো ট্র্যাপে পড়ে গেছে। তারা ছাত্র-জনতার বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে পারছে না। বিএনপির বিরুদ্ধে আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির যে কথা শোনা যাচ্ছে, তাতে তাদের বদনাম হচ্ছে। অন্যদিকে কমিউনিস্ট পার্টির মতো জামায়াত সুদূরপ্রসারী প্ল্যান নিয়ে এগোচ্ছে।

তাদের চোখ রাষ্ট্রক্ষমতার দিকে। তারা কোনো চাঁদাবাজির মধ্যে নেই। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ইনস্টিটিউটে তারা বসে যাচ্ছে। বগুড়ার মতো বিএনপির ঘাঁটিতেও জামায়াতের উত্থান দেখা গেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সূত্র: আমার দেশ 

‘২০০ ছররা গুলি নিয়ে সারা জীবন বেঁচে থাকতে হবে’। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

‘২০০ ছররা গুলি নিয়ে সারা জীবন বেঁচে থাকতে হবে’

প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫, ০১: ০৩

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের ছররা গুলিতে আহত শিক্ষার্থী ওয়ালিউল হাসান নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। 

‘সারা হাতে দুই শর ওপর ছররা গুলি লেগেছে। হাড়ের ভেতরে গুলি ঢুকে গেছে। চিকিৎসকেরা বলে দিয়েছেন, এ গুলি আর বের করা যাবে না। এগুলো নিয়েই সারা জীবন কাটাতে হবে। কিন্তু এভাবে তো বেঁচে থাকা যায় না।’

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে পুলিশের ছররা গুলিতে আহত নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ওয়ালিউল হাসান এভাবে নিজের কষ্টের কথা বর্ণনা করেন। বুধবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত ‘ছররা গুলির বীভৎসতা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথাগুলো বলেন। সকল প্রাণের নিরাপত্তা (সপ্রাণ) নামের একটি সংগঠন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

আন্দোলনে মিরপুর এলাকায় পুলিশের গুলিতে আহত হন নুর হোসেন (২৬) নামের আরেক শিক্ষার্থী। তিনি জানান, জুলাই আন্দোলনে নির্বিচার ছোড়া পুলিশের ছররা গুলিতে এক চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন। এ কথা এখনো গ্রামে থাকা মাকে বলেননি। ‘বললে মা এ কষ্টের ভার সইতে পারবেন না’ বলেন তিনি।

ওয়ালিউল হোসেন বলেন, ‘২১ জুলাই ৫০ থেকে ১০০ পুলিশ উত্তরার জমজম টাওয়ারের সামনে হঠাৎ গুলি করা শুরু করে। আমাকে মাত্র দুই মিটার দূর থেকে গুলি করলে সাথে সাথে হাত দিয়ে ঠেকাতে চাই। হঠাৎ দেখি, হাত থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।’

গুলি নিয়ে বেঁচে থাকার দুর্বিষহ স্মৃতি সম্পর্কে এই তরুণ বলেন, ‘এই স্পটে (উত্তরায়) আমিসহ ছররা গুলিতে ৪০ জনের মতো আহত হয়। আমি এখনো পিজি হাসপাতালে (বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে) চিকিৎসাধীন আছি। ডাক্তাররা বলে দিয়েছেন আমার হাতের হাড়ে গুলি ঢুকে গেছে। এগুলো বের করা সম্ভব না। আমাকে বাকি জীবন এগুলো নিয়েই কাটাতে হবে। অসহ্য যন্ত্রণা হয়। এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়!’

অনুষ্ঠানে একুশে পদকজয়ী আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, ‘তরুণেরা জীবন দিয়েছে বলেই আমরা আজ এ মুক্তি পেয়েছি। একাত্তর দেখেছি। এরশাদ আমলেও নিপীড়ন দেখেছি। প্রতিটি সরকারের আমলে নিপীড়ন দেখেছি; কিন্তু এ পর্যায়ের নিপীড়ন দেখিনি।’

শহিদুল আলম হংকংয়ের একটা গবেষণার বরাত দিয়ে বলেন, ‘হংকংয়ের বিক্ষোভে ছররা গুলিতে ১৫ শতাংশ বিক্ষোভকারী আহত হয়েছিলেন, যার মধ্যে ২০ শতাংশ প্রাণ হারিয়েছিলেন। এসব তো তারা (বিগত সরকার) জানে। এর পরও তারা ছররা গুলি ব্যবহার করেছে।’

অনুষ্ঠানে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান বলেন, শুধু ছররা গুলি নয়, বিক্ষোভ দমনের সব পদ্ধতির মধ্যে সংস্কার আনার দাবি তুলতে হবে।

মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, ‘যেকোনো সময়, যেকোনো সভা–সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে সেখানে আসলে কী ধরনের ন্যূনতম রেস্ট্রিকশন (বিধিনিষেধ) বা শর্ত তাদের মেনে চলতে হবে, সেটা নিয়ে আমাদের সোচ্চার হওয়া দরকার। সংবিধান আমাদের কতকগুলো সুরক্ষা দিয়েছে, যেমন নির্বিচার গুলি চালানো যাবে না। বলপ্রয়োগ সমানুপাতিক হারে করতে হবে; কিন্তু এগুলো কতটা চর্চা করা হয় সে প্রশ্ন রয়ে যায়।’

অনুষ্ঠানে ছররা গুলির বীভৎসতার চিত্র এবং মানবিক, ঐতিহাসিক ও আইনি প্রেক্ষাপট থেকে এটি ব্যবহারের নানা দিক বিশ্লেষণ করা হয়।

সূত্র: প্রথম আলো

Wednesday, March 5, 2025

জেলায় জেলায় সরকারি অর্থে ‘আওয়ামী পল্লি’। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

জেলায় জেলায় সরকারি অর্থে ‘আওয়ামী পল্লি’

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪৩ এএম

পরিকল্পিত নগর, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী আবাসনের লক্ষ্যে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দের কাজ করার কথা জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের (জাগৃক)। ২০১০ সালের পর থেকে এই উদ্দেশ্যে দেশের ১৯টি জেলা ও ছয়টি উপজেলায় মোট ৩৫টি প্লট ও ফ্ল্যাট প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সংস্থাটি। স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষদের জন্য ফ্ল্যাট-প্লট পাওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে উল্টোটা। স্থানীয় এমপি-মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের সুপারিশে ভাগবাটোয়ারা হয়েছে এসব প্লট-ফ্ল্যাট। ভাগ পেয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারাও। সরকারি টাকা গচ্চা দিয়ে এভাবেই জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পুনর্বাসনের নামে তৈরি করা হয়েছে ‘আওয়ামী পল্লি’।

ঢাকার বাইরে নেওয়া প্রকল্পের ২০ শতাংশ প্লট ও ফ্ল্যাট দখলে নিয়েছেন স্থানীয় এমপিরা। সাধারণ মানুষের বরাদ্দের যে তালিকা, তাতেও প্রভাব বিস্তার করে নিজের আত্মীয়স্বজন, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাকর্মীদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নাগরিকদের জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হয়েছে জেলায় জেলায়। শেখ হাসিনাকে তোষামোদ করে সংরক্ষিত কোটায় সরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, পুলিশ এবং প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাও প্লট নিয়েছেন। কালবেলার হাতে আসা জাগৃকের নথিপত্র বিশ্লেষণ এবং সরেজমিন বেশ কয়েকটি প্রকল্প পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।

কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, বিগত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাগৃকের সমাপ্ত ও হস্তান্তরকৃত প্রকল্পগুলোর তালিকায় রয়েছে ৩৪টি প্লট-ফ্ল্যাট। এর মধ্যে ২২টি প্রকল্পে ৫ হাজার ৯০টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১২টি ফ্ল্যাট প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ৪৫৯টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপশহর উন্নয়ন সমীক্ষা’ নামে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। ১৯টি জেলা ও ছয়টি উপজেলায় মোট ৩৫টি প্রকল্পে প্রায় ৮ হাজার প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে সরকারি চাকরি বা আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার চাকরি ১০ শতাংশ, বেরসকারি চাকরিজীবী ১২ শতাংশ, বিদেশে কর্মরত ওয়েজ আর্নার (প্রবাসী) ১০ শতাংশ, ব্যবসায়ী বা শিল্পপতি ২০ শতাংশ, জমি হুকুম দখলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ১৫ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা ৫ শতাংশ, সাংবাদিক-সাহিত্যিক-শিল্পী ও ক্রীড়াব্যক্তিত্ব ৩ শতাংশ, প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ২ শতাংশ, সরিক্ষত কোটা ২০ শতাংশ ও অন্যান্য ৩ শতাংশ।

জাগৃক মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায় ৫ ও ৩ কাঠা আবাসিক প্রকল্প হাতে নেয়। এর মধ্যে একটা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনের বাবা ইলিয়াস আহম্মেদ চৌধুরীর নামে। যিনি দাদাভাই নামে পরিচিত। তিনটি পর্যায়ে গড়ে ওঠা ৪৮ একর জমির এ প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘দাদাভাই উপশহর সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্প’। প্রথম পর্যায়ে এ প্রকল্পে ১৪৫টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়, যার মধ্যে ৩৮টি সংরক্ষিত কোটায়। দ্বিতীয়য় পর্যায়ে ১৫২টি প্লটের মধ্যে ২৯টি, তৃতীয় পর্যায়ে ১৫৫টি মধ্যে ৩১টি সংরক্ষিত প্লট রয়েছে।

একইভাবে এমপি ও মন্ত্রীর সুপারিশে সংরক্ষিত কোটায় মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায় স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) ১৭৬টির মধ্যে সংরক্ষিত কোটায় ৪৬টি প্লট বরাদ্দ হয়; (তৃতীয় পর্যায়) ১৮০টি প্লটের মধ্যে সংরক্ষিত কোটায় ৩৯টি, চতুর্থ পর্যায়ে ১৫৫টি আবাসিক প্লটের মধ্যে সংরক্ষিত কোটায় ৩৮টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ ছাড়া শিবচর উপজেলায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপশহর উন্নয়ন সমীক্ষা’ প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০১৮ সালে এ প্রকল্প শেষ হয়। এখানে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্প ২০১২ সালে ৪১৩টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া।

তথ্য বলছে, শিবচরে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে স্থানীয় এমপি লিটন চৌধুরীই ছিলেন শেষ কথা। মূলত তার ইচ্ছা পূরণের জন্যই একটি উপজেলা শহরে এত প্রকল্প গ্রহণ করে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। এরপর এমপির কথামতোই ভাগবাটোয়ারা করা হয়েছে পুরো প্রকল্পের প্লট। সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েও ভরাট করেছে নদী।

সরেজমিন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে দেখা গেছে, ময়নাকাটা নদীর জায়গা ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে প্রকল্প। একসময় এ নদীটি স্রোতস্বিনী থাকলেও বর্তমানে নদীতে পানিও নেই। লোকজন দখল হওয়ার পরে অবশিষ্ট জায়গায় চাষাবাদ করছেন।

প্রায় শতবর্ষী স্থানীয় বৃদ্ধ এমারত মোল্লা কালবেলাকে বলেন, ‘১০ বছর আগেও নদীতে স্রোত ছিল। নৌকা-ট্রলার চলাচল করতাম। কিন্তু প্রকল্পের জন্য বালু দিয়ে নদীটি ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এখন বর্ষাকালেও পানি থাকে না। এখানে যে নদী ছিল, সেটাই বোঝা যায় না।’

শিবচরের এসব প্রকল্পে প্লট পাওয়া প্রায় আশিভাগেরই রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। যারা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। এর মধ্যে রয়েছেন শিবচর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রচারবিষয়ক সম্পাদক আলেয়া বেগম, প্রকাশনা সম্পাদক আয়েশা আক্তার, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পারুল আক্তার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মো. ছারোয়ার হোসেন সিকদার, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. খায়রুজ্জামান, নুর আলম চৌধুরী লিটনের একান্ত সচিব মোহাম্মদ ওয়াদুদ মিয়া, জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মনির চৌধুরীর আপন ছোটভাই নাসির আহমেদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেত্রী লুৎফুন নাহার, বন্দর খোলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নিজাম উদ্দিন আহমেদ, সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাহিমা আক্তার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং পাঁচ্চর ইউপির চেয়ারম্যান দেলোয়ার হাওলাদার, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন ব্যাপারী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এনায়েত হাওলাদার, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনির ওরফে লঞ্চ মনির ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অসীম আকরাম।

গোপালগঞ্জ হাউজিং এস্টেট নামে একটি প্রকল্প নিয়ে সেখানে ১৭২টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে সংরক্ষিত কোটায় বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪৩টি। তথ্য বলছে, সব প্লটই রাজনৈতিক বিবেচনায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পেয়েছেন আওয়ামী লীগের অনুগত দুজন পুলিশ কর্মকর্তাও। এমপি-মন্ত্রীদের সুপারিশে সংরক্ষিত কোটায় পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের পিএস ইমরুল কায়েস (প্লট নং ৮৪)। রামদিয়া কলেজের সাবেক ভিপি ছাত্রলীগ নেতা শেখ বুলবুল আলম (প্লট নং ১২৬)। গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এস এম নুর মোহাম্মাদ (প্লট নং ০৭), আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াসমিন আলম (প্লট নং ১২), সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি শেখ হেমায়েত হোসেন (প্লট নং ১৭২), তেজগাঁও থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাচান (প্লট নং ১৮) এবং আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মনিরুজ্জামান (প্লট নং ৪৩)।

‘সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও গবেষণার মাধ্যমে জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে দেশের স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য টেকসই, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী আবাসন, পরিকল্পিত নগরায়ণে কাজ করছে গৃহায়ন’—মুখে এই কথা বললেও বাস্তব চিত্র উল্টো। জাগৃক কর্মকর্তারা স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আঁতাত ছাড়া ৩০ শতাংশ প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দ করেননি। এমপিদের কোটা ছাড়া বাকিগুলো নিয়ম অনুযায়ী লটারির মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলে ৫ আগস্টের আগে শুধু লোকদেখানোর লটারির হতো। প্রভাবশালীদের কথামতো তাদের পছন্দের লোকদের নাম যুক্ত করা হতো। এই অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে গৃহায়নের কর্মকর্তারাও জড়িত। সাধারণ মানুষ সংখ্যায় খুব কম বরাদ্দ পেলেও বরাদ্দপত্রের জন্য কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়। কিছু প্লট ও ফ্ল্যাট কর্মকর্তারা নিজেদের নামে নিয়ে পরবর্তী সময়ে বাড়তি টাকায় অন্যদের নামে বরাদ্দ দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর ঢাকার মোহাম্মদপুরে ডি-টাইপ কলোনির ২৮৮টি পরিবারকে বিনা নোটিশে উচ্ছেদ করা হয়। এই পরিবারের জন্য নতুন করে প্রকল্প (দোলনচাঁপা) নিলেও উচ্ছেদকারীদের বরাদ্দ না দিয়ে বিভিন্ন কোটা ব্যবস্থায় অবৈধভাবে দলীয় সমর্থক কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ ছাড়া জাগৃকের আওতাধীন মোহাম্মদপুরে দোলনচাঁপা ও কনকচাঁপা প্রকল্পের দোলনচাঁপা অংশের অবৈধভাবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আমলা, পুলিশ, বিচারপতিসহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অনুগতদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই এলাকাটিও স্থানীয়দের কাছে ‘আওয়ামীপল্লী’ নামে পরিচিত।

গোপালগঞ্জ জেলায় স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) ২৪৩টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে এই প্রকল্প শেষ হয়। ২০১৪ সালে শরীয়তপুর জেলায় ১৩০টি প্লটের কাজ শেষ হয়। এই প্রকল্পে বরাদ্দ প্লট বেশিরভাগই শরীয়তপুর জেলার বাইরের লোক। ২০১১ সালে শেষ হয় পাবনা ৪৩টি প্লট, ২০১৬ সালে রাজশাহীর ছোটবন গ্রামে ৮৮টি, ২০১৬ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২২০টি, ২০০৮ সালে নাটোরে ১২১টি, ২০১১ সালে কুষ্টিয়ায় ১ হাজার ৫৮টি প্লটের কাজ শেষ হয়।

বরাদ্দ দেওয়া প্রকল্পগুলো মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরনগরীর হালিশহর হাউজিং এস্টেটে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য ১০৮ আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ ও (প্রথম পর্যায়)। দ্বিতীয় পর্যায় ২১৬টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। একই বছর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কের পাশে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য ২৩০টি আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ ছাড়া রাউজান উপজেলায় চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কের পাশে ২৬৬টি, চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় ১৮৩টি আবাসিক প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর চাহিদা থাকায় চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন রাউজান উপজেলার স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্প পিংক সিটি-১ নামে (দ্বিতীয় পর্যায়) ৩৬টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে এর কাজ শেষ হয়। ২০১৬ সালে নোয়াখালী জেলার মাইজদীতে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) ২৭৭টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে এই জেলায় ৬৪টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়।

জাতীয় গৃহায়নের ভূমি ও সম্পত্তি কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) এস এম সোহরাব হোসেন কালবেলাকে বলেন, আইন অনুযায়ীই প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের নেওয়া প্রকল্প বিশেষ কোনো ব্যক্তির নামে হওয়া ভালো দৃষ্টিতে দেখে না মানুষ। সরকারের প্রকল্প ব্যক্তি নামে নেওয়া উচিত নয়। নাম পরিবর্তনের দাবি এলে মন্ত্রণালয়ে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

জাতীয় গৃহায়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. নুরুল বাসির কালবেলাকে বলেন, ‘সরকারি প্লট ব্যক্তির নামে নেওয়া হয়েছে, এ নিয়ে অভিযোগ আছে। নাম পরিবর্তন হতে পারে—এটা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে নানারকম অভিযোগ থাকে। প্রমাণ পেলে বাতিল করা হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, জাতীয় গৃহায়নের কোনো কর্মকর্তা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখব। প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 সূত্র: কালবেলা 

পুলিশের গুলিতে মাথার খুলি উড়ে যায় শহীদ আবদুল্লাহর। (BDC CRIME NEWS24)

BDC  CRIME NEWS24

পুলিশের গুলিতে মাথার খুলি উড়ে যায় শহীদ আবদুল্লাহর:

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৫, ১০: ৫০

২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিয়ে প্রথমে আহত ও পরে শহীদ হন কলেজ শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ। যশোরের শার্শা উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী বড়আঁচড়া গ্রামের আবদুল জব্বারের ছেলে তিনি। রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বাবা আবদুল জব্বার দিনমজুর।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার ভারতে পালানোর পর বিজয় উদযাপনে মেতে ওঠে গোটা দেশ। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের সেই দুপুরে রাজধানীর তাঁতিবাজার এলাকায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নেন আবদুল্লাহ। এ সময় বংশাল থানার কাছে পুলিশের গুলিতে মাথার খুলির একাংশ উড়ে যায় তার। ২৪ বছর বয়সি এই তরুণকে আহতাবস্থায় তার সহযোদ্ধারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

এদিকে খবর পেয়ে গ্রাম থেকে হাসপাতালে ছুটে যান আব্দুল্লাহর বাবা-মা ও ঢাকায় অবস্থানরত বোন। ১৭ দিন চিকিৎসার পর নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় তাকে নেওয়া হয় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। গত বছরের ১৪ নভেম্বর সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। গুলিতে খুলি উড়ে যাওয়ার পরেও ৭২ দিন বেঁচেছিলেন শহীদ আবদুল্লাহ।

শহীদ সন্তানের হত্যাকারীর বিচার দাবি করে বাবা আবদুল জব্বার বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি করার হুকুমদাতা তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি হুকুম না দিলে পুলিশ গুলি করত না। আমার ছেলেসহ প্রায় দুই হাজার ছাত্র-জনতা শহীদ হতো না। সুতরাং ওই আন্দোলনে নিহত সবার দায় শেখ হাসিনার। একজন শহীদের বাবা হিসেবে আমি সন্তান হত্যার বিচার চাই। বিচার চাই শেখ হাসিনার। যাতে ভবিষ্যতে কোনো প্রধানমন্ত্রী আর খুনি হয়ে উঠতে না পারেন।’

আবদুল জব্বার জানান, তিনি লেখাপড়া শিখতে না পারলেও সন্তানদের শিক্ষিত করার চেষ্টা করেছেন। তার বড় দুই ছেলে মাধ্যমিকের পর জীবিকার প্রয়োজনে কাজে ঢুকেছেন। একজন গাড়িচালক, অন্যজন বন্দরশ্রমিক। একমাত্র মেয়ে স্নাতক পাস, থাকেন স্বামীর সঙ্গে রাজধানীতে।

ছেলেকে বাঁচানোর জন্য পরিবারের সদস্যরা তাদের সঞ্চিত সব টাকা খরচ করেছেন। হাত পেতেছেন শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছেও। এখনো বিপুল টাকা দেনা রয়েছে তাদের।

আবদুল জব্বারের দাবি তিনি বিএনপির অনুসারী। আর স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, ছেলে শহীদ আবদুল্লাহ যুক্ত ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে।

আবদুল্লাহর লাশ গ্রামের বাড়িতে আনার পর বেনাপোল বলফিল্ডে জানাজা হয়। বিপুলসংখ্যক মানুষ জানাজায় অংশ নেন। এরপর গার্ড অব অনার দিয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয় বড়আঁচড়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে।

এরপর জব্বারের বাড়িতে দুইবার এসেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত এবং জেলা-উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিরা ওই বাড়িতে গিয়েছেন। তারা পরিবারটিকে সাধ্যমতো সহযোগিতাও করেছেন। এর মধ্যে নৌবাহিনী থেকে দেওয়া হয়েছে এক লাখ টাকার অনুদান। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতের আমির এক লাখ টাকা করে, উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে এখনো কোনো সহযোগিতা পাননি বলে জানান জব্বার। তবে ফাউন্ডেশনের গ্রুপে সংযুক্ত আছেন এবং নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

মা মাফিয়া মনে করেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে গেলে হয়তো তার ছেলেকে বাঁচানো যেত। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে যশোরের আঞ্চলিক ভাষায় মাফিয়া বলেন, ‘আহতদের জন্য সরকার এখন অনেক কিছুই করছে। কিন্তু আমার ছেলেডা বাঁইচে থাকতি কত্তি পাল্লো না। তালি হয়তো আব্দুল্লাহ বাঁইচে যাইতো।’

সূত্র: আমার দেশ 

ছাত্রদের নতুন দলের শীর্ষপদে সমকামী নেতা মুনতাসির, সমালোচনার ঝড়। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

ছাত্রদের নতুন দলের শীর্ষপদে সমকামী নেতা মুনতাসির, সমালোচনার ঝড়:

প্রকাশ: মার্চ ৫, ২০২৫ - ০১:১৮ 

স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’র (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ ঘটেছে শুক্রবার। অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করা তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে এনসিপির আহ্বায়ক করে ১৭১টি পদের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই কমিটি নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।

নতুন রাজনৈতিক দলের কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন মুনতাসির মামুন নামে এক ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তিনি পশ্চিমা এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায় যেমন- গে, লেসবিয়ান, বা সমকামী এজেন্ডা বাস্তবায়নে রাজনৈতিকভাবে কাজ করবেন; এমন সন্দেহ পোষণ করছেন অনেকেই।

যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো তোলপাড় চলছে। মুনতাসিরের মতো একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে নাগরিক পার্টিতে পদ দেওয়ায় বইছে সমালোচনার ঝড়। নেটিজেনরা ধারণা করছেন, বাংলাদেশের মতো মুসলিম দেশে সমকামিতা উসকে দিতে এমন ব্যক্তিকে নাগরিক পার্টিতে জায়গা দেওয়া হয়েছে। অনেকেই নতুন রাজনৈতিক দলের এই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের আহ্বায়ক প্রবাসী সাংবাদিক ও লেখক খোমেনী ইহসান এক স্ট্যাটাসে বলেছেন, ছাত্রশিবির ও জামায়াতকে অবশ্যই জাতীয় নাগরিক পার্টির বিষয়ে জবাবদিহি করা দরকার। তাদের দলীয় লোকজন এই দলে আছে, গতকাল বেশির ভাগ লোক ছিল জামায়াত ও শিবিরের। এখন সমকামী ইস্যু তৈরি হওয়ায় এর দায় জামায়াত-শিবির কিভাবে এড়াবে? পুরো ব্যাপারটা পশ্চিমা ইসলামপন্থিদের মতোই। তারা যেভাবে চুপ করে মেনে নেয়, তেমনটাই বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি সেক্রেটারি লেভেলের লোক নাগরিক পার্টিতে আছে, তারা কিন্তু সেভাবে সরব নয়।

আবার পাকিস্তানপন্থি রাজনীতির কথা বলে জামায়াতকেই কটাক্ষ করা হলো, জামায়াত-শিবিরের জনশক্তি তা মুখ বুঝে শুনলো। অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ডা. আসিফ সৈকত তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, আবু সাঈদরা কি কাওমে লুত তথা এলজিটিভি মতাদর্শ বাস্তবায়নের জন্য শহিদ হয়েছেন? নাগরিক পার্টিতে গে অ্যাক্টিভিস্ট মুনতাসির মামুনকে পজিশন দেওয়া হয়েছে। তিনি হোচিমিনসহ দেশের অন্যান্য এলজিটিভি অ্যাক্টিভিস্টিদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন। আন্দোলনের সময় হোচিমিন শেখ হাসিনার পক্ষ নেয়, কিন্তু মুনতাসির ফ্যাসিবাদ বিরুদ্ধে সমর্থন দেয়। এটা নিয়ে বিরোধ তৈরি হয় এই ভেবে যে, হোচির জন্য এলজিটিভি অ্যাক্টিভিজম বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তিনি বলেন, ইলগা-এশিয়া (ILGA) হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে এলজিটিভি নেটওয়ার্ক; যেখানে ২০০০+ এনজিও জড়িত, বাংলাদেশের ৮টির মতো এনজিও যুক্ত। ফেসবুক পেজ এবং ইমেলের মাধ্যমে দেশের সব অ্যাক্টিভিস্টের কাছে বিচার দেয়। একজন ব্যক্তিগত লাইফে বেডরুমে কে কী করছে তা নিয়ে ভাবিত নই। কিন্তু ২০০০ শহিদ এবং প্রায় ৩০ হাজার আহতের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের নেতৃত্বে এসেছে গে অ্যাক্টিভিস্ট। ৯০ শতাংশের মুসলিমের দেশে ইসলামিক মূল্যবোধ জলাঞ্জলি দেওয়ার জন্য কি ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছে? মুনতাসিরের গে অ্যাক্টিভিটিজের বেশি কিছু ছবি প্রকাশ করে পৃথক আরেক স্ট্যাটাসে ডা. আসিফ বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব মুনতাসির গে বা সমকামী।

 আমি এ কমিটিকে তীব্র এবং তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করলাম। তাদের ফান্ডিং এসেছে কয়েকশো মিলিয়ন ডলার। কেন রাখাল রাহার বিচার হচ্ছে না, কেন ইসলাম অবমাননা হচ্ছে- ক্লিয়ার? ওরা সব বিক্রি হয়ে গেছে, ওরা জাতির সঙ্গে শহিদের বিচারের নামে মশকরা করে কালক্ষেপণ করলো। সব ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের বীজ বুনে দিলো। মুনতাসির চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করো। অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সাজ্জাদ শরীফ বলেন, বিতর্কিতদের না রাখাই ভালো। শুরুতেই কালিমা লেগে গেল। কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মিজান রহমান এক স্ট্যাটাসে বলেন, Alexander Soros হলেন মার্কিন বিলিয়নিয়ার George Soros এর ছেলে। ওদের আন্তর্জাতিক সংস্থার নাম হচ্ছে Saros Foundation. এই George Soros এর আর্থিক সহায়তা নিয়ে সারা বিশ্বে সমকামীদের মুভমেন্ট চলছে। ২০১৬ সালে আমেরিকার আয়কর ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী জর্জ সারোস ২.৭ মিলিয়ন ব্যয় করেছেন শুধুমাত্র সমকামীদের অধিকার রক্ষার নামে বিভিন্ন দেশে আন্দোলন করার জন্য! এসব মুভমেন্ট সমকামীদের জন্যে উনি সরাসরি ইনভেস্ট করে থাকেন সারোস ফাউন্ডেশন থেকে!উনার ছেলের সঙ্গেই সখ্যতা হয়েছিল জাতীয় নাগরিক পার্টির শীর্ষ নেতা মুনতাসীর রহমানের; যে নিজেই একজন সমকামী। গণঅভ্যুত্থানের সময় সমকামী মুনতাসীর সমন্বয়ক হান্নানসহ বাকিদের গোয়েন্দাদের নজরদারি থেকে বাঁচাতে এই Soros Foundation এর অফিসে নিয়ে যায়। সেখানেই তারা আশ্রয় নিয়েছিল। সেখান থেকেই ওরা ভিডিও বার্তা প্রেরণ করত!(হান্নান নিজেই এ ঘটনা ফেসবুকে পোস্ট করে জানিয়েছিল।) কাজেই যারাই জাতীয় নাগরিক পার্টিতে সমকামী নেতা মুনতাসীরের শীর্ষ পদ পাওয়াকে ‘অনিচ্ছকৃত ভুল হয়েছে’- বলে ভন্ডামি টাইপ ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, এরা হচ্ছে আসল বাটপার। হাসনাত-সারজিসকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, অনিচ্ছাকৃত ভুল বলে আর বাটপারি করা যাবে না। মার্কিন ডলার পাবার নেশায় আমাদের ইসলামি কালচার লালন করা দেশে রাজনীতির আড়ালে সমকামীতাকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছো তোমরা।

এটাই বাস্তবতা। এটাই সত্য। স্ট্যাটাসে অ্যালেজন্ডার সরোসের সঙ্গে তোলা সমন্বয়কদের একটি ছবিও প্রকাশ করেছেন ডা. মিজান। হাবিবুল বাশার নামে এক ব্যক্তি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি থেকে গে অ্যাক্টিভিস্ট মুনতাসির মামুনকে দ্রুত অপসারণ করে নিজেদের জায়গা ঠিক রাখুন। এদিকে মুনতাসির মামুন ইস্যুতে নিজেদের ভুল স্বীকার করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের দুই মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। তারা বলছেন, দেশের মানুষের বিশ্বাসকে আঘাত করে কোনো রাজনীতি তারা কখনও করবেন না। ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিপন্থি তাদের রাজনীতিতে কখনও জায়গা পাবে না। যা হয়েছে, সেটা ছিল অনিচ্ছাকৃত ভুল। তারা এ ধরনের ভুল সংশোধন করে নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সূত্র: প্রিয় টাইম 

৫ আগস্ট চানখাঁরপুল কিলিং- ‘হত্যা মিশনে’ জড়িত পুলিশ এখনো বহাল। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

৫ আগস্ট চানখাঁরপুল কিলিং-

‘হত্যা মিশনে’ জড়িত পুলিশ এখনো বহাল:

(৫ আগস্ট হাসিনা পালানোর খবরের পরও গুলি করে ৭ জনকে খুন * সিলেটে পোস্টিংয়ের পর লাপাত্তা কিলিং বাস্তবায়নকারী এডিসি আখতার * ‘কালপ্রিট’ কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় না আনায় হতাশ শহিদ পরিবার)

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

জুলাই আন্দোলনে রাজধানীর চাঁনখারপুলে ছাত্র-জনতাকে নির্বিচারে গুলি করে ‘হত্যা মিশনে’ জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকে এখনো চাকরিতে বহাল। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও তার দোসর পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকেই নানা মাধ্যমে তদবির করে নিজেদের সুরক্ষিত রেখেছেন। বিচারের কাঠাগড়ায় দাঁড় করানোর পরিবর্তে উলটো তাদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চাঁনখারপুলে স্কুলছাত্র আনাসসহ ৭ জনকে হত্যায় জড়িত কর্মকর্তারা মামলার আসামি হলেও তাদের এখনো গ্রেফতার করেনি পুলিশ। মাঠে কিলিং বাস্তবায়নকারী রমনা জোনের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলামকে সিলেটে বদলি করা হয়। কর্মস্থল থেকে পালিয়ে যান তিনি। জুলাই আন্দোলনে হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় সাবেক ও বর্তমান ৯৫২ পুলিশ আসামি হলেও মাত্র ২৮ জন গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতারের হার মাত্র ২.৯৪ শতাংশ। ৫ আগস্ট-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের বয়স ৭ মাস হতে চললেও গণহত্যায় জড়িত সেই ‘কালপ্রিট’ কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় না আনায় হতাশ শহিদপরিবারের সদস্যরা।

শহিদপরিবারের সদস্যরা বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী ‘পুলিশ লীগের’ জড়িত কর্মকর্তা ও সদস্যদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। এখনই গ্রেফতার করা না হলে বাকিরাও আত্মগোপন বা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবে। চাকরিতে বহাল থাকলে জুলাই হত্যা মামলায় জড়িত অপরাধীদের রক্ষায় অপচেষ্টা চালাবে তারা। এ অবস্থায় গণহত্যায় ‘হুকুমদাতা’ ও ‘সরাসরি জড়িত’ পুলিশ কর্মকর্তাসহ জড়িত সদস্যদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা। এমনকি নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই খুনিদের বিচারের নিশ্চয়তাও চান তারা। গণহত্যায় জড়িতদের বিচার প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম বলেন, ট্রাইব্যুনালের মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া ভিন্ন। জুলাই হত্যা মামলার তদন্ত পর্যায়ে পুলিশ বা অন্য কারও মাধ্যমে সন্দেহভাজন আসামিরা তথ্য পেয়ে যাচ্ছে। ফলে গ্রেফতারের আগেই তারা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তিনি শহিদপরিবারের দাবি পূরণে ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি ক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনা করার কথা বলেন।

চাঁনখারপুল কিলিংয়ে জড়িত পুলিশকে গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি না করায় শহিদ আনাসের বাবা শাহরিয়ার খান পলাশ যুগান্তরকে বলেন, হত্যা মিশনে অংশ নেওয়া ও হুকুম দেওয়া আসামিরা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেলে কিংবা গ্রেফতারে বিলম্ব হলে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হবে। যেখানে প্রকাশ্যে গুলি করার ভিডিও রয়েছে, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী আছে, সেখানে টালবাহানা করার কারণ বোধগম্য নয়। জড়িতদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে শহিদ ও আহতদের পরিবারের সঙ্গে বেইমানি করা হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পুলিশের গুলিতে শহিদ যারা : ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। তার পলায়নের বিষয়টি জানার পরও সুবিধাভোগী খুনি পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের তাণ্ডব থামেনি চাঁনখারপুলে। ওইদিন দুপুরের দিকে এডিসি আখতারের নির্দেশে গুলি চালানো হয় নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর। এতে স্কুলছাত্র আনাসহ ঘটনাস্থলেই শহিদ হন সাতজন। যুগান্তরের অনুসন্ধানে তাদের মধ্যে ৬ জনের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার শাহরিয়ার খান পলাশের ছেলে শাহরিয়ার খান আনাস, একই এলাকার শেখ জামাল হাসানের ছেলে শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদ, বংশালের ইউসুফ মিয়ার ছেলে মো. ইয়াকুব, একই এলাকার ফারুক আহামেদের ছেলে ইয়াসিন আহমেদ রাজ, চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার নুরুল হকের ছেলে মো. ইসমামুল হক এবং ঝালকাঠির মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে রাকিব হাওলাদার। অন্য একজনের পরিচয় কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। এ বিষয়ে তদন্ত করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

হত্যায় জড়িত পুলিশ : জোন বা অঞ্চল হিসাবে চাঁনখারপুল এলাকা পুলিশের রমনা ও লালবাগ বিভাগের আওতাধীন। আন্দোলনের কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও শহিদ মিনারমুখী হওয়ায় চাঁনখারপুলের একাংশসহ বেশির ভাগ এলাকা শাহবাগ থানার অধীন। ৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সময় রমনা বিভাগে পুলিশের ডিসি (ক্রাইম) মো. আশরাফুল ইসলাম, রমনা জোনাল টিমের এডিসি শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, এসি মো. ইমরুল দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া রমনা বিভাগের আওতাধীন নিউমার্কেট জোনাল টিমের এডিসি হাফিজ আল আসাদ, এসি রেফাতুল ইসলাম এবং ধানমন্ডি জোনাল টিমের এডিসির দায়িত্বে ছিলেন মো. ইহসানুল ফিরদাউস, শাহবাগ থানার ওসি মোস্তাজিরুর রহমান ও পরিদর্শক (অপরাশেন) ছিলেন আরশাদ হোসেন।

একই সময়ে রমনা গোয়েন্দা বিভাগে ডিসি (ডিবি) মো. হুমায়ুন কবীর, এডিসি (অ্যাডমিন) মো. আজহারুল ইসলাম মুকুল, রমনা জোনাল টিমের এডিসি মিশু বিশ্বাস, এসি জাবেদ ইকবাল প্রীতম ও ধানমন্ডি জোনাল টিমের এডিসি ছিলেন মো. ফজলে এলাহী। এছাড়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিমের এডিসি ছিলেন নাজিয়া ইসলাম। যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে এসব পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয় জানা গেছে।

সেই কর্মকর্তারা কে কোথায় : যুগান্তরের অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, রমনার ডিসি আশরাফুল ইসলাম জুলাই হত্যা মামলার আসামি। তিনি বর্তমানে রংপুর রেঞ্জ অফিসে সংযুক্ত আছেন। ৫ আগস্টের পর এডিসি আখতারকে সিলেটের ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে বদলি করা হয়। সম্প্রতি গ্রেফতারের বিষয়টি টের পেয়ে কর্মস্থল থেকে পালিয়েছেন তিনি। অন্যদের কেউ এপিবিএনে, কেউ কক্সবাজারের উখিয়ায় (এপিবিএন), কেউ গাজীপুরে শিল্প পুলিশে কর্মরত আছেন। শাহবাগ থানার সাবেক ওসি মোস্তাজিরুর রহমান বর্তমানে বরিশালে ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত আছেন। একইভাবে ডিবির কর্মকর্তারাও বিভিন্ন জেলায় কর্মরত আছেন। রমনায় জুলাই হত্যা মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ডিবির ডিসি হুমায়ুন কবীর, এডিসি ফজলে এলাহী, এসি জাবেদ ইকবাল প্রীতম ও এসি রেফাতুল। এর মধ্যে জাবেদ ইকবাল ট্রাইব্যুনালের একটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। বাকিরা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত আছেন।

কারাগারে এপিবিএন কনস্টেবল সুজন : উত্তরা থেকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন-১৩) সদস্য কনস্টেবল মো. সুজন হোসেনকে ৫ আগস্ট হত্যা মিশনে চাঁনখারপুলে পাঠানো হয়। ঘটনার দিন তাকে নানা ভঙ্গিমায় গুলি চালাতে দেখা যায়। পলাতক এডিসি আখতার হোসেন পাশে থেকে তাকে নির্দেশনা দেন। সাতজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শাহবাগ থানার একটি মামলায় সুজন গ্রেফতার হন। পরে ট্রাইব্যুনালের একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। বর্তমানে কারাগারে আছেন সুজন।

পরিদর্শক আরশাদ ও ইমাজকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ : ট্রাইব্যুনালের মামলায় সম্প্রতি শাহবাগ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) আরশাদ হোসেন ও কনস্টেবল ইমাজ হোসেন প্রামাণিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় আরশাদকে রোববার ও ইমাজ হোসেন প্রামাণিককে সোমবার একদিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অন্য একটি মামলায় রমনার ডিবির এসি জাভেদ ইকবাল প্রীতমকে গ্রেফতার করেছেন ট্রাইব্যুনাল। তিনি র‌্যাব-২ বছিলা ক্যাম্পে ছিলেন। ছাত্র সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও সারজিস আলমসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করে ডিবি কার্যালয়ে হাজির করেছিলেন তিনি।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, চাঁনখারপুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত স্কুলছাত্র আনাসের নানার অভিযোগের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান, সিসিটিভি ফুটেজ ও গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওর পাশাপাশি নানা তথ্য বিশ্লেষণ করে ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা হয়েছে। যাদের সুস্পষ্ট সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, তাদের আসামি করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জড়িতদের শাস্তি দাবি শহিদপরিবারের : পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার বাসায় গিয়ে কথা হয় আনাসের বাবার সঙ্গে। আনাসের বাবা বাদল বলেন, আমার ছেলে ৫ আগস্টের আন্দোলনে যাওয়ার আগে ডায়েরিতে একটি চিঠিতে লিখে গেছে। ‘মা আমি মিছিলে যাচ্ছি। নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। সরি আব্বুজান। তোমার কথা অমান্য করে বের হলাম। স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে থাকতে পারলাম না।’ রোববার বাসায় গিয়ে দেখা যায় সেই চিঠি হাতে নিয়ে ইফতারের আগে সন্তানের জন্য দোয়া করছেন আনাসের বাবা-মা। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই চাঁনখারপুল কিলিংয়ে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন শহিদ জুনায়েদের বাবা শেখ জামাল হাসান। তিনি বলেন, রোজার মাসে জুনায়েদ আমাদের সঙ্গে অনেক আনন্দ করত। সেহরিতে সবাইকে জাগিয়ে দিত। নিজেই ইফতার আয়োজন করত। ছেলের কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আমিরাবাদ দরজিপাড়ায় ইশমামুলের বাড়িতে গিয়ে যুগান্তর প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয় শহিদ ইশমামুল হকের মা শাহেদা বেগমের। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে স্বামী মারা গেলে অনেক কষ্টে সন্তানদের মানুষ করি। ঢাকার চকবাজারে জুয়েলারি দোকানে চাকরি করে সংসার চালাত ছেলে ইশমাম। ছেলেকে হারিয়ে মা এখন দিশেহারা অবস্থায় আছেন বলে জানায় প্রতিবেশীরা। শহিদ ইশমামের নামে এলাকায় একটি রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার চেচড়ীরামপুর ইউনিয়নের মাহিষকান্দি গ্রামে গিয়ে শহিদ রাকিব হওলাদারের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন যুগান্তরের ঝালকাঠি প্রতিনিধি। রাকিবের মা শিল্পী বেগম বলেন, তার স্বামী আরেকটি বিয়ে করে ঢাকায় থাকেন। রাকিবই ছিল তার সম্বল। সন্তান হারিয়ে বর্তমানে খুবই অসহায় অবস্থায় দিন পার করছেন। ছেলের ছবি বুকে নিয়ে একসময় নির্বাক হয়ে পড়েন এই হতভাগা মা। তিনি তার ছেলে হত্যায় জড়িতদের বিচার দাবি করে বলেন, খুনিদের বিচার দেখে মরতে চাই।

সূত্র: যুগান্তর 

Tuesday, March 4, 2025

জুলাই বিপ্লবকে জঙ্গিবাদের উত্থান বলে প্রচারণাকারীদের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

জুলাই বিপ্লবকে জঙ্গিবাদের উত্থান বলে প্রচারণাকারীদের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে: 

প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৫, ১০: ১৭

জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনবিস্ফোরণকে জঙ্গিবাদের উত্থান বলে বাংলাদেশ মিশনগুলো থেকে প্রচারণা চালানো হয়েছিল বিভিন্ন দেশে। পরিকল্পিত ভিডিও বানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এই প্রচারণা চালানো হয়।

যদিও ৫ আগস্ট ঢাকামুখী জনস্রোতের ফলে এই প্রচারণা কোনো কাজে আসেনি। এদিকে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনের যেসব কর্মকর্তা ঢাকায় জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে বলে প্রচারণা চালিয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো প্রচারকারীদের কেউ কেউ এখন পাচ্ছেন আগের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ।

তখন পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন পেশাদার কূটনীতিক মাসুদ বিন মোমেন। জানা যায়, তার নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন মিশনে বার্তা পাঠানো হতো ভারতের দিল্লিতে নিযুক্ত তৎকালীন হাইকমিশনারের মাধ্যমে। এরকম একটি বার্তা আমার দেশ-এর হাতে এসেছে।

আন্দোলনে পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়েছিল। এমনকি হেলিকপ্টার থেকেও সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। অথচ দিল্লি হাইকমিশন থেকে ঢাকার বরাত দিয়ে বৈদেশিক মিশনগুলোতে তাদের মতো করে ভিডিও ক্লিপ বানিয়ে পাঠানো হয়। নির্দেশনা দেওয়া হয়, এই ক্লিপগুলো জায়গা অনুযায়ী ব্যবহার করতে।

জনবিস্ফোরণে ২০ জুলাই থেকে কার্যত বাংলাদেশ অচল হয়ে পড়ে। শেখ হাসিনা দিশাহারা হয়ে আন্দোলন দমনের জন্য নানা অপকৌশল নেয়। এর অন্যতম কয়েকটি হচ্ছে- কারফিউ জারি, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ, সেনা মোতায়েন, অনুগত মিডিয়া দিয়ে প্রচারণা এবং বিদেশে পরিকল্পিত অপপ্রচার। কারফিউর পাশাপাশি ইন্টারনেট বন্ধ থাকা অবস্থায় বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতে বার্তা পাঠানো হতো দিল্লি থেকে।

দিল্লি হাইকমিশনের পক্ষ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ২৪ জুলাই মেসেজ পাঠিয়ে বিদেশি মিশনগুলোতে বলা হয়, আদিষ্ট হয়ে আরো একটি ফ্যাক্স মেসেজ পাঠালাম। সিচুয়েশন রিপোর্ট-৫ উল্লেখ করে আরো বলা হয়, ই-মেইলে ভিডিও ক্লিপ দেওয়া হয়েছে পরিস্থিতি অনুযায়ী যেন ব্যবহার করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কূটনীতিক আমার দেশকে বলেন, ভিডিও ক্লিপগুলো এমনভাবে বানানো যেন ছাত্ররা ভাঙচুর করছে এবং জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে; এটা বোঝানো যায়। আন্দোলনকে কথিত জঙ্গি তৎপরতা বলে প্রত্যেক দেশের সরকার ও বিদেশি মিডিয়ায় প্রচারের জন্য তাগিদ দেওয়া হয় তখন।

এতে স্পষ্ট, বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানকে জঙ্গিদের উত্থান বলে প্রচার চালিয়ে ইসলাম বিদ্বেষী রাষ্ট্রগুলোকে নিজের অনুকূলে নেওয়ার অপচেষ্টায় ছিলেন হাসিনা। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে বিদেশিদের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার শেষ চেষ্টা চালিয়েছিলেন তিনি।

তার এই প্রচেষ্টার সহযোগী ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকা সাবেক ছাত্রলীগ ও ফ্যাসিবাদ অনুগত সরকারি কর্মকর্তারা। এখনো এসব ফ্যাসিবাদ অনুগতরাই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মিশনে কূটনীতিকের দায়িত্বে রয়েছেন। তারাই এখন বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে নিয়োগ ও পদায়নের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া দিল্লি থেকে যে কূটনীতিক এই ম্যাসেজগুলো বিদেশি মিশনে পাঠাতেন তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৮ জুলাইয়ের পর থেকে আন্দোলন তুঙ্গে উঠলে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের ডেকে ব্রিফ করেছিলেন মাসুদ বিন মোমেন। তিনি ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের অবহিত করেন, কথিত ইসলামী জঙ্গি গ্রুপের উত্থানের চেষ্টা বলে।

অর্থাৎ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের এই অভ্যুত্থানকে জঙ্গিবাদের উত্থান হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা। এ প্রচারকারীরা এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। মাসুদ বিন মোমেনকে পররাষ্ট্র সচিবের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও ফ্যাসিবাদের সহযোগীরা রয়েছেন ঢাকায় এবং বিভিন্ন দেশে নিজ নিজ পদে। এমনকি কেউ কেউ আরো গুরুত্বপূর্ণ দেশে দায়িত্ব পেয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ফ্যাসিবাদ আমলের শেষ মুহূর্তে মাসুদ বিন মোমেন কিছু কূটনীতিকের তালিকা হস্তান্তর করে গেছেন। তার দেওয়া তালিকা অনুযায়ী এখন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশে ফ্যাসিবাদের দোসরদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই লন্ডনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় একজন ফ্যাসিবাদ অনুগত কূটনীতিককে পদায়ন করা হয়েছে। যিনি প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের মিটিংয়েই শুধু অংশ নেননি, শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি নিয়ে গেছেন মেক্সিকোতে। ২০২০-২১ সালে যখন মুজিববর্ষ ধুমধামে পালন করা হয়, তখন কূটনীতিক আবিদা সুলতানা ছিলেন মেক্সিকোতে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে।

তার ভাষায়, বাংলাদেশকে পরিচিত করতেই মুজিব ম্যুরাল নেওয়া হয়েছিল সেখানে। এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় দায়িত্ব পালনকালে আওয়ামী লীগের দলীয় মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতেন তিনি। আওয়ামী লীগের বিরোধীদের জন্য তখন দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ অ্যাম্বেসির দরজা ছিল কার্যত বন্ধ।

এখানেই শেষ নয়, কোরিয়ায় রাষ্ট্রদূত থাকাকালীন প্রবাসীদের সঙ্গে এক বৈঠকে আবিদা বলেছিলেন, এখানে বাংলাদেশি অপরাধীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। তারা বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিল। এখানে এসে অবৈধ নাগরিক হিসেবে অ্যাসাইলাম (আশ্রয়) চেয়েছে।

আবিদার সমসাময়িক একজন কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের প্রতি শতভাগ আনুগত্য দেখানোর পুরস্কার হিসেবেই তাকে ব্রিটেনের মতো জায়গায় পদায়ন করা হয়েছে।

ব্রিটেন, আমেরিকা ও ইউরোপে সিনিয়র ও দক্ষ কূটনীতিক নিয়োগ দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। এসব জায়গায় বহুমুখী কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হয়। এজন্য সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও দক্ষতা যাচাই-বাছাই করেই নিয়োগ দেওয়া হয় এসব জায়গায়। সে অনুযায়ী আওয়ামী লীগের শতভাগ অনুগত ব্যক্তিদের এসব দূতাবাসের বিভিন্ন পদে বসানো হয়েছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য ব্রাসেলস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন সরাসরি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকরা।

এদিকে মালয়েশিয়ায় আওয়ামী লীগের সেবাপ্রদানকারী ডেপুটি হাইকমিশনার খোরশেদ আলম খাস্তগীরকে বর্তমান সরকার পোল্যান্ডে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের প্রতি অনুগত এবং জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। পোল্যান্ডে তাকে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেওয়ার পর এ নিয়ে সমালোচনা হলে সেটি বাতিল করা হয়। তবে মালয়েশিয়ায় ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে তিনি এখনো বহাল।

খোরশেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, জুলাই-আগস্টে মালয়েশিয়ায় যারা অভ্যুত্থানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় কাজং থানায় মামলা করেছিলেন খোরশেদ এবং পাসপোর্ট বাতিলের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। মালয়েশিয়ায় প্রবাসী পরিষদ তাকে কুয়ালালামপুর থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ এম্বেসির সামনে বিক্ষোভ করতে গেলে স্থানীয় পুলিশ দিয়ে আটক করা হয়েছিল অনেক বাংলাদেশিকে। তাদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিও দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়। সার্বিক বিষয়ে জানতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকে একাধিকবার কল করা হলেও তা রিসিভ হয়নি।

সূত্র: আমার দেশ 

পুলিশের গুলি আমার সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

‘পুলিশের গুলি আমার সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে’:

প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৫, ১০: ৪৫

‘বড় স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করার। কিন্তু পুলিশের একটি গুলি আমার সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। ডান হাতটা জীবনের তরে হারাতে বসেছি। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা চলছে, কোনো উন্নতি হচ্ছে না। তবে যাদের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করেছি, দেশের মানুষ যেন ভালোভাবে বাঁচতে পারে। দেশের মানুষ ভালো থাকলেই আমরা ভালো থাকব।’

কথাগুলো বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুরুতর আহত টঙ্গী তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী মোহাম্মদ হাসিব। গত বছরের ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরার বিএনএস সেন্টারের সামনে পুলিশের গুলিতে আহত হন হাসিব।

এদিকে আহত হওয়ার পরও পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধ হয়নি। এ বিষয়ে হাসিব বলেন, ‘গুরুতর আহত হওয়ার পরও ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে পুলিশ প্রতি রাতেই বাড়িতে হানা দিয়ে জীবন বিষিয়ে তুলেছিল। স্বৈরাচারের দোসররা বাবার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলে অর্থাভাবে আমার চিকিৎসা থমকে পড়ে। বর্তমানে আমার লেখাপাড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে ফ্যাসিবাদের রাহুগ্রাস থেকে দেশ মুক্তি পেয়েছে তাতেই আমি খুশি।’

বরিশালের বরগুনা জেলার আমতলি উপজেলার আড়পাঙ্গাসিয়া গ্রামের আবুল বাশারের ছেলে মোহাম্মদ হাসিব। টঙ্গীর মধুমিতা রোডে ভাড়া বাসায় থাকেন। আন্দোলনের সময় তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা থেকে আলিম ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছিলেন তিনি।

হাসিব জানান, জুলাই বিপ্লবের বিক্ষোভে দেশ যখন উত্তাল, তখন ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তীব্র দমন-পীড়ন শুরু করে। পুলিশের অত্যাচারে মাদরাসা তো দূরের কথা, বাসায় থাকাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পরীক্ষার কথা ভুলে গিয়ে দেশপ্রেমের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৮ জুলাই দুপুরে অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। ওই দিন বিকালে বিক্ষোভকালে সামনের সারিতে থাকায় পুলিশের বন্দুকের একটি গুলি তার গলার ডানপাশ দিয়ে ঢুকে কাঁধ চিরে বেরিয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে রাতে তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে (জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান) নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব না হওয়ায় দুদিন পর তাকে গ্রামের বাড়ি বরগুনার আমতলী পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে বাড়িতে গিয়েও এক দুঃসহ যন্ত্রণার সম্মুখীন হন হাসিব। পুলিশ তাকে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে একাধিকবার বাড়িতে হানা দিয়ে হয়রানি করে। আহত অবস্থায়ও তিনি নিজের বাড়িতে স্বাভাবিকভাবে থাকতে পারেননি। তার এক আত্মীয়ের বাড়ির চিলেকোঠায় আত্মগোপনে থেকে ব্যথায় কাতরাতে থাকেন।

বাবা আবুল বাশার বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব সফল হয়েছে। এতে আমি গর্বিত। কিন্তু আমার ছেলের অবস্থা দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। হাসিবের হাত এখনো সুস্থ হয়নি। দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসক বলেছেন, সে ডান হাতে কখনো ভারী কাজ করতে পারবে না। তার হাতের নার্ভগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না।’

সূত্র: আমার দেশ 

Monday, March 3, 2025

বাড্ডায় পুলিশের গুলি খেয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলতে বলতে শহীদ হন লিটন। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

বাড্ডায় পুলিশের গুলি খেয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলতে বলতে শহীদ হন লিটন:

প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৫, ১০: ০২

অভাব-অনটনের সংসারে জন্ম লিটন মিয়ার। খরচ জোগাতে না পারায় তাকে পড়াশোনা করাতে পারেনি পরিবার। বাবা-মায়ের বোঝা একটু হালকা করতে অল্প বয়সেই পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। চাকরি নেন একটি গার্মেন্টসে। কিন্তু সংসারের চাকায় গতি আনার আগেই নিথর হয়ে গেছে এই তরুণ। জুলাই বিপ্লবে পুলিশের গুলিতে হারিয়েছেন জীবন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে উত্তাল ছিল গত বছরের পুরো জুলাই। আন্দোলন দমাতে একপর্যায়ে কারফিউ জারি করে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। জনগণ বিদ্রোহ করে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও সশস্ত্র বাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাজপথে নামেন ছাত্র-জনতা। তাদের একজন ছিলেন লিটন মিয়া। তার বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুরের চিনাডুলি ইউনিয়নের খামারপাড়ায়।

২০২৪ সালের ১৯ জুলাই ছিল অন্যতম রক্তাক্ত দিন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে কারফিউ জারি করে গণহত্যাকারী সরকার। প্রথম দিনই বাড্ডা এলাকায় নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। এই নির্মমতায় প্রাণ যায় গার্মেন্টস কর্মী লিটনের। আশপাশের পরিচিত জন ও সহকর্মীরা তার লাশ উদ্ধার করে বাড়িতে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

লিটনের বাবা আবদুস সবুর মন্ডল বলেন, ‘আমার সাত সন্তানের মধ্যে লিটন সবার ছোট। পরিবারের সবচেয়ে আদরের ছেলে হলেও তাকে টাকার অভাবে পড়াতে পারিনি। পরিবারের সদস্যদের জন্য দু’মুঠো আহার জোগাতে গিয়েছিল ঢাকায়। কিন্তু স্বৈরাচার হাসিনার বাহিনী তাকে বাঁচতে দেয়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘১৯ জুলাই সকালে আমাকে কল দিয়েছিল লিটন। জানায়, নাশতা করার জন্য বাইরে যাচ্ছে। কথা বলতে বলতেই গুলির শব্দ শুনলাম। কিছুক্ষণ পর কথা বলা বন্ধ হয়ে গেল, লাইন কেটে দিলাম। বেশ কিছু সময় ধরে তার মোবাইল ফোনে কল দিলাম কিন্তু কেউ আর রিসিভ করল না। একপর্যায়ে কেউ একজন কল দিয়ে জানায়, রাস্তায় লিটনের লাশ পড়ে আছে। তখন আমার পুরো শরীর হিম হয়ে আসে, চোখে ঝাপসা দেখতে লাগলাম। উনিশ বছর বয়সে যেই ছেলে একটু স্বস্তিতে বাঁচার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ঢাকায় গিয়েছিল তাকেই গুলি করে মেরে ফেলেছে পুলিশ।’

লিটনের বাবা বলেন, ‘তরুণ ছেলেটার বাম চোখের পাশ দিয়ে মাথায় গুলি প্রবেশ করে। যারা তাকে এত কষ্ট দিয়ে হত্যা করেছে, তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। যাতে এভাবে আর কোনো বাবা-মায়ের বুক খালি না হয়। আমি ও লিটনের মা উভয়ই অসুস্থ। সংসারের এখন নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর অবস্থা। সরকার আমাদের দিকে নজর দিলে খেয়েপরে বাঁচতে পারতাম।’

জানা গেছে, মধ্যবাড্ডার একটি মেসে থাকতেন লিটন। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে ঢাকায় অবস্থানরত বড় ভাই পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় লাশটি উদ্ধার করে গ্রামে নিয়ে যান। পরদিন বাড়ির পাশে জানাজা শেষে তার লাশ দাফন করা হয়। জামালপুরে তিনিই প্রথম জুলাই শহীদ। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে লিটনের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হলেও আর কেউ খবর নেয়নি।

Sunday, March 2, 2025

ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধানের বাসায় মিললো আড়াই কোটি টাকা। (BDC CRIME NEW24)

BDC CRIME NEW24

ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধানের বাসায় মিললো আড়াই কোটি টাকা: 

প্রকাশ: ১৫:২৫, রবিবার, ০২ মার্চ, ২০২৫

ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক সাইফুল আলমের বাসা থেকে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ রবিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দুদকের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম সাইফুল আলমের ক্যান্টনমেন্টের বাসায় অভিযান চালায়। সেখান থেকে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়, যা জব্দ করা হয়েছে।

দুদকের সাথে যৌথবাহিনীও এ অভিযানে অংশ নেয়। ওই বাসায় একটি ট্রাংক থেকে টাকাগুলো উদ্ধার করা হয়। পরে এই জব্দ টাকা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মো. সাইফুল আলমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় সেনাবাহিনী।

দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সাইফুল আলমকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছিল। গত ৪ সেপ্টেম্বর লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী লুবনা আফরোজের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে তাদের সন্তান ও মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন 

Friday, February 28, 2025

তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর চোখ ধাঁধানো সম্পদ। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর-

তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর চোখ ধাঁধানো সম্পদ:

প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১: ৫১

ছিলেন একজন কম্পিউটার অপারেটর। ১৭ বছর আগে এই পদে নিয়োগ পান। এর দুবছর পর কৌশলে ভাগিয়ে নেন কথিত ক্যাশিয়ারের পদ। বর্তমানে দুই পদেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে একটি পদে টানা ১৭ বছর এবং আরেক পদে টানা ১৫ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারি চাকরিবিধি অনুসারে সাধারণত তিন বছরের বেশি সময় একই কর্মস্থলে থাকার কথা না থাকলেও তিনি ‘অদৃশ্য ক্ষমতাবলে’ প্রায় দেড় যুগ একই অফিসে কর্মরত। বলছিলাম কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মচারী এসএম আসাদুজ্জামানের কথা।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আসাদুজ্জামান ঢাকার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাসিক মাসোহারা দিয়ে দুই পদে টানা ১৭ বছর ধরে বহাল আছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক তদন্ত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর পাঠানো এক লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, একজন তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারী হয়েও এসএম আসাদুজ্জামান বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। তার সম্পদের তালিকায় রয়েছে ঢাকায় তিনটি ফ্ল্যাট, টাঙ্গাইলে পাঁচতলা বাড়ি ও ১৫ তলা নির্মাণাধীন ভবন, ঢাকায় পাঁচটি প্লট, কক্সবাজারে চারতলা বাড়ি, গাজীপুরে ২৪ একর জমিতে কটেজ, টাঙ্গাইলে ৯২ বিঘা জমি ও বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল অর্থ। এছাড়া কক্সবাজারে শেয়ারে হোটেল ও রেস্টুরেন্টের মালিকানা রয়েছে তার।

সূত্র জানায়, আসাদুজ্জামান মাসে ৪ থেকে ৫ বার বিমানযোগে ঢাকা যাতায়াত করেন। তৃতীয় শ্রেণির একজন সাধারণ কর্মচারীর জন্য এই ভ্রমণ অস্বাভাবিক বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

অভিযোগ রয়েছে, এই কর্মচারীর সঙ্গে ছিল আওয়ামী লীগের পতিত সরকারের সাবেক মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের ঘনিষ্ঠতা। তাদের আস্থাভাজন হয়ে এসএম আসাদুজ্জামান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটও গড়ে তোলেন। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদের মালিক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যামামলা, ঘুস, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি ও অনিয়মের একাধিক অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানা ও আদালতে পৃথক দুটি মামলাও রয়েছে।

সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলার পিইডিপি-৪ প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ (কনসালট্যান্ট) মো. ফরিদ হাসানের নামে আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়। একই অভিযোগের অনুলিপি স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সচিবসহ বিভিন্ন দপ্তরের ১২ কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে। যদিও মো. ফরিদ হাসান এই অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তার দাবি, তার নাম দিয়ে অন্য কেউ এই অভিযোগ করতে পারেন। তবে সংশ্লিষ্টদের অনেকেই বলছেন, ক্যাশিয়ার এসএম আসাদুজ্জামান তাকে ‘ম্যানেজ’ করায় এখন ফরিদ হাসান অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছেন।

ওই লিখিত অভিযোগমতে, আসাদুজ্জামান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠিকাদারি কাজ নিজের দখলে রেখেছেন এবং প্রতিটি বিল থেকে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ১ থেকে ২ শতাংশ কমিশন আদায় করেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সন্তুষ্ট রাখতে নিয়মিত ঘুস, উপহার ও কক্সবাজার থেকে কাঁচা মাছ এবং শুঁটকি উপটৌকন হিসেবে পাঠান।

সূত্রমতে, নিজের কর্মস্থলের এক অফিস সহায়কের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কেরও অভিযোগ উঠেছে তার। এছাড়া সরকারি অর্থ অপচয় করে অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মচারীকে মাসিক বেতন দিয়ে কর্মরত রাখা হয়েছে। এছাড়া সরকারি অফিস নিজের খুশিমতো রাতের পার্টিসহ বিভিন্ন আয়োজনে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ভাঙাড়ি শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা

২০২৩ সালের ২ এপ্রিল রাতে চুরির অপবাদ দিয়ে কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কম্পাউন্ডের ভেতর বেঁধে রাখা হয় লালমনিরহাটের মোগলাহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ গ্রামের মাহির উদ্দিনের ছেলে মমিনুল ইসলামকে। তিনি কক্সবাজার শহরে ভাঙাড়ি শ্রমিকের কাজ করতেন। পরে সেখানে দায়িত্বরত নিরাপত্তাপ্রহরীসহ বেশ কজন মিলে তাকে রাতভর মারধর করে। পরদিন সকালে মুমূর্ষু অবস্থায় মমিনুলকে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। পরে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মমিনুল।

পরিবারের অভিযোগ, হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের নায়ক ছিলেন কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ক্যাশিয়ার এসএম আসাদুজ্জামান। তার নির্দেশেই সেদিন রাতে মমিনুলকে পেটানো হয়। এছাড়া ওই হত্যাকাণ্ডে টার্ন বিল্ডার্সের কর্মকর্তা নাহিদ ও সাদ্দামসহ জনস্বাস্থ্যের আরও কজনের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু আসাদুজ্জামান মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তদন্ত ও মামলার অগ্রগতি থামিয়ে দেন।

ভাই আমিনুল ইসলামের অভিযোগ, পুলিশ শুরু থেকেই ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় ছিল। কারণ, এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার পরিচয় পাওয়া সত্ত্বেও তড়িঘড়ি করে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে লাশ দাফন করে পুলিশ। দাফনের পর মামলা করা হয়েছে শুধু নিরাপত্তাপ্রহরী মিজানুর রহমানকে আসামি করে। কিন্তু ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত ছিল।

জানতে চাইলে কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইবনে মায়াজ প্রামাণিক বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখবেন।’

অন্যদিকে এসএম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সব অভিযোগ পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’ এছাড়া কক্সবাজার কিংবা অন্য কোথাও নিজের কোনো সম্পদ নেই বলেও দাবি আসাদুজ্জামানের।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘এক ব্যক্তি দুই পদে থাকতে পারেন না। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সূত্র: আমার দেশ 

চিকিৎসকের যৌন নির্যাতনের শিকার ২৯৯ নারী-কিশোরী। (BDC CRIME NEWS24

BDC CRIME NEWS24 চিকিৎসকের যৌন নির্যাতনের শিকার ২৯৯ নারী-কিশোরী: প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০৫:৩৯  ফ্রান্সে সাবেক এক সার্জনের বিরুদ্ধে ২৯৯ রোগীক...