BDC CRIME NEWS24
জঙ্গি নাটক সাজিয়ে মিথ্যে মামলায় ফাঁসির আশঙ্কায় তরুণ প্রকৌশলী:
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫, ১০: ০২
শেখ হাসিনার শাসনামলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে লেখক-ব্লগার হত্যা মামলাগুলোতে নির্দোষ ব্যক্তিদের ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে একাধিকবার। এমনই এক বিতর্কিত মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয় কম্পিউটার প্রকৌশলী মুজাম্মিল হুসাইন সাইমনকে, যিনি এখন ফাঁসির দণ্ডের অপেক্ষায়।
মামলাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগ কীভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে বিচারিক প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল- তা আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। নির্যাতন, স্বীকারোক্তি আদায় এবং পরিবারকে জিম্মি করার নানা কৌশল প্রয়োগ করে প্রকৌশলী সাইমনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, যেখানে যথাযথ সাক্ষ্য-প্রমাণের ঘাটতি স্পষ্ট।
গ্রেপ্তার ও আসল পরিচয় মুছে ফেলা
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। ঢাকার বাউনিয়া বাদালদি রোডের ‘নিরিবিলি’ নামের ১৬ নম্বর বাড়ি থেকে কম্পিউটার প্রকৌশলী মুজাম্মিল হুসাইন সাইমনকে তার স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানের সামনে থেকে তুলে নেয় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সদস্যরা। সিটিসিসির তৎকালীন প্রধান মনিরুল ইসলামের নির্দেশে এই অভিযান চলে।
গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তিনি একটি ওয়েব ডিজাইন প্রতিষ্ঠানে প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ করতেন। ৪৮ দিন গুম করে রাখার পর একই বছরের ১৯ নভেম্বর তাকে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়, যেখানে সিটিটিসি তাকে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর সদস্য হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়।
তাকে নাস্তিক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়, সমকামী অ্যাক্টিভিস্ট জুলহাজতনয় এবং লেখক-প্রকাশক দীপন হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি হিসেবে দাবি করে পুলিশ। এই নাটকীয় পরিচয় পরিবর্তনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো তার প্রকৃত পরিচয় মুছে ফেলে। এরপরই তছনছ করে দেওয়া হয় মুজাম্মিলের জীবন।
সন্দেহজনক বিচার প্রক্রিয়া ও মৃত্যুদণ্ড
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মুজাম্মিলকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। অথচ আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সাক্ষ্য-প্রমাণের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও ২০২১ সালে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুজিবুর রহমান তাকে এই রায় দেন।
পরিবারের দাবি, সদস্যদের গুম ও নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে মুজাম্মিলকে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়। তিনি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য নন বলে বারবার দাবি করলেও বিচার বিভাগ সেই দাবি উপেক্ষা করেছে।
শেখ হাসিনার পতনের পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট মামলাগুলোর পুনরায় তদন্তের দাবি করেন তার ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল হোসাইন। তিনি বলেন, ‘আমরা হাইকোর্টের নির্দেশে পুনরায় তদন্ত চাই, অথবা দ্রুত উচ্চ আদালতে স্বচ্ছ বিচার দরকার।’
বর্তমানে মুজাম্মিল কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে বন্দি রয়েছেন। তার পরিবারের অভিযোগ, তাকে আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগেও হয়রানি করা হয়েছে। তার ভাই আব্দুল্লাহ আল হোসাইন দাবি করেন, ‘এটা স্পষ্ট যে, আওয়ামী লীগ আমলে বিচার প্রক্রিয়ায় পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে, যেখানে সামান্য সন্দেহে কাউকে ‘জঙ্গি’ হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।’
ভয়াবহ নির্যাতনের মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায
নির্যাতনের মাধ্যমে কীভাবে ব্লগার-লেখক হত্যাকাণ্ডগুলোতে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, তা তুলে ধরেছেন তরুণ প্রকৌশলী মুজাম্মিল। ৩০ জুলাই জেলখানা থেকে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি সিটিটিসি কর্মকর্তাদের দ্বারা চালানো নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর বিবরণ দিয়েছেন। সেই চিঠির কপি ‘আমার দেশ’-এর কাছে রয়েছে।
চিঠিতে মুজাম্মিল লেখেন, ‘গ্রেপ্তারের পর প্রথম মাসজুড়ে আমাকে সার্বক্ষণিক হাত-পা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। এরপর সিটিটিসি কার্যালয়ে স্থানান্তর করে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতন করে ব্লগার-লেখক হত্যাকাণ্ডের মামলায় জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়।
মুজাম্মিল লেখেন, ‘পুলিশ আমাকে জানায়, শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আওতায় আসল অপরাধীদের সবাইকে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যা করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি মহলে সমর্থন পেতে মামলা নিষ্পত্তির জন্য স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি অনিবার্য।’
তিনি লেখেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার সেক্যুলার অনুসারীদের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করায় আমাকে শিবির বা হিযবুত তাহরির সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়। ক্যাম্পাস ছাড়ার পরও ইসলামের পক্ষে সক্রিয় থাকায় সিটিটিসি আমাকে টার্গেট করে।’
স্বীকারোক্তি আদায়ে ক্রসফায়ারের হুমকি
ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি আদায়ে মুজাম্মিলকে ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি। মুজাম্মিল জানান, আটক হওয়ার পর তাকে খাবার ও ঘুম থেকে বঞ্চিত করা হয়। এক মাসেরও বেশি সময় পর গভীর রাতে তাকে স্ট্রেচারে করে একটি নতুন ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে এবং আরো দুই যুবককে আটক রাখা হয়।
প্রকৌশলী মুজাম্মিল বলেন, ‘আমাদের হাতকড়া ও পায়ের বেড়ি খোলা হয়নি। কর্মকর্তারা আমার সহপাঠী আশফাকের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে প্রশ্ন করেন। এরপর ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যার সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করতে বলেন। এ জন্য আমাকে ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া হয় এবং বলা হয়, ‘যদি জবানবন্দি না দাও, তবে ভয়াবহ নির্যাতনসহ ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
শারীরিক নির্যাতনের মধ্যে ছিল হাতকড়া পরিয়ে কয়েক ঘণ্টা গ্রিলে ঝুলিয়ে রাখা, ইলেকট্রিক শক দেওয়া ও শরীরের জয়েন্টে আঘাত করা। সবচেয়ে কষ্টকর ছিল ঠাণ্ডা পানি ঢেলে নির্যাতন।
মুজাম্মিল বলেন, ‘একদিন রাজু নামে এক যুবককে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরদিন তার মৃত্যুসংবাদ জানানো হয়। এরপর সাজিদ নামে আরও এক তরুণও একইভাবে গুম হন এবং তার মৃত্যুসংবাদ আসে। এ ঘটনার পর আমি জীবিত থাকার জন্য এবং আমার পরিবারের কথা ভেবে জবানবন্দি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’
ভাই আব্দুল্লাহ আল হোসাইন বলেন, ‘সিটিটিসি ভয়াবহ নির্যাতনের মাধ্যমে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করে হাসিনার ক্যাঙ্গারু কোর্টে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’
পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট যৌথ প্রযোজনা
অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের মামলায় মুজাম্মিল ৩৪২ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দিতে বলেন, ‘মামলায় আমার নামে যে স্বীকারোক্তি প্রদর্শিত হয়েছে তা আমার নয়, বরং তা তদন্তকারী কর্মকর্তার রচিত মিথ্যা বক্তব্য।’ তিনি বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার কাছ থেকে একটি মাইসেল মোবাইল জব্দ দেখিয়েছেন, যা আমার কাছে ছিল না।
হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট সিসিটিভি ফুটেজে আমাকে দেখা যায়নি। আমার কাছ থেকে জব্দকৃত ল্যাপটপে হত্যাকাণ্ড-সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মামলার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিকটিম স্বয়ং আমার বিরুদ্ধে সাজানো নাটক বলে মন্তব্য করেছেন।’
মুজাম্মিল বলেন, ‘সিটিটিসির সশস্ত্র পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের কক্ষে উপস্থিত অবস্থায় পুলিশের খসড়া দেখে ম্যাজিস্ট্রেট জবানবন্দি লিখে দেন। প্রচণ্ড শারীরিক ও মানসিক চাপের মুখে আমার স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। পরে আরও ৫-৬ জনকে এভাবেই পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট যৌথ প্রযোজনায় বলির পাঁঠা বানানো হয়। এ তিনটি মামলা শুধু ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে নিষ্পত্তি করা হয়। প্রকৃত বাস্তবতা জানার জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলাগুলোর পুনরায় তদন্ত প্রয়োজন।’
সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের ভূমিকা
মুজাম্মিলের লেখা চিঠি বিশ্লেষণে স্পষ্ট হয় যে, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা দাখিল করা হয়েছিল, যেখানে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে দ্রুত সাজা দেওয়া হয়েছিল। মামলার নথি বিশ্লেষণে অনিয়ম স্পষ্ট হলেও মৃত্যুদণ্ডই ছিল একমাত্র ভিত্তি।
মুজাম্মিল জানান, তার বাবার বিরুদ্ধে চাপ ও জেলে যাওয়ার হুমকির মুখে তিনি স্বীকারোক্তি দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনটি ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ প্রেক্ষাপটে বিদেশি রাষ্ট্রের স্বার্থে প্রয়োগ করা হয়।
মুজাম্মিলের দাবি, ‘আমেরিকান দূতাবাস থেকে আগত দুই কর্মকর্তার সামনে আমাকে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়। এরপরই আমার বাবাকে ছেড়ে দেওয়া হয়, কিন্তু আমার ছোট ভাইকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়া হয়।’
মুজাম্মিল বলেন, ‘সিটিটিসির ভাষ্য হলো ‘জঙ্গিবাদ’ আমাদের জন্য অত্যন্ত দরকারি ইস্যু, কারণ এটি আমেরিকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র।’
অভিজিৎ হত্যামামলার প্রধান সাক্ষী যা বললেন
লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ হত্যামামলার অন্যতম সাক্ষী ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হামলার ছবি তোলেন এবং আহত বন্যা আহমেদকে হাসপাতালে নিয়ে যান। আমার দেশ-এর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আসামিরা কাঠগড়ায় ছিল, তবে আমি কাউকে শনাক্ত করতে পারিনি। আমি ঘটনাস্থলে কাউকে দেখিনি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আমাকে মামলার কাগজ দিয়ে বললেন, ‘এই কাগজে যা লেখা আছে তা বলো।’ আমি বলি, ‘আমি যা দেখেছি, সেটাই বলব।’ এরপরও আমাকে সঠিক তথ্য দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়; কিন্তু আমি আমার দেখা সত্যিটাই বলেছি।’
জীবন আহমেদ আরো বলেন, ‘সাক্ষ্য দিতে আসা এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাকে জানান, পুলিশ তাকে অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিতে পাঠিয়েছে। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না।’
জীবন আহমেদ বলেন, ‘অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী কখনো আদালতে সাক্ষ্য দেননি এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কখনো তার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মামলার স্টেটমেন্টে আমাকে সাধারণ পথচারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল; তবে আমি একজন সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফার।’
জীবন বলেন, ‘আমাকে ৪০ মিনিটের মতো আদালতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল এবং পরে ডিবি অফিসে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইও জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।’
এখন তদন্ত কর্মকর্তা যা বলছেন
মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম আমার দেশকে জানান, আসামি মুজাম্মিল হুসাইন সাইমন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে তিনি মন্তব্য করেন, ‘সাইমন ভালো ছেলে। তার সঙ্গে একসঙ্গে নামাজ পড়েছি।’
শেখ হাসিনার পতনের পর মনিরুল ইসলামকে মিরপুর মডেল থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে মাত্র এক মাস পরই সেখান থেকে সরিয়ে তাকে ডিবিতে বদলি করা হয়।
‘সাইমন তো বলেছেন তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে এবং গুমের পর ব্যাপক নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে’- এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
এ ছাড়া মামলার তদন্ত চলাকালে মুজাম্মিল হুসাইন সাইমনকে সিটিটিসিতে দুই মাস গুম করে রাখার অভিযোগ ওঠে, যা তৎকালীন ডিসি মহিবুলের নির্দেশে করা হয়। এমনকি মনিরুল ইসলামেরও এতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। আমি অসুস্থ। এ মুহূর্তে ট্রেনিংয়ে আছি। চেয়ারে বসে ক্লাস করছি।’
মামলার দুর্বলতার বিষয়ে আইনজীবীদের মন্তব্য
আইনজীবীরা জানান, শুধু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে অভিযুক্তকে সাজা দেওয়া যায় না। সাজা দেওয়ার জন্য অন্তত একটি সমর্থনমূলক সাক্ষ্য বা প্রমাণের প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ভিজিটিং স্কলার ও মানবাধিকারকর্মী মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দ্বারা পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের হেফাজতে নির্যাতন চালিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। শেখ হাসিনার সরকারে বিচার ব্যবস্থা বর্তমানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।’
মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান আরো বলেন, ‘সব হত্যামামলার পক্ষপাতহীন পুনঃতদন্ত অপরিহার্য। যারা এসব নির্মমতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা উচিত। তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার দক্ষতা ও পেশাদারত্বের মানোন্নয়নের জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহরিয়ার মাহমুদ বলেন, ‘ভুক্তভোগীর উচিত অবিলম্বে উচ্চ আদালতে রিট করার মাধ্যমে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা এবং জামিন আবেদন করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা। একইসঙ্গে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত।’
সূত্র: আমার দেশ