Wednesday, July 2, 2025

গুমের পর চালানো হতো ১৭ ধরনের নির্যাতন। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

গুমের পর চালানো হতো ১৭ ধরনের নির্যাতন:

(ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নির্যাতনের কথা জানালেও তা উপেক্ষা)

প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৫

দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো কাউকে গুম করেও ক্ষান্ত হতো না। দিনের পর দিন গোপন বন্দিশালায় আটকে রেখে চালানো হতো অবর্ণনীয় নির্যাতন। কাউকে গুম করার পর কী কী ধরনের নির্যাতন চালানো হতো, তার একটি চিত্র উঠে এসেছে গুম-সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির (গুম-সংক্রান্ত অনুসন্ধান কমিশন) প্রতিবেদনে। গত জুনের শুরুতে সরকারের কাছে দ্বিতীয় অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এই কমিশন। গতকাল মঙ্গলবার কমিশন ওই প্রতিবেদনের একটি অংশ প্রকাশ করে। যাতে গুমের শিকার ব্যক্তিদের ওপর চালানো অন্তত ১৭ ধরনের নির্যাতনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

কমিশন প্রতিবেদনে বলেছে, তারা ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত দেশে চালু থাকা গুম ও নির্যাতনের পদ্ধতিগত চর্চা উন্মোচনের চেষ্টা করেছেন, যা রাষ্ট্রযন্ত্রের কিছু অংশ দ্বারা, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতো।

বিভিন্ন বাহিনীর দায়িত্বশীলরা ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে গুম ও নির্যাতন সম্পৃক্ত আলামত ধ্বংসের চেষ্টা করেছে। তা সত্ত্বেও কমিশন এমন সব তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে যেগুলো ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্যের সঙ্গে মিলে যায়। উদাহরণ হিসেবে কমিশন জানিয়েছে, একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বন্দিশালায় নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করা হতো ঘূর্ণায়মান চেয়ার, টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেলে (টিএফআই) মানুষ ঝুলিয়ে রাখার জন্য ব্যবহৃত হতো পুলি-সিস্টেম এবং একাধিক স্থানে ছিল সাউন্ডপ্রুফ ব্যবস্থা (শব্দ নিরোধক), যার ফলে নির্যাতনের সময় ভুক্তভোগীদের চিৎকার বাইরের কেউ শুনতে পারত না।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীদের ‘গুম’ করার কোনো রেকর্ড বা নথি থাকত না। যে কারণে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো দায়মুক্তভাবে নির্যাতন চালাতে পারত বলে জানিয়েছে কমিশন।

পরবর্তীতে জনসমক্ষে হাজির করার আগে নির্যাতনের চিহ্ন লুকাতে কিছু ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের ওষুধ বা মলম দেওয়া হতো, যাতে ক্ষতচিহ্ন সহজে নজরে না আসে। অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতনের চিহ্ন মুছে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেই তাদের মুক্তি দেওয়া হতো। কমিশন জানিয়েছে, অনেক সময় ভুক্তভোগী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির হয়ে স্পষ্ট নির্যাতনের চিহ্নসহ গুমের কথা জানালেও তা উপেক্ষা করা হতো।

ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে নির্যাতনের কিছু চিত্র পুনর্নির্মাণ করেছে গুম-সংক্রান্ত অনুসন্ধান কমিশন। যেগুলো কমিশনের প্রতিবেদনে যুক্ত করা হয়েছে।

সর্বব্যাপী অস্বস্তি: শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের সম্মিলিত প্রভাবে ভুক্তভোগীরা দীর্ঘ সময় ধরে চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। তাদের প্রায়ই প্রহরীদের অর্ধেক পরিমাণ খাবার দেওয়া হতো। হাতকড়া পরিয়ে ও চোখ বেঁধে নির্জন সেলে একা রাখা হতো। নিজের ভাগ্যে কী ঘটবে, সেই অনিশ্চয়তার সঙ্গে এই নির্মম অবস্থা নিরবচ্ছিন্ন মানসিক চাপ তৈরি করত।

থাকার জায়গার ভয়াবহ ও অমানবিক অবস্থা: অত্যন্ত ছোট ও সংকীর্ণ কক্ষগুলো বন্দিদের জন্য সর্বোচ্চ অস্বস্তি তৈরি করত। ভুক্তভোগীদের শরীর অস্বাভাবিকভাবে দীর্ঘ সময় রাখা হতো। ৪৬ বছর বয়সী একজন পুরুষ ২০১৫ সালে গুম হওয়ার পর ৩৯১ দিন নিখোঁজ ছিলেন। তিনি নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদ শেষে যাওয়ার পরে বালিশ সরাই ফেলত। একদম শীতের মধ্যে কম্বল-বালিশ সব সরাই ফেলছে। ... আর এমনি শাস্তি দিত। চেয়ার ছাড়া (খালি পায়ের ওপর ভর দিয়ে) বসায় রাখত।’

ব্যক্তিগত গোপনীয়তাহীন অপমানজনক সেল জীবন: সংকীর্ণ কক্ষ। স্যানিটেশনের জন্য শুধু একটি বিল্ট-ইন প্যান ব্যবহার করতে হতো। এমনকি প্রসাব করা বা মলত্যাগের সময়ও সিসিটিভির মাধ্যমে নজরদারির মধ্যে থাকতে হতো। পুরুষ ভুক্তভোগীদের জন্য সেলের ভেতরে গোপনীয়তার খুবই অভাব ছিল। সেলে টয়লেট ব্যবহারের জন্য নিচু বিল্ট-ইন প্যান বসানো ছিল। তবে, মাঝে কোনো দেয়াল না থাকায়, ভুক্তভোগীরা যখন শুয়ে থাকতেন, তখন তাদের শরীর প্রায়ই ওই প্যানের ওপরেই পড়ে থাকত। যার ফলে তারা ময়লা, প্রস্রাব ও মলের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে থাকতে বাধ্য হতেন।

নারীদের জন্য বিশেষ শাস্তি : ২০১৮ সালে তুলে নেওয়ার পর ২৫ বছর বয়সী এক নারী ২৪ দিন নিখোঁজ ছিলেন। তিনি বলেন, ‘অনেকটা ক্রুসিফাইড হওয়ার মতো করে হাত দুই দিকে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখছে। … আমার পিরিয়ড হওয়ার ডেট ছিল অনেক লেটে। কিন্তু যেই টর্চার করে তাতে আমি এত পরিমাণ অসুস্থ হয়ে যাই যে, সঙ্গে সঙ্গে আমার পিরিয়ড আরম্ভ হয়ে যায়। তারপর উনাদের বলি যে, আমার তো প্যাড লাগবে—এটা নিয়ে অনেক হাসাহাসি করে ওরা।’

নিষ্ঠুর আঘাত: নিষ্ঠুরভাবে আঘাত করা ছিল নির্যাতনের সবচেয়ে সাধারণ ও সর্বব্যাপী রূপ। শরীরের প্রায় প্রতিটি স্থানে এবং প্রায় প্রত্যেক ভুক্তভোগীর ক্ষেত্রেই এটি ঘটেছে। ২০২৩ সালে ৪৭ বছর বয়সী একজন পুরুষকে ধরে নিয়ে ১৬ দিন গুম করে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিট। তিনি বলেন, ‘…চোখে কখনো গামছা দিয়া, কখনো ওই যে জম টুপি, এগুলা দিয়ে বাঁধা থাকত। হাত কখনো সামনে, কখনো পেছনে। আর যখন বেশি মারবে, তখন এই হাত পেছনে দিয়ে রাখত আর আমার এই কনুইগুলো, দুই হাঁটু এগুলোতে খুব জোরে জোরে মারত মোটা লাঠি দিয়ে। ... তো আমি মনে করতাম যে, আমার হাড়গুলো বুঝি ভেঙে যাবে, কিন্তু পরবর্তীতে দেখলাম যে ফুলে অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে, কিন্তু হাড় ভাঙছে এরকম বুঝি নাই।

আঘাতের স্থায়ী চিহ্ন: একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষায়িত ইউনিটের সদস্যরা ২৩ বছর বয়সী এক ভুক্তভোগীকে ২০১৭ সালে অপহরণের পর ৭২ দিন গুম করে রাখে। জেআইসিতে আটকে রেখে টানা নির্যাতনের কারণে তার নাভির দুই পাশের আঘাতের চিহ্ন এখনো রয়েছে। তিনি বলেন, ‘…আমার পা বেঁধে উপর দিকে করে ঝুলাইছে। মাথা নিচের দিক, পা উপর দিক দিয়ে। আমার শরীরে কোনো পোশাক রাখে নাই তখন, একেবারে উইদাউট ড্রেস। তারপর এলোপাতাড়ি আমাকে দুজনে একসঙ্গে পেটাতে থাকে।’

ছাদের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্যাতন: বন্দিদের ওপর যে নিষ্ঠুর শারীরিক নির্যাতন চালানো হতো, তার মধ্যে একটি ছিল ছাদের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্যাতন। ২০২৩ সালে ৪৭ বছর বয়সী একজনকে ১৬ দিন গুম করে রাখা হয়। তিনি বলেন, ‘… বলতেছে, এভাবে হবে না। এরে লটকা। টানাইতে হবে। তো একজন এএসআই লোক হবে, ও আমাকে দুই হাতে রশি লাগায়া ওই যে ফ্যানের হুক থাকে ছাদের মধ্যে, এটার মধ্যে ওর রশি দিয়ে এরকম ঝুলাইল। শুধু পায়ের বুড়ো আঙুলটা লাগানো থাকে মেঝেতে আর পুরা শরীরটা ঝোলানো।’ ভুক্তভোগীর হাত ও পা বেঁধে শরীর উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখেও নির্যাতন করা হতো।

নখ উপড়ে ফেলা: নির্যাতনের একটি পদ্ধতি হিসেবে প্রায়ই নখ উপড়ে ফেলা হতো। ২০১৭ সালে একজনকে অপহরণ করে ৫৬ দিন গুম করে রাখে একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষায়িত ইউনিটের সদস্যরা। নির্যাতনের নির্মম চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘… তো আলেপ উদ্দিন—পরে নাম জানতে পারছি, তখন জানতাম না। সে লাঠি নিয়ে খুব টর্চার করল। ... একদিন আমাকে বেশি টর্চার করল। টর্চার করে বলল যে, তাকে টাঙ্গায় রাখো, ঝুলায় রাখো। তো সেলে গ্রিল আছে না? রডগুলা যে আছে ... [ওগুলার সঙ্গে] আমাকে এমনে ঝুলায় রাখলো।... হাতকড়ার সঙ্গে বাইন্ধা রাখল। ... তো এইভাবে অনেক ঘণ্টা রাখার পরে আমি আর পারছি না। ওইদিন পরে যখন টর্চার করল, আঙুলের নখটা উঠে গেছিল পুরা...।’

নখের নিচে সুচ ঢুকিয়ে নির্যাতন : নখের নিচে সুচ ঢোকানো ছিল একটি সাধারণ ও নিয়মিত নির্যাতনের কৌশল। একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষায়িত ইউনিটের হাতে গুম হওয়ার পর ১১৩ দিন নিখোঁজ ছিলেন একজন। তিনি বলেন, ‘…এর মধ্যে একদিন আঙুলটাকে এভাবে প্লাস দিয়ে ধরছে। ধরার পরে টেবিলের ওপরে হাত রেখে, প্লাস ধরে, আরেকজন সুচ ঢুকাইছে। এই যে সুঁইয়ের দাগ।’

নির্যাতনের আরেক পদ্ধতি ‘বাঁশ ডলা’: ২০১৭ সালে ১৯ দিন গুম থাকা একজন নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘… শোয়ানোর পরে আমার এই দুহাতের উপরে দিয়া আর ঘাড়ের নিচে দিয়া একটা বাঁশ দিছে। তার পরবর্তীতে পায়ের নিচে, রানের নিচে দিয়ে একটা দিল, আবার রানের উপরে দিয়েও একটা দিছে। দেওয়ার পরে এরা ওইভাবে আমাকে কিছুক্ষণ রাখলো যে, ‘বড় স্যার আসতেছে না।’ কিছুক্ষণ পরে সে আসছে। আসার পরে হঠাৎ করেই বললো, ‘এই উঠো।’ বলার সঙ্গে সঙ্গে আমি মনে করলাম যে, আমি আর দুনিয়ার মধ্যে নাই। মানে এরকমের যন্ত্রণা আমার এই দুই হাতের বাহুতে শুরু হইছে, আর দুই পায়ের মধ্যে শুরু হইছে। আমার মনে হইতেছে কেউ আমার এই দুই হাতের আর পায়ের গোস্তগুলো ছিঁড়া ফেলতেছে।...।’

বৈদ্যুতিক শক: নির্যাতনের দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচলিত পদ্ধতি ছিল বৈদ্যুতিক শক দেওয়া। এমনকি অপহরণের পর যানবাহনেও বৈদ্যুতিক শক দিত। গুম হওয়ার পর ৪৬ দিন নিখোঁজ থাকা একজন বলেন, ‘…মনে হচ্ছে হয়তো কিছুতে সুইচ টিপছে, অটোমেটিক আমার শরীরটা উপরে উঠে যাচ্ছে। ... এই মুহূর্তে আমার কাপড় খুলে, আবার ওই একই ক্লিপ লাগায় দেয় আমার গোপন দুইটা অঙ্গে। এবং ওই জিজ্ঞাসাবাদ সেম চলতে থাকে। যখনই সুইচ দেয়, আমার মনে হয়েছে যে, আমার সে অঙ্গগুলো পুড়ে যাচ্ছে ... এবং মাঝে মাঝে আমি গোস্ত পুড়লে যেরকম একটা গন্ধ লাগে, সেই গন্ধটা পাইতাম আর কী। ...।’

ওয়াটার বোর্ডিং: নির্যাতনের আরেকটি পদ্ধতি হলো ওয়াটার বোর্ডিং। এতে ভুক্তভোগীকে শুইয়ে দিয়ে তার মুখ ঢেকে ওপর থেকে বারবার পানি ঢালা হয়। এতে তিনি ডুবে যাচ্ছেন—এমন অনুভূতি হয়, যেন শ্বাস নিতে পারছেন না। অনেক সময় ভুক্তভোগীরা এতে অচেতন হয়ে যেতেন। বিভিন্ন স্থানে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে।

নির্যাতনে ব্যবহৃত ঘূর্ণায়মান যন্ত্র ও চেয়ার: নির্যাতনে ব্যবহৃত ঘূর্ণায়মান যন্ত্রপাতি সম্পর্কে একাধিক বিবরণ পাওয়া গেছে এবং সাক্ষ্য বিশ্লেষণ করে দুটি ভিন্ন ধরনের যন্ত্রের অস্তিত্ব স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। প্রথমটি ছিল একটি ঘূর্ণায়মান চেয়ার। টিএফআই সেলে এই চেয়ারটি ব্যবহার করা হতো, যেখানে ভুক্তভোগীদের অত্যন্ত উচ্চগতিতে ঘোরানো হতো। এর ফলে অনেকেই বমি করতেন, প্রস্রাব ও পায়খানা করে ফেলতেন, এমনকি কেউ কেউ অচেতন হয়ে যেতেন।

দ্বিতীয়টি, জেআইসিতে আটক ভুক্তভোগীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে, সেটি চেয়ার নয়, বরং পুরো শরীর ঘোরানোর জন্য ব্যবহৃত একটি যন্ত্র।

চলত যৌন নির্যাতনও: যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলো ভুক্তভোগীদের অনেকে শেয়ার করতে চাইতেন না। কমিশন বলেছে, ‘আমরা একাধিক বিশ্বাসযোগ্য ঘটনার সাক্ষ্য পেয়েছি, যেখানে নির্যাতনের নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল ভুক্তভোগীদের যৌনাঙ্গ।’

প্রস্রাবের সময় বৈদ্যুতিক শক : লাঞ্ছনা ও যন্ত্রণার একটি পদ্ধতি হিসেবে ভুক্তভোগীদের যৌনাঙ্গকে নির্যাতনের লক্ষ্যবস্তু করা হতো। ৪৫ দিন গুম থাকা একজন বলেন, ‘…জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে কইতেছে, এখানে প্রস্রাব কর। এখন এখানে প্রস্রাব কর। প্রস্রাব করার সঙ্গে সঙ্গে আমি অনুমান করছি যে, আমি মনে হয় পাঁচ ফুট উপরে উঠছি, একটা ফাল দিয়া, ইলেকট্রিক শক সবচেয়ে বড় কোনো স্থানে। ...।’

যৌনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক : যৌনাঙ্গকে নির্যাতনের লক্ষ্যবস্তু করার বর্ণনা তুলে ধরে ৩৯ দিন গুম থাকা একজন বলেন, ক্লিপ দিয়ে কারেন্ট শক দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। গাড়ির মধ্যে খুব চেঁচাচ্ছি ... দুই পা সামনের সিটে লাফানোর কারণে আমার প্রায় এক ফুট করে দুই পা ছিলে যায়। কিন্তু ওইটার ব্যথা কিছু মনে হয়নি। কারেন্ট শকের ব্যথা এতটা ভয়ংকর।’

ভুক্তভোগীদের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব : দীর্ঘদিন গুম থাকার পর মুক্তি পেলেও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা দীর্ঘমেয়াদি মানসিক ট্রমার মধ্যে থেকেছেন। কমিশন বলছে, অনেকের পারিবারিক জীবন, যেমন বিয়ে ও সন্তান-সম্পর্কিত বিষয় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবারগুলো এই চাপ সহ্য করতে পারে না, ফলে ভুক্তভোগীরা এক অনিশ্চয়তা ও প্রান্তিকতার জীবনে আটকে পড়েন।

সূত্র: কালবেলা 

Tuesday, July 1, 2025

রাষ্ট্রীয় মদদে গুম- র‍্যাব ও ডিজিএফআইয়ের নিষ্ঠুরতা গুম কমিশনের প্রতিবেদনে। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

রাষ্ট্রীয় মদদে গুম-

র‍্যাব ও ডিজিএফআইয়ের নিষ্ঠুরতা গুম কমিশনের প্রতিবেদনে:

প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৫, ২০: ৪৩

শেখ হাসিনার টানা ১৬ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের ছত্রছায়ায় একটি ভয়ংকর ও নিষ্ঠুর চর্চা প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল—গুম ও নির্যাতন। গুম সংক্রান্ত কমিশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন এই কালো অধ্যায়ের নির্মম বাস্তবতা প্রকাশ্যে এনেছে।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কীভাবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী, বিশেষ করে র‍্যাব ও ডিজিএফআই-এর মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে হাজারো নাগরিককে গুম করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের স্বীকার হতে বাধ্য করা হয়েছিল।

রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর পদ্ধতিগত নির্মাণ

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে গুম ছিল একটি সুপরিকল্পিত ও পদ্ধতিগত রাষ্ট্রীয় চর্চা। র‍্যাব-২, সিপিসি-৩, টিএফআই সেল, এবং সিটিটিসি এর মতো ইউনিটগুলোতে নির্যাতনের জন্য বিশেষ কৌশল ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হতো। ঘূর্ণায়মান চেয়ার, ‘পুলি সিস্টেম’ (যেখানে মানুষকে ঝুলিয়ে রাখা হত), এবং শব্দনিরোধক নির্যাতনকক্ষ গড়ে তোলা হয়েছিল যাতে ভুক্তভোগীদের চিৎকার বাইরের কেউ শুনতে না পায়। এসব ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়, বরং রাষ্ট্রীয়ভাবে গোপনীয় ও কার্যকর রাখার একটি প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুক্তভোগীদের আটক ও হেফাজতের কোনো আনুষ্ঠানিক রেকর্ড রাখার নিয়ম ছিল না, ফলে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো দায়মুক্ত থাকত। শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন মুছে ফেলার জন্য মলম লাগানো হতো কিংবা দাগ মুছে যাওয়া পর্যন্ত আটক রাখা হতো। অনেকের মুক্তির সময় এমন অবস্থা করা হতো, যাতে কেউ তাদের ক্ষতবিক্ষত শরীর শনাক্ত করতে না পারে। বহু ভুক্তভোগী স্পষ্ট নির্যাতনের চিহ্নসহ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উপস্থিত হয়েছেন, কিন্তু বিচারব্যবস্থা ছিল নির্বিকার।

শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি গুমের শিকাররা মানসিক নির্যাতন ও সন্ত্রাসেরও শিকার হয়েছিলেন। অর্ধেকের বেশি ভুক্তভোগীকে খাবার দেওয়া হতো না, চোখ বেঁধে ও হাতকড়াসহ একাকী সেলে রাখা হতো। দিনের পর দিন ঘুমাতে না দিয়ে জাগিয়ে রাখা, খালি পায়ের উপর বসিয়ে রাখা, মশার কামড় সহ্য করানো—এসব ছিল তাদের দৈনন্দিন দুঃখ।

নারীত্বের ওপর নিষ্ঠুর ও অপমানজনক নির্যাতন

নারীদের নির্যাতনের মাত্রা ছিল আরও নিষ্ঠুর। এক নারী ভুক্তভোগী জানান, তাকে ওড়না ছাড়া জানালার দিকে মুখ করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল, যেন পুরুষ প্রহরীরা তার শরীর উপভোগ করতে পারে। পিরিয়ড চলাকালে প্রয়োজনীয় প্যাড চাওয়ার সময় হাসাহাসি করা হয়। এটি ছিল নারী সত্তার ওপর নগ্ন ও সামাজিক আঘাত।

নির্মম প্রহার, বৈদ্যুতিক শক ও যৌনাঙ্গে নির্যাতন

প্রায় সকল ভুক্তভোগীই লাঠিপেটা, পিঠে থেঁতলে দেওয়া, পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা, হাত-পা বেঁধে উল্টো ঝুলিয়ে পায়ের তালুতে আঘাত—এসব নিয়মিত শাস্তির শিকার হয়েছেন। শুধু হাত-পা নয়, যৌনাঙ্গেও বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হতো । কেউ বলেছেন, প্যান্ট খুলে ক্লিপ লাগিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হতো, যা তাদের অজ্ঞান হওয়ার পর্যায়ে নিয়ে যেত।

ভয়াবহ "ওয়াটারবোর্ডিং" ও ঘূর্ণায়মান চেয়ারের নির্যাতন

মুখে পানি ঢেলে শ্বাসরোধ করে শ্বাসকষ্ট তৈরি করা হতো, যা "ওয়াটারবোর্ডিং" নামে পরিচিত। এতে ভুক্তভোগীরা মনে করতেন তারা ডুবে যাচ্ছেন। র‍্যাব ও ডিজিএফআই ব্যবহৃত ঘূর্ণায়মান চেয়ার শরীর দ্রুত ঘোরানোর মাধ্যমে শারীরিক যন্ত্রণার এক নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছিল। এতে অনেকেই প্রস্রাব বা পায়খানা করে ফেলতেন, কেউ কেউ জ্ঞান হারাতেন।

যৌন নির্যাতন: রাষ্ট্রীয় পরিকল্পিত অপমান

পুরুষদের যৌনাঙ্গ চেপে ধরা, বৈদ্যুতিক শক দেওয়া, প্রস্রাব করাতে বাধ্য করে শক দেওয়া—এসব ছিল গোপন কিন্তু বহুল প্রচলিত নির্যাতনের অংশ। এক ভুক্তভোগী বলেছিলেন, “আমি পাঁচ ফুট উপরে উঠছি মনে হয়েছিল, এমন শক লাগছিল। আমার দুই পায়ের চামড়া ছিঁড়ে গেছিল, কিন্তু সেটা টেরই পাইনি, কারণ ব্যথার কেন্দ্র ছিল অন্য স্থানে।”

অনেক ভুক্তভোগী আজও তাদের শরীরে ফাটা চামড়া, হাড়ের জোড়া নষ্ট, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস এবং যৌন অঙ্গের বিকলতা নিয়ে জীবনযাপন করছেন। মানসিকভাবে অনেকেই সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছেন। এক পিতা জানিয়েছেন, তার ১৬ বছরের ছেলেটি ২০ মাস ১৩ দিন গুম অবস্থায় থাকার পর ফিরে এসে একাকী হয়ে গেছে, হঠাৎ চিৎকার করে, ফেনা ফেলে, ঘুম ভেঙে ওঠে এবং ওষুধ খেতে চায় না। তারা বিচার, চিকিৎসা বা আইনগত সহায়তায় এখন অসহায়।

এই ভয়াবহ নিপীড়নের প্রতিটি ঘটনা প্রমাণ করে এটি কোনো বিচ্ছিন্ন কর্মচারীর কাজ নয়, বরং একটি পরিকল্পিত, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাষ্ট্রীয় অনুমোদিত দমননীতি। গুম সংক্রান্ত কমিশনের প্রতিবেদন শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনকালের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দলিল। এই দলিল আমাদের সামনে রাষ্ট্রের নির্মম ও কুরুচিকর চেহারা উন্মোচন করেছে।

গুম আর নিখোঁজ নয়—এটি আজ প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, গুম হয়েছে রাষ্ট্রের পরিকল্পনায়, রাষ্ট্রের যন্ত্র দিয়ে, এবং রাষ্ট্রের মদদে।

সূত্র: আমার দেশ 

Monday, June 30, 2025

কারাগারে আওয়ামীদের রাজকীয় জীবন, প্রশাসন নীরব। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

কারাগারে আওয়ামীদের রাজকীয় জীবন, প্রশাসন নীরব:

প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২৫, ০৯: ২৩

দীর্ঘ ১৬ বছরের আওয়ামী শাসনকালে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড এবং সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের মানুষ প্রত্যাশা করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে আওয়ামী অপরাধীদের বিরুদ্ধে সুবিচার নিশ্চিত করবে। তবে বাস্তব চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। গুম, খুন ও সীমাহীন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত আওয়ামী সন্ত্রাসীদের যেখানে জেলের ঘানি টানার কথা, সেখানে কারাগারের ভেতরেও রাজকীয় জীবনযাপন করছেন তারা। আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রতৃপ্রতিম সংগঠনের শতাধিক নেতা ও দলের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা কারা অভ্যন্তরেই বিলাসবহুল ও রাজকীয় জীবনযাপন করছেন। কারা কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বন্দিদের জন্য মোটা অঙ্কের বিনিময়ে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এর বিনিময়ে কারাগারের ভেতরে কোটি কোটি টাকার লেনদেন চলছে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র। অনেকেই আবার জেল থেকে মুক্তির পর ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন।

অন্যদিকে কারাগারের বাইরে থাকা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতারা প্রকাশ্যেই অবাধে চলাফেরা করছেন। এমনকি কারাগারে অল্প কয়েকদিন থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ফের নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তির জানান দিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন ছাত্র-জনতার উদ্দেশে। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ সমর্থিত ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ পত্রিকা ও কথিত সাংবাদিক নামধারীরা সরাসরি আওয়ামী নেতাদের সহায়তায় রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার ও উত্তেজনাকর কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সমন্বয়কারী এবং নেতৃত্বদানকারীদের প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে হত্যার মাধ্যমে দেশে প্রতিবিপ্লবের ডাক দিচ্ছেন।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, ময়মনসিংহে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ও হামলায় অভিযুক্ত প্রায় ২৫০ জন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা গত এক মাসে মুক্তি পেয়েছেন। বিষয়টি রহস্যজনক। অথচ ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া অন্যান্য গুরুতর মামলায় তাদের পুনরায় গ্রেপ্তার দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল। মুক্তির পরপরই এসব নেতা প্রকাশ্যে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার, রাষ্ট্র ও গণঅভ্যুত্থানের নেতাদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক প্রচার চালাচ্ছেন। এমনকি যারা জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার ওপর সরাসরি হামলা ও ষড়যন্ত্র করেছিলেন, তাদের বেশিরভাগের নামে এখনো কোনো মামলা হয়নি।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশ ও সমালোচনা করায় সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও সচেতন নাগরিকদের প্রকাশ্যে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হত্যা ও হামলার হুমকি দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা পুরোনো কৌশল ব্যবহার করে সমালোচকদের বিরুদ্ধে ‘জঙ্গি’ তকমা লাগানোর মাধ্যমেও অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

এসব গুরুতর অভিযোগ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে অবগত করলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, উল্টো পুলিশ অভিযোগকারীদের সহায়তার পরিবর্তে অভিযুক্ত আওয়ামী নেতাকর্মীদের গোপনে সতর্ক করে দিচ্ছে। পুলিশ আওয়ামী নেতাকর্মীদের সোশ্যাল মিডিয়ার রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট মুছে ফেলা বা ‘অনলি মি’ করার পরামর্শও দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পুলিশের নির্ভরযোগ্য তথ্যমতে, আওয়ামী সরকারের আমলে ময়মনসিংহ রেঞ্জে কর্মরত ছিলেন এমন বেশিরভাগ কর্মকর্তাই এখনো গুরুত্বপূর্ণ পদে ময়মনসিংহ রেঞ্জেই বহাল আছেন, যে কারণে তারা আওয়ামী নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনীহা দেখাচ্ছেন। এমনকি পুলিশের গোপন তথ্য ও অভিযানসংক্রান্ত গোয়েন্দা বার্তা অভিযুক্তদের কাছে আগেই ফাঁস করে দিচ্ছেন।

কারাগার থেকে একে একে বের হচ্ছেন আওয়ামী নেতাকর্মীরা

একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, গত এক মাসে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে প্রায় ২৫০ জন আওয়ামী নেতাকর্মী ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। যারা বের হয়েছেন তাদের প্রত্যেকেই স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। এরা বর্তমানে গ্রাম থেকে শুরু করে থানা, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ গোছানোর কাজ করছেন।

পুলিশের বিশেষ ব্রাঞ্চের (এসবি) এক কর্মকর্তা জানান, ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের ৭৫০ জনের বেশি নেতাকর্মী বন্দি ছিলেন। বর্তমানে গ্রেপ্তারও কম, মামলাও কম। সারা দেশের চিত্র একই। তিনি আরো জানান, আগে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তারা জেলা লেভেলের তেমন কোনো বড় নেতা নন। বড় নেতাদের প্রায় সবাই পলাতক, যে কারণে ছোট নেতারা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে বন্দি থাকায় তাদের আওয়ামী সরকারের মতো নতুন কোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো আছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রকাশ্যে ঘোরার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এখনো নিষিদ্ধ আওয়ামীদের প্রতি প্রীতি পুলিশের

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে গেলেও মাঠপর্যায়ের প্রশাসনে দেখা গেছে ভিন্নচিত্র। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনেক পুলিশ কর্মকর্তা এখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে চলছেন। শুধু তাই নয়, পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা আওয়ামীবিরোধী কর্মকর্তাদের নাম হাইকমান্ডের কাছে পাঠাচ্ছেন, তারপর আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মাধ্যমে যেসব পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার অভিযানে সক্রিয় ছিল বা রয়েছে, তাদের বদলি করে দিচ্ছে।

জানা গেছে, গত ৩ ও ৪ মে একযোগে ময়মনসিংহের ছয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বদলি করা হয়। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, এ থানাগুলো গত সাত মাসে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তার ও অভিযানে ভূমিকা রাখছিল। কিন্তু বদলির পর এসব থানায় আওয়ামী নেতাদের গ্রেপ্তার নেই বললেই চলে। বরং কারাগার থেকে একের পর এক আওয়ামী লীগের নেতারা মুক্তি পেয়ে এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরছেন।

এর পাশাপাশি আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার কিছু ব্যক্তি সাংবাদিকতার ছদ্মবেশে সরকারি অফিসের গোপন তথ্য পাচার করছেন পলাতক আওয়ামী নেতাদের কাছে। এ কাজে তাদের সহযোগিতা করছেন আওয়ামী সরকারের আমল থেকে ময়মনসিংহে বহাল থাকা কর্মকর্তারা। আর এসব কর্মকর্তা ‘শেখ হাসিনা আবারও ফিরে আসবে’ বলে এখনো বিশ্বাসী।

সমন্বয়কদের হত্যার হুমকি ও প্রতিবিপ্লবের ডাক, তবুও দায়মুক্তি

জুলাই বিপ্লবে ময়মনসিংহে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ সমন্বয়কারীদের ওপর চলমান হুমকি, হামলা ও হয়রানিমূলক প্রচার রাষ্ট্রীয় নিষ্ক্রিয়তায় বিপজ্জনক চিত্রই ফুটে উঠেছে। আন্দোলনের সফলতার পর সমন্বয়কদের অনেকেই হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর রাতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি মোবাইল ফোনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহ জেলার অন্যতম সমন্বয়ক আশিকুর রহমানকে গলা কেটে হত্যার হুমকি দেন। ওই ঘটনায় ১৯ ডিসেম্বর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত তদন্তে অগ্রগতি হয়নি। এরপর গত ২০ জানুয়ারি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আরেকজন সমন্বয়ক মোহাইমিনুল ইসলাম ওরফে শিহাবের বাড়ির দেয়ালে লাল রঙে লেখা হয়Ñ‘সমন্বয়ক মরার জন্য প্রস্তুত হ’।

সরাসরি এ ধরনের হত্যার হুমকির পর এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। একই ভাবে জাতীয় নাগরিক কমিটির ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা শাখার সদস্য আকাশ মিয়াও গত ৭ জানুয়ারি মুঠোফোনে হত্যার হুমকি পান এবং পরদিন থানায় জিডি করেন। আরো ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গত ২৬ মে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সদস্য সচিব আল নূর মোহাম্মদ আয়াশকে দিনের বেলায় ছুরিকাঘাত করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। তবে এখনো ওই হামলার কোনো ‘ক্লু খুঁজে পায়নি’ পুলিশ।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ২৩ মে কথিত আওয়ামী সাংবাদিক বদরুল আমীন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলেন, সমন্বয়কদের ঝুলিয়ে হত্যা করো, এটাই প্রতিবিপ্লব।’ এটি সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহ ও সহিংসতার উসকানি। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলেও বদরুলকে আজও গ্রেপ্তার করা হয়নি। বরং থানা ও ফাঁড়িতে রাতভর পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে আড্ডা দেন বদরুল। কিছু পুলিশ সদস্য তাকে রক্ষা করতে তৎপর। কারণ বদরুল গত ১৬ বছর ধরে পুলিশের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে অবৈধভাবে আয় করে পুলিশকে ভাগ দিয়েছেন কোটি টাকা।

দুই কোটি টাকার প্রস্তাব ও ডিআইজিকে অপমান

ময়মনসিংহে পুলিশের ওপর প্রভাব বিস্তার ও প্রশাসনকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে চেষ্টার অভিযোগ নতুন মোড় নিচ্ছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর পুলিশের এক উপমহাপরিদর্শককে (ডিআইজি) জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটুর ভাই ব্যবসায়ী আমিনুল হক শামীম পুলিশ প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে লোক মারফত দুই কোটি টাকার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ডিআইজি ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ২০২৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে ‘সমন্বয়ক’ নামধারী ছাত্রলীগ নেতা এবং কিছু কথিত সাংবাদিক ডিআইজির কার্যালয়ে গিয়ে তাকে ঘিরে উচ্চস্বরে হুমকি-ধমক এবং পদত্যাগের দাবিতে চাপ প্রয়োগ করে। ওই ঘটনায় প্রশাসনিকভাবে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

তবে আমিনুল হক শামীমের দাবি, তিনি গত বছরের নভেম্বরে বিদেশ যান এবং ডিসেম্বরে দেশে ফেছেন। তখনও তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ১৫ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। তিনি আরো বলেন, ওই সময় তার পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আটকে দিয়েছিলেন ওই ডিআইজি।

বিশেষ কর্মকর্তাদের ব্যাপারে চুপ ঊর্ধ্বতনরা

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপদে বড় ধরনের রদবদল হলেও জেলা পুলিশের বেশিরভাগ কর্মকর্তা এখনো ময়মনসিংহ রেঞ্জেই কর্মরত। অথচ তারাই ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও গুলি চালিয়েছিলেন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসব কর্মকর্তা সরাসরি জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আমিনুল হক শামীমের ব্যবসায়িক স্বার্থরক্ষায় জড়িত। শামীমের মালিকানাধীন ‘শামীম এন্টারপ্রাইজ’ ও তার ছেলে সামিউল হক সাফার বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে এসব কর্মকর্তা কাজ করছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সারা দেশে আওয়ামী লীগের প্রভাব খর্ব হলেও ময়মনসিংহে শামীমের ব্যবসা চলছে দেদার।

অপরদিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ময়মনসিংহের থানাগুলোয় উল্লেখযোগ্য কোনো হামলা, অগ্নিসংযোগ বা লুটপাটের ঘটনা না ঘটলেও ‘সহিংসতা প্রতিরোধের কৃতিত্বে’ পিপিএম পদক পেয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএম মোহাইমেনুর রশিদ। অথচ তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক শামীমের সুপারিশের ভিত্তিতে ২০২২ সালের ৮ আগস্ট ময়মনসিংহে যোগ দেন। অভ্যুত্থানের পর তাকে অন্যত্র বদলি করা হলেও অজ্ঞাত কারণে দুবার বদলি ঠেকিয়ে ফিরে আসেন ময়মনসিংহে।

জুলাই আন্দোলনকারী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা জানান, মোহাইমেনুর রশিদ আওয়ামী লীগের আমলে নিজেকে ‘সাবেক ছাত্রলীগ নেতা’ পরিচয় দিতেন এবং গোয়েন্দা পুলিশের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করতেন। শুধু তাই নয়, ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই রাতে ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে জামায়াতের প্রভাবশালী ১৯ নেতাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তারে ভূমিকা রাখেন।

ছাত্রদলের নেতা তানভির তাহের সৌরভের অভিযোগ, ২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর যৌথবাহিনী তাকে আটক করে কোতোয়ালি থানায় পাঠায়। পরে মোহাইমেনুর রশিদের নেতৃত্বে ডিবি অফিসে নিয়ে চোখ বেঁধে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএম মোহাইমেনুর রশিদ বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের আমল থেকেই এখানে কর্মরত। আমার ব্যাপারে যেসব অভিযোগ রয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জেনে নিন।’

কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আঁতাত ও সিন্ডিকেট

ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার আমিনুল ইসলামের জন্মস্থান ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায়। অন্যদিকে জেলার আতিকুর রহমানের বাড়ি জামালপুরে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে জেলারের রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। তিনি প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, শরীফ আহমদ ও ময়মনসিংহ সদরের এমপি মোহিত উর রহমান শান্তর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। ফলে আওয়ামী নেতাকর্মী ও কারা সদস্যদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ সিন্ডিকেটে আরো যুক্ত রয়েছেন কারা হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা. প্রবীর কুমার, ডা. মিথুন কুমার, ডা. রায়হান, ডিপ্লোমা নার্স আবুল বাশার ও আসাদুজ্জামান। তারা নিয়মিতভাবে আওয়ামী নেতাদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিশেষ সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে মেডিকেলে ভর্তির চুক্তি করেন। সিন্ডিকেট সদস্যরা চুক্তি অনুযায়ী টাকা পাওয়ার পরই আওয়ামী নেতাদের ‘বুকে ব্যথা’ বা ‘হার্ট অ্যাটাক’ দেখিয়ে সাধারণ ওয়ার্ড থেকে মেডিকেলে স্থানান্তর করেন।

তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, কারাগারে থাকা রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই কারা কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় প্রভাবশালী বন্দি হিসেবে বিশেষ সুবিধা ভোগ করছেন। যদিও বাস্তবে তাদের কোনো শারীরিক অসুস্থতা নেই। যেমন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম মিন্টু ও জেলা যুবলীগের সদস্য সৈয়দ সাদিকুল মোমেন তানিম কয়েক মাস কারাগারে রাজকীয় জীবনযাপন শেষে সম্প্রতি মুক্তি পানন। মুক্তি পেয়ে শফিকুল ইসলাম মিন্টু গত কয়েকদিন আগে নিরাপদে ইমিগ্রেশন শেষ করে দেশত্যাগ করেন। আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম ওরফে পেট্রোল সাইফুল ও সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র আসিফ হোসেন ডনও জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন।

কারাগারে রাজনৈতিক সভা ও হুমকি-ধমকি

বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের প্রায় ২০ জন নেতা ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি। এদের মধ্যে রয়েছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গৌরীপুরের সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিনের ছেলে তানজীর আহমেদ রাজীব, মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নওশেল আহমেদ অনি, সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান দুলাল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ও নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ওমর ফারুক সাবাস।

সূত্র জানায়, তারা সারা দিনই রাজনৈতিক মিটিং, আড্ডা ও বিলাসী জীবন পার করছেন। শুধু তাই নয়, সাধারণ হাজতি ও কয়েদিদের হুমকি দিয়ে আওয়ামী লীগের এসব নেতা হাত-পা ম্যাসাজ করিয়ে নিচ্ছেন। কারারক্ষীরা প্রতিবাদ করলে তারা বলেন, ‘তোমাদের জেল সুপার আমাদের বন্ধু, বেশি কথা বললে বদলি করে রাঙামাটি পাঠিয়ে দেব।’

টাকার বিনিময়ে রাতে কারাগার থেকে মুক্তির ব্যবস্থা

ময়ময়নসিংহ কারাগারের জানালা দিয়ে আওয়ামী নেতাদের বিশেষ সাক্ষাতের ব্যবস্থা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে ডেপুটি জেলার সিরাজুস সালেহীন, ইমতিয়াজ জাকারিয়া, আব্দুল কাদির ও রিজার্ভ প্রহরী জুলহাস ও কারারক্ষী আসিফুলের বিরুদ্ধে। প্রতিবার সাক্ষাতে তারা নিচ্ছেন পাঁচ হাজার টাকা। অন্যদিকে জামিনে মুক্ত আসামিকে শ্যোন অ্যারেস্টের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের ঘটনা ঘটছে অহরহ। আওয়ামী লীগ নেতাদের নিরাপদে কারাগার থেকে বের করে দেওয়ার জন্য নেওয়া হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা করে এবং সুযোগমতো গোপনে বের করে দেওয়ার ঘটনাও অহরহ।

সূত্র: আমার দেশ 

Saturday, June 28, 2025

মাথায় গুলিবিদ্ধ আঞ্জু আক্তার এখনো অসুস্থ। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

মাথায় গুলিবিদ্ধ আঞ্জু আক্তার এখনো অসুস্থ:

প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৫, ০৮: ৪৮

মেয়েকে খুঁজতে গত বছরের ৫ আগস্ট রাত ৯টার দিকে ঘর থেকে বের হন গৃহবধূ আঞ্জু আক্তার। মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে মেয়েকে খুঁজে পাওয়ার পর বাসায় ফেরার পথে একটি সিএনজি পাম্পের সামনে এলে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসার পরও তার মাথায় এখনো ব্যথা রয়ে গেছে। তিনি এখন দুই চোখে কম দেখেন, কানেও কম শোনেন। কোনো কাজ করতে পারছেন না। ফলে তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে পরিবার।

জানা গেছে, আঞ্জু আক্তার পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার কাঁকড়াবুনিয়া ইউনিয়নের সবুজ হাওলাদারের স্ত্রী। ১৪ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে রিয়া মনি ও মরিয়ম আক্তার নামে দুটি মেয়ে রয়েছে। স্বামী-সন্তান নিয়ে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় থাকেন। ৫ আগস্ট রাতে ছোট মেয়ে মরিয়ম আক্তার বাসার কাউকে না বলে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় ছাত্র-জনতার মিছিল দেখতে যায়। তাকে খুঁজে বের করে বাসায় আসার সময় সিএনজি পাম্পের সামনে গুলিবিদ্ধ হন আঞ্জু। তবে কোন দিক থেকে কারা গুলি চালায়, কিছুই জানেন না তিনি। পরে স্বজনরা উদ্ধার করে স্থানীয় আল হেলাল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করান। পরদিন তাকে নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসা শেষে তাকে বাসায় নেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি অসুস্থ।

আঞ্জু আক্তার আমার দেশকে বলেন, স্বামী সবুজ হাওলাদার জন্মগতভাবে দুই চোখে কম দেখেন। তিনি একটি ভ্যানে করে গলিতে গলিতে বিছানার চাদর বিক্রি করেন। আমি বাসায় সেলাই মেশিন দিয়ে জামাকাপড় বানাতাম। দুজনের আয় দিয়ে ভালোই চলছিল। ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই আমি অসুস্থ। এখনো কোনো কাজকর্ম করতে পারছি না। আমি সঠিক চিকিৎসা পাইনি। সব সময় মাথাব্যথা করে। দুই চোখে কম দেখি, কানেও কম শুনি। একজনের আয় দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর। গুলির ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের উপযুক্ত বিচার চাই।

আঞ্জুর স্বামী সবুজ হাওলাদার আমার দেশকে বলেন, বউয়ের চিকিৎসায় অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। ভ্যানে চাদর বিক্রি করে যে আয় হয়, তাতে সংসার চলে না।

মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, আঞ্জু আক্তারসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছেন, ভাতা দেওয়ার জন্য তাদের নামের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। উপজেলা পরিষদ থেকেও প্রত্যেকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়াসহ খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।

সূত্র: আমার দেশ 

প্রবাসে এখনো কারাবন্দি শতাধিক জুলাইযোদ্ধা। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

প্রবাসে এখনো কারাবন্দি শতাধিক জুলাইযোদ্ধা:

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫, ১১: ২৬

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার প্রতি সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন দেশটিতে কর্মরত কয়েকশ প্রবাসী বাংলাদেশি। পরে তাদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রথম পর্যায়ে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশিদের মুক্তি দেওয়া হলেও নতুন করে গ্রেপ্তার হচ্ছেন বাকিরা। কিন্তু এসব গ্রেপ্তার ব্যক্তির মুক্তিতে কোনো উদ্যোগ নেই সরকারের। এ নিয়ে হতাশা বিরাজ করছে গ্রেপ্তার ব্যক্তির স্বজন ও সহকর্মীদের মাঝে। ভুক্তভোগী প্রবাসীর স্বজনদের একাধিকবার আন্দোলনের মুখে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও বন্দিদের মুক্তিতে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। এজন্য সরকারের উদাসীনতাকেই দায়ী করছে ভুক্তভোগী পরিবার।

এদিকে বিদেশে বিক্ষোভ প্রদর্শনকারীদের কতজন জেলে বন্দি আছেন, তা নিয়ে দূতাবাস ও মন্ত্রণালয়ের তথ্যেও অসামঞ্জস্য লক্ষ করা গেছে। মন্ত্রণালয় বলছে, সর্বশেষ ২৭ জনের তালিকা আছে তাদের কাছে। তবে ক্রমান্বয়ে তা বাড়তে পারে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশ দূতাবাস বলছে, তাদের কাছে ২০ জনের তালিকা আছে। তবে তাদের মুক্তিতে আলাদা করে কিছু করার নেই বলে জানিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সে দেশের আইন অনুযায়ীই মুক্তি হবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়।

এদিকে, ‘জুলাই আন্দোলনে জেলবন্দি রেমিট্যান্স যোদ্ধা পরিবার’ নামে একটি সংগঠন বলছে, আবুধাবির আল সদর জেলেই বন্দি আছেন ২৫ জন বিক্ষোভকারী বাংলাদেশি। অন্যান্য জেল ও দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বন্দি আছেন আরো অনেকে। তবে সে সংখ্যা নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি। বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে দায়সারা কাজ করছে বলে অভিযোগ সংগঠনটির।

সংগঠনটির দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি ফোনে যদি ১৮৯ জন জেলবন্দির সাজা মওকুফ হয়ে দেশে আসতে পারে, তাহলে বাকিদের ক্ষেত্রে বৈষম্য কেন? তারা তো একই ঘটনার জন্য অভিযুক্ত।

এদিকে আটক ও জেলবন্দি প্রবাসীদের মুক্তির দাবিতে একাধিকবার আন্দোলন করার পর আশাহত হয়ে গত ২২ জুন রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগী জেলফেরত প্রবাসী ও বন্দিদের স্বজনরা। আন্দোলন করার অপরাধে আবুধাবির আলসদর কারাগারে আটক ২৫ জনসহ আমিরাতের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কার্যালয়ে আটক প্রবাসীদের দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করাসহ সরকারকে চার দফা দাবি জানান তারা।

গত বছরের ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে মিছিল করেন কয়েকশ প্রবাসী। ওই ঘটনার পর তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করে স্থানীয় পুলিশ। সে দেশের আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাউকে ১০ বছরের জেল এবং কাউকে যাবজ্জীবন সাজা দেয় সেখানকার আদালত। পরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ফোনে তাদের সাজা মাফ করে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে পরবর্তীতে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়, তাদের ব্যাপারে উদাসীন মনোভাব সরকারের।

তথ্যমতে, গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সাজাপ্রাপ্তদের পরিবার মুক্তির জন্য উপদেষ্টাদের কাছে আবেদন জানায়। এরপর ১২ আগস্ট তাদের মুক্তির জন্য আইনজীবী নিয়োগ দেয় দূতাবাস। ২৮ আগস্ট সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান অভিনন্দন জানাতে প্রধান উপদেষ্টাকে টেলিফোন করলে তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশিদের মুক্তি দিতে অনুরোধ জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ জনসহ আটক মোট ১১৪ জন বাংলাদেশির শাস্তি মওকুফ করে দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় আমিরাত সরকার। তবে এই কর্মীদের আরব আমিরাতে প্রবেশে ‘নো-এন্ট্রি’ দেওয়ায় তারা আমিরাতসহ উপসাগরীয় অঞ্চলভুক্ত তথা গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলভুক্ত (জিসিসি) ছয়টি দেশে আপাতত প্রবেশ করতে পারবেন না। তা ছাড়া শাস্তি মওকুফের পর গত ৭ সেপ্টেম্বর দণ্ডপ্রাপ্ত ৫৭ জনের মধ্যে প্রথম ধাপে ১৪ জন দেশে ফেরত আসেন। এরপর দ্বিতীয় ধাপে গত ২৯ নভেম্বর আরো ৭৫ বাংলাদেশিকে ক্ষমা করে আরব আমিরাত।

সূত্র জানায়, বর্তমানে যারা বন্দি আছেন তাদের বেশিরভাগকেই দেশে আসার সময় বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের শনাক্ত করে তাদের ডাটা আমিরাতের ইমিগ্রেশনে দেওয়ার কারণে গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া এখনো চলমান। এতে যারাই দেশে আসার জন্য বিমানবন্দরে আসবেন, সঙ্গে সঙ্গে ইমিগ্রেশনে তাদের আটক করা হবে।

ভুক্তভোগী প্রবাসীরা জানান, শিক্ষার্থীদের প্রতি নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যার প্রতিবাদ ও দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করার জন্য তারা আন্দোলন করে আজ নিজেরাই মহাবিপদে। আটকদের মুক্তি ও ইমিগ্রেশনে তাদের আটকানোর বিষয়টি যদি কূটনীতিকভাবে সমাধান না হয়, তাহলে জুলাই আন্দোলনের দায়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রবাসী ও তাদের পরিবার।

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম কধুরখীল গ্রামের শহীদুল আমিন মুন্নার স্ত্রী রোজিনা আক্তার আমার দেশকে জানান, অক্টোবরের ২৪ তারিখ দেশে আসার উদ্দেশে তার স্বামী আবুধাবি বিমানবন্দরে আসেন। ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় মুন্নাকে আটক করে জেলে পাঠানো হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, তিনি জুলাইয়ের সেই আন্দোলনকারীদের মিছিলে ছিলেন।

রোজিনা বলেন, ‘আমার স্বামী তো নিজের জন্য মিছিল করেনি। দেশ ও ছাত্রদের জন্য করেছিল। তাহলে আমার স্বামীর মুক্তিতে কেন সরকার নীরব?’ তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার এক ফোনে যদি ১৮৯ জনের সাজা মওকুফ করে দেওয়া হয়, তাহলে আমার স্বামী আলাদা কী এমন অপরাধ করলেন যে, তার জন্য ফোন বা অনুরোধ করা যাবে না?

আমিরাতে জেলেবন্দিদের একজন মৌলভীবাজারের বরলেখা উপজেলার ডিমাই গ্রামের ফরহাদ আহমদ। তার বাবা আজির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে আজ আজ মাস ধরে গ্রেপ্তার। সরকারের পক্ষ থেকে কেউ তাদের খোঁজ নিচ্ছে না। কেউ গিয়ে দেখাও করছে না। অথচ দেশ ও জনগণের জন্য আমার ছেলে আন্দোলন করেছে নিজের ভবিষ্যৎ চিন্তা না করে।’

জুলাই আন্দোলনে জেলবন্দি প্রবাসী মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছগির তালুকদার বলেন, জেলেবন্দি এই প্রবাসীদের নিয়ে যতবারই আন্দোলন করেছি, ততবার প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল আমাদের আশ্বস্ত করেছেন তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে। তা সত্ত্বেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। তিনি বলেন, আন্দোলন করার অপরাধে আমিরাতে কতজন প্রবাসী জেলে আছেন, তার সঠিক খবর ও তালিকা মন্ত্রণালয় জানে না।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, সরকার কূটনৈতিকভাবে যত দ্রুত সম্ভব ইমিগ্রেশন থেকে এসব প্রবাসীর ডাটা মুছে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে প্রবাসীদের ব্যাপক ক্ষতি হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ডায়াস্ফোরা অ্যালায়েন্সের প্রস্তুতি কমিটির কো-অর্ডিনেটর দিলশানা পারুল বলেন, আমাদের কাছে এরকম তথ্য আছে যে, অনেক প্রবাসী জেলবন্দি ও আরব আমিরাতের সিআইডি অফিসে বন্দি আছেন। দূতাবাস ও মন্ত্রণালয় যদি গুরুত্ব দিয়ে সঠিকভাবে তদারক না করে তাহলে সঠিক হিসাব পাওয়া মুশকিল।

তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে প্রবাসে সক্রিয় ছিলেন এসব প্রবাসী। তাদের অর্জন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতি কেন নীরব তা জানা নেই।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে নিযুক্ত কাউন্সিলর (শ্রম-স্থানীয়) লুৎফুন নাহার নাজীম আমার দেশকে বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি তাদের মুক্ত করতে। আমাদের আশা ছিল গত কোরবানির ঈদের আগে মুক্ত করতে পারব। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় সম্ভব হয়নি।’

লুৎফুন নাহার আরো বলেন, ‘আমাদের কাছে ২০ জনের একটি তালিকা আছে। তবে সমস্যা হলো, আমিরাতের পুলিশ গ্রেপ্তার করলে অবগত করে না। এজন্য আমরা সঠিক হিসাব এবং কে কোথায় আছেন তা জানতে পারি না। তবে তালিকায় যাদের নাম আছে তাদের সঙ্গে দেখা করার একটা আবেদন আমরা পাঠাব আমিরাতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। তারপর আশা করা যায় খুব দ্রুত আমরা তাদের মুক্ত করতে পারব।’

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার একান্ত সচিব সারওয়ার আলম আমার দেশকে বলেন, ‘আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ তার দেশের আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এখানে আলাদাভাবে মন্ত্রণালয়ের কিছু করার থাকে না। কয়েক মাস কারাভোগ করার পর ছেড়ে দেবে। তবে আমরাও চেষ্টা অব্যাহত রাখব।’

সূত্র: আমার দেশ 

হাসনাতকে বাঁচাতে গিয়ে শহীদ হন শাহীন। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

হাসনাতকে বাঁচাতে গিয়ে শহীদ হন শাহীন:

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫, ১০: ২৬

বাগেরহাটের মোংলা থানার কচুবুনিয়া গ্রামের সোবাহান হাওলাদার ও কুসুম বেগম দম্পতির বড় ছেলে শাহীন হাওলাদার। অভাবের সংসারে হাল ধরতে গিয়ে পড়াশোনা করতে পারেননি। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজ করলেও সর্বশেষ গাড়ি চালানো ও ঢাকার গুলিস্তানে রেন্ট-এ কারের ব্যবসা করে সংসারের হাল ধরেছিলেন। জুলাই আন্দোলন শুরু হলে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন। গত বছরের ২৫ আগস্ট সচিবালয়ের সামনে হওয়া সংঘর্ষে ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আবদুল্লাহকে বাঁচাতে গিয়ে শহীদ হন তিনি। তাকে হারিয়ে তিন সন্তান নিয়ে গভীর সংকটে পড়েছেন স্ত্রী রিক্তা বেগম।

জানা গেছে, গত বছরের ২৫ আগস্ট রাজধানীর সচিবালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও আনসার সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেখানেই নিহত হন শাহীন।

রিক্তা বেগম বলেন, আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময় হাসনাত আবদুল্লাহর ওপর হামলা হতে দেখে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যান শাহীন। এ সময় পেছন থেকে কয়েকজন আনসার সদস্য তাকে মাথায় এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে বমি করে নিস্তেজ হয়ে পড়েন। তখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন তাকে। পরে ৪ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়।

শহীদ শাহীনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাদের নিয়ে গভীর সংকটে পড়েছেন স্ত্রী রিক্তা। তিনি বলেন, আমার ছেলে ও স্বামী প্রতিদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যেত। আমি তাদের নিয়ে সবসময় আতঙ্কে থাকতাম। বেশি আতঙ্কে থাকতাম ছেলেকে নিয়ে—কোন সময় ছেলেটির জীবন চলে যায়। কিন্তু ছেলের জীবন গেল না, গেল আমার স্বামীর জীবন। তাও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর। এখন আমাদের দেখার মতো আর কেউ রইল না।

রিক্তা বেগম বলেন, জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে পাঁচ লাখ টাকা পেলেও স্বামীর করে যাওয়া ঋণ এখনো শোধ হয়নি। আর কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি ও তিন সন্তান নিয়ে কোনোমতে দিন পার করছি। সরকারের কাছে দাবি, তারা যেন আমার সন্তানের পড়াশোনা ও আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়।

সূত্র: আমার দেশ 

Thursday, June 26, 2025

রংপুরে এখনো মামলা করতে পারেনি ১১ শহীদ পরিবার। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

রংপুরে এখনো মামলা করতে পারেনি ১১ শহীদ পরিবারঃ

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৫, ১০: ০৮

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুর বিভাগে গেজেটভুক্ত ৬৮ শহীদের মধ্যে এখনো মামলা করতে পারেনি ১১ শহীদ পরিবার। পুলিশের অসহযোগিতা এবং আওয়ামী নেতাকর্মীদের ভয়ে মামলা করতে পারেনি বলে দাবি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর। সম্প্রতি পুলিশের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিলে গত দুদিনে নতুন মামলা হয়েছে ১১টি, যা নিয়ে বিভাগটিতে সর্বমোট মামলা হয়েছে ৫৭টি।

জানা যায়, যেসব শহীদ পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ও যোগাযোগ ভালো ছিল, তারা আন্দোলনের সময় মামলা করেছিল। কিন্তু অনেক পরিবার মামলা করেনি ভয়ভীতির কারণে। শেখ হাসিনা পালানোর পরও আসামিদের জামিন এবং আবু সাঈদের মামলাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় মামলা করতে অনাগ্রহ ছিল শহীদ পরিবারগুলোর মধ্যে। তবে সম্প্রতি মামলা করছেন ভুক্তভোগীরা।

সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতে রংপুর বিভাগে আবু সাঈদসহ ৬৮ জন শহীদ হন । এর মধ্যে রংপুর রেঞ্জে ৬১ ও মেট্রোতে সাতজন। আহত হন এক হাজার ৪৮০ জন। এ সব হতাহতের ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তার হন তিন হাজার ৬৭৪ জন। যাদের অনেকেই জামিন নিয়ে বের হয়ে এসেছেন।

শহীদ পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গুলিতে নিহত হওয়ার পরও অনেককে গোপনে কবরস্থ করা হয়েছে। ওই সময় থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। পুলিশের পাশাপাশি তৎকালীন সরকারি দলের নেতাকর্মীরা শহীদ পরিবারের সদস্যদের মামলা না করতে ভয়ভীতি দেখাত। তবে এখন পুলিশের পক্ষ থেকে মামলাসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করায় নতুন করে আহত ও শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হচ্ছে ।

রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম বলেন, শহীদ পরিবার ছাড়াও যারা আন্দোলনে আহত হয়েছেন, তাদেরও মামলা করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। থানায় মামলা করলে পুলিশের পক্ষ থেকে বাদীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।

তবে এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের অতিরিক্ত দুই ডিআইজি আমার দেশকে জানান, রংপুর রেঞ্জ ও মেট্রোপলিটন থানাগুলোতে শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে যে মামলাগুলো হয়েছে, তাতে অনেক পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি সরকারি আমলাদের নাম রয়েছেন। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে আবু সাঈদের মামলা ছাড়া অন্য কারো মামলায় পুলিশের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা সরকারি কোনো আমলাকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি।

রংপুর মেট্রোর পুলিশ কমিশনার (ডিআইজি) মজিদ আলী আমার দেশকে বলেন, রংপুর মহানগরীতে ৭ শহীদ পরিবারের মধ্য থেকে ৬ পরিবার মামলা করেছে।

এ বিষয়ে রংপুর জজকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী বায়েজিদ ওসমানী আমার দেশকে জানান, জুলাই মামলাগুলোর আসামিরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগসহ ফ্যাসিবাদের দোসরদের নামে অন্যান্য যে মামলা রয়েছে, সেগুলোর আসামিরা নিম্ন আদালত থেকে জামিন পাচ্ছেন। জামিনে বাইরে এসে তারা বাদী ও সাক্ষীদের হুমকি দেওয়ায় অনেকে মামলা করার সাহস পাচ্ছেন না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সূত্রঃ আমার দেশ

পুলিশের গুলিতে থেমে যায় মামুনের জীবনসংগ্রাম। ( BDC CRIME NEWS24)

 BDC CRIME NEWS24

পুলিশের গুলিতে থেমে যায় মামুনের জীবনসংগ্রামঃ

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৫, ০৮: ৫৫

 


 রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত আদম বাড়াইপাড়া গ্রামের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া মামুন ইসলামকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করতেও সংগ্রাম করতে হয়েছিল। এরপর জীবিকার সন্ধানে রাজধানীতে পাড়ি জমান তিনি।

একটি গার্মেন্টে কাজ শুরু করেন। দ্রুতই বুঝতে পারেন এই সামান্য আয়ে পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। একসময় বন্ধু মাসুদুর রহমানের সঙ্গে যৌথভাবে একটি ছোট গার্মেন্ট কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সুন্দরভাবে এগোচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্ট এলোমেলো হয়ে যায় সব। পুলিশের গুলিতে থেমে যায় তার জীবনসংগ্রাম।

জানা যায়, গত আগস্ট শেখ হাসিনা পালানোর পর মিরপুরে আয়োজিত বিজয় মিছিলে যোগ দেন মামুন। সেখানেই পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। এখন স্বামীকে হারিয়ে অথৈ সাগরে পড়েছেন শারমিন আক্তার লতা।

মামুন ছিলেন তার বাবা-মায়ের চার সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড়। বাবা আজগর আলী রাজধানীর একটি পাইপ ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। প্রায় এক দশক ধরে পুরান ঢাকার একটি মেসে থাকেন। আর মা তসলিমা বেগম গৃহিণী। বর্তমানে আদম বাড়াইপাড়ায় থাকেন। বৃদ্ধ এই দম্পতি উপার্জনক্ষম বড় ছেলেকে হারিয়ে বর্তমানে অসহায় জীবনযাপন করছে।

মামুনের ছোট ভাই সবুজ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই ভাইয়া প্রতিটি মিছিলে অংশ নিতেন। আগস্ট তিনি মিরপুরে বিজয় মিছিলে যোগ দেন। ওই সময় মিরপুর- গোলচত্বরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট গুলি ছোড়ে। একই সময় আওয়ামী লীগ তার সহযোগী সংগঠনের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরাও মিছিলে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশের ছোড়া একটি গুলি ভাইয়ার পিঠ দিয়ে ঢুকে বুকের বাম পাঁজর ভেদ করে বেরিয়ে যায়। এরপর শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে মিরপুর-১০ এলাকার আলোক হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে ভাইয়ার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমি এবং তার বন্ধু রাসেল দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি আমরা। তবে পুলিশের গুলির মুখে আমরা আটকে যাই। অ্যাম্বুলেন্স লক্ষ করেও গুলি ছুড়ছিল পুলিশ আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। কোনো উপায় না দেখে পরবর্তীতে তাকে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে সাড়ে ৪টায় মারা যান তিনি। পরে আগস্ট তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি আদম বাড়াইপাড়ায় নিয়ে এসে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

শহীদ মামুনের স্ত্রী লতা আমার দেশকে জানান, আন্দোলনের সময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলা এবং হত্যা তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। ২১ জুলাই অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণের ফলে তাকে রংপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাননি। পরে স্থানীয় একটি হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে তিনি মৃত কন্যাসন্তানের জন্ম দেন।

লতা বলেন, আমি আমার সন্তান স্বামীকে হারিয়ে সবকিছু হারিয়েছি। আমি ন্যায়বিচার চাই। সংসারের হাল ধরতে সরকারের কাছে একটি সরকারি চাকরির দাবি জানাই।

মামুনের বাবা আজগর আলী শোকার্ত ভাষায় বলেন, ছেলের মরদেহ গ্রামে পৌঁছানোর পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এখন আর কোনো কাজ করতে পারেন না।

মা তসলিমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি আমার সন্তানকে হারিয়েছি। আমার স্বামীও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তিনি আর কাজ করতে পারেন না। ছেলেকে হারিয়ে আমরা এখন কীভাবে চলব জানি না। আমাদের পরিবার এখন চরম সংকটে রয়েছে।

এখন পর্যন্ত আর্থিক সহযোগিতা হিসেবে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে লাখ, জামায়াতে ইসলামী থেকে লাখ, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন থেকে লাখ এবং ইউএনও থেকে ১০ হাজার টাকা পেয়েছে বলে জানায় মামুনের পরিবার।

সূত্রঃ আমার দেশ

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন- ২০০৯ সালে হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্ব ছিল অবৈধ। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন-

২০০৯ সালে হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্ব ছিল অবৈধ:

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৫, ০৮: ১৭

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনে মিথ্যা হলফনামা দিয়ে সংসদ সদস্য হন। দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তিনি সম্পদের তথ্য গোপন করেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ অনুযায়ী নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে তিনি অযোগ্য ছিলেন। তার সংসদ সদস্য পদ ছিল অবৈধ, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার নিয়োগ ছিল অবৈধ এবং একই কারণে ২০০৯ সালে তার নেতৃত্বে গঠিত সরকারটিও ছিল অবৈধ।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ব্যাপক তদন্তে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। তদন্তে বের হয়, শেখ হাসিনা স্থাবর সম্পদ হিসেবে ২১ দশমিক ৯১ একর জমির তথ্য গোপন করেছেন। দুই কোটি ১৬ লাখ ৫৪ হাজার ৯৭৬ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ লুকিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি এক কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দামের আমদানি করা মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ির তথ্যও গোপন করেছেন। বেনামে গাড়িটি ক্রয়ে তিনি জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আইন লঙ্ঘন করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. মাসুদুর রহমান বিষয়টি তদন্ত করেছেন। তদন্ত শেষে সুপারিশে দুদক আইনের দুটি ধারায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে বলা হয়। ২০০৮-পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা আর কোনো অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন কি না, তা নতুন করে তদন্ত করার সুপারিশ করা হয়।

বেনামে শুল্কমুক্ত গাড়ি কেনার কেলেঙ্কারির জন্য সংশ্লিষ্ট আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০০৮ সালের নির্বাচনি হলফনামায় তথ্য গোপন করার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি পৌঁছে গেছে। নির্বাচন কমিশন তা পর্যালোচনা শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

দুদকের আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনি হলফনামা ছাড়াও ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের হলফনামায় দেওয়া শেখ হাসিনার সম্পদ বিবরণী তদন্তেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দুদকের তদন্তে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার মিথ্যা হলফনামার বিষয়টি তৎকালীন সিইসি ড. শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন অবহিত হওয়া সত্ত্বেও চেপে যায়। তৎকালীন দুদক চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরীও এ ঘটনা জানতেন। দুদকে ফাইলটি তখন ধামাচাপা দেওয়া হয় (ক্লোজ করা হয়)। এ বিষয়ে হাসান মশহুদ চৌধুরীর বক্তব্য জানার জন্য ফোনে যোগাযোগ করে জানা যায়, তিনি পারকিনসনস রোগে আক্রান্ত। কাউকে চেনেন না এবং কথা বলতেও অসুবিধা হয়।

শেখ হাসিনার মিথ্যা হলফনামা, সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপন ও জালিয়াতিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের যাবতীয় কাগজপত্র আমার দেশ পেয়েছে। সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থিতার পূর্বশর্ত হলো হলফনামার মাধ্যমে দাখিল করা সম্পদ বিবরণী। এতে পরিসম্পদ ও দায়Ñউভয়ই যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ হতে হয়। নির্বাচন আইন বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ অনুযায়ী সংগত কারণেই হলফনামায় মিথ্যাচারে প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ১৯ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে হলফনামার মাধ্যমে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। তাতে স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নিজ নামে এবং যৌথ মালিকানার অংশ হিসেবে তার অর্জিত জমির পরিমাণ দেখান ৬ দশমিক ৫০ একর। তদন্তে শেখ হাসিনার স্থাবর সম্পদ পাওয়া যায় ২৮ দশমিক ৪১ একর জমি। অর্থাৎ দাখিল করা হলফনামায় নিজ নামে অর্জিত ২১ দশমিক ৯১ একর স্থাবর সম্পত্তি তিনি গোপন করেন। ২০০৭ সালের ৩০ জুন সময়কালে আয়কর নথিতে দেখানো রিটার্ন অনুযায়ী স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মূল্য দেখান তিন কোটি ৩৫ লাখ ২১ হাজার ১৮৮ টাকা। কিন্তু তদন্তে তার পাঁচ কোটি ৫১ লাখ ৭৬ হাজার ১৬৪ টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। শেখ হাসিনা দুই কোটি ১৬ লাখ ৫৪ হাজার ৯৭৬ টাকার তথ্য গোপন করেন।

দুদক চেয়ারম্যানের বক্তব্য

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেনের কাছে মিথ্যা হলফনামা ও সম্পদ গোপন এবং দুদকের তদন্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আমার দেশকে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের সত্যনিষ্ঠ অনুসন্ধানে প্রমাণ হয়েছে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনা হলফ করে নির্বাচন কমিশনে যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন, তা যথার্থ ছিল না। তাতে বিপুল পরিমাণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ লুকানো হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন প্রামাণিক দলিলের ভিত্তিতেই অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে থাকে। ২০০৮ সালের তদন্ত প্রতিবেদনকে মূল ধরে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনকে ২০২৫ সালের ২১ মে দুদক অনুরোধ করে। কমিশন ওই প্রার্থীর (শেখ হাসিনা) নির্বাচনি বৈধতার ওপর সিদ্ধান্ত দেবে।

শাস্তির বিষয়ে কী পদক্ষেপ হতে পারেÑএ বিষয়ে ব্যক্তিগত মতামত জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, ব্যক্তি হিসেবে এবং আইন ও প্রশাসনের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি, নির্বাচনি অযোগ্যতার কারণে শেখ হাসিনা ওয়াজেদের সংসদ সদস্য পদ রাখার কোনো যৌক্তিকতা ছিল না এবং নেই। সেক্ষেত্রে তার প্রধানমন্ত্রিত্বেরও বৈধতা নেই। সংগত কারণেই তার সরকারও অবৈধ বিবেচিত হওয়ার কথা।

২০০৮ সালের নির্বাচনের সময়কালের কমিশনের বক্তব্য

২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়কালে নির্বাচন কমিশনে ছিলেন সিইসি এটিএম শামসুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন এবং নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সাবেক সিইসি ড. শামসুল হুদার মোবাইলে ফোন করলে তার স্ত্রী রিসিভ করেন। বলেন, তিনি খুবই অসুস্থ। এখন ঘুমাচ্ছেন। কথা বলার মতো অবস্থা তার নেই। ওই সময়কার নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন আমার দেশকে বলেন, আমরা অত্যন্ত সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। দায়িত্ব পালনে আমরা সবার কাছে ওপেন ছিলাম। কাজেই কোনো তথ্যে গরমিল থাকলে নিশ্চয়ই বের হয়ে আসত। আর ওই সময় হলফনামায় কোনো তথ্য গোপনের অভিযোগও আমাদের কাছে আসেনি।

হলফনামায় শেখ হাসিনার তথ্য গোপনের বিষয়টি কমিশন ইচ্ছা করে চেপে গিয়েছিল কি নাÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বয়স এখন ৮৬ বছর। ১৫-১৬ বছর আগের ঘটনা এখন সবটা মনে করতে পারছি না।

বিশেষজ্ঞ মত

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আবদুল আলীম আমার দেশকে বলেন, হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে বা তথ্য গোপন করলে আইন অনুযায়ী নির্বাচনের অযোগ্য হবেন। সে হিসেবে শেখ হাসিনা যদি ২০০৮ সালের নির্বাচনি হলফনামায় তথ্য গোপন করে থাকেন, তাহলে তার প্রার্থিতা বাতিল হওয়ারই কথা ছিল। ফলে প্রার্থী হতে না পারলে সংসদ সদস্য বা পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীÑকোনোটিই তার হওয়ার সুযোগ ছিল না।

এ প্রসঙ্গে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আবদুল আলীম আরো বলেন, আমরা দেখি নির্বাচনের সময় হলফনামা দাখিল করা হয়। কিন্তু এটি যথাযথভাবে যাচাই করা হয় না। এজন্য নির্বাচন কমিশন, এনবিআর ও দুদকের মধ্যে সমন্বয় দরকার। আমরা সংস্কার কমিশন থেকে এ বিষয়ে একটি সুপারিশও করেছি।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ আমার দেশকে বলেন, হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারপ্রধান হওয়া একটা জঘন্য অপরাধ। কিন্তু দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটাই করেছিলেন। সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার এতদিন পর খবরটি প্রকাশ হচ্ছেÑএটাই দেশবাসীর জন্য সান্ত্বনা। যাহোক, তখন দুদক ও ইসি জেনেও চুপ ছিল, সেটাও গর্হিত অপরাধ। এখন দুদকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান কমিশন কী ব্যবস্থা নেয়, সেটাও দেখার বিষয় বলে জানান তিনি।

বেনামে শুল্কমুক্ত কোটায় গাড়ি নিয়ে জালিয়াতি

দুদকের তদন্তে জালিয়াতির আরেকটি বড় ঘটনা ধরা পড়ে। শেখ হাসিনা মাগুরা-১ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল আকবরের শুল্কমুক্ত কোটা ব্যবহার করে বেনামে দুই লাখ ৩০ হাজার ইউরো মূল্যে (গাড়ি আমদানির এলসির বিপরীতে ব্যাংক থেকে পরিশোধিত এক কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকা) একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি আমদানি করেন। এতে ‘সুধা সদন’, বাড়ি নম্বর ৫৪, রোড নম্বর ৫, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় ঢাকার আবাসিক ঠিকানা ব্যবহার করে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন (ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৬৩৬৪) করান তিনি এবং নিজে গাড়িটি ব্যবহার করেন। প্রফেসর ডা. সিরাজুল আকবরের আয়কর নথিতে কিংবা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তার দাখিল করা হলফনামায় ওই গাড়ির কথা উল্লেখ নেই কিংবা কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি।

তদন্তে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ অনুযায়ী যেভাবে মিথ্যা হলফনামা প্রদান ও বিপুল সম্পদ গোপন করার দায়ে শেখ হাসিনার প্রার্থিতা বাতিল করার কথা, সেটা জেনেও বিষয়টি চেপে রেখে সাজানো নির্বাচনে তাকে সংসদ সদস্য হিসেবে বিজয়ী ঘোষণা করে। তৎকালীন সিইসি ড. শামসুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের জ্ঞাতসারে ওই কমিশন শেখ হাসিনার মিথ্যা হলফনামা গ্রহণ করে। প্রার্থীর অযোগ্য শেখ হাসিনাকে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন শুধু এমপি হিসেবে বিজয়ীই ঘোষণা করেনি, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ গ্রহণের সুযোগ করে দেয়; যা ছিল গর্হিত অপরাধ।

ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদকের প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে

দুর্নীতি দমন কমিশন পুরো বিষয়টি অনুসন্ধান এবং সত্যনিষ্ঠ অনুসন্ধান করে রিপোর্ট তৈরি করেছে। কমিশন তাদের অনুসন্ধান ও তদন্তের পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করে গত ২২ মে বর্তমান সিইসি এএমএম নাসির উদ্দীন নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে পত্রের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠিয়েছে। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করেনি। দুদক মনে করে, মিথ্যা হলফনামা চেপে গিয়ে শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত ঘোষণা করার ঘটনায় ওই নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনা জরুরি। একই সঙ্গে ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার প্রার্থিতা বাতিলপূর্বক তার সংসদ সদস্য পদ, প্রধানমন্ত্রিত্ব এবং সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে মিথ্যা হলফনামার জন্য তাকে আইনের কাছে সোপর্দ করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে ব্যাপক অনুসন্ধান চালানো হয়। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে যোগাযাগ করলে তিনি ব্যস্ত আছেন জানিয়ে কমিশন সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে শেখ হাসিনার বিষয়ে একটি চিঠি পাওয়ার কথা জানান। আমার দেশকে তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়া সম্পদের তথ্য গোপনসংক্রান্ত একটা চিঠি আমরা পেয়েছি। আরপিও ও আইনের সঙ্গে কী ধরনের সাংঘর্ষিক আছে, সেটা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সিদ্ধান্ত পেতে কতদিন লাগতে পারেÑজানতে চাইলে সচিব জানান, আজও হতে পারে, পরশু কিংবা এক সপ্তাহ লাগতে পারে।

দুদকের সুপারিশ

দুর্নীতি দমন কমিশন তার সুপারিশে অসৎ উদ্দেশ্যে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্যের ঘোষণা দিয়ে এবং অবৈধ ও অসাধু উপায়ে অর্জিত এবং জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত দুই কোটি ১৬ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯০ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজুর সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া ২০০৮-পরবর্তী সময়ে কোনো অবৈধ ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন কি না, তা অনুসন্ধান করার সুপারিশ করেছে।

দুদক তার সুপারিশে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় ২১ দশমিক ৯১ একর স্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন, ক্রয়কৃত জমির মূল্য কম দেখানো এবং এক কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যে ক্রয়কৃত গাড়ির তথ্য গোপনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। জানা গেছে, দুদক থেকে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়।

যা আছে আরপিওতে

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ অনুসারে [আরপিও ১৪(৩)(সি)] হলফনামার মাধ্যমে প্রার্থী তথ্য না দিলে বা হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে রিটার্নিং অফিসার নিজ উদ্যোগ অথবা কোনো ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংক্ষিপ্ত তদন্ত পরিচালনা করতে পারবেন এবং কোনো মনোনয়নপত্র বাতিল করতে পারবেন। এ ছাড়াও হলফনামায় প্রদত্ত কোনো তথ্য মিথ্যা বা ভুল প্রমাণিত হলে তা ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।

শেখ হাসিনার সম্পত্তি

দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণী অনুযায়ী শেখ হাসিনার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে গোপালগঞ্জের খাটরা, খুলনার দিঘলিয়া, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া এবং বালাডাঙ্গায়। কেনা স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে খুলনার দিঘলিয়া, টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতি এবং রংপুরের পীরগঞ্জের উজিরপুরে। দাখিল করা সম্পদ বিবরণী অনুযায়ী উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমি ৫ দশমিক ১৯ একর এবং নিজ নামে অর্জিত ৪ দশমিক ১১৮ একর অর্থাৎ ৯ দশমিক ৩০৮ একর। দুদক তদন্ত করে উত্তরাধিকার সূত্রে শেখ হাসিনার প্রাপ্ত জমির পরিমাণ ১১ দশমিক ৪৪৫ একর পেয়েছে। শেখ হাসিনার নিজ নামে কেনা স্থাবর সম্পত্তি দুদক পেয়েছে ১৬ দশমিক ৯৬৬ একর। তদন্ত করে দুদক শেখ হাসিনার নিজ নামে অর্জিত মোট সম্পদ পেয়েছে ১১ দশমিক ৪৪৫+১৬ দশমিক ৯৬৬=২৮ দশমিক ৪১১ একর। শেখ হাসিনা নিজ নামে জমি কিনেছেন খুলনা, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, পটুয়াখালীর সোনাতলা (কলাপাড়া), রংপুরের উজিরপুর, পীরগঞ্জ ইত্যাদি এলাকায়।

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনের বিস্তারিত

শেখ হাসিনার মিথ্যা হলফনামা ও সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপনের বিষয়টি তদন্ত করে দুদক যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, তাতে আছেÑস্থাবর সম্পত্তির প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী শেখ হাসিনা উত্তরাধিকার সূত্রে ১১ দশমিক ৪৪৫ একর এবং ওই সময়ে নিজ নামে ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ১০ টাকা মূল্যে আরো ১৬ দশমিক ৯৬৬ একর জমি কিনেছেন। তদনুযায়ী তার অর্জিত স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৮ দশমিক ৪১১ একর। কিন্তু ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনে তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে উত্তরাধিকার সূত্রে ৫ দশমিক ১৯ একর জমি এবং ক্রয়সূত্রে ১০ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩০ টাকা মূল্যে অর্জিত ৪ দশমিক ১১৮ একর হিসাবে মোট ৯ দশমিক ৩০৮ একর জমির তথ্য দেন। পর্যালোচনায় দেখা যায়, শেখ হাসিনা সম্পদ বিবরণীতে ১৯ দশমিক ১০ একর স্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন এবং ক্রয়কৃত জমির মূল্যে ২৩ লাখ ১২ হাজার ৬৮০ টাকা অসৎ উদ্দেশ্যে কম দেখিয়েছেন, যা তার আয়ের বৈধ উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।

দুদকের তদন্ত অনুযায়ী ২০০৭ সালে শেখ হাসিনার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল পাঁচ কোটি ১৮ লাখ ১০ হাজার ১৫৪ টাকা। কিন্তু ওই সময়ে দুদকে দাখিলকৃত বিবরণী অনুযায়ী তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ তিন কোটি ২৪ লাখ ৮৭ হাজার ৩৪৪ টাকা। এ হিসাবে তিনি এক কোটি ৯৩ লাখ ২২ হাজার ৮১০ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য অসৎ উদ্দেশ্যে গোপন করেছেন, যা তার আয়ের বৈধ উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।

শেখ হাসিনার স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে সম্পদের পরিমাণ পাঁচ কোটি ৫১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা হলেও দুদকে দাখিল করা বিবরণী অনুযায়ী তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ তিন কোটি ৩৫ লাখ ৪০ হাজার ৬৭৪ টাকা। এক্ষেত্রে দুদকের কাছে দুই কোটি ১৬ লাখ ৩৫ টাকা ৪৯০ টাকার অর্থ গোপন করেছেন। অসৎ উদ্দেশ্যে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বর্তমান সময় পর্যন্ত সময়কাল বিবেচনা করলে তার জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ আরো বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। শেখ হাসিনার আয়কর নথি অনুযায়ী ২০০৭-০৮ করবর্ষে স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৫ দশমিক ১২ একর। এক্ষেত্রে আয়কর রিটার্নে ২৩ দশমিক ২৯ একর সম্পত্তি কম দেখিয়েছেন। আর ক্রয়কৃত জমির মূল্য কম দেখানো হয়েছে ২৬ লাখ ৮৮ হাজার ১০ টাকার। একই ভাবে তিনি আয়কর রিটার্নে অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ কম দেখিয়েছেন এক কোটি ৯৭ লাখ ৫২ হাজার ৪৫৬ টাকার। স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে আয়কর রিটার্নে দুই কোটি ১৬ লাখ ৫৪ হাজার ৯৭৬ টাকা কম দেখিয়ে অপরাধ করেছেন।

শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে হলফনামায় ৬ দশমিক ৫০ একর জমি দেখালেও ওই সময় তার মোট জমির পরিমাণ ছিলে ২৮ দশমিক ৪১১ একর। এ হিসাবে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় ২১ দশমিক ৯১ একর জমির তথ্য গোপন করেছেন। একই সময়ে তথ্য গোপন করে ক্রয়কৃত জমির দাম ৩১ লাখ ৯১ হাজার টাকা কম দেখিয়েছেন। তিনি মাগুরা-১ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল আকবরের সংসদ সদস্য পদের শুল্কমুক্ত কোটা ব্যবহার করে বেনামে ২ লাখ ৩০ হাজার ইউরো মূল্যে (বাংলাদেশি মুদ্রায় এক কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকা) একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি আমদানি করে ধানমন্ডির সুধা সদনের ঠিকানা ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন করেন (যার নম্বর, ঢাকা মেট্রো ৭-১১-৬৩৬৪) এবং নিজে তা ব্যবহার করেছেন। সিরাজুল আকবরের আয়কর নথিতে কিংবা নির্বাচনি হলফনামায় ওই গাড়িসংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। ওই গাড়ি সিরাজুল আকবর কখনো ব্যবহার করেননি বলে দুদকের সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা জেনেছেন বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনার এক কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দামের মার্সডিজ গাড়ির তথ্য গোপন করে হলফনামায় অসত্য তথ্য দিয়েছেন। তিনি বেনামে গাড়িটি কিনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

হলফনামায় মিথ্য তথ্য দেওয়ায় এমপিত্ব বাতিলের নজির

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় তথ্য গোপন করলেও নির্বাচন কমিশন ওই সময় আমলে নেয়নি। পরে ওই নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৫ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবুল কাশেম বিজয়ী হন। পরে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির মাহমুদুল হাসান হলফনামায় তথ্য গোপনের বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। শুনানির পর ২০১২ সালে আদালত আবুল কাশেমের প্রার্থিতা বাতিল করে মাহমুদুল হাসানকে বিজয়ী ঘোষণা করে। মাহমুদুল হাসান ২০১২ সালে শপথ নিয়ে ওই সংসদের বাকি মেয়াদ এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

হলফনামায় অসত্য তথ্য দেওয়ায় ভোলা‑৩ (লালমোহন‑তজুমদ্দিন) আসনের সংসদ সদস্য জসীম উদ্দিনের এমপি পদ বাতিল করা হয়েছিল। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে জয়লাভ করেন। তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত হওয়ার পাঁচ বছরের সময় পূর্ণ হওয়ার আগে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। হাইকোর্ট পরে তার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করে এবং সেই ভিত্তিতে তার সংসদ সদস্য পদও অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল ওই আসনে আওয়ামী লীগের নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন জয়ী হন।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুদকের আরো মামলা

ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট জালিয়াতির অভিযোগে শেখ হাসিনা ও পরিবারের ছয়জনসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১২ জানুয়ারি দুদক মামলাটি দায়ের করে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বার্জ মাউন্টেড বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন মামলা বাতিল করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) লিভ টু আপিলের শুনানির জন্য আগামী ১৫ জুলাই দিন ধার্য করা হয়েছে। বার্জ মাউন্টেড বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে অনিয়মের অভিযোগে ২০০৭ সালে তেজগাঁও থানায় শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এ ছাড়াও গত ১১ মার্চ রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুর্নীতির অভিযোগে হাসিনা-রেহানা, পুতুল-টিউলিপসহ পরিবারের সাতজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার জন্য আদালাতে আবেদন করে দুদক। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে বিপুল অর্থ লোপাটের অভিযোগ থাকায় তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা লোপাটের একটি অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগটি অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে। দুদক জানায়, শিগগির দুদক শেখ হাসিনার নামে মামলা দায়ের করবে।

সূত্র: আমার দেশ 

গুমের পর চালানো হতো ১৭ ধরনের নির্যাতন। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 গুমের পর চালানো হতো ১৭ ধরনের নির্যাতন: (ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নির্যাতনের কথা জানালেও তা উপেক্ষা) প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৫ দেশ...