BDC CRIME NEWS24
‘পুলিশের গুলি আমার সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে’:
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৫, ১০: ৪৫
‘বড় স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করার। কিন্তু পুলিশের একটি গুলি আমার সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। ডান হাতটা জীবনের তরে হারাতে বসেছি। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা চলছে, কোনো উন্নতি হচ্ছে না। তবে যাদের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করেছি, দেশের মানুষ যেন ভালোভাবে বাঁচতে পারে। দেশের মানুষ ভালো থাকলেই আমরা ভালো থাকব।’
কথাগুলো বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুরুতর আহত টঙ্গী তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী মোহাম্মদ হাসিব। গত বছরের ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরার বিএনএস সেন্টারের সামনে পুলিশের গুলিতে আহত হন হাসিব।
এদিকে আহত হওয়ার পরও পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধ হয়নি। এ বিষয়ে হাসিব বলেন, ‘গুরুতর আহত হওয়ার পরও ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে পুলিশ প্রতি রাতেই বাড়িতে হানা দিয়ে জীবন বিষিয়ে তুলেছিল। স্বৈরাচারের দোসররা বাবার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলে অর্থাভাবে আমার চিকিৎসা থমকে পড়ে। বর্তমানে আমার লেখাপাড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে ফ্যাসিবাদের রাহুগ্রাস থেকে দেশ মুক্তি পেয়েছে তাতেই আমি খুশি।’
বরিশালের বরগুনা জেলার আমতলি উপজেলার আড়পাঙ্গাসিয়া গ্রামের আবুল বাশারের ছেলে মোহাম্মদ হাসিব। টঙ্গীর মধুমিতা রোডে ভাড়া বাসায় থাকেন। আন্দোলনের সময় তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা থেকে আলিম ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছিলেন তিনি।
হাসিব জানান, জুলাই বিপ্লবের বিক্ষোভে দেশ যখন উত্তাল, তখন ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তীব্র দমন-পীড়ন শুরু করে। পুলিশের অত্যাচারে মাদরাসা তো দূরের কথা, বাসায় থাকাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পরীক্ষার কথা ভুলে গিয়ে দেশপ্রেমের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৮ জুলাই দুপুরে অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। ওই দিন বিকালে বিক্ষোভকালে সামনের সারিতে থাকায় পুলিশের বন্দুকের একটি গুলি তার গলার ডানপাশ দিয়ে ঢুকে কাঁধ চিরে বেরিয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে রাতে তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে (জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান) নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব না হওয়ায় দুদিন পর তাকে গ্রামের বাড়ি বরগুনার আমতলী পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে বাড়িতে গিয়েও এক দুঃসহ যন্ত্রণার সম্মুখীন হন হাসিব। পুলিশ তাকে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে একাধিকবার বাড়িতে হানা দিয়ে হয়রানি করে। আহত অবস্থায়ও তিনি নিজের বাড়িতে স্বাভাবিকভাবে থাকতে পারেননি। তার এক আত্মীয়ের বাড়ির চিলেকোঠায় আত্মগোপনে থেকে ব্যথায় কাতরাতে থাকেন।
বাবা আবুল বাশার বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব সফল হয়েছে। এতে আমি গর্বিত। কিন্তু আমার ছেলের অবস্থা দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। হাসিবের হাত এখনো সুস্থ হয়নি। দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসক বলেছেন, সে ডান হাতে কখনো ভারী কাজ করতে পারবে না। তার হাতের নার্ভগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না।’
সূত্র: আমার দেশ
No comments:
Post a Comment