BDC CRIME NEWS24
বাড্ডায় পুলিশের গুলি খেয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলতে বলতে শহীদ হন লিটন:
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৫, ১০: ০২
অভাব-অনটনের সংসারে জন্ম লিটন মিয়ার। খরচ জোগাতে না পারায় তাকে পড়াশোনা করাতে পারেনি পরিবার। বাবা-মায়ের বোঝা একটু হালকা করতে অল্প বয়সেই পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। চাকরি নেন একটি গার্মেন্টসে। কিন্তু সংসারের চাকায় গতি আনার আগেই নিথর হয়ে গেছে এই তরুণ। জুলাই বিপ্লবে পুলিশের গুলিতে হারিয়েছেন জীবন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে উত্তাল ছিল গত বছরের পুরো জুলাই। আন্দোলন দমাতে একপর্যায়ে কারফিউ জারি করে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। জনগণ বিদ্রোহ করে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও সশস্ত্র বাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাজপথে নামেন ছাত্র-জনতা। তাদের একজন ছিলেন লিটন মিয়া। তার বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুরের চিনাডুলি ইউনিয়নের খামারপাড়ায়।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই ছিল অন্যতম রক্তাক্ত দিন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে কারফিউ জারি করে গণহত্যাকারী সরকার। প্রথম দিনই বাড্ডা এলাকায় নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। এই নির্মমতায় প্রাণ যায় গার্মেন্টস কর্মী লিটনের। আশপাশের পরিচিত জন ও সহকর্মীরা তার লাশ উদ্ধার করে বাড়িতে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
লিটনের বাবা আবদুস সবুর মন্ডল বলেন, ‘আমার সাত সন্তানের মধ্যে লিটন সবার ছোট। পরিবারের সবচেয়ে আদরের ছেলে হলেও তাকে টাকার অভাবে পড়াতে পারিনি। পরিবারের সদস্যদের জন্য দু’মুঠো আহার জোগাতে গিয়েছিল ঢাকায়। কিন্তু স্বৈরাচার হাসিনার বাহিনী তাকে বাঁচতে দেয়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘১৯ জুলাই সকালে আমাকে কল দিয়েছিল লিটন। জানায়, নাশতা করার জন্য বাইরে যাচ্ছে। কথা বলতে বলতেই গুলির শব্দ শুনলাম। কিছুক্ষণ পর কথা বলা বন্ধ হয়ে গেল, লাইন কেটে দিলাম। বেশ কিছু সময় ধরে তার মোবাইল ফোনে কল দিলাম কিন্তু কেউ আর রিসিভ করল না। একপর্যায়ে কেউ একজন কল দিয়ে জানায়, রাস্তায় লিটনের লাশ পড়ে আছে। তখন আমার পুরো শরীর হিম হয়ে আসে, চোখে ঝাপসা দেখতে লাগলাম। উনিশ বছর বয়সে যেই ছেলে একটু স্বস্তিতে বাঁচার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ঢাকায় গিয়েছিল তাকেই গুলি করে মেরে ফেলেছে পুলিশ।’
লিটনের বাবা বলেন, ‘তরুণ ছেলেটার বাম চোখের পাশ দিয়ে মাথায় গুলি প্রবেশ করে। যারা তাকে এত কষ্ট দিয়ে হত্যা করেছে, তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। যাতে এভাবে আর কোনো বাবা-মায়ের বুক খালি না হয়। আমি ও লিটনের মা উভয়ই অসুস্থ। সংসারের এখন নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর অবস্থা। সরকার আমাদের দিকে নজর দিলে খেয়েপরে বাঁচতে পারতাম।’
জানা গেছে, মধ্যবাড্ডার একটি মেসে থাকতেন লিটন। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে ঢাকায় অবস্থানরত বড় ভাই পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় লাশটি উদ্ধার করে গ্রামে নিয়ে যান। পরদিন বাড়ির পাশে জানাজা শেষে তার লাশ দাফন করা হয়। জামালপুরে তিনিই প্রথম জুলাই শহীদ। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে লিটনের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হলেও আর কেউ খবর নেয়নি।
No comments:
Post a Comment