Tuesday, March 4, 2025

জুলাই বিপ্লবকে জঙ্গিবাদের উত্থান বলে প্রচারণাকারীদের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

জুলাই বিপ্লবকে জঙ্গিবাদের উত্থান বলে প্রচারণাকারীদের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে: 

প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৫, ১০: ১৭

জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনবিস্ফোরণকে জঙ্গিবাদের উত্থান বলে বাংলাদেশ মিশনগুলো থেকে প্রচারণা চালানো হয়েছিল বিভিন্ন দেশে। পরিকল্পিত ভিডিও বানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এই প্রচারণা চালানো হয়।

যদিও ৫ আগস্ট ঢাকামুখী জনস্রোতের ফলে এই প্রচারণা কোনো কাজে আসেনি। এদিকে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনের যেসব কর্মকর্তা ঢাকায় জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে বলে প্রচারণা চালিয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো প্রচারকারীদের কেউ কেউ এখন পাচ্ছেন আগের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ।

তখন পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন পেশাদার কূটনীতিক মাসুদ বিন মোমেন। জানা যায়, তার নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন মিশনে বার্তা পাঠানো হতো ভারতের দিল্লিতে নিযুক্ত তৎকালীন হাইকমিশনারের মাধ্যমে। এরকম একটি বার্তা আমার দেশ-এর হাতে এসেছে।

আন্দোলনে পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়েছিল। এমনকি হেলিকপ্টার থেকেও সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। অথচ দিল্লি হাইকমিশন থেকে ঢাকার বরাত দিয়ে বৈদেশিক মিশনগুলোতে তাদের মতো করে ভিডিও ক্লিপ বানিয়ে পাঠানো হয়। নির্দেশনা দেওয়া হয়, এই ক্লিপগুলো জায়গা অনুযায়ী ব্যবহার করতে।

জনবিস্ফোরণে ২০ জুলাই থেকে কার্যত বাংলাদেশ অচল হয়ে পড়ে। শেখ হাসিনা দিশাহারা হয়ে আন্দোলন দমনের জন্য নানা অপকৌশল নেয়। এর অন্যতম কয়েকটি হচ্ছে- কারফিউ জারি, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ, সেনা মোতায়েন, অনুগত মিডিয়া দিয়ে প্রচারণা এবং বিদেশে পরিকল্পিত অপপ্রচার। কারফিউর পাশাপাশি ইন্টারনেট বন্ধ থাকা অবস্থায় বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতে বার্তা পাঠানো হতো দিল্লি থেকে।

দিল্লি হাইকমিশনের পক্ষ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ২৪ জুলাই মেসেজ পাঠিয়ে বিদেশি মিশনগুলোতে বলা হয়, আদিষ্ট হয়ে আরো একটি ফ্যাক্স মেসেজ পাঠালাম। সিচুয়েশন রিপোর্ট-৫ উল্লেখ করে আরো বলা হয়, ই-মেইলে ভিডিও ক্লিপ দেওয়া হয়েছে পরিস্থিতি অনুযায়ী যেন ব্যবহার করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কূটনীতিক আমার দেশকে বলেন, ভিডিও ক্লিপগুলো এমনভাবে বানানো যেন ছাত্ররা ভাঙচুর করছে এবং জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে; এটা বোঝানো যায়। আন্দোলনকে কথিত জঙ্গি তৎপরতা বলে প্রত্যেক দেশের সরকার ও বিদেশি মিডিয়ায় প্রচারের জন্য তাগিদ দেওয়া হয় তখন।

এতে স্পষ্ট, বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানকে জঙ্গিদের উত্থান বলে প্রচার চালিয়ে ইসলাম বিদ্বেষী রাষ্ট্রগুলোকে নিজের অনুকূলে নেওয়ার অপচেষ্টায় ছিলেন হাসিনা। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে বিদেশিদের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার শেষ চেষ্টা চালিয়েছিলেন তিনি।

তার এই প্রচেষ্টার সহযোগী ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকা সাবেক ছাত্রলীগ ও ফ্যাসিবাদ অনুগত সরকারি কর্মকর্তারা। এখনো এসব ফ্যাসিবাদ অনুগতরাই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মিশনে কূটনীতিকের দায়িত্বে রয়েছেন। তারাই এখন বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে নিয়োগ ও পদায়নের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া দিল্লি থেকে যে কূটনীতিক এই ম্যাসেজগুলো বিদেশি মিশনে পাঠাতেন তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৮ জুলাইয়ের পর থেকে আন্দোলন তুঙ্গে উঠলে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের ডেকে ব্রিফ করেছিলেন মাসুদ বিন মোমেন। তিনি ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের অবহিত করেন, কথিত ইসলামী জঙ্গি গ্রুপের উত্থানের চেষ্টা বলে।

অর্থাৎ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের এই অভ্যুত্থানকে জঙ্গিবাদের উত্থান হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা। এ প্রচারকারীরা এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। মাসুদ বিন মোমেনকে পররাষ্ট্র সচিবের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও ফ্যাসিবাদের সহযোগীরা রয়েছেন ঢাকায় এবং বিভিন্ন দেশে নিজ নিজ পদে। এমনকি কেউ কেউ আরো গুরুত্বপূর্ণ দেশে দায়িত্ব পেয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ফ্যাসিবাদ আমলের শেষ মুহূর্তে মাসুদ বিন মোমেন কিছু কূটনীতিকের তালিকা হস্তান্তর করে গেছেন। তার দেওয়া তালিকা অনুযায়ী এখন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশে ফ্যাসিবাদের দোসরদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই লন্ডনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় একজন ফ্যাসিবাদ অনুগত কূটনীতিককে পদায়ন করা হয়েছে। যিনি প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের মিটিংয়েই শুধু অংশ নেননি, শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি নিয়ে গেছেন মেক্সিকোতে। ২০২০-২১ সালে যখন মুজিববর্ষ ধুমধামে পালন করা হয়, তখন কূটনীতিক আবিদা সুলতানা ছিলেন মেক্সিকোতে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে।

তার ভাষায়, বাংলাদেশকে পরিচিত করতেই মুজিব ম্যুরাল নেওয়া হয়েছিল সেখানে। এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় দায়িত্ব পালনকালে আওয়ামী লীগের দলীয় মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতেন তিনি। আওয়ামী লীগের বিরোধীদের জন্য তখন দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ অ্যাম্বেসির দরজা ছিল কার্যত বন্ধ।

এখানেই শেষ নয়, কোরিয়ায় রাষ্ট্রদূত থাকাকালীন প্রবাসীদের সঙ্গে এক বৈঠকে আবিদা বলেছিলেন, এখানে বাংলাদেশি অপরাধীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। তারা বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিল। এখানে এসে অবৈধ নাগরিক হিসেবে অ্যাসাইলাম (আশ্রয়) চেয়েছে।

আবিদার সমসাময়িক একজন কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের প্রতি শতভাগ আনুগত্য দেখানোর পুরস্কার হিসেবেই তাকে ব্রিটেনের মতো জায়গায় পদায়ন করা হয়েছে।

ব্রিটেন, আমেরিকা ও ইউরোপে সিনিয়র ও দক্ষ কূটনীতিক নিয়োগ দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। এসব জায়গায় বহুমুখী কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হয়। এজন্য সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও দক্ষতা যাচাই-বাছাই করেই নিয়োগ দেওয়া হয় এসব জায়গায়। সে অনুযায়ী আওয়ামী লীগের শতভাগ অনুগত ব্যক্তিদের এসব দূতাবাসের বিভিন্ন পদে বসানো হয়েছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য ব্রাসেলস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন সরাসরি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকরা।

এদিকে মালয়েশিয়ায় আওয়ামী লীগের সেবাপ্রদানকারী ডেপুটি হাইকমিশনার খোরশেদ আলম খাস্তগীরকে বর্তমান সরকার পোল্যান্ডে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের প্রতি অনুগত এবং জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। পোল্যান্ডে তাকে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেওয়ার পর এ নিয়ে সমালোচনা হলে সেটি বাতিল করা হয়। তবে মালয়েশিয়ায় ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে তিনি এখনো বহাল।

খোরশেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, জুলাই-আগস্টে মালয়েশিয়ায় যারা অভ্যুত্থানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় কাজং থানায় মামলা করেছিলেন খোরশেদ এবং পাসপোর্ট বাতিলের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। মালয়েশিয়ায় প্রবাসী পরিষদ তাকে কুয়ালালামপুর থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ এম্বেসির সামনে বিক্ষোভ করতে গেলে স্থানীয় পুলিশ দিয়ে আটক করা হয়েছিল অনেক বাংলাদেশিকে। তাদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিও দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়। সার্বিক বিষয়ে জানতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকে একাধিকবার কল করা হলেও তা রিসিভ হয়নি।

সূত্র: আমার দেশ 

No comments:

Post a Comment

এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক: প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২৭ বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের অভ্যন্তরে ২০০৯ ...