BDC CRIME NEWS24
জমটুপি পরিয়ে বিবস্ত্র করে পেটায় ছাত্রদলের আরিফকে:
প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২: ২৮
দুদিন দুই রাত গুম রেখে ছাত্রদল নেতা আরিফ বিল্লাহকে নির্যাতন করে ডিবি পুলিশ। নির্যাতনে বাম হাত অকেজো হয়ে যায় তার। তিনি ওই হাত দিয়ে কাজ তো দূরের কথা, কোনো কিছু ধরতেও পারেন না এখন।
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ডিবি হেফাজতে এবং পরবর্তীতে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে লোমহর্ষক নির্যাতনের শিকার ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ বিল্লাহ এক সাক্ষাৎকারে আমার দেশকে এসব কথা জানান।
২০২৩ সালের ১৮ আগস্ট রাজধানীতে বিএনপির কর্মসূচি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসানকে ধরে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। জিসানের খোঁজ নিতে আজিমপুরে তার বাসার সামনে যান আরিফসহ আরও ৪ জন। এ সময় সাদা পোশাকে কয়েকজন এসে তাদের শার্টের কলার চেপে ধরে হ্যান্ডকাপ পরাতে চাইলে তারা জিজ্ঞাসা করেন, তাদের কেন ধরা হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ডিবির সদস্য এসআই খায়রুল আরিফ বিল্লাহকে থাপ্পড় মারেন।
সেদিনের কথা বলতে গিয়ে আরিফ বলেন, আমাকে ডিবি পুলিশ গাড়িতে তোলার পর দেখি গাড়ির মধ্যে আগেই জিসানকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। আমাদের সবাইকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। একটু পর আমাকে পাশের রুমে ডেকে নিয়ে যায় একজন। রুমে গিয়ে দেখি ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) বার্নাড বিশ্বাস বসা। তার টেবিলের ওপর অনেকগুলো অস্ত্র আর গুলি। বার্নাড বিশ্বাস আমার নাম-ঠিকানা জানতে চান। ইচ্ছে করে পরিবারের সদস্যদের নাম বলিনি। তখন এসি আমাকে থাপ্পড় মারেন আর বলেন, ‘মিথ্যা কেন বলছিস, তুই তো আমার দেশ পত্রিকার অলিউল্লাহ নোমানের ভাই’। পুলিশের মুখে এ কথা শুনে আমি চুপ হয়ে যাই। তখন টেবিলে রাখা অস্ত্র দেখিয়ে বলে, ‘আমরা যেভাবে বলব, সেভাবেই বলবি, ঠিক আছে?’ আমি তাকিয়ে থাকি, তখন অস্ত্র দেখিয়ে বলে, ‘এগুলো বিদেশি পিস্তল। বলবি যে, অস্থিরতা তৈরি করতে তোদের জন্য তারেক রহমান এই অস্ত্রের জোগান দিয়েছে।’
এ কথা বলতে রাজি না হওয়ায় অসহনীয় নির্যাতন শুরু হয় আরিফের ওপর। তিনি বলেন, ‘আমি বললাম কোনোভাবেই মিথ্যা বলব না। তখনই শুরু হয় মাইর। লাঠি দিয়ে প্রায় আধঘণ্টা পেটানো হয়। এরপরও আমি রাজি হইনি। তখন আমাকে যমটুপি পরিয়ে শরীরের সব কাপড় খুলে নেওয়া হলো। চিৎ করিয়ে শুইয়ে দুই পা আর দুই হাতের সঙ্গে বড় লাঠি বেঁধে দিয়ে আবার হাত-পায়ের সঙ্গে সংযোগ লাঠি বেঁধে দেয়।
এরপর সেই লাঠির ওপর উঠে দাঁড়ায় একজন। তখন মনে হয়েছিল আমার হাত-পা ছিঁড়ে যাচ্ছে। রুটি যেভাবে বেলে, ঠিক সেভাবে আমার হাঁটু থেকে নাভি পর্যন্ত লাঠি দিয়ে চাপ দেয়। আমি চিৎকার করলেই বলত, ‘তোকে মেরেই ফেলব। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাকে এভাবে মারল। সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাত ২টা পর্যন্ত আমার ওপর এভাবে নির্যাতন চলে। আমি ভেবেই নিয়েছিলাম, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’
নির্যাতনের পর অচেতন হয়ে পড়েন আরিফ। তিনি বলেন, যখন জ্ঞান ফিরে আসে, তখন সম্ভবত সকাল ৭টা বাজে। এরপর আবার টর্চার শুরু। দ্বিতীয় দিনের অত্যাচারে যখন মুমূর্ষু অবস্থা, তখন আমাকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য।
ক্রসফায়ারের শঙ্কায় ছিলেন জানিয়ে আরিফ বলেন, ওইদিন সন্ধ্যায় আমাদের ৬ জনকে গাড়িতে তোলা হয়। সারা রাত সারা ঢাকা শহর ঘুরতে থাকে গাড়ি। মনে হয়েছল যে কোনো সময় আমাদের গুলি করে হত্যা করে ক্রসফায়ার বলে চালিয়ে দেবে। কিন্তু শেষ রাতের দিকে গাড়ি আবার ফিরে আসে। এরপর যখন ঘুম ভাঙে, তখন জানলাম সকাল ৮টা বাজে। একজন এসে বলে রেডি হয়ে নে, আদালতে যেতে হবে। তোদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শুনে আমি অট্টহাসি দিলাম। ওরা অবাক হয়ে হাসার কারণ জানতে চাইল। শিশুদের মতো উচ্ছ্বসিত হয়ে বললাম, মামলা হয়েছে; আর ক্রসফায়ার দেবেন না বুঝতে পারছি।
দুদিন ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে গুম রেখে অসহনীয় নির্যাতনের পর ‘সাজানো আগ্নেয়াস্ত্র’ মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
সূত্র: আমার দেশ
No comments:
Post a Comment