Thursday, February 6, 2025

পুলিশের সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হকের ব্যাংক হিসাবে ৫৬০ কোটি টাকার লেনদেন। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

পুলিশের সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হকের  ব্যাংক হিসাবে ৫৬০ কোটি টাকার লেনদেন:

প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯: ১৭

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহিদুল হক ও তার স্ত্রী-সন্তান এবং তাদের নিয়ন্ত্রাণাধীন ফাউন্ডেশনের নামে ৭২টি ব্যাংক হিসাবে ৫৬০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। পাশাপাশি তাদের নামে বেশি দামে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ফ্লোর স্পেস ও ফ্ল্যাট থাকারও তথ্য মিলেছে। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে একটি ফ্ল্যাট উপহারও পেয়েছেন তিনি। উপহারের ফ্ল্যাট একই ব্যাংকের কাছে ভাড়া দিয়ে নিয়েছেন বড় অংকের টাকা।

শহিদুল তার ক্ষমতার প্রভাব ও পদ ব্যবহার করে এসব অর্থ উপার্জন করেছেন। এসব অর্থই তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়। একজন সরকারি চাকরিজীবীর পরিবারের সদস্যদের বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন অস্বাভাবিক মনে করেছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তাই এই বিষয়ে অধিক তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন সংস্থাটি। দুদক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

উল্লেখ্য, শহিদুল হক আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে হাসিনার সবশেষ পাতানো নির্বাচনে লড়তে মনোনয়ন তুলেছিলেন। তবে গত দেড় দশক ধরেই তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে গোটা পুলিশ প্রশাসনে একটি বলয় তৈরি করেছিলেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় শহীদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাই তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তথ্য অনুযায়ী, শহিদুল হক ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আইজিপির দায়িত্ব পালন করেন। শহিদুল হক, তার স্ত্রী শামসুন্নাহার রহমান, তাদের সন্তান রাকিব বিন শহীদ, সাকিব বিন শহীদ ও শামস বিন শহীদ অনঘের নামে ৭২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজ মিলেছে। এর মধ্যে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান মজিদ-জরিনা ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্টও রয়েছে। এসব হিসাবে গত ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৬০ কোটি ২৮ লাখ টাকা জমা করা হয়েছে।

এর মধ্যে ৫৫০ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়। বর্তমানে জমা রয়েছে ১০ কোটি ২০ লাখ টাকা। এছাড়া তার একটি ঋণ হিসাবে মোট ৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা জমা করা হয়। এই হিসাব থেকে তুলে নেওয়া হয় ৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বর্তমানে ঋণ হিসাবে ১১ লাখ টাকার বেশি ঋণাত্মক রয়েছে। অপরদিকে তার স্ত্রী শামসুন্নাহার রহমানের দুটি আরএফসিডি অ্যাকাউন্টে ২ লাখ ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার জমার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৬৫ হাজার মার্কিন ডলার তুলে নেওয়া হয়। বাকি ৭০ হাজার ৫৮১ ডলার জমা রয়েছে।

আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে শহিদুলের একটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এই হিসাব ১ কোটি ৬৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা জমাপূর্বক খোলা হয়। হিসাবটি খোলার পর থেকে নিয়মিত ভাড়া বাবদ বড় অংকের অর্থ জমা করা হয়েছে। এই ব্যাংক থেকেই তাকে প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার একটি ৪ হাজার ৫৭১ বর্গফুট ফ্ল্যাট উপহার দেওয়া হয়।

সেই ফ্ল্যাট আবার তিনি ব্যাংকের নিকট ভাড়া দিয়ে বড় অংকের টাকা নেন। এছাড়া পদ্মা ব্যাংকে তার নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবে ১৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা জমা হয়। এই হিসাব থেকে ১৪ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে সানিবুর রহমান, নুরুল ইসলাম ঢালি ও ইমরান ব্যাপারীর মাধ্যমে। এছাড়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইরা বিল্ডার্সের হিসাবে বড় অংকের অর্থ স্থানান্তর করা হয়।

একই ব্যাংকে তার স্ত্রীর নামে পরিচালিত হিসাবটিতে খোলার সঙ্গে সঙ্গে ৪০ লাখ ৮০ হাজার টাকা নগদ জমা এবং নিয়মিত ভাড়া বাবদ বড় অংকের টাকা জমা করা হয়। এই হিসাবটি থেকে সুদর্শন চন্দ্র দাস কর্তৃক বিভিন্ন সময় নগদ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। একই ব্যাংকে তার স্ত্রীর অন্য হিসাবটিতেও বিভিন্ন সময় বড় অংকের নগদ টাকা জমা করা হয়। যা একজন সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রীর হিসাবে অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক হিসেবে তুলে ধরেছেন বিএফআইইউ।

বিপুল সম্পদ

শহিদুল হক ও তার স্ত্রীর নামে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ১৪ হাজার ৫০০ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস রয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে শহিদুলের নামে বাড্ডার প্রগতি সরণিতে ৪ হাজার ৫৭১ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস, যার মূল্য ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। তার ও তার স্ত্রীর নামে উত্তরায় রয়েছে ৬ হাজার বর্গফুট ফ্লোর স্পেস, এর মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। এসব ফ্লোর স্পেস অবৈধ উপার্জনের মাধ্যমে কেনা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

ফাউন্ডেশনে ৭৫ কোটি টাকা

শহিদুলের বাবা-মায়ের নামে মজিদ-জরিনা ফাউন্ডেশনের খোঁজ মিলেছে। এটি একটি অলাভজনক অ্যাডুকেশনাল প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের নামে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে একটি হিসাব পরিচালিত হয়। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও ৭৫ কোটি টাকা জমা হয়েছে এতে।

এই হিসাবটিতে বিভিন্ন অঞ্চল ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুষ্টিয়া, পাবনা, খুলনা, মৌলভীবাজার, ফেনী, যশোর ও বগুড়া থেকে বড় অংকের নগদ অর্থ একসঙ্গে জমা করা হয়। আবার বিভিন্ন ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকেও অর্থ জমা করা হয়েছে। একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের হিসাবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দেওয়া অর্থ পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি দ্বারা বড় অংকে নগদ উত্তোলন এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া ফাউন্ডেশনের নামে জমা অর্থ হতে তার পারিবারিক প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইরা বিল্ডার্সের হিসাবে অর্থ পাঠানো হয়। এসব অর্থ বহির্ভূত ভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে।

ব্যাংক হিসাব খোলার ফরম থেকে জানা যায়, শহিদুলের অবসরোত্তর ব্যবসা-সারস শিপিং লাইন থেকে মাসিক আয় মাত্র ৪ লাখ টাকা। আর তার স্ত্রী একজন নামমাত্র ব্যবসায়ী। এরপরও তাদের ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা জমা, তাদের নামে বেশি দামি ফ্ল্যাট এবং তা উচ্চমূল্যে ব্যাংকের কাছে ভাড়া দেওয়া সন্দেহজনকভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, একজন আইজিপির সব মিলিয়ে আয় এক লাখ টাকা। সরকারি চাকরিতে থাকাকালে যেহেতু ব্যবসা করার সুযোগ নেই, তাই তার এসব টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অর্জন করা হয়।

সূত্র: আমার দেশ 

No comments:

Post a Comment

এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক: প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২৭ বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের অভ্যন্তরে ২০০৯ ...