BDC CRIME NEWS24
শহীদি মৃত্যু চেয়েছিলেন হাফেজ নাসির ইসলাম:
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮: ৫৭
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে উত্তরা, টঙ্গী ও গাজীপুরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। তাদেরই একজন ছিলেন আলিম প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শহীদ হাফেজ নাসির ইসলাম (১৮)। ১৬ জুলাই থেকেই তিনি সক্রিয় ছিলেন আন্দোলনে।
১৮ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন শিক্ষার্থী শহীদ শাকিল হোসেন পারভেজের জানাজায় অংশ নিয়ে লাশবাহী গাড়ি ধরে নিজের শহীদি মৃত্যু কামনা করেন শিবিরকর্মী হাফেজ নাসির। এরপর ২০ জুলাই ঘোষিত কারফিউ অমান্য করে তা’মীরুল মিল্লাতের সামনের মহাসড়কে অবস্থান নেন সবার সঙ্গে। সেখানেই পুলিশের গুলিতে শাহাদাতবরণ করেন নাসির। তার সঙ্গে থাকা সহযোদ্ধারা জানিয়েছেন এসব তথ্য।
নাসিরের সহপাঠী ও রুমমেট বায়েজিদ আহমেদ জানান, ১৮ জুলাই তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. শাকিল হোসেন পারভেজের জানাজায় অংশগ্রহণ করেন তারা। সেখানে শহীদকে বহনকারী গাড়ি ছুঁয়ে আল্লাহর দরবারে শহীদি মৃত্যু কামনা করে হাফেজ নাসির ইসলাম বলেছিলেন, ‘মৃত্যু যদি দাও, শহীদি মৃত্যু দিও আল্লাহ।’
নাসির তার মা নাজমার কাছেও দেশ ও ইসলামের জন্য শহীদ হওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন বলে নাসিরের বাবা আশরাফুল ইসলাম জানান। ১৯ জুলাই রাতে তার মাকে বলেছিলেন, ‘মা ভয় করলে দেশ বাঁচবে না। মৃত্যু যদি হয়, হবে।’
শিক্ষার্থীদের ৯ দফার আন্দোলন দমন করার জন্য ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়ে ১৯ জুলাই রাতে ফ্যাসিস্ট সরকার কারফিউ জারি করে। ২০ জুলাই ছাত্র-জনতা কারফিউ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন অব্যাহত রাখে। নাসিরের রুমমেট ও সহযোদ্ধা বায়েজিদ আহমেদ জানিয়েছেন, তা’মীরুল মিল্লাতের পাশের মেসে থাকতেন তারা।
হাফেজ নাসির হেলিকপ্টার থেকে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর র্যাবের ‘অপারেশন ক্লিনডাউন’-এর ভিডিও দেখান। এরই মাঝে মাইকিং করা হয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তা’মীরুল মিল্লাতের ভেতর ও আশপাশে হামলা করেছে। তখন দুপুর ১২টা পেরিয়েছে।
মহাসড়কে গিয়ে অন্যদের মতো তারাও আন্দোলনে যোগ দেন। একদিক থেকে পুলিশ, অন্যদিক থেকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালাচ্ছে। এর মধ্যে আবার রয়েছে হেলিকপ্টার থেকে হামলা। ত্রিমুখী হামলায় নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করে। হাফেজ নাসির এ সময় বলে উঠলেন, ‘বিক্ষিপ্তভাবে আন্দোলন করে লাভ নেই, আমরা এখানে অনেক মানুষ, সবাইকে একত্রে যেতে হবে।’
এরপর হাফেজ নাসির সমন্বয় করে ছাত্র-জনতার একাংশকে দেখাচ্ছিলেন পথ। এ সময় পুলিশের ছোড়া একটি গুলি এসে নাসিরের বুকে লাগে। নাসির পড়ে যান দারুল ইসলাম ট্রাস্ট গেটের সামনের মহাসড়কে। পরিস্থিতি এমন বীভৎস ছিল যে, পড়ে থাকতে দেখেও তার লাশ নিয়ে যেতে পারেননি নাসিরের বন্ধু ও আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা।
আসর নামাজের পর হঠাৎ হাফেজ নাসিরের ফোন থেকে কল করে একজন মেডিকেল প্রতিনিধি তার বাবাকে বলেন, ‘নাসির দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। দ্রুত কুর্মিটোলা হাসপাতালে আসুন।’ কারফিউর মাঝে সড়কে কোনো গাড়ি না পেয়ে রোগী সেজে অতিরিক্ত ভাড়ায় অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে নাসিরের ছোট দুই বোন, মা ও চাচাকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে আসেন তার বাবা আশরাফুল ইসলাম। এসে দেখেন তার একমাত্র ছেলে শাহাদাতবরণ করেছেন। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে শহীদের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় রংপুরের কাউনিয়া থানাধীন নিজ গ্রামে। পরদিন ২১ জুলাই জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে প্রিয় বন্ধু, সহপাঠী ও রুমমেট হারানো বায়েজিদ আহমেদসহ অন্য বন্ধুদের সরকার পতনের আগ পর্যন্ত পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে পুলিশের হুমকির কারণে। শহীদ নাসিরের পরিবারকেও নানাভাবে হুমকি দিয়েছে পুলিশ।
২৭ জুলাই রংপুরের কাউনিয়া থানা-পুলিশ ডেকে এনে অসদাচরণ করেছে আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে। ঢাকায় ফিরতে না চাইলেও রংপুর থেকে পুলিশ জোর করে গাজীপুরের টঙ্গী পশ্চিম থানায় পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছেন আশরাফুল ইসলাম।
তাকে নানা অজুহাতে থানায় বসিয়ে রেখে হয়রানি করে টঙ্গী থানা পুলিশ। পরে কোনাবাড়ীর বাসায় যেতে দিলেও পরদিন ২৮ জুলাই তাকে আবার টঙ্গী পশ্চিম থানায় ডেকে আনা হয়। এরপর তা’মীরুল মিল্লাতের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সাজানো হত্যামামলা করতে বলে পুলিশ।
শহীদের বাবা পুলিশের সাজানো মামলা করতে রাজি না হওয়ায় তাকে চাপ দিতে থাকে পুলিশ প্রশাসন। পরে অজ্ঞাতনামা আসামি দেওয়ার কথা বলে আশরাফুল ইসলামের কাছ থেকে মামলার এজাহারে স্বাক্ষর নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘একজন শহীদের বাবা হিসেবে আমি চাই এ দেশে দ্বীন কায়েম হোক। আমার সন্তানের শাহাদাত যেন বৃথা না যায়। নামাজসহ বাধ্যতামূলক করা হোক ইসলামি বিধিবিধান। সে সঙ্গে এমন বিচারব্যবস্থা হোক, যেন আগামীতে কেউ মানুষ হত্যা করতে সাহস না দেখায়। হত্যার আদেশদাতা ও হত্যাকারীদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অতিদ্রুতই বিচারের মাধ্যমে কার্যকর করা হোক। এমন বিচার করা হোক যেন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। পরবর্তী সময়ে কেউ যেন এমন দুঃসাহস না দেখায়।’
সূত্র: আমার দেশ
No comments:
Post a Comment