Monday, February 3, 2025

মাওলানা মাহমুদুল কবির মনির তিন দফা গ্রেপ্তারে সাড়ে ৬ মাস কারাগারে। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

মাওলানা মাহমুদুল কবির মনির তিন দফা গ্রেপ্তারে সাড়ে ৬ মাস কারাগারে:

প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২: ০৪

মহানবী (সা.)-এর অবমাননা, শেখ মুজিবের মূর্তি স্থাপন ও মোদির আগমনবিরোধী ইস্যুতে সাভারের আশুলিয়া এলাকায় প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন মাওলানা মাহমুদুল কবির মনির। হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে গ্রেপ্তার-নির্যাতনের শিকার হন তিনি। বিগত আওয়ামী সরকারের সময়ে চারটি মামলায় তিন দফায় গ্রেপ্তার হয়ে সাড়ে ৬ মাস কারাগারে থাকার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেও ক্ষতিগ্রস্ত হন ঢাকা জেলা উত্তর হেফাজতের সাহিত্য-সংস্কৃতিবিষয়ক এই সম্পাদক।

২০১৪ সালের ২ জানুয়ারি প্রথম গ্রেপ্তার হন আশুলিয়ার মাদরাসা দারুল আশরাফের মোহতামিম মাওলানা মাহমুদুল কবির মনির। প্রায় এক মাস কারাভোগের পর ৩০ জানুয়ারি মুক্তি পান তিনি। এরপর ২০১৪ সালের ৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় গ্রেপ্তার হলে দুদিনের মাথায় তার মুক্তি হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১২ মে তিনি গ্রেপ্তার হন। সেবার দুদিন রিমান্ডে থাকা ছাড়াও ৫ মাস ১৮ দিন কারাভোগের পর ৯ সেপ্টেম্বর মুক্তি লাভ করেন তিনি।

২০১৩ সালের ১৭ মার্চ ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে রাসুল (সা.)-এর বিরুদ্ধে বিষোদগারকারী গণজাগরণ মঞ্চের ব্যানারে আশুলিয়ায় একটি কর্মসূচি পালনের কথা ছিল। আশুলিয়ার তৌহিদি জনতা এটা রুখে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। ১৬ মার্চ রাতে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই উদ্যোগে সামনের সারিতে ছিলেন মাওলানা মাহমুদুল কবির মনির। এতে হেফাজত নেতাদের নামে ২৮ মার্চ আশুলিয়া থানায় ২১ জনের নামে দুটি মামলা দেয় গণজাগরণ মঞ্চ সংশ্লিষ্টরা। মামলায় সরকারি কাজে বাধা-অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি অভিযোগ করা হয়।

এর আগে তারা হেফাজত নেতাদের ভুল স্বীকার করে তাদের পক্ষে কিছু কথা বলতে চাপ দেয়। কিন্তু তারা কোনো নতি স্বীকার করেননি। কারণ রাসুল (সা.)-এর অবমাননার বিরুদ্ধে হেফাজতের ব্যানারে দলমত-নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। প্রতিরোধের ঘোষণা দিলেও আসলে তাদের মাঠে-ময়দানে নামার কোনো সুযোগ দেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গণজাগরণের কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় ১৬ হাজার ফোর্স নিয়োগ করা হয়। এমনকি ১৭ মার্চের আগে ওই এলাকার মসজিদগুলোয় জুমার খুতবা দিতে দেওয়া হয়নি। স্থানীয় আলেম হিসেবে মাওলানা মনিরের প্রতি বিশেষ নজরদারি ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। তার তৎপরতাতেই অন্য আলেমরা সেখানে মাঠে নামতে সাহস পান বলে নিরাপত্তা বাহিনীর ধারণা। এ ঘটনার ৯ মাসের মাথায় গ্রেপ্তার হন তিনি। এর আগ পর্যন্ত তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।

নিজের মাদরাসার নির্মাণকাজ তদারকি করছিলেন মাওলানা মাহমুদুল কবির মনির। সেখান থেকে বের হওয়ার সময় তাকে আটক করে আশুলিয়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এক দিন রাখার পর আদালতের মাধ্যমে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। এ সময় জামিনের জন্য প্রায় চারবার শুনানি করেও ব্যর্থ হন তার আইনজীবী। অবশেষে তাকে জামিন দেওয়া হয়। ৩০ জানুয়ারি মুক্তি পান তিনি।

এদিকে হেফাজত-সংশ্লিষ্ট ওই মামলায় ২০১৪ সালের ৬ এপ্রিল আবার গ্রেপ্তার হন তিনি। তার জামিনের কাগজ না থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এক দিন থানায় আরেক দিন কোর্টের গারদে রাখা হয় তাকে। একপর্যায়ে জামিনের কাগজ দেখালে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

২০২১ সালে শেখ মুজিবের মূর্তিবিরোধী আন্দোলন এবং পরে মোদিবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। আশুলিয়াতেও হেফাজতের ব্যানারে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। সে সময় সাভারের ধামসোনা ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম (পরে এমপি হয়েছিলেন) ওই এলাকার মসজিদগুলোয় মাইকে আজান দিতে নিষেধ করতেন। তার এই ষড়যন্ত্র প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছিলেন মাওলানা মাহমুদুল কবিরসহ স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মানুষ। এতে আলেমদের নানাভাবে হুমকি দিতেন সাইফুল ইসলাম। একপর্যায়ে গ্রেপ্তার হন মাওলানা মাহমুদুল কবির।

তিনি জানান, শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় চিকিৎসার জন্য গ্রেপ্তার আতঙ্ক নিয়েই তিনি নিজের মাদরাসায় অবস্থান করতেন। একপর্যায়ে ১২ মে রমজান মাসে রাত ১টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগে তার ভাতিজা কাজী হাফেজ নাজমুল হাসানকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে ব্যাপক মারধর করেই মূলত মাহমুদুল কবিরের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর আশুলিয়া থানায় নেওয়া হয় তাকে। স্থানীয় লোকজন তাকে ছাড়ানোর জন্য গেলেও পুলিশ তাতে রাজি হয়নি। গ্রেপ্তার করেই আশুলিয়া থানার এসআই এমদাদ ও এনামুল নামের এক সদস্য তাকে বিভিন্ন কথা বলে মারধর করেন। ধর্মীয় ইস্যুতে দাওয়াতি কাজ আর মাঠে থাকার ক্ষোভে এই আঘাত করেন তারা।

পরে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-সংশ্লিষ্ট একটি মামলা দিয়ে পরদিন সকাল ১০টার দিকে তাকে আদালতে নিয়ে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করায় পুলিশ। তবে মোটা অঙ্কের টাকা ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সুপারিশে রিমান্ডে নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পান তিনি। দুদিন থানায় রেখে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে থাকার দুই মাসের মাথায় আরেকটি মামলায় জড়ানো হয় তাকে।

এবার জেলে গিয়ে চরম নির্যাতনের শিকার হন মাওলানা মাহমুদুল কবির মনির। হেফাজত মানেই সাধারণ মানুষের বাইরের কেউ তিনি। কারো সঙ্গে কোনো যোগাযোগের সুযোগ দেওয়া হতো তাদের। প্রথম দুই মাস ছোট একটি রুমে একাধিক বন্দিকে রাখা হয়। সেখানে হাঁটা-চলার কোনো সুযোগ ছিল না। পরে অল্প সময়ের জন্য বাইরে বের হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এ সময় জামিনের জন্য বারবার আবেদন করেও জামিন পাননি তিনি। সরকার মহল থেকে জামিন দিতে নিষেধ করা হয়েছিল বলে তিনি পরে জানতে পারেন। এভাবে ৫ মাস ১৮ দিন কারাবন্দি থাকার পর জামিনে মুক্তি পান তিনি। তবে এসব মামলা এখনো খারিজ হয়নি। মুক্তির পরও মামলাগুলোয় তাকে নিয়মিত হাজিরা দিতে হয়েছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী মামলাগুলো খারিজের প্রক্রিয়া চলছে।

গ্রেপ্তার ছাড়াও নানাভাবে পুলিশি হয়রানির শিকার হন আশুলিয়ার গাজিরচট মুন্সিপাড়ার মাদরাসা দারুল আশরাফের মোহতামিম মাওলানা মাহমুদুল কবির মনির। তিনি জানান, তার একটি সোয়েটার ফ্যাক্টরি ছিল। যখন-তখন সেখানে পুলিশ গিয়ে ডিস্টার্ব করত। সেখানে স্বাভাবিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারতেন না তিনি। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ফ্যাক্টরিটি চার বছরের মাথায় দেড় কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন তিনি। এর আগে ২০১৪ সালে একটি মাদরাসা করেছিলেন তিনি। সেটিও নানা বাধাবিঘ্নের কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তবে সেটি তার স্ত্রীসহ অন্যদের সহযোগিতায় আজও টিকে আছে। দুই দফায় জেলে থাকা ও মামলা চালাতে মোটা অঙ্কের টাকাও খরচ হয়েছে তার। এ ছাড়া লবণ ব্যবসার একটি ডিলারশিপ ছিল, সেটি আর্থিক সংকটের কারণে বন্ধ করে দেন তিনি।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের আগ পর্যন্ত অঘোষিত জেলে ছিলেন দাবি করে মাহমুদুল কবির মনির বলেন, সে সময় মুক্তভাবে চলাচল ও কথা বলার সুযোগ ছিল না। গ্রেপ্তার-রিমান্ডের আতঙ্কে থাকতে হতো তাকে। বিভিন্ন সময় আশুলিয়া থানা-পুলিশ ও গোয়েন্দার লোকরা যোগাযোগ করত। এমনকি স্থানীয় প্রভাবশালী আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকারবিরোধী কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার জন্য চাপ দিত। অন্যথায় গ্রেপ্তার-নির্যাতনের হুমকিসহ নানা ভয়ভীতিও দেখানো হতো। জেলে থাকা অবস্থায়ও তার স্ত্রীসহ অন্যদের নানাভাবে হয়রানি করা হতো।

সূত্র: আমার দেশ 

No comments:

Post a Comment

ধর্ষণ থামছে না, ফেব্রুয়ারিতে দিনে গড়ে ১২টি মামলা। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 ধর্ষণ থামছে না, ফেব্রুয়ারিতে দিনে গড়ে ১২টি মামলা: (নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা: ২০২৪: জানুয়ারি–জুলাই ১০,৭০৪টি, ২০২৪: আগস্ট...