Monday, January 27, 2025

মাওলানা মোশাররফ হোসাইন পুলিশের অত্যাচারে পাঁচবার বাসা পরিবর্তন করেন। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

মাওলানা মোশাররফ হোসাইন পুলিশের অত্যাচারে পাঁচবার বাসা পরিবর্তন করেন: 

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯: ০০

একটি ক্যাডেট মাদরাসার প্রিন্সিপাল হিসেবে শিক্ষা কার্যক্রম নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন মাওলানা মোশাররফ হোসাইন। একইসঙ্গে বিভিন্ন মিডিয়া ও মাহফিলে ধর্মীয় আলোচক হিসেবেও পরিচিত তিনি। অথচ একের পর এক রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের নামে নির্যাতনের শিকার হন রাজধানীর সবুজবাগের সৈয়দবাগ জামে মসজিদের এই খতিব।

সাতটি মামলায় প্রায় চার মাস কারাগারে কাটাতে হয় তাকে। আদালতে আর কারাগারে যাতায়াতের সময় তার দুহাতে হ্যান্ডকাফ আর পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরাত পুলিশ। এ সময় তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তাকে বাদ দেন আওয়ামী লীগাররা।

বিগত আওয়ামী সরকারের নিপীড়নের শিকার শুধু নিজেই হননি, তার পরিবারও ভুক্তভোগী ছিল। পুলিশি অত্যাচারে পাঁচবার বাসা পরিবর্তন করেন বিশিষ্ট এই মুফাস্সিরে কোরআন। তার গ্রামের বাড়িতেও হানা দিত পুলিশ। গ্রেপ্তার-নির্যাতন আতঙ্কে দিন কাটত সবার।

মাওলানা মোশাররফ হোসাইন বলেন, বিগত স্বৈরাচারী খুনি শেখ হাসিনার সরকার এদেশের শান্তিকামী মানুষ তথা ওলামায়ে কেরাম এবং দেশকে রক্ষার জন্য যারা অকুতোভয় সৈনিকের দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের ওপর যে আচরণ করেছে, আমিও তার শিকার।

আমি একজন শিক্ষক, প্রিন্সিপাল, একজন খতিব। বিভিন্ন মিডিয়ায় নিয়মিত ধর্মীয় টকশো করে থাকি আমি। তারপরও আমাকে নিপীড়ন থেকে রেহাই দেওয়া হয়নি।

উত্তরার বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা মোশাররফ হোসাইন জানান, ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে কোনো একটি কারণে আট-দশ জন ওলামায়ে কেরামকে নিয়ে তিনি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উত্তরার বাসায় যান। সঙ্গে ছিলেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদীও। তিনটি গাড়ি নিয়ে তারা ওই বাসায় যান।

গাড়িগুলো গোয়েন্দারা ফলো করতে পারে ভেবে তিনি নিজের মাদরাসার মাইক্রোবাস এবং আরেকটি প্রাইভেট কার সেখান থেকে পাঠিয়ে দেন। শুধু শামীম সাঈদীর গাড়িটি সেখানে অপেক্ষায় ছিল। প্রায় দেড় ঘণ্টা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে আলাপ হয়। তার এক সপ্তাহ আগেই জেল থেকে মুক্তি পান মির্জা ফখরুল। তার সঙ্গে কারারুদ্ধ মাওলানা সাঈদীর অনেক কথাবার্তা হয়েছে, সে বিষয়গুলোই তিনি আলোচনা করছিলেন।

মির্জা ফখরুলের বাসা থেকে বের হওয়ার সময় গোয়েন্দা নজরদারির শঙ্কার বিষয়টি ভুলে যান তিনি। সেখান থেকে সবাই শামীম সাঈদীর গাড়িতে চড়ে উত্তরার আমির কমপ্লেক্সে অপেক্ষারত মাওলানা কামালউদ্দিন জাফরীর সঙ্গে দেখা করতে যান তারা। আজমপুরে নবাব হাবিবুল্লাহ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে পৌঁছালেই দুই পুলিশ সদস্য তাদের গাড়ি থামান। তিনি গাড়ি থেকে নামতেই উত্তরা পূর্ব থানার ওসি শাহাদাত একটি পিকাপে সেখানে এসে পৌঁছান।

তিনি বলেন, সবাইকে থানায় যেতে হবে, গাড়িতে উঠুন। স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে পূর্বপরিচিত সেই ওসিকে কারণ জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি তিনি। তার আশঙ্কা হচ্ছিল, তাদের গুম করা হতে পারে। একপর্যায়ে তিন আলেম ও ড্রাইভারসহ তাদের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

একপর্যায়ে ডিবির এসি গোবিন্দের (গোপালগঞ্জে বাড়ি) নেতৃত্বে চারজন ওই থানায় যান। কোনো মামলা বা ওয়ারেন্ট আছে কি না, জানতে চাইলে ওসি শাহাদত না-সূচক জবাব দেন। তার সঙ্গে হাবিবুর রহমান নামে শান্তমারিয়াম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ছিলেন। এ সময় এসি গোবিন্দকেও গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এত প্রশ্ন করবেন না, আপনাদের জবাব দিতে আমরা বাধ্য নই। একপর্যায়ে অমানবিক আচরণ করা হয় তাদের সঙ্গে।

মাওলানা মোশাররফ বলেন, বিকাল সাড়ে ৩টায় তাদের ডিবিতে নিয়ে গারদখানায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। নোংরা পরিবেশে সেখানে তারা অজু ও নামাজ আদায় করেন। অসৌজন্যমূলক আচরণের শঙ্কা নিয়ে রাত কাটান সেখানে। তবে এ সময় কোনো অঘটন ঘটেনি, কোনো জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি। তবে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে।

ফজরের পর ডিবি থেকে তাদের নেওয়া হয় মতিঝিল থানায়। এসআই মোকাররম (গোপালগঞ্জে বাড়ি) একটি হায়েস মাইক্রো এনে তাদের থানায় নিয়ে দুটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখান। মামলাগুলো ছিল মতিঝিলের পুরোনো ঘটনার। এর মধ্যে ছাত্র আন্দোলনের সময় একজন ওসি (গোপালগঞ্জে বাড়ি) আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ ছিল।

সবগুলো ছিল রাজনৈতিক মামলা। পরে আদালতের মাধ্যমে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। সেই মামলায় তিন মাস ২১ দিন জেল খাটেন এই আলেম। এরই মধ্যে দুই দফায় দুই দিন করে চার দিন রিমান্ডেও নেওয়া হয় তাকে। তবে এ সময় তার সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করা হয়নি। এ সময় শিবিরের মেধাবী ছাত্রদের ওপর বর্বর নির্যাতন দেখেন তিনি। পরে সব মামলায় তিনি জামিনের মাধ্যমে মুক্তি পান।

গ্রেপ্তারের দিন ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে একটি তাফসির মাহফিলের প্রধান অতিথি থাকার কথা ছিল মাওলানা মোশাররফের। কিন্তু তিনি সেখানে যেতে না পারায় মাহফিল কর্তৃপক্ষ খুবই রাগান্বিত হয়। তবে দুদিন পর পত্রিকায় তার গ্রেপ্তারের খবর দেখে কষ্ট দূর হয় তাদের।n

মাওলানা মোশাররফ হোসেন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমার দ্বারা কোনো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হোক, এটা কখনো চাইনি। গ্রেপ্তারের আগের দিন বড় ছেলের দাখিল পরীক্ষা শুরু হয়। তিনি বলেন, আদালতে ও কারাগারে নেওয়ার সময় হ্যান্ডকাফ ও ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে যেভাবে নেওয়া হয়, যেন আমরা সবচেয়ে বড় অপরাধী। একজন খতিব ও শিক্ষককে এভাবে সবার সামনে উপস্থাপনের চেয়ে বড় অপমান আর নেই। কারাগারে একদিন তার গলায় মাছের কাঁটা বেঁধে যায়।

কিন্তু তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। অবস্থা খারাপ হলে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে মেডিকেলে নেওয়ার উদ্যোগ নিলেও হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় তিনি যেতে রাজি হননি। একপর্যায়ে সেগুলো খুলে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, কোর্টে আনা-নেওয়ার সময় হ্যান্ডকাফ ও ডান্ডাবেড়ি পরতে আপত্তি জানালে তারা জেল কোড দেখায় যে, দু-তিনটি মামলায় ওয়ারেন্ট থাকলে ডান্ডাবেড়ি পরতেই হবে। তাহলে বর্তমানে গ্রেপ্তার সাবেক মন্ত্রীদের ডান্ডাবেড়ি পরানো হচ্ছে না কেন, প্রশ্ন তার।

আরও কিছু মামলায় জড়ানো হয়েছিল মাওলানা মোশাররফ হোসাইনকে। সেগুলোয়ও জামিন নিয়ে নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। এর ছয় মাসের মাথায় আরও চারটি মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাকে। এই মামলাগুলো সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতেন না। শিক্ষক হিসেবে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। তারপরও একের পর এক রাজনৈতিক মামলায় জড়ানো হয় তাকে।

বানোয়াট মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, থানায় একটি মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, সেই তালিকা ফটোকপি করে একই থানায় আরেকটি মামলায় তাদের জড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। উত্তরা পূর্ব থানায় একই বিষয়ে দুটি এবং দক্ষিণখানের আরেকটি ঘটনায় দুটি মামলা দেওয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে। আজমপুর রেললাইনে পুলিশের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের ধস্তাধস্তির অভিযোগে দায়ের করা মামলায়ও তাকে সামনের সারিতে আসামি করা হয়।

সেখানে তাকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অথচ জামায়াতের প্রাথমিক শপথেরও কেউ তিনি নন। বাকি দুটি মামলা হয়েছিল ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর। এই মামলার খবর জেনে হতবাক হন তিনি। তিনি তখন থানার পাশেই মসজিদে নামাজ ও মাদরাসায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। পরে মামলার খবর পেয়ে ওই এলাকা থেকে অন্য স্থানে চলে যান তিনি। এভাবে সাত-আটটি মামলায় তার নামে ওয়ারেন্ট ছিল। একপর্যায়ে কোর্টে হাজিরা দেওয়া বন্ধ করে দেন তিনি। চারটি মামলায় আজও জামিন করাননি তিনি। সেই মামলাগুলো এখন খারিজ হয়ে গেছে।

পতিত আওয়ামী সরকারের সময়ে কারাগারে যাওয়া ছাড়াও বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কোরআন মাওলানা মোশাররফ হোসাইন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাকে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট মাদরাসার পরিচালক পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। একজন আওয়ামী লীগারের ষড়যন্ত্রে এই কাজ করা হয়। পুলিশি অত্যাচার চলে পরিবারের ওপরও।

বিভিন্ন সময় তার উত্তরার বাসায় পুলিশ হানা দেয়। পুলিশি অত্যাচারে পাঁচবার বাসা পরিবর্তন করেন তিনি। তার বাসা চিনে গেলেই সেখানে পুলিশের তৎপরতা দেখা যেত। এতে তার সন্তানদের লেখাপড়ার ওপর প্রভাব পড়ত। তাদের নিরাপদে রাখতেই বাসা পরিবর্তন করা হয়। বাগেরহাটে তার গ্রামের বাড়িতেও বারবার পুলিশ যায়। তার সন্তানদের গ্রেপ্তারের হুমকিও দেওয়া হয় বিভিন্ন সময়ে।

তিনি বলেন, পুলিশের আচরণ দেখে মনে হয়েছে, আওয়ামী স্বৈরাচারের সবচেয়ে সহায়ক শক্তি ছিল পুলিশ। এই আচরণগুলো শেখ হাসিনার পতন এবং তাকে পচানোর জন্য আরও বেশি সহায়ক হয়েছে। আজকে শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশ থেকে নয়, বরং ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন।m

তিনি বলেন, আলেম-ওলামা ও সাধারণ মানুষের ওপর আওয়ামী সরকারের নির্যাতনের কারণে তাদের চোখের পানি আল্লাহ কবুল করেছেন। তা না হলে সব সংসদ সদস্যসহ একটি সরকারের সবার পালিয়ে যাওয়ার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে নেই।

সূত্র: আমার দেশ 

No comments:

Post a Comment

ধর্ষণ থামছে না, ফেব্রুয়ারিতে দিনে গড়ে ১২টি মামলা। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 ধর্ষণ থামছে না, ফেব্রুয়ারিতে দিনে গড়ে ১২টি মামলা: (নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা: ২০২৪: জানুয়ারি–জুলাই ১০,৭০৪টি, ২০২৪: আগস্ট...