BDC CRIME NEWS24
পালিয়ে বেড়াচ্ছে ফ্যাসিবাদের দোসর ১২ পুলিশ কর্মকর্তা:
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২: ১০
আওয়ামী সরকারের পতনের পর পুলিশের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কাজে যোগদান না করে পলাতক রয়েছেন। এসব কর্মকর্তা পেশাদারিত্ব ভুলে অতি-উৎসাহী হয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম, ক্রসফায়ারে হত্যা করা, রিমান্ডে নির্যাতন, গণগ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো, গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি করতেন। এ কাজের জন্য তৎকালীন সরকার ব্যাচ ডিঙিয়ে পদোন্নতি দেওয়া, দুর্নীতি ও অপকর্মের জন্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়াসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাদের পুরস্কৃত করেছে।
১৮৬ জন কর্মকর্তা এখনও কাজে যোগ দেননি। এদের বিরুদ্ধে আগস্ট গণহত্যার একাধিক মামলা রয়েছে। সরকার তাদের কাজে যোগ দিতে বললেও তারা যোগ দেননি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের পলাতক হিসেবে গণ্য করলেও এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি। বিএনপির সাবেক চিফ হুইফ জয়নুল আবেদীন ফারুকের ওপর হামলা চালানো ডিএমপি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ কানাডায় এবং ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার ভারতে পালিয়েছে।
এ ছাড়া জঙ্গি নাটকের হোতা পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (এসবি) মনিরুল ইসলামও পালিয়েছে ভারতে। তিনি ভারত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্ট দিচ্ছেন।
ফ্যাসিবাদের এই ১২ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হলেন সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, বেনজীর আহমেদ, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, খন্দকার গোলাম ফারুক, শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত আইজিপি (অপারেশন) আতিকুল ইসলাম, র্যাবের ডিজি ব্যারিস্টার হারুন অর রশীদ, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ, ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার মহিদ ও যশোরের সাবেক এসপি প্রলয় কুমার জোয়াদ্দার। তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর জানান, যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে সেসব মামলার তদন্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। পালিয়ে থাকা একজন অতিরিক্ত ডিআইজি আমার দেশকে জানান, তার নামে ডিএমপিতে তিনটি মামলা রয়েছে। এজন্য তিনি কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর আলোচিত-সমালোচিত ১৮৬ জন পুলিশ কর্মকর্তার এখনও চাকরি রয়েছে। কর্মস্থলে উপস্থিত না হওয়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ১ ডিআইজি, ৭ জন অতিরিক্ত ডিআইজি, ২ পুলিশ সুপার, ১ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ৫ জন সহকারী পুলিশ সুপার, ৫ জন পরিদর্শক, ১৪ জন উপপরিদর্শক ও সার্জেন্ট, ৯ জন সহকারী উপপরিদর্শক, ৭ জন নায়েক ও ১৩৫ জন কনস্টেবল রয়েছেন।তাদের বেতন স্থগিত থাকলেও হাজিরা খাতায় নামের পাশে অনুপস্থিত লেখা রয়েছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদের নামে ৩৮টি, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের ৩৩, মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১১টি, সাবেক যুগ্ম পুলিশ কমিশনার এসএম মেহেদী হাসানের ১১টি, ডিএমপির ওয়ারি বিভাগের ডিসি ইকবাল হোসাইনের ৮টি, র্যাব সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদের নামে ৫টি, ডিএমপি যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের ২৭টি, ডিএমপির সিটিটিসির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামানের ৩টি ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মহিদ উদ্দিন ২ ও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলামের নামে ১ মামলা রয়েছে।
সূত্র জানায়, ফ্যাসিবাদের পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার যখন আইজিপি ছিলেন তখন অনেক গুমের ঘটনা ঘটে। তার সময়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী গুম হন। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি জানান, আমরা ইলিয়াসকে খুঁজে পাচ্ছি না। ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগেই তিনি দেশ ছেড়ে পালান।
আরেক পুলিশ সদস্য বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে গুম ও অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তিনিও বিদেশে পালিয়েছেন। ডিএমপির সাবেক কমিশনার শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে বিরোধী দলের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, পুলিশের ১০ লাশ ফেলার ক্ষমতা আছে। সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। মাঠে থেকে তিনি গণহত্যায় উসকানি দিয়েছেন। তিনি ভারতে পালিয়েছেন।
২০০৯ সালের আওয়ামী সরকারে জঙ্গি কার্ড খেলানোর অন্যতম হোতা সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ রয়েছে। তার নামেও আগস্ট গণহত্যার ১১টি মামলা হয়েছে।
ফ্যাসিবাদের অন্যতম পুলিশ কর্মকর্তা হলেন অতিরিক্ত আইজিপি (অপারেশন) আতিকুল ইসলাম। জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় তিনি ডিএমপির ক্রাইম অ্যান্ড সেন্টারে বসে পুলিশকে দিক-নির্দেশনা দিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলায় উসকানি দিয়েছেন। তিনি পলাতক রয়েছেন।
সূত্র জানায়, বিগত জুলাই ও আগস্ট আন্দোলনে হেলিকপ্টার থেকে গুলির ঘটনায় দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন র্যাবের সাবেক ডিজি ব্যারিস্টার হারুন অর রশীদ। তার নামে ৫টি মামলা রয়েছে। তিনিও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ধরাছোঁয়ার বাইরে ও পলাতক তালিকায় আছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) ডিআইজি হারুন অর রশীদ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনের প্রথম সারির কয়েক সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয়ে আটকে রেখে নানা নাটকের জন্ম দেন তিনি। হারুন ৫ আগস্টও রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করার নির্দেশ দেন। হেলিকপ্টারে অন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পালানোর চেষ্টা করলেও তাকে নেওয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত তিনি মাস্ক পরে পুলিশ সদর দপ্তরের দেয়াল টপকে পালিয়ে যান। তিনি নেপাল হয়ে কানাডা চলে গেছেন। হারুনের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় ৩৮টি মামলা হয়েছে।
পলাতকদের তালিকায় রয়েছেন অতিরিক্ত ডিআইজি বিপ্লব কুমার সরকার। তিনি কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ২৭টি মামলা রয়েছে। ফ্যাসিবাদের অন্যতম আস্থাভাজন কর্মকর্তা অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়াদ্দার।
সূত্র: আমার দেশ
No comments:
Post a Comment