Tuesday, January 14, 2025

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এ ফ্যাসিবাদ সমর্থকদের রোষানলে জুলাই বিপ্লবের শিক্ষার্থীরা। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এ ফ্যাসিবাদ সমর্থকদের রোষানলে জুলাই বিপ্লবের শিক্ষার্থীরা:

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০০: ২০

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) ক্যাম্পাসে দেওয়ালে জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি অঙ্কনের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার নোটিশ ঘিরে গড়ে উঠা আন্দোলন ৬ শর্তে স্থগিত করলেও সঙ্কটের স্থায়ী সুরাহা হয়নি। ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের গোপন তৎপরতায় জটিলতা ক্রমেই বাড়ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদ বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে যশোর-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি ছিলেন। টানা তিনবারের এমপি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিসহ একাধিক কমিটির সদস্য ছিলেন।

জেমকন গ্রুপের মালিক ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি কাজী নাবিল শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে পলাতক। তার বিরুদ্ধে সরকারি-বেসরকারি ভূমি দখল ছাড়াও মামলা দিয়ে স্থানীয়দের হয়রানি, মন্দির দখল, নদী দখলসহ নির্বাচনী এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ব্যবসায়ী ও লেখক কাজী আনিস আহমেদ জুলাই বিপ্লবে শুধু বিরোধিতাই নয়, বিদেশে শেখ হাসিনাপন্থি প্রচারে ‘গোপনে অর্থ ঢেলেছেন’। সুইডেনভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্ল্যাটফর্ম-নেত্র নিউজ লিখেছে, কাজী আনিস তার মালিকানার দুবাইভিত্তিক কোম্পানির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ডানপন্থি লবিং কোম্পানির সাহায্যে ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক মহলে শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার চেষ্টা চালিয়ে এসেছেন।

আর এ কাজ করতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের আইন লঙ্ঘনের ঝুঁকি নিয়েছেন বলেও নেত্র নিউজের ভাষ্য।

‘কীভাবে একজন মিডিয়া মোগল হাসিনাপন্থি প্রচারে অর্থায়ন করে গেছেন’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনের শুরুতে আনিস আহমেদের পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে লেখা হয়েছে, এই ব্যবসায়ী এখন ‘দোদুল্যমান পারিবারিক ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের’ নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

ইউল্যাবের উপাচার্য ইমরান রহমান এবং ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যান্যরাও একই আদর্শে বিশ্বাসী এবং ফ্যাসিবাদের দোসর। তাদের বিরুদ্ধে বিদেশে বিপুল অংকের অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কাজী আনিস আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আনিস আহমেদসহ ট্রাস্টি বোর্ডের অনেকেই দেশ ও বিদেশে আত্মগোপনে রয়েছেন।

ইউল্যাবের উপাচার্য ইমরান রহমানকে মোবাইলে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াটস আপে কয়েকটি প্রশ্ন পাঠানো হলেও তিনি উত্তর দেননি।

আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের অভিযোগ, ইউল্যাব প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবিকে উপেক্ষা করে ‘ফ্যাসিবাদী’ আচরণ বজায় রেখেছে। উপাচার্যের নেতৃত্বে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি, গ্রাফিতি আঁকার কারণে শিক্ষার্থীদের শাস্তি প্রদান ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ বিনষ্ট করা হয়েছে।

ইউল্যাবের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিজেদের কৃতকর্ম ঢাকতে আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একাংশ নিয়ে দাঁড় করিয়েছে প্রতিপক্ষ গ্রুপ। গ্রুপটি শিক্ষকদের সম্মান রক্ষার স্লোগান দিয়ে মাঠে নামলেও মুলত ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি রক্ষায় কাজ করছে। এদিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে ইউজিসি বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি বিষয়ক তদন্তের স্বার্থে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা বললেও তা এখনো হয়নি। এতে সঙ্কট আরো জটিল হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, ৪ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসের ভেতরে জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু গ্রাফিতি আঁকার কারণে ২৯ ডিসেম্বর দুই শিক্ষার্থীকে শাস্তিমূলক নোটিশ দেওয়া হলে ঘটনাটির সূত্রপাত হয়। নোটিশে বলা হয়, তাঁরা সম্পদের ক্ষতিসংক্রান্ত নীতি অনুসারে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। চিঠিতে গ্রাফিতি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মুছে ফেলার জন্য বলা হয়। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নোটিশ প্রত্যাহার করলেও দুঃখ প্রকাশ করেনি। ১ জানুয়ারি ৫ দফা দাবিতে ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা বছিলা ক্যাম্পাসে আমরণ অনশনে গেলে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের প্রতিনিধি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ এর মধ্যস্থতায় সাময়িক সুরাহা হয়।

গত ২ জানুয়ারি ইউল্যাব শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আসলে কি শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে একটা সমাধান হলেও আসলে সঙ্কটের স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি তদন্ত কমিটি গঠন করবে, সেই কমিটি রিপোর্টের ভিত্তিতে সমাধানের চেষ্টা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে উদ্ভুত পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা বললেও ভেতরে ভেতরে চলছে কর্তৃপক্ষের নানা পরিকল্পনা। প্রশাসনের মদতপুষ্ঠ শিক্ষার্থীদের উস্কে দেওয়া হচ্ছে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে। এদিকে কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত উপাচার্য ইমরান রহমান তাঁর দায়িত্ব পালন করা থেকে বিরত থাকার কথা থাকলেও ভেতরে ভেতরে সবকিছুই করছেন তিনি। এমন কি প্রশাসন নানা প্রলোভনে নিজেদের সমর্থনপুষ্ঠদের সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে একাংশকে মাঠে নামিয়ে দিয়ে তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিচার ও বহিস্কারের দাবি করছে। এনিয়ে আন্দোলনের সাথে জড়িত শিক্ষার্থীরা ভীতির মধ্যে রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে শিক্ষার্থীদের বিশাল ছবি আপলোড করা হয়েছে। যেখানে উই স্ট্যান্ড উইথ ভিসি স্যার, স্যাভ ইউল্যাব, রেসপেকট টিচার্স, নো উইয়ার রাইটস ইত্যাদি স্লোগান লেখা রয়েছে। এই ছবি আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রুবিনা আক্তার ঋতু বলেন, গ্রাফিতি আঁকার দায়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। যেখানে দেশের জন্য হাজার তরুণ জীবন দিয়েছে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সরকারের উচিত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।

আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী শিবলী সাদিকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে ক্যাম্পাসে গ্রাফিতি আঁকার কারণে দুই শিক্ষার্থীকে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে শাস্তিমূলক নোটিশ দেওয়ায় আন্দোলনকারীরা ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমানের তাৎক্ষণিক পদত্যাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠনসহ ৫ দফা দাবিতে আমরণ অনশন করে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এসএমএ ফায়েজ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো চিঠি আসেনি। চিঠি পাওয়ার পর সে আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র: আমার দেশ 

No comments:

Post a Comment

ধর্ষণ থামছে না, ফেব্রুয়ারিতে দিনে গড়ে ১২টি মামলা। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 ধর্ষণ থামছে না, ফেব্রুয়ারিতে দিনে গড়ে ১২টি মামলা: (নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা: ২০২৪: জানুয়ারি–জুলাই ১০,৭০৪টি, ২০২৪: আগস্ট...