BDC CRIME NEWS24
আওয়ামী সিআইডির এসপি শাহনেওয়াজ খালেদের যতো অপকর্ম:
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ১২
গ্রেপ্তার করে পিটিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি। শাহনেওয়াজ খালেদের শিখিয়ে দেওয়া নাম বলতে হতো আসামিদের। পরে জবানবন্দিতে আসা নিরীহ লোকজনকে গ্রেপ্তার করে টাকা আদায় করত চট্টগ্রামের সিআইডির এসপি শাহনেওয়াজ খালেদ। সিএমপিতে আওয়ামীপন্থি পুলিশ অফিসার হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি।
সবশেষ জুলাই বিপ্লবে সরকার পতন আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে সন্ত্রাসী উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করে। খালেদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ রয়েছে আ.লীগের হলেই তদন্তে দায়মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি। ২০০৫ সালে পুলিশে যোগ দেন শাহনেওয়াজ খালেদ। নিয়ম রক্ষায় ১৬ বছরে দুবার রেঞ্জের বাইরে বদলি করা হলেও এক মাসের মধ্যে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ফের বন্দর নগরীতে ফিরে আসেন তিনি।
বড় বড় মামলায় দায়মুক্তি
২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে সিগারেটের ১৩টি অবৈধ ব্যান্ডরোলের চালান আসে। যার মূল্য হাজার কোটি টাকার বেশি। মামলা তদন্তের জন্য তদবির করে সিআইডিতে নিয়ে যান শাহনেওয়াজ খালেদ। ভ্যাট গোয়েন্দা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সম্পৃক্ততা পায়।
এসব ব্যবসার লেনদেনে নওফেলের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হতো বলেও উল্লেখ করা হয়। প্রতিটি রিপোর্টে নওফেল আর লিটনের নাম উল্লেখ ছিল। কিন্তু সিআইডির সদর দপ্তরে পাঠানো প্রতিবেদনে নওফেল আর লিটনের নাম বাদ দেওয়া হয়। তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল পুনরায় একটি প্রতিবেদন দেন।
চোরাচালানের অন্যতম নিয়ন্ত্রক
শাহনেওয়াজ খালেদের বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারে। বাজারটির চোরাচালান ও হুন্ডির ব্যবসার উল্লেখযোগ্য অংশ নিয়ন্ত্রণে নেন। সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে চার কেজি স্বর্ণের ২৬টি বারসহ মো. সোহেল নামের একজন গ্রেপ্তার হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মিজানুর রহমান নামে রিয়াজ উদ্দিন বাজারের এক ব্যবসায়ীর জন্য বারগুলো এনেছিলেন বলে জানান। মিজানুর রহমানকে জিম্মি করে মোটা টাকা হাতিয়ে নেন।
এরই ধারাবাহিকতায় সায়েমগীর নামের রেয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে খালেদ। পড়ে সে জামিনে বেরিয়ে শাহনেওয়াজ খালেদের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জমা দেন তিনি।
সিআইডির সাবেক আরেক পুলিশ পরিদর্শক বলেন, চট্টগ্রাম শহরের কোনো থানায় স্বর্ণ কিংবা বৈদেশিক মুদ্রা চোরাচালানে মামলা হলে তার বেশির ভাগই তদন্তের নামে সিআইডিতে আনা হতো। এখনো সিআইডিতে এরকম বেশ কয়েকটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।
নিরীহদের হয়রানি করে টাকা আদায়
পিটিয়ে জবানবন্দি নেওয়া দুজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছেন আমার দেশের প্রতিনিধি। এমন একজন রবিউল হাসান (ছদ্মনাম)। রিয়াজ উদ্দিন বাজারে তার ব্যবসা রয়েছে। তিনি বলেন, ২০২২ সালে হঠাৎ সিআইডির একটি দল এসে তুলে নিয়ে যায়। তারপর বলা হয়, স্বর্ণ চোরাচালানে আমার নাম রয়েছে। তারপর বিশাল একটি টাকা চায় আমার কাছ থেকে। টাকা না দিলে মামলায় ফাঁসানো হয়। আমি কোনো দিন এসবের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।
আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, সিআইডির একটি দল তার নামে ১০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। তাও অভিযোগ স্বর্ণ চোরাচালানের। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রিয়াজ উদ্দিন বাজারে কয়েক কোটি টাকার বৈধ ব্যবসা আছে। টাকা না দিলে, এসব ব্যবসা করতে দিতেন না তিনি।
ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন
বেশ কয়েকটি চোরাচালানের মামলা নিয়ে নয়ছয় করার অভিযোগে ২০২২ সালে শাহনেওয়াজ খালেদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। একই সঙ্গে তিনি ব্যক্তিগতভাবে শুনানির আবেদন করেন। গত ১ ডিসেম্বর তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অব্যাহত চাপে ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর তাকে নামমাত্র শাস্তি তথা সতর্ক করে ওই বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
গত ১৬ জুলাইয়ে চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় ছাত্র-জনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় তিনজন নিহত হয়। ওই ঘটনায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারী উল্লেখ করে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। ঘটনার পরপরই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থায় শাহনেওয়াজ খালেদ ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেন।
অভিযুক্ত শাহনেওয়াজ খালেদের বক্তব্য
বক্তব্য জানতে সিআইডির এসপি শাহনেওয়াজ খালেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চট্টগ্রামে বাড়ি হলেও বিশেষায়িত সংস্থা সিআইডি এবং মেট্রোপলিটন পুলিশে দায়িত্ব পালন করা যায়। নিজ জেলায় মূল পুলিশে চাকরি করা যায় না। তা ছাড়া তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যা বলেও দাবি করেন তিনি। বলেন তিনি কোনো চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত নন। দায়িত্ব পালনের সুবাদে তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের যোগাযোগ ছিল। এর বাইরে কিছু নয়।
ছাত্রদের বিরুদ্ধে গোপনীয় প্রতিবেদন দেওয়া নিয়ে তার কোনো বক্তব্য নেই বলেও মন্তব্য করেন। বিভাগীয় মামলার বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয় এটা সাংবাদিকদের জানার বিষয় নয় বলে জানান শাহনেওয়াজ খালেদ।
সূত্র: আমার দেশ
No comments:
Post a Comment