Saturday, November 16, 2024

হারুনের প্রশ্রয়ে শতকোটি টাকার মালিক মোকারম। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

হারুনের প্রশ্রয়ে শতকোটি টাকার মালিক মোকারম:

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০০ পিএম

কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোকারম সরদার। একসময় ছিলেন জাহাজ থেকে কয়লা ওঠানামানোর শ্রমিক। পরে নারায়ণগঞ্জের তৎকালীন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের প্রভাব ও আশীর্বাদে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যান মোকারম। সে সময় হারুনের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন মোকারম। এরপর এই তিনি নাম লিখিয়েছেন সিনেমার প্রযোজনায়।

নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন কয়লাশ্রমিক জানান, মোকারম সরদার আশির দশকে তার বাবা নুরুল ইসলামের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় যান। এরপর আলীগঞ্জ ও পাগলা এলাকায় জাহাজ থেকে কয়লা নামানোর কাজ শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে জাহাজ থেকে ট্রাকে গম, চাল, ডাল ও সারের বস্তা লোড-আনলোড শ্রমিকদের সর্দার হন মোকারম। তারপর সখ্য গড়ে তোলেন শ্রমিক লীগ নেতা কাউসার আহাম্মেদ পলাশের সঙ্গে। দখলে নেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের জায়গা। সময়ের ব্যবধানে হয়ে যান কোটি কোটি টাকার মালিক। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিনেমা নির্মাণে নাম লেখান মোকারম সরদার। কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘ইভটিজিং’ সিনেমায় প্রযোজক হিসেবে তার নাম পাওয়া গেছে। ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটিতে মোকারম কোটি টাকার অধিক বিনিয়োগ করেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ ছাড়া ফতুল্লার আলীগঞ্জে বিলাসবহুল তিনতলা বাড়ির মালিক মোকারম। ২০১৬ সাল থেকে তিনি ‘টয়োটা হ্যারিয়ার’ গাড়িতে করে চলাফেরা করতেন। ২০১৭ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ শহরের উকিলপাড়া এলাকায় আরেকটি তিনতলা বাড়ি কেনেন। একই বছর নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন একটি কলেজ। ওই বছর হেলিকপ্টার নিয়ে গ্রামে ঈদ পালন করতে গিয়েছিলেন মোকারম। এরপর ২০১৮ সালে হারুন অর রশীদ নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে যোগ দেন। এরপর নারায়ণগঞ্জে মোকারমের কয়েকগুণ প্রভাব বেড়ে যায়। সে সময় হারুনের ঘুষ-বাণিজ্য চালাতেন মোকারম। আর টাকা-পয়সার লেনদেনসহ বিভিন্ন কারণে মোকারমের আলীগঞ্জের ডেরায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন হারুন। এ সময় হারুনের ক্যাশিয়ার হিসেবে মোকারম পরিচিত হয়ে ওঠেন। আর সে সময় মোকারম নারায়ণগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে নামে-বেনামে শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি গড়ে তোলেন। পরে হারুন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) বদলি হয়ে গেলে মোকারম আড়ালে চলে যান। তবে চলতি বছরের ২১ মে তিনি নিকলীর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। 

পাগলা ও আলীগঞ্জের স্থানীয়রা জানান, শ্রমিক লীগ নেতা পলাশ ও এসপি হারুনের প্রভাব কাজে লাগিয়ে সে সময় জাহাজ থেকে পণ্য খালাসে অনিয়ম ও চোরাই কয়লা বেচাকেনাকারীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন মোকারম। হারুন প্রায়ই আলীগঞ্জ এলাকায় বুড়িগঙ্গার তীরে মোকারম সরদারের লেবার অফিসে আসা-যাওয়া করতেন। সে সময় মোকারম ও হারুনকে লেবার অফিসে বসে টাকা-পয়সার হিসাব করতে দেখা গেছে। এর পরই আলীগঞ্জ এলাকায় অন্তত ৮ থেকে ১০টি প্লট কেনেন মোকারম সরদার। এর মধ্যে আলীগঞ্জে একটি বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেন।

কিশোরগঞ্জের স্থানীয়রা জানান, মোকারমের ছোট ভাই নিকলীর একটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। সাবেক ডিবিপ্রধান হারুনের আশীর্বাদে উপজেলার চেয়ারম্যান হন মোকারম। অথচ তারা ছিল দিনমুজর। আগে গ্রামে তাদের কোনো অবস্থানই ছিল না।

২০১৮ সালের দিকে উকিলপাড়ায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বাড়ি ক্রয় করেন মোকারম সরদার। এ ছাড়া নিকলীর দামপাড়ায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের ২৫ শতাংশ জমিও কিনেছেন। সেখানে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ডুপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করেন। এ ছাড়া তার একটি কোটি টাকা দামের জিপ আছে। সেই গাড়ি নিয়ে এলাকায় মহড়া দিতেন।

এ বিষয়ে জানতে মোকারম সরদারের ব্যবহার করা নম্বরে ফোন করলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তার বক্তব্য নিতে কিশোরগঞ্জ ও আলীগঞ্জের বিশালবহুল বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে তার আলীগঞ্জ লেবার অফিসের কর্মচারীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর করা চাঁদাবাজির মামলায় গত ২৭ অক্টোবর মোকারম সরদারকে ফতুল্লার আলীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। পরের দিন আদালত থেকে তিনি জামিন পেয়ে যান। এর পর থেকে তিনি আত্মগোপনে।

নারায়ণগঞ্জের নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ বি সিদ্দিক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পুলিশ কর্মকর্তা হারুন নারায়ণগঞ্জ থেকে বহু টাকা নিয়ে গেছেন। সে সময় মানুষ ধরে নিয়ে হারুন ঘুষ নিয়েছেন। আমরা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেও তখন কোনো ফলাফল পাইনি। হারুন যাওয়ার সময় তার ক্যাশিয়ার মোকারমকে অঢেল সম্পদের মালিক বানিয়ে গেছেন। আমরা মনে করি, দুদক তার বিরুদ্ধে তদন্ত করবে।’ 

এ বিষয়ে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘মোকারমের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা আছে কি না, আমরা খতিয়ে দেখছি। যদি কোনো মামলার তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক জানিয়েছেন, মোকারমের বিপুল সম্পদের বিষয়ে দুদক ও জেলা প্রশাসন তদন্ত করবে।

সূত্র: খবরের কাগজ 

No comments:

Post a Comment

চাকরির প্রলোভনে বাংলাদেশি নারীদের ভারতে পাচার, বিক্রি হতো পতিতালয়ে। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 চাকরির প্রলোভনে বাংলাদেশি নারীদের ভারতে পাচার, বিক্রি হতো পতিতালয়ে: প্রকাশিত: ০২:৩৩, ১৫ মার্চ ২০২৫ বাংলাদেশ থেকে উচ্চ বেতনে...