Sunday, November 17, 2024

কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি থেকে ৮১ বছর পর সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ২৪ জাপানি সেনার দেহাবশেষ। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি থেকে ৮১ বছর পর সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ২৪ জাপানি সেনার দেহাবশেষ:

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৯: ১৯

কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি (যুদ্ধসমাধি) থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ২৪ জন জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ সমাহিত করার ৮১ বছর পর সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের দেহাবশেষ জাপানে নেওয়া হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত বিশ্বের ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন সৈনিককে এখানে সমাহিত করা হয়। ১৯৬২ সালে একজন সৈনিকের দেহাবশেষসহ সমাধির মাটি তাঁর স্বজনেরা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যান।

কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিম পাশে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত। এরই মধ্যে জাপান থেকে ৭ সদস্যের একটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল ওই ২৪ জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছেন। বিশেষজ্ঞ দলটির সাতজনের মধ্যে ছয়জনই জাপানের নাগরিক। তাঁদের সহায়তা করছে বাংলাদেশ সরকার। সমাধিস্থলের মাটি খুঁড়তেই মিলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত জাপানি সৈনিকদের মাথার খুলিসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড়। সেগুলো অত্যন্ত যত্নসহকারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কমনওয়েলথ গ্রেভইয়ার্ড কমিশন এ যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে।

আজ রোববার সকাল সাড়ে আটটার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ওয়ার সিমেট্রির উত্তর-পশ্চিম কোণে থাকা সমাধি থেকে জাপানি সৈনিকদের দেহাবশেষ সরানোর কাজ চলছে। সেখানে দর্শনার্থীসহ সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে সেখানে কর্মরত ব্যক্তি, সেনাবাহিনী, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বাইরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। জাপানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ কাজে শুরু থেকেই সহায়তা করছেন মুক্তিযুদ্ধ–গবেষক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক। আর কমনওয়েলথ গ্রেভইয়ার্ড কমিশনের পক্ষে সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন কান্ট্রি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আবদুর রহিম।

আবদুর রহিম জানান, ‘গত মঙ্গলবার জাপানের পক্ষ থেকে সাত সদস্যের একটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল কুমিল্লায় আসে। বুধবার সকাল আটটা থেকে তাঁরা কার্যক্রম শুরু করেন। এখানে সমাহিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত বিশ্বের ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন বীর সৈনিকের মধ্যে জাপানে আছেন ২৪ জন। ফরেনসিক দল এই ২৪ জন সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নিয়ে যাবেন। ২৪ নভেম্বরের মধ্যে এই কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা আছে। আমরা তাঁদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছি।’

লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক দীর্ঘদিন ধরে কবর (সমাধি) শনাক্তকরণ, দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ সরিয়ে আনার কাজটিও করেছেন তিনি। জাপানের প্রতিনিধিদলের পক্ষে পুরো কর্মযজ্ঞের বর্ণনা দিয়েছেন কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক। তিনি আরও বলেন, ‘জাপান সরকার ২০১৩ সালে আমাকে তাদের দূতাবাসে ডেকেছিল এই ২৪ জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ওই সময়ে সেটি সম্ভব হয়নি। গত বছর থেকে তারা বিষয়টি নিয়ে আবারও যোগাযোগ করে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে জাপান সরকার আমাদের সরকারের কাছে চিঠি লেখে এবং কমনওয়েলথের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এই কাজ শুরু করেছে। এখানে জাপানের পক্ষ থেকে সাতজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন, যাঁরা এ কাজে অত্যন্ত দক্ষ। তাঁদের ছয়জন জাপানি ও একজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এই সমাধিগুলো ৮১ বছরের পুরোনো। এরই মধ্যে আমরা ১০ জনের দেহাবশেষ সমাধি থেকে উত্তোলন করতে পেরেছি।’

দেহাবশেষে কী কী পাওয়া যাচ্ছে, জানতে চাইলে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘৮১ বছর পর খুব বেশি কিছু পাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা প্রতিটি সমাধির দুই ফুটের মতো খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে খুঁড়ছি। বাকিটা ম্যানুয়ালি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে খনন করা হচ্ছে। কোনোটিতে তিন ফুট, আবার কোনোটিতে ছয় ফুট খননের পর দেহাবশেষ পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত যেগুলো খনন করা হয়েছে, সেসব সমাধিতে মাথার খুলি, শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় পাওয়া যাচ্ছে। তবে যা-ই পাচ্ছি, সবকিছুই জাপানের বিশেষজ্ঞ দল যত্নসহকারে সংরক্ষণ করছে।’

এক তরুণ সৈনিকের দেহাবশেষের কথা বলতে গিয়ে অনেকটাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এই বীর প্রতীক। তিনি বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) আমরা এক তরুণ সৈনিকের দেহাবশেষ তুলতে গিয়ে মাথার খুলির মধ্যে বুলেটের চিহ্ন পেয়েছি। রেকর্ড অনুযায়ী ওই সৈনিকের বয়স ২৮ বছর ছিল। আমার তখন বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করেছে—এত তরুণ বয়সে পৃথিবী থেকে চলে গেছে সে। এখানে জাপানের সৈনিকদের ২৪ সমাধির মধ্যে ২০টির নাম-পরিচয় আছে। বাকি চারটির পরিচয় শনাক্ত করা এখনো সম্ভব হয়নি। নিশ্চয়ই তাঁরা (জাপানের প্রতিনিধিদল) দেহাবশেষ নিয়ে গেলে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করা হবে।’

স্বাধীনতাযুদ্ধে জাপান আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু ছিল জানিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, ‘এ কারণে তাঁদের এ কাজে সহায়তা করতে পেরে আমার ভালো লাগছে। জেলা পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো আমাদের খুবই সহযোগিতা করছে। ২৪ নভেম্বরের মধ্যে আশা করছি কাজটি শেষ হবে। সেটি সম্ভব না হলে জাপান সরকার হয়তো আমাদের সরকারের সঙ্গে কথা বলে সময় বৃদ্ধি করবে।’

কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ৭৩৮ জন সেনাকে সমাহিত করা হয়। ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন যোদ্ধার মধ্যে ইসলাম ধর্মের ১৭২ জন, বৌদ্ধধর্মের ২৪ জন, হিন্দুধর্মের ২ জন ও বাকিরা খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ৩৫৭ জন, কানাডার ১২, অস্ট্রেলিয়ার ১২, নিউজিল্যান্ডের ৪, দক্ষিণ আফ্রিকার ১, অবিভক্ত ভারতের ১৭১, রোডেশিয়ার ৩, পূর্ব আফ্রিকার ৫৬, পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬, বার্মার (বর্তমান মিয়ানমার) ১, বেলজিয়ামের ১, জাপানের ২৪ জন এবং পোল্যান্ডের ১ জনের সমাধি আছে। প্রতি বছরের নভেম্বর মাসে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের হাইকমিশনারসহ তাঁদের প্রতিনিধিরা এই সমাধিস্থলে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহতদের স্মরণ করেন। সে ধারাবাহিকতায় এ বছরের ৯ নভেম্বর ১৩ দেশের কূটনীতিকেরা সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন।

সূত্র: প্রথম আলো

No comments:

Post a Comment

হাসিনার সামরিক সচিবের বাগানবাড়ি বিলাস। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 হাসিনার সামরিক সচিবের বাগানবাড়ি বিলাস: প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৫, ১০: ৫৩ বানিয়াবহু গ্রামের আবদুল গনি গত আমন মৌসুমে দুই বিঘা জম...