Saturday, November 16, 2024

কাজে আসছে না বঙ্গবন্ধু হাইটেক রেলস্টেশন। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

কাজে আসছে না বঙ্গবন্ধু হাইটেক রেলস্টেশন:

(ব্যয় ৫৮ কোটি টাকা)

 প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৫ এএম 

প্রতিদিন গাজীপুর শিল্পাঞ্চল, ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের ১২ হাজারের বেশি যাত্রী যাতায়াত করবে, এমনটা ধরে নিয়ে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনের আদলে নির্মাণ করা হয়েছিল গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি রেলস্টেশন। প্রায় ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই রেলস্টেশন এখন কোনো কাজেই আসছে না। এই স্টেশনে ট্রেন না থামায় পুরোপুরি বন্ধ আছে যাত্রীসেবা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সুনসান ও ভুতুড়ে নীরবতা স্টেশনজুড়ে। রাত হলে ভেতরে জমে ওঠে মাদকসহ নানা অপরাধের আড্ডা। নিরাপত্তাহীনতা ভুগছেন স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। নির্মাণশৈলী, নান্দনিকতা আর আধুনিকতায় দেশের অন্যতম কালিয়াকৈরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি রেলওয়ে স্টেশন। বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে নির্মিত স্টেশনটিতে রয়েছে একক প্ল্যাটফর্ম, একটি লুপ লাইন ও আধুনিক সিগন্যাল ব্যবস্থার মতো সুবিধাগুলো।

আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন বিশাল পরিসরে এই স্টেশন ২০১৮ সালে উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর এখান থেকে মাত্র একটি ডেমু ট্রেন চলাচল করত। সেটিও করোনাকালে বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় এ স্টেশনে ট্রেন থামানোর দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। তাদের দাবিতে এ স্টেশনে থামান হতো টাঙ্গাইল কমিউটার ও সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস।

সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর নানা কারণে দুটি ট্রেনও চলে না। অথচ এই স্টেশন হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও উত্তরবঙ্গে ৪০টি ট্রেন চলাচল করে। মূলত যাত্রী না পাওয়ায় এসব ট্রেন এই স্টেশনে থামানো হয় না। ফলে প্রায় ছয় বছর আগে নির্মাণ করা স্টেশনটি এখন অনেকটাই অকেজো।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, কয়েকজন শিক্ষার্থী ঘুরছেন প্ল্যাটফর্মে, রেললাইন ধরে। কয়েকজন বানাচ্ছেন টিকটক ভিডিও। ট্রেন না থাকায় ষাটোর্ধ্ব একজন হকার তার পণ্যসামগ্রী পাশে রেখে মাছ ধরার জাল বুনছেন।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্রেন না থামায় স্টেশনটি এখন আর কোনো কাজেই আসছে না। মালপত্র নিয়ে বসে আছি। যাত্রী নাই, বেচাবিক্রিও নাই।

স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চলনশক্তি পোশাকশিল্পের পেশাজীবীদের বৃহৎ অংশই আসেন উত্তরবঙ্গ থেকে। রাজধানীর হেমায়েতপুর, সাভার, নবীনগর, ধামরাই, কালামপুর, নবীনগর, পল্লীবিদ্যুৎ, বাইপাইল (পশ্চিম আশুলিয়া), রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা, জিরানী, কবিরপুর, গাজীপুরের টঙ্গী থেকে শুরু করে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দুইপাশের ভোগড়া, কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, সফিপুর, চন্দ্রা এলাকায় বাস করেন লাখ লাখ শ্রমিক। উত্তরবঙ্গের ২৩ জেলার ৬ কোটি মানুষের প্রায় প্রতিটি পরিবারের অন্তত একজন করে কর্মসূত্রে এসব এলাকায় বাস করেন। এসব এলাকার বাসিন্দাদের যাতায়াতের একমাত্র পথ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক।

তারা জানান, কালিয়াকৈরের চন্দ্রা হলো একমাত্র প্রবেশপথ। এ পথ ধরেই উত্তরবঙ্গের ২৩ জেলার মানুষ রাজধানীতে নানা প্রয়োজনে আসা-যাওয়া করে। অন্য এলাকার মানুষ এ পথ দিয়েই উত্তরবঙ্গে যাতায়াত করে।

স্থানীয়দের মতে, চন্দ্রা থেকে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি রেলস্টেশনের দূরত্ব মাত্র আধা কিলোমিটার। ফলে সড়কপথের যানজট, যাত্রী ভোগান্তি ও যাত্রার সময় কমানোতে এই স্টেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ, তুলনামূলক আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী হওয়ায় বাংলাদেশ রেলওয়ে উত্তরবঙ্গের ২৩ জেলার মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছে। উভয়মুখী গন্তব্যে সবার প্রথম পছন্দ রেল। বিপুল সম্ভাবনাময় স্টেশনটি দেশের উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগের একটি কমিউনিকেশন হাবে রূপান্তরিত হতে পারত। কিন্তু শুধু ট্রেন না থামার কারণে স্টেশনটি এখন অযত্ন-অবহেলায় অকেজো হয়ে আছে। তাদের দুর্ভোগ বাড়ছে। দুর্ভোগ লাঘবে এই স্টেশনে নিয়মিত ট্রেন থামানোর দাবি জানান তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা শহীদুল আলম বলেন, হাইটেক সিটি রেলওয়ে স্টেশনে কোনো ট্রেন থামে না। তাহলে এত টাকা খরচ করে বিলাসবহুল এ স্টেশনের দরকার কী ছিল?

অনেকে অভিযোগ করে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে সখ্য ছিল সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের। সেই প্রভাব খাটিয়ে সরকারের আইসিটি বিভাগ একক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন তিনি। যে কোনো প্রকল্প থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন যেত পলকের পকেটে। ৩৫৫ একর আয়তনের হাইটেক পার্কের মধ্যে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে গড়ে তোলা হয়েছে ডাটা সেন্টার। প্রথমে কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক নামে প্রকল্প শুরু হওয়ার পর ২০১৬ সালে নাম বদল করে করা হয় বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি। এই হাইটেক সিটির ১০০ মিটার দূরত্বে নির্মাণ করা হয়েছে হাইটেক সিটি রেল স্টেশন।

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. খায়রুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, এই রুট দিয়ে চলাচল করে ২০ জোড়া (৪০টি) ট্রেন। কিন্তু বিশাল এই স্টেশনে স্টপেজ মাত্র দুটি লোকাল ট্রেনের। এগুলোর একটি টাঙ্গাইল কমিউটার, অন্যটি সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস, যা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এই স্টেশনে মাত্র দুজন কর্মরত আছি। নেই রেলওয়ে পুলিশসহ অন্য কোনো লোকবল। তাই সন্ধ্যা হলে নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতা বোধ করি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা, রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন খরচের হিসাবে বছরে এই স্টেশনে ব্যয় ৩০ লাখ টাকার বেশি। বছরে গড় আয় সোয়া ৯ লাখ টাকা। আর গত তিন বছরে স্টেশনটি থেকে দিনে গড়ে যাত্রী যাতায়াত করেছে মাত্র ৪৭ জন।

সূত্র: কালবেলা

No comments:

Post a Comment

খুব কাছ থেকে হাফিজুলের মাথায় গুলি করে পুলিশ। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 খুব কাছ থেকে হাফিজুলের মাথায় গুলি করে পুলিশ:  প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৫, ১১: ৩৯ ২০২৪ সাল। তারিখটি ছিল ২০ জুলাই। প্রতিদিনের মতো...