Thursday, October 31, 2024

দুর্নীতি-ঘুষে সম্পদের পাহাড়, দিব্যি বহাল প্রকৌশলী মাসুদ।

দুর্নীতি-ঘুষে সম্পদের পাহাড়, দিব্যি বহাল প্রকৌশলী মাসুদ:

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ০৩:৩৭

(সাবেক এমপি শেখ সালাহউদ্দিনের জোরে খুলনা জোনেই প্রায় ১৬ বছর ► অদৃশ্য টানে দুদকের অনুসন্ধান পার)

তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। সহকর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণসহ আরো অনেক অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। তিনি খুলনার সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সেখ সালাহউদ্দিনের আশীর্বাদপুষ্ট এই কর্মকর্তা একই জোনে (খুলনা) প্রায় ১৬ বছর ধরে কাজ করে আসছেন।

তাঁর বিরুদ্ধে শতকোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চার বছর ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো তথ্য-প্রমাণ পায়নি বলে অভিযোগ থেকে তাঁকে অব্যাহতিও দেয়। তবে ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁর ঘুষ-দুর্নীতি ও বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য উল্লেখ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুদকে নতুন করে অভিযোগ দেওয়া হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এর অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।

কমিশনের দাখিলকৃত অভিযোগটির যাচাই-বাছাই চলছে। শিগগিরই এসব অভিযোগের বিষয়ে নতুন করে অনুসন্ধান শুরু করা হবে। দুদক সূত্র কালের কণ্ঠকে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, দুদক চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার সদ্য পদত্যাগ করেছেন।

দুদকে নতুন কমিশন আসবে। আশা করছি, নতুন কমিশনে এই সুযোগ কেউ পাবেন না। প্রতিটি অভিযোগ সুষ্ঠুভাবে অনুসন্ধান শেষে নিষ্পত্তি করা হবে।

আওয়ামী ক্ষমতায় অর্থ লোপাট

অভিযোগে বলা হয়, আনিসুজ্জামান মাসুদ ভুয়া টেন্ডারবাজি, নিজের পছন্দের ঠিকাদারকে টেন্ডার পাইয়ে দিয়ে কাজ না করে বিল উত্তোলন, ভুয়া কন্ট্রাক্টবিহীন ডিসিএম তৈরি থেকে শুরু করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বছরের পর বছর ধরে। চার থেকে পাঁচটি কম্পানির প্যাড ব্যবহার করে বেআইনিভাবে তিনি গত তিন বছরে খুলনা সড়ক বিভাগ থেকে প্রায় ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

গত তিন বছর ধরে পিএমপি মাইনর খাতের বেশির ভাগ অর্থ কতিপয় ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে কোনো কাজ না করেই ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।

এর আগে খুলনা জোনের বাগেরহাট সড়ক বিভাগে থাকতেও একই কায়দায় তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন শতকোটি টাকা। সড়ক উন্নয়নের নামে প্রকল্পের কাজ না করেই খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা আর কয়রা নোয়াবাকি শ্যামনগর সড়ক থেকে শতকোটি টাকা লোপাট করেছেন। দুর্নীতির টাকায় ঢাকা, খুলনা, মাগুরায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন মাসুদ। সিঙ্গাপুর ও মালায়েশিয়ায়ও পাচার করেছেন বিপুল অঙ্কের টাকা। নিশি এন্টারপ্রাইজ, সুমা এন্টারপ্রাইজ, ফারহান এন্টারপ্রাইজ, আছমি এন্টারপ্রাইজ, রিফাদ এন্টারপ্রাইজ নামের নামমাত্র ফার্ম বানিয়ে কোনো কাজ না করে প্রতিদিন লুট করছেন লাখ লাখ টাকা। খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ করে প্রায় ৫০ কোটি টাকা লোপাট করেছেন। ঢাকা, খুলনা, মাগুরাসহ সারা দেশে নামে-বেনামে পাঁচটি বাড়ি, ১২টি ফ্ল্যাট, জমি ও অবৈধ সম্পদ রয়েছে।

পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত আনিসুজ্জামান মাসুদ ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। বর্তমানে তিনি খুলনা অঞ্চলের ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের অন্যতম অর্থের জোগানদাতা। তবে আনিসুজ্জামান মাসুদ এখন নিজের রূপ বদলে নিজেকে বিএনপি-জামায়াতের লোক হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় আছেন।

এক জোনেই ১৬ বছর

অনুসন্ধানে জানা যায়, মো. আনিসুজ্জামান মাসুদকে বাগেরহাট ও খুলনা থেকে একাধিকবার বদলি করা হলেও নানা কারণে তা আর কার্যকর হয়নি। বদলি বাতিল করে গত প্রায় ১৬ বছর ধরে খুলনা জোনের ভেতরেই দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আর এটি সম্ভব হয়েছে শুধু সাবেক স্থানীয় এমপি সেখ সালাহউদ্দিনের (খুলনা-২) সুপারিশে।

সর্বশেষ ২০২১ সালের ১১ মার্চ সরকারি এক প্রজ্ঞাপনে তাঁকে খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে শূন্যপদে পিরোজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে বদলির আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সাবেক এমপি সেখ সালাহউদ্দিনের সুপারিশে ২০২১ সালের ১৫ জুন মাসুদের পিরোজপুরের বদলির আদেশ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

অন্য যত অভিযোগ

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২১ সালের ১০ মার্চ সওজের খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তাপসী দাশ সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলীর ববাবর মো. আনিসুজ্জামান মাসুদের অসদাচরণ উল্লেখ করে একটি চিঠি দেন। সেখানে তিনি বলেন, মাসুদ খুলনায় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদানের পর বিভিন্নজনের সঙ্গে অকথ্য গালাগালসহ দুর্ব্যবহার ও মানসিক নির্যাতন করে আসছেন।

২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর খুলনার সহকারী প্রকৌশলী খন্দকার আনিসুল হক সংস্থাটির খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর বরাবর মাসুদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। সেখানে মাসুদের বিরুদ্ধে নিজ কক্ষে নিয়ে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করার কথা উল্লেখ করেন। অভিযোগে তেড়ে মারতে আসার কথাও রয়েছে।

২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সওজের প্রধান প্রকৌশলী অভিযোগের বিষয়ে মাসুদকে লিখিতভাবে জানান এবং খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে সরকারি অফিসের সঠিক কর্মপরিবেশ বজায় রাখতে কোনো কর্মকর্তা পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে তা দপ্তরকে অবহিত করার নির্দেশ দেন। এত অভিযোগের পরও এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি।

দুদকের অনুসন্ধানে যা ঘটল

দুদক সূত্র জানায়, ২০২১ সালে আনিসুজ্জামান মাসুদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে দুদক। কমিশনের প্রধান কার্যালয় থেকে অনুসন্ধান শুরু হয়। ২০২২ সালের অক্টোবরে দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে আরেকটি অভিযোগ এবং একই বছরের অক্টোবর মাসে প্রধান কার্যালয় থেকে আরেকটি অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু হয়। অভিযোগগুলো একত্রে কমিশনের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে অনুসন্ধান সম্পন্ন করা হয়। প্রথমে দুদকের কর্মকর্তা তরুণ কান্তি ঘোষ কমিশনে অভিযোগের নথিভুক্তির সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। কমিশন ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য নির্দেশ দিলে পরবর্তী সময়ে কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. আল আমীন অভিযোগের অধিকতর অনুসন্ধান কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। এরপর তিনিও দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ার কথা বলে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরবর্তী সময়ে কমিশন তা গ্রহণ করলে দুই কোটি টাকা কাজ না করেই ভাগাভাগি করে নেওয়ার ওই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান আনিসুজ্জামান মাসুদ।

এসব ব্যাপারে জানতে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

সূত্র: কালের কণ্ঠ

No comments:

Post a Comment

এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক: প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২৭ বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের অভ্যন্তরে ২০০৯ ...