Thursday, October 31, 2024

খুলনা শ্রম দপ্তরের সাবেক পরিচালক মিজানুর- মন্নুজানের ‘পুত্র’ পরিচয়ে রাজত্ব করেন ১৭ বছর।

খুলনা শ্রম দপ্তরের সাবেক পরিচালক মিজানুর-

মন্নুজানের ‘পুত্র’ পরিচয়ে রাজত্ব করেন ১৭ বছর

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

খুলনা বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের সাবেক পরিচালক মিজানুর রহমানের অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়েছে। তিনি খুলনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের আস্থাভাজন হিসাবে খুলনায় ১৭ বছর ‘রাজত্ব’ করেছেন। ক্ষমতার দাপটে গত বছর জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পরিচালকের পদটিও বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি মিল দখল, বাড়ি নির্মাণ, ঘুস ছাড়া কাজ না করা, অফিসের কর্মচারীদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়েছে।

এদিকে ৫ আগস্টের পর মিজানুর রহমানের নানা অনিয়ম নিয়ে শ্রম দপ্তর অবরোধ এবং জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন খুলনার শ্রমিকরা। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও মিজানের স্বেচ্ছাচারিতার বিচার চেয়েছেন। পরে ৯ অক্টোবর মিজানুরকে গাজীপুরের টঙ্গী শিল্প সম্পর্ক শিক্ষায়তনে বদলি করা হয়। এর আগে মিজানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুনির হোসেন খানের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে ৮ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তের জন্য অতিরিক্ত সচিব খুলনা সফর করেছেন।

কথা হয় খালিশপুর জুট মিলের শ্রমিকনেতা মো. মনিরুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, মিজানুর রহমান প্রভাব খাটিয়ে পরিচালক পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। তিনি খুলনার বেশির ভাগ ট্রেড ইউনিয়নগুলো নিয়ন্ত্রণ করতেন। নেতা নির্বাচিত করার আশ্বাসে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়েছেন।

খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম বেবী অভিযোগ করেন, ইউনিয়নের নির্বাচন জিম্মি করে রেখেছিলেন মিজান। আওয়ামী লীগের পছন্দের ব্যক্তিদের পাতানো নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তাদের নির্বাচিত করতেন। এর জন্য মিজানকে আর্থিকভাবে লাভবান করা হতো।

খুলনার অ্যাজাক্স জুট মিলের চেয়ারম্যান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা মিজানের বিরুদ্ধে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, খুলনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের আস্থাভাজন হিসাবে মিজানুর রহমান খুলনায় ১৭ বছর ধরেই ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তিনি অ্যাজাক্স জুট মিলটি দখলে সহযোগিতা করেছেন। মন্নুজান সুফিয়ানের ভাই শাহাবুদ্দিন এবং খানজাহান আলী ও থানা যুবলীগ নেতা সাজ্জাদুর রহমান লিংকন বছরের পর বছর মিলটি নিজেদের কবজায় রেখেছেন। মিজানুর রহমান মুজগুন্নি এলাকায় একটি প্লট নিয়ে সেখানে নির্মাণ করেন বহুতল ভবন। মিজানের মা এবং স্ত্রীর নামে ব্যাংকে বড় অঙ্কের এফডিআর ছাড়াও শ্বশুরবাড়ির লোকদের নামে তার বিরুদ্ধে ঢাকায় বেনামে ফ্ল্যাট ক্রয়ের অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া প্রতিমন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ১৫ জনকে টপকে উপপরিচালক থেকে পরিচালক পদে পদোন্নতিও নিয়েছেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রীর পুত্র সেজে তিনটি গাড়ি ব্যবহার করতেন মিজান। এছাড়া অফিসের দুইজন কর্মচারীকে তিনি অফিসের কাজের বাইরে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে ব্যবহার করতেন।

এ বিষয়ে মিজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আজগুবি অভিযোগ করা হয়েছে। অ্যাজাক্স মিল থেকে মাসে ২ লাখ টাকা নেওয়ার বিষয়টি কখনোই সম্ভব নয়। যে বাড়ির কথা বলা হচ্ছে, সেটি তার স্ত্রীর সরকারি চাকরির লোনের টাকায় করা। পদোন্নতির বিষয়ে কোনো প্রভাব দেখানো হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী সব হয়েছে। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের বাড়ি খুলনায় এবং তিনি এখানে দায়িত্ব থাকায় সখ্য ছিল। এর বাইরে আর কোনো সম্পর্ক নেই। আপাতত এসব বিষয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছি না। তদন্ত হলেই সব জানা যাবে। আমি আমার ব্যাখ্যা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানাব।

অ্যাজাক্স জুট মিলের চেয়ারম্যান কাওসার জামান বাবলা যুগান্তরকে জানান, মিজান তার প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন খুলনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আমার মিল দখলে সহযোগিতা করেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মন্নুজানের সহযোগিতায় তার ভাই শাহাবুদ্দিন এবং যুবলীগ নেতা লিংকন মিলটি গোডাউন হিসাবে ভাড়া দিত। তাদের সহযোগিতা করার জন্য প্রতি মাসে মিজানকে মোটা অঙ্কের টাকা মাসোয়ারা দেওয়া হতো। তাছাড়া মুজগুন্নি এলাকায় তার জমি ও বাড়ি আছে, যা তার আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

সূত্র: যুগান্তর

No comments:

Post a Comment

এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক: প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২৭ বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের অভ্যন্তরে ২০০৯ ...