কে এই পদোন্নতি প্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বিএ-৫৫৯৫ মোঃ শফিকুল ইসলাম:
৫ই আগস্ট ২০২৪, বাংলাদেশ অভূতপূর্ব এক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা অর্জন করে, এই স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে বাংলাদেশের ছাত্র জনতা এবং আপামর জনসাধারণের আত্মত্যাগ এবং কঠোর পরিশ্রম সর্বজনবিদিত।
এই মহান আত্মত্যাগকে যদি আমরা স্বীকৃতি ও প্রাপ্য সন্মান না দেই তাহলে অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে ইতিহাসে আমাদের নাম লিখা থাকবে। কিন্তু আন্দোলন ও অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে যারা জুলাই বিপ্লবের টুঁটি চেপে ধরতে মরিয়া ছিলো এমন ব্যক্তিদের বেছে বেছে পদোন্নতী প্রদান, তো একরকম অকৃতজ্ঞতাই ইঙ্গিত করে, তাই না? জুলাই-আগষ্ট মাসে, যখন ছাত্র জনতার আন্দোলন তুঙ্গে তখন এই আন্দোলনকে যে কোন উপায়ে থামানোর চেষ্টায় মরিয়া এমন প্রথম সারির একজন ব্যক্তির বিষয়ে আজ আপনাদের অবগত করবো।
প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর বা ডিজিএফআই যাই বলি না কেন, এই সংস্থায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার দুইজন ব্যক্তি মহাপরিচালক বা ডাইরেক্টর জেনারেলের অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত, তাদের একজন হলেন কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (সি আই বি) জিএসও-১ এবং দ্বিতীয় জন হচ্ছে সিগনাল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (এস আই বি) জিএসও – ১ (স্পেশাল অপারেশনস)।
বিএ-৫৫৯৫ কর্নেল মোঃ শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ৩৭তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সাথে সিগন্যাল কোরে কমিশন লাভ করেছিলেন। কমিশন পরবর্তীতে উক্ত অফিসার বিভিন্ন ইউনিট এবং সংস্থায় চাকরি শেষে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি প্রাপ্তির পরে একটি ইউনিট কমান্ড শেষে ডিজিএফআইতে সিগনাল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোতে জিএসও-১ (স্পেশাল অপারেশনস) হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে একজন স্বাভাবিক মানুষ থেকে দানবে পরিণত হয়েছিলেন। বুদ্ধিমান কর্নেল শফিকুল ইসলাম নিজ মেধা এবং দক্ষতাকে সঠিক পথে পরিচালিত না করে ক্ষমতার লোভে মানুষের ক্ষতি সাধনের কাজে ব্যবহার করেছেন। ক্ষমতার লোভে মোহাবিষ্ট হয়ে এই অফিসার বাংলাদেশের যে সকল ব্যক্তি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বাত্মক ক্ষতিসাধন করেছেন । তার দৈনন্দিন প্রধান কাজ ছিল যে সকল ব্যক্তি আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করবে তাদের ফোন কল ট্যাপিং করা, সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা এবং তাদেরকে প্রযুক্তির মাধ্যমে নিয়মিত অনুসরণ করা। যেহেতু তিনি আওয়ামীলীগ সরকারের মদদপুষ্ট ছিলেন সেহেতু কর্নেল পদে পদোন্নতি প্রাপ্তিতে তিনি ডিজিএফআই থেকে এনএসআইতে ডাইরেক্টর (টেকনিক্যাল) হিসেবে বদলি গমন করেন। পদোন্নতি প্রাপ্তি এবং তার নিযুক্তি ডাইরেক্টর (টেকনিক্যাল) হিসাবে তাকে বিশাল ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। জুলাই এবং আগস্ট মাসের ছাত্র জনতার আন্দোলনকে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গলা চেপে ধরার প্রথম সারির ব্যক্তিদের মধ্যে কর্নেল শফিকুল ইসলাম অন্যতম।
৫ ই আগস্ট ২০২৪ তারিখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ত্যাগ করে বাংলাদেশ থেকে পলায়নের পরে কর্নেল শফিকুল ইসলামকে এনএসআই থেকে যশোর সেনানিবাসে অবস্থিত সিগন্যাল ট্রেনিং সেন্টার এন্ড স্কুলে চিফ ইন্সট্রাক্টর (স্কুল) হিসেবে বদলি করা হয়েছিল । এনএসআই থেকে সিগন্যাল ট্রেনিং সেন্টার এন্ড স্কুলে বদলি গমনের পরপর অক্টোবর ২০২৪ মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে পদোন্নতি বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে । অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বর্ণিত অফিসারকে তার কৃতকর্মের জন্য তার বিরুদ্ধে কোন প্রকার শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে পদোন্নতি বোর্ডে কর্নেল থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে, যা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত একটি গোষ্ঠী এখনও অত্যন্ত সক্রিয় এবং যারা ছাত্র জনতার মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে সমূলে বিনষ্ট করার জন্য সদা তৎপর।
(জুলকারনাইন সায়ের এর ফেইসবুক পেজ থেকে )
No comments:
Post a Comment