পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
জাহিদ মালেক ঘনিষ্ঠ সাইফুল্লাহিল আজমের এখনো এত দাপট!
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:৩২
স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক থেকে উপপরিচালক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে পতিত আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের। কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সমর্থনকারীদের। এসব পদায়ন নিয়ে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা। কিন্তু তা থোড়াই কেয়ার করছেন আওয়ামী আমলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ঘনিষ্ঠ মহাপরিচালক মো. সাইফুল্লাহিল আজম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে সম্প্রতি পদায়ন করা হয়েছে আওয়ামী সরকারের সময় সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের। উপপরিচালক পদে পদায়নের প্রজ্ঞাপন জারির সাথে সাথেই বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ২০-২৫ জন এ বিষয়ে কথা বলতে মহাপরিচালকের সাথে দেখা করেন। কিন্তু, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাইফুল্লাহিল আজম তাদের সাথে অশালীন আচরণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিচালক পদমর্যাদের একজন কর্মকর্তা জানান, মহাপরিচালক এ ধরনের পদায়ন নিয়ে কিছু শুনতে নারাজ, বরং উচ্চৈস্বরে চ্যালেঞ্জ জানান, ‘আমি আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত, এই অধিদপ্তরের ডিজি হয়েছি, পারলে কিছু করেন।’
ডিজি আরও বলেন, ‘কে থাকবে কে থাকবে না সেটা আমি সাইফুল্লাহ নির্ধারণ করব। আমি এভাবেই চাকরি করেছি। আমার নামে অভিযোগ করে লাভ নাই, কাকে কী দিয়ে ম্যানেজ করতে হয় আমি জানি, এখান থেকে আরও ভালো পোস্টিং নিতে পারি।’
মহাপরিচালকের এ ধরনের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ একজন বঞ্চিত কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের দোসর ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অধিদপ্তরে পদায়নের ফলে যেকোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতাকারী ও আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের পদায়নের বিষয়ে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনো দায়িত্ব নেবে না।’
সূত্র বলছে, সাইফুল্লাহিল আযম ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম মানোয়ারুল ইসলাম বিপুলের চাচাতো ভাই। সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা এই কর্মকর্তা নিজেকে সাবেক সচিব কবির বিন আনোয়ারের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিতেন। গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান কবির বিন আনোয়ার এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতার দাপট দেখিয়ে সাইফুল্লাহিল আজম বিগত সরকারের আমলে একই সময়ে একটি বিভাগের প্রধানসহ দুটি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক হন।
তখন সাইফুল্লাহিল আজম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উন্নয়ন অনুবিভাগের উইং প্রধান। এই দায়িত্বে থাকা অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ 'ফিজিক্যাল ফেসিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট (পিএফডি)' ওপির প্রকল্প পরিচালক ছিলেন তিনি। একই সময় তিনি 'এসেন্সিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ প্রকল্পের'ও প্রকল্প পরিচালক ছিলেন।
এই কর্মকর্তা সেবা বিভাগের অধীন সব অপারেশনাল প্লান থেকে নিয়মিত গাড়ি ও আর্থিক সুবিধা নিতেন বলে জানা যায়। সেবা বিভাগের সব অপারেশনাল প্ল্যান ও প্রকল্পের কেনাকাটায় তার ছিল একচ্ছত্র প্রভাব। তার চাচাতো ভাই কে এম মানোয়ারুল ইসলাম বিপুল এবং সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেকের ছেলের টেন্ডার বাণিজ্যে সহায়তা করতেন তিনি। বিভিন্ন হাসপাতাল ও প্রকল্পে নিজের পছন্দমতো লোক বসানো, বদলি-পদায়ন ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেকের একনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন মো. সাইফুল্লাহিল আজম। তাকে যাতে সেবা বিভাগ থেকে অন্যত্র বদলি করা না হয় সেজন্য জাহেদ মালেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী বরাবর ডিও লেটার দেন। সেবা বিভাগে তার দুর্নীতি ও মন্ত্রী জাহিদ মালেকের সাথে তার ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি জানাজানি হলে মো. সাইফুল্লাহিল আজম আওয়ামী প্রভাব খাটিয়ে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে পদায়ন নেন। এখানেও তিনি নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়ান। এনটিআরসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামলে তাকে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক করা হয়।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে যোগ দিয়েই সাইফুল্লাহিল আজম দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পরিচালক ও উপপরিচালক পদে আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তাদের পদায়ন করছেন বলে জানান অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। আর খারাপ আচরণ করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে।
এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে অধিদপ্তরের সবার মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে- আওয়ামী সরকারের আমলে সুবিধাভোগী এবং স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়তাকারীকে কেন ৫২ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে পদায়ন করা হলো? তাকে দ্রুত অপসারণ করে বিচারের মুখোমুখি করা না হলে তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে এই কর্মকর্তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি করেন তারা।
তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মো. সাইফুল্লাহিল আজম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হ্যাঁ, তো কী হইছে। আমাকে চেনেন আমি কে?’
তারপর তিনি বলেন, ‘আমি আসার পরে এখানে কোনো নিয়োগ হয়নি।’ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই প্রতিবেদককে দপ্তরে যেতে বলেন মো. সাইফুল্লাহিল আজম।
সূত্র: ঢাকাটাইমস
No comments:
Post a Comment