BDC CRIME NEWS24
পান্নায় ভর করে আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা:
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ৩৩
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জহিরুল ইসলাম (জেড আই) খান পান্নার নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। তার একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্যে বিব্রত আইনজীবী ও রাজনীতিকরা। মূলত পান্নার ওপর ভর করেই সুশীল সমাজের নামে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে রাজনীতির মাঠে ফেরানোর চক্রান্তে একটি মহল লিপ্ত বলে অভিযোগ।
এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলা শুনানির আবেদনে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন এই আইনজীবী। বিতর্কিত সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে নিয়েও তিনি সৃষ্টি করেছেন বিতর্ক।
সূত্র জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এ-সংক্রান্ত মামলায় ভারতের আশ্রয়ে থাকা হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর এখন সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। বিচারের এমন পর্যায়ে গত মঙ্গলবার হঠাৎ করেই ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন দেওয়া হয়। ওইদিন ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমের শুরুতে আইনজীবী নাজনীন নাহার জেড আই পান্নার পক্ষে আবেদন পেশ করেন। তিনি বলেন, ‘সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না আজকে এখানে আসতে পারেননি। তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পেতে চান। এ কথা ট্রাইব্যুনালকে জানানোর জন্য আমাকে পাঠিয়েছেন।’
আইনের সব ধরনের প্রভিশন ও বিধিবিধান জানার পরও পান্না এমন আবেদন করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে খোদ ট্রাইব্যুনাল। তার মোটিভ (উদ্দেশ্য) নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পলাতক হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল বলে, ‘তার (শেখ হাসিনা) পক্ষে স্টেট ডিফেন্স (রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়া শেষ।’
ট্রাইব্যুনাল আরো বলে, ‘তিনি (পান্না) এসব প্রসিডিওর জানেন। যে মামলায় আসামি উপস্থিত নেই—এমন পার্টিকুলার মামলায় আসবেন কেন? তাছাড়া এ মামলায় যখন ডিফেন্স নিয়োগ দেওয়া হচ্ছিল, তখন তিনি এসে বলতে পারতেন। তখন বিবেচনা করা যেত কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে। ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার পর মাস্টারকে বললেন, ট্রেনে উঠিয়ে দেন।’
রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করতে পান্নার আবেদন
ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হচ্ছে উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন আমার দেশকে বলেন, বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থায় জেড আই খান পান্নার আবেদন গ্রহণের আইনগত এখতিয়ার ট্রাইব্যুনালের নেই। এটা জেনেও তিনি (পান্না) আবেদন করায় তার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গণহত্যার ন্যায়সংগত ও আইনসম্মত বিচার চাইলে পান্না এমন আবেদন করতে পারতেন না উল্লেখ করে খোকন বলেন, শেখ হাসিনার গণহত্যার বিষয়টি কেউ অস্বীকার করতে পারেন না। শুধু রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টির জন্যই অসময়ে এমন আবেদন করা হয়ে থাকতে পারে।
আইনগত সুযোগ না থাকার পরও ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে শুনানিতে অংশ নিতে পান্নার করা আবেদনকে রাজনৈতিক বিতর্কের অপচেষ্টা বলে মনে করছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি আমার দেশকে বলেন, ‘পান্না সাহেব একজন সিনিয়র আইনজীবী। তিনি বেশ ভালো করেই জানেন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের এ পর্যায়ে তার অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। এটা জেনেও তিনি রাজনৈতিক ফায়দা নিতেই আবেদনটি করেছেন। যদিও এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এটা শুধু পান্নাই নন, কোর্টে প্র্যাকটিস করেন— এমন সব আইনজীবীই জানেন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের যেসব তথ্য-প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ইতোমধ্যেই অসংখ্য এভিডেন্স প্রকাশ করেছে। তদন্ত সংস্থাও পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ আদালতে পেশ করেছে। নির্দিষ্ট সময়ে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার পক্ষে লড়াই করার জন্য আবেদন আহ্বান করেছিল। ওই সময় জেড আই খান পান্না আদালতে শুনানিতে অংশ না নিয়ে এখন বিতর্কের জন্ম দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।
তবে গণহত্যার বিষয়ে আদালতকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করার জন্যই আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন জেড আই খান পান্না। তিনি আমার দেশকে বলেন, ‘আমিও গণহত্যার বিচার চাই। ৫ আগস্ট ও এর আগে ছাত্রদের কীভাবে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা আমাদের অজানা নয়। বিচারটি যাতে সঠিকভাবে হয়, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে আমি ট্রাইব্যুনালকে সে ধরনের সহযোগিতা দিতে চেয়েছিলাম।’ এখানে নিজের কোনো ‘ব্যাড ইনটেনশন’ ছিল না বলেও জানান এই আইনজীবী।
আ.লীগের প্রত্যাবর্তনে পান্নার মঞ্চ গঠন
গত ৫ আগস্ট ছিল স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতন ও পলায়ন দিবস। গত বছরের ওই দিনে ছাত্র-জনতার তীব্র গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন হাসিনা।
স্বৈরাচারের পতন দিবসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। ওইদিন বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে জুলাই ঘোষণা পাঠ করেন প্রধান উপদেষ্টা। সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি। ওইদিনই ‘মঞ্চ ৭১’ নামে একটি সংগঠন নিয়ে মাঠে নামেন জেড আই পান্না।
পান্নার ‘মঞ্চ ৭১’কে আওয়ামী লীগেরই প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা। তাদের মতে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দেওয়ার পর থেকেই পান্নাসহ আরো কয়েকজন সরাসরি রাজনীতির মাঠে নেমে পড়েছেন। গত এক বছর তারা আত্মগোপনে কিংবা বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মেরে থাকলেও এখন ধীরে ধীরে আড়াল থেকে বের হচ্ছেন।
রাজনীতিবিদদের মতে, গত ১০ মে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বেঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে, যাতে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারে। এরপর থেকেই আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী শ্রেণি বিভিন্ন নামে মাঠে নেমে পড়েছে বলে জানান রাজনৈতিক নেতারা।
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু আমার দেশকে বলেন, জেড আই খান পান্নাসহ কয়েকজন মিলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি রোধ, ইতিহাস মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র প্রতিহত এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষার জন্য ‘মঞ্চ ৭১’ নামের যে নতুন প্ল্যাটফর্ম করেছেন—তা দেখে আমি কিছুটা অবাক হয়েছি।
আমরা মনে করি, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সবচেয়ে বেশি অসম্মান করেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী-বাকশালীরা মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে বারবার বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক শাসনের দিকে নিয়ে গেছে।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, যে মুহূর্তে দেশের ছাত্র-জনতা জীবন-মরণ সংগ্রাম করে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন থেকে দেশকে মুক্ত করে নতুনভাবে গণতান্ত্রিক পথে চলার চেষ্টা করছে, তখন পান্নার মতো ব্যক্তিরা মহান একাত্তরকে পুঁজি করে আওয়ামী সনাতনী কায়দায় পরোক্ষভাবে বিতর্কিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এর পেছনে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত হাসিনা ও তার দোসরদের রক্ষার পাঁয়তারা আছে কি না, সরকারের উচিত তা তদন্ত করে দেখা।
তবে এ মঞ্চটি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের জন্য নয় বলে দাবি করে জেড আই খান পান্না বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরবময় ও আত্মত্যাগের ইতিহাস। আজ মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। সেই ইতিহাস রক্ষা করার জন্যই আমাদের এই সংগঠন গঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য।’
পান্নার ঘোষণায় আ.লীগ-ছাত্রলীগের নড়াচড়া
১৫ আগস্ট উপলক্ষে কালো রঙের পোশাক পরে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আইনজীবী জেডআই খান পান্না। গত বুধবার ভারতের একটি গণমাধ্যমকে এ-সংক্রান্ত সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিনটি পালনের ঘোষণা দেয়। এর আগে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রচার চালানো হয়—‘১৫ আগস্ট জেডআই খান পান্না জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়ি যাবেন।’
এর আগে গত রোববার ফেসবুক লাইভে পান্না বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, আগামী ১৫ আগস্ট জাতির একটি শোক দিবস। আপনারা যে যেখানে থাকেন, সেদিন যেহেতু শুক্রবার, সেহেতু অন্তত কালো জামা না হলেও কালো ব্যাজ ধারণ করবেন এবং বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের যে ১৬ জন এবং দুজন বাইরের, হয়তো একজন কর্নেল জামিল এবং একজন বরিশালের রিন্টু। তো আপনারা তাদের জন্য দোয়া করবেন আল্লাহর কাছে।’
জেডআই খান পান্না ফেসবুক লাইভে আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির পিতা। তার যৌবনের ১৭টি বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। পাকিস্তানিদের সঙ্গে কীভাবে ফাইট করেছেন, একটি ফাইট হলো তো ৯ মাসের যুদ্ধ, সেটা না। তার আগের রাজনৈতিক যুদ্ধ যেটা, সেটা। অতএব যে যে অবস্থায় পারেন, এই প্রতিকূল অবস্থাতেই অন্তত মসজিদ-মন্দির-ঘরে বসে হলেও এই শহীদের জন্য… আপনারা দোয়া করবেন।’
খায়রুল হককে নিয়ে নতুন রাজনীতি
বহুল বিতর্কিত সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। গত ১১ আগস্ট হাইকোর্টে তার জামিনের আবেদন করা হয়। খায়রুল হকের পক্ষে শুনানি করতে আদালতে হাজির হন জেডআই খান পান্না এবং এমকে রহমান।
খায়রুল হকের জামিনের শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালতে জড়ো হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আরো বেশ কয়েকজন আইনজীবী। তারা তাৎক্ষণিক শুনানি করতে চাইলে সময়ের আরজি জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। তিনি বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি করবেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর এ সময় চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা আদালতে তুমুল হট্টগোল করেন। এ নিয়ে আদালতে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাসেল আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে এক সপ্তাহ সময় নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আমরা আদালতের কাছে আবেদন করেছি, অ্যাটর্নি জেনারেলের জন্য সময় চেয়েছিলাম। তারা (খায়রুল হকের পক্ষের আইনজীবী) আমাদের কোনো কথাই শুনতে চাচ্ছিলেন না। তারা জোর করে শুনানি করতে চেয়েছিলেন। পেছন থেকে অনেকে হইহুল্লোড় ও চিৎকার-চেঁচামেচি করেন।’
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন আমার দেশকে বলেন, বিভীষিকাময় ‘আয়নাঘর’, গুম, খুন, হয়রানি, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা এবং সর্বশেষ জুলাই বিপ্লবে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে হাজারও ছাত্র-জনতার মৃত্যুর জন্য স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা, তার দোসর এবং তাদের বিচারিক হত্যাকাণ্ডের সহযোগী খায়রুল হকও সমানভাবে দায়ী। তার জামিনকে কেন্দ্রে করে আদালতের ভেতর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী আইনজীবী ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
যা বলছে ড. কামাল হোসেনের দপ্তর
১৫ আগস্ট ঘিরে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন কয়েকটি সংগঠনের নেতারা। তবে এমন অভিযোগ উড়িয়ে দেন ড. কামাল হোসেনের দপ্তরের লোকজন। জেডআই খান পান্নার সঙ্গে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ড. কামাল হোসেন যাচ্ছেন কি না—আমার দেশ-এর এমন প্রশ্নের জবাবে তার (ড. কামাল) দপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘আপনারা এটা ভালো করেই জানেন যে, স্যার এখন গুরুতর অসুস্থ। তার স্মৃতিশক্তিও কাজ করছে না। কারো সহযোগিতা ছাড়া তিনি এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষেও যেতে পারছেন না। তাছাড়া তিনি অনেকদিন ধরেই কোথাও বের হচ্ছেন না। ধানমন্ডিতে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।’
দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা
গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। আইনজীবী পান্নার সাম্প্রতিক তৎপরতার বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় এই নেতা আমার দেশকে বলেন, দেশকে নানাভাবে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হচ্ছে। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ও পলায়নের পর দেশবাসী সাড়ে ১৫ বছরের নিকৃষ্টতর স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে। এখন দেশ পুনর্গঠনের পাশাপাশি গণহত্যার বিচার কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। এ অবস্থায় অ্যাডভোকেট পান্নার সাম্প্রতিক তৎপরতা দেশবাসীর মনে সংশয় তৈরি করেছে।
আলাল আরো বলেন, ‘দেশবাসীর মতো আমারও প্রশ্ন—পান্না সাহেব কি আবারও স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে কাজ করছেন? কারণ, ইদানীং সুশীল পরিচয়ে কয়েকজনকে ইনিয়ে-বিনিয়ে নানান কলাকৌশলে আওয়ামী লীগের গণহত্যার পক্ষে সাফাই গাইতে দেখা যাচ্ছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না, বিশেষ করে পান্না সাহেবের মতো লোকদের কাছ থেকে তো নয়ই। কারণ আমি যতটুকু জানি, পান্না সাহেব জাসদের একজন প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগের জুলুম-নির্যাতনের বিষয়ে তার অনেক কিছু জানা থাকার কথা।’
বিএনপি নেতা আলাল বলেন, ‘সব ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বিষয়ে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও সচেতন থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদ যেন কোনোভাবেই জায়গা করে নিতে না পারে।’
আমাকে কেউ কখনো টাকা দিয়ে কিনতে পারেনি : পান্না
সাড়ে ১৫ বছরে নিজেকে আওয়ামী লীগের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার তীব্র সমলোচক দাবি করে জেডআই খান পান্না বলেন, ‘আপনাদের মিডিয়ার সংবাদগুলো খুলে দেখেন। আমি ৫ আগস্টের আগে কীভাবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কাজের বিরোধিতা করেছি। গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনারও তীব্র সমালোচক ছিলাম। ঠিক একই ভাবে বিএনপির সময়ে র্যাব গঠনেরও আমি বিরোধী ছিলাম। কখনো টাকার কাছে নিজেকে বিক্রি করিনি।’
তিনি বলেন, ‘আমার জীবনযাপনের বিষয়টি আপনাদের অজানা নয়। আমি যে গাড়িতে চলাচল করি, সেটাও আপনাদের দেখা। অথচ আমি সুপ্রিম কোর্টের একজন জ্যেষ্ঠতম আইনজীবী। আমি সব সময় মানবাধিকার সংরক্ষণের পক্ষেই কথা বলি।’
আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের অভিযোগের জবাবে জেডআই পান্না বলেন, ‘আমার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের অভিযোগ সম্পূর্ণ অমূলক। আমি আমার কর্মসূচিতে কাউকে আহ্বান জানাইনি। আমি যেটা বিশ্বাস করি, শুধু সেটাই বলেছি। এর বাইরে কিছু নয়।’
সূত্র. আমার দেশ
No comments:
Post a Comment