Wednesday, July 9, 2025

রাতের ভোটের ২০৮ কুশীলব লাপাত্তা। (BDC CRIME NEWS24)

 

BDC CRIME NEWS24

রাতের ভোটের ২০৮ কুশীলব লাপাত্তাঃ

প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৬: ৪৮

 


নিশিরাতের ২০১৮ সালের নির্বাচনে শতভাগ ভোট কাস্ট হওয়া দেশের ২১৩টি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। চলতি বছরের ১৩ মার্চ এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। দুদকের পক্ষ থেকে ওইসব কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারদের তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয় নির্বাচন কমিশনের কাছে। নির্বাচন কমিশন থেকে ২৫ মার্চ চিঠি পাঠানো হয় ৪৩ জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা বা জেলা প্রশাসকদের কাছে। কিন্তু জেলা প্রশাসকরা এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য দিতে পারেননি। ফলে তিন মাসেও নিশিভোটের কারিগরদের চিহ্নিতই করতে পারেনি কমিশন। ইতোমধ্যে দ্রুত সময়ের মধ্যে তথ্য দিতে দুই দফায় জেলা প্রশাসকদের কাছে তাগিদ দিয়ে চিঠিও দিয়েছে ইসি।

নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, জেলা প্রশাসকরা তাদের অফিসে এ ধরনের কোনো ফাইল খুঁজে পাননি। তাই তথ্য ও সহযোগিতা চেয়ে নির্বাচন অফিসগুলোতে চিঠি পাঠিয়েছে তারা। কিন্তু জেলা নির্বাচন অফিসেও কোনো তথ্য নেই। নিয়মানুযায়ী কেন্দ্রগুলোতে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। যাচাই-বাছাই শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর থেকে প্রিসাইডিং অফিসারের নিয়োগপত্র ইস্যু করা হয়। নির্বাচনের পর রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিয়োগপত্রসহ নির্বাচনের কাজে ব্যবহৃত সব যন্ত্রাংশ ও ডকুমেন্ট স্ব-স্ব নির্বাচন অফিসে সংরক্ষণের জন্য প্রেরণ করার কথা। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ নিয়ম মানা হয়নি। কোনো রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রিসাইডিং অফিসারদের তথ্য নির্বাচন অফিসে পাঠাননি।

২০১৮ সালে চট্টগ্রামে কর্মরত একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার দেশকে জানান, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্দেশে গোয়েন্দা সংস্থার তত্ত্বাবধানে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ওই নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দল অংশ নেওয়ায় আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে ২৯ ডিসেম্বর রাতেই ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে রাখে প্রশাসনের লোকজন। দেশ-বিদেশে বিষয়টি প্রচার হওয়ায় প্রমাণ লুকাতে তৎপর হয়ে ওঠেন রিটার্নিং কর্মকর্তা বা জেলা প্রশাসকরা। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই রাষ্ট্রীয় নথি ধ্বংসের জন্য সরকারের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। অথচ প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সেই সিদ্ধান্ত আসছিল না। অবশেষে ২০১৯ সালের ১৪ থেকে ১৮ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে নিশিভোটের প্রমাণ ধ্বংসের অনুমতির জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চাপ দেন জেলা প্রশাসকরা। হাসিনার মৌখিক নির্দেশে ডিসি সম্মেলনের পর নিজ নিজ জেলায় ফিরে ওই নির্বাচনের সব প্রমাণপত্র ধ্বংস করেন ভুয়া ভোটের কারিগররা।

আর এ কারণেই ২০১৮ সালের নির্বাচনের কোনো তথ্য নেই কারো কাছে। গত দুই মাস ধরে জেলা প্রশাসকদের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোনো তথ্য পাননি। উপায়ান্তর না পেয়ে জেলা ও আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে সহযোগিতা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসকের দপ্তর। কিন্তু সেখানেও কোনো তথ্য নেই। নির্বাচন কমিশন থেকে পাঠানো চিঠিতে শতভাগ ভোট পড়া কেন্দ্রগুলোর প্রিসাইডিং অফিসারদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানাসহ বিস্তারিত জানতে চাওয়ার পাশাপাশি ওইসব কেন্দ্রের চূড়ান্ত ভোটার লিস্ট, ভোট গণনার বিবরণী (সত্যায়িত ফটোকপি), প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচনি এজেন্ট বা পোলিং এজেন্টদের মোবাইল নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। তাছাড়াও ওই কেন্দ্রগুলোর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সেলে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মোবাইল নম্বরসহ পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও কেন্দ্রগুলোতে ভিজিল্যান্স বা অবজারভেশন টিমে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিস্তারিত তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী এসব তথ্যই নির্বাচন অফিস ও রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে সংরক্ষিত থাকার কথা।

শতভাগ ভোট পড়া ওই কেন্দ্রগুলোর একটি তালিকা এসেছে আমার দেশ-এর কাছে। ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৩টি জেলায় একাধিক কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ার নজির রয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কেন্দ্রের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে রংপুর জেলা। পাঁচটি সংসদীয় আসনের মোট ২৭টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ার নজির স্থাপিত হয়েছে একসময়ের মঙ্গাপীড়িত জেলাটিতে। শতভাগ ভোট পড়া কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে : রংপুর-১ চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুতুব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাচলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লক্ষ্মীপুর মাঝেরহাট দ্বিমুখী দাখিল মাদরাসা; রংপুর-২ আমরুলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাঁচাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় (মহিলা), কাঁচাবাড়ি চৌপতির হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাঠেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালা আমরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কৃশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; রংপুর-৪ ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (পুরুষ ভোটকেন্দ্র), ঝিনিয়া ধনীরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়; রংপুর-৫ শালমারা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, শালমারা লতিফপুর, মাতাল চৌকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইসলামিয়া দ্বিমুখী দাখিল মাদরাসা এনায়েতপুর, কিশামত জালাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাদুল্যাপুর বাহারুল উলুম দাখিল মাদরাসা মামুদপুর (পুরুষ ভোটকেন্দ্র), খিয়ারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাসিমপুর; শঠিবাড়ী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, শঠিবাড়ী; হরিপুর বিদ্যালয় (মহিলা ভোটকেন্দ্র), শীতলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মির্জাপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়; রংপুর-৬ সাহাপাড়া হাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাদিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (পুরুষ ভোটকেন্দ্র), আমোদপুর মহাবিদ্যালয়, জ্যোতিড়াঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোর্ডেরধর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাটাদুয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র।

শতভাগ ভোটের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৭টি আসনের মোট ১৮ ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে ২০১৮ সালের নির্বাচনে। চট্টগ্রাম-১০ আসনের শহীদনগর সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রেই ভোটের দিন সকালে ভোট শুরু হওয়ার আগেই ব্যালটভর্তি বাক্সের ভিডিও প্রকাশ করে বিবিসি। বিতর্কের মুখে ওই কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে সরকার। বাকি কেন্দ্রগুলোর ভিডিও কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশ না হলেও সাত বছর পর তথ্য পেয়েছে আমার দেশ।

চট্টগ্রাম-৫ দক্ষিণ পাহাড়তলী অলি আহমদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আহসান উলুম গাউছিয়া মাদরাসা কেন্দ্র-১ (পুরুষ কেন্দ্র), আহসান উলুম গাউছিয়া মাদরাসা কেন্দ্র-২ (মহিলা কেন্দ্র), বালুছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম-৮ পশ্চিম কাধুরখিল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র (পুরুষ-মহিলা উভয়), এয়ার আলী হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামিয়া আহমদিয়া সুন্নি আলিয়া মাদরাসা, মূক ও বধির স্কুল ভোটকেন্দ্র, জহুর আহমেদ চৌধুরী সিটি করপোরেশন প্রাথমিক বিদ্যালয়, আরবান হাসপাতাল দক্ষিণ অংশ বার্মা কলোনি (পুরুষ), আমিন জুট মিলস অফিসার্স ক্লাব (পুরুষ কেন্দ্র), আমিন জুট মিলস উচ্চ বিদ্যালয় ও কর্মী ক্লাব সিবিএ অফিস (মহিলা কেন্দ্র), চট্টগ্রাম-১০ নতুনকুঁড়ি আইডিয়াল স্কুল ও কলেজ (পুরুষ কেন্দ্র), প্রবর্তক স্কুল ও কলেজ কেন্দ্র, চট্টগ্রাম-১১ টিএসপি কমপ্লেক্স মাধ্যমিক বিদ্যালয় (পুরুষ ও মহিলা ভোটকেন্দ্র), চট্টগ্রাম-১২ কচুয়াই সীতাবিধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম-১৪ কানাইমাদারী ইসলামিয়া কাদেরিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদরাসা, উত্তর জোয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম-১৫ ছোট হাতিয়া হাজী লক্ষ্মী বিবি আদর্শ এবতেদায়ি মাদরাসা।

তালিকার তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ময়মনসিংহ জেলা। ১৭ কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে একাদশ সংসদ নির্বাচনে। এই কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে : ময়মনসিংহ-১ সংড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাঝিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ময়মনসিংহ-২, হরিমাদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুঠুরাকান্দা (মুন্সীবাড়ী) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাঝিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিসকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ময়মনসিংহ-৪ বাংলাদেশ রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয় (পুরুষ ভোটার), ময়মনসিংহ-৬ জোরবাড়ীয়া উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ময়মনসিংহ-৭ কাজিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাজিপ্লাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ময়মনসিংহ-৮ মাইজবাগ পাদপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাইজবাগ পাদপাড়া; ময়মনসিংহ-১০ আঠারদানা উচ্চ বিদ্যালয়, দক্ষিণ ঘাগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাতীখলা উচ্চ বিদ্যালয়, চরশীখচূড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ময়মনসিংহ-১১ রাংচাপড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এছাড়া দিনাজপুরের ১০, নীলফামারীর ১, লালমনিরহাটের ৮, কুড়িগ্রামের ২, গাইবান্ধার ৪, বগুড়ার ৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩, নওগাঁর ৯, রাজশাহীর ২, নাটোরের ১, সিরাজগঞ্জের ৯, মেহেরপুরের ১, যশোরের ১, বাগেরহাটের ১, খুলনার ১, বরিশালের ৩, টাঙ্গাইলের ২, জামালপুরের ৩, শেরপুরের ২, নেত্রকোনার ১, মানিকগঞ্জের ৪, মুন্সীগঞ্জের ৪, ঢাকার ৬, গাজীপুরের ৩, নরসিংদীর ৩, নারায়ণগঞ্জের ১, ফরিদপুরের ২, মাদারীপুরের ১, সুনামগঞ্জের ৩, সিলেটের ১০, মৌলভীবাজারের ২, হবিগঞ্জের ২, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৯, কুমিল্লার ৩, চাঁদপুরের ৩, ফেনীর ৪, নোয়াখালীর ২, লক্ষ্মীপুরের ১, কক্সবাজারের ১০ ও খাগড়াছড়ির ১টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ার নজির রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন চৌধুরী ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বশির আহমেদ।

তবে নির্বাচন অফিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে ২০১৮ সালের নির্বাচনের তথ্য দিতে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস ও জেলা নির্বাচন অফিসে এ ধরনের কোনো তথ্য সংরক্ষিত নেই। তাই নিয়মানুযায়ী তথ্য পাওয়ার প্রচলিত পথগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বিকল্প পথে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। এর অংশ হিসেবে উপজেলা নির্বাচন অফিসগুলোকে সংযুক্ত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা কেন্দ্রগুলোতে সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন। স্থানীয় ভোটার, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও স্থানীয় পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রিসাইডিং অফিসারদের তথ্য বের করার চেষ্টা করতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় চট্টগ্রামের ১৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ইতোমধ্যে দুটি কেন্দ্রের তথ্য পাওয়া গেছে। বাকিগুলোও সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। তবে এই অগ্রগতি এখনো জেলা প্রশাসক কিংবা নির্বাচন কমিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।

নির্বাচন কমিশন-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশের অন্যান্য জেলাতেও একই পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু কেন্দ্রের তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাচন অফিসারদের একার পক্ষে এ পদ্ধতিতে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। এর জন্য সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। নির্বাচন অফিসারদের নেতৃত্বে প্রশাসনের অন্যান্য অঙ্গগুলো সক্রিয় না হলে বিকল্প পদ্ধতিতে রাতের ভোটের কারিগরদের চিহ্নিত করা কঠিন হবে বলে জানান ওই নির্বাচন কর্মকর্তা।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম জানান, ২০১৮ সালের নির্বাচনে শতভাগ ভোট পড়া কেন্দ্রগুলোর বিভিন্ন তথ্য চেয়ে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া চিঠি তিনি পেয়েছেন। কয়েক বছরের পুরোনো তথ্য হওয়ায় প্রাথমিকভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তথ্যগুলো খুঁজছেন। তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা নির্বাচন কমিশনকে সরবরাহ করা হবে। তবে তথ্যগুলো পেতে কত দিন লাগবে, কিংবা আদৌ পাওয়া যাবে কি নাÑসে ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে নির্বাচন কমিশনের উপসচিব (জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো চিঠিতে স্বাক্ষরকারী) মোহাম্মদ মনির হোসেনের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আসাবুল আলম জানান, বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানোর সময় এখনো আসেনি। সময় হলে নির্বাচন কমিশন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সবাইকে জানানো হবে।

তথ্য চেয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেওয়া উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, দুদকের আইন অনুযায়ী স্পর্শকাতর এ-সংক্রান্ত তথ্য জনসংযোগ কর্মকর্তার মাধ্যমে নিতে হবে। পরে প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আক্তার উল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন থেকে এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে মুন্সীগঞ্জের ৭ কেন্দ্রের মধ্যে বিকল্প উপায়ে খণ্ডিত কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু সেটা অফিসিয়াল কোনো তথ্য নয়। নির্বাচন কমিশন থেকে তথ্য দিতে পারবে কি পারবে না, সে ব্যাপারেও স্পষ্ট করে এখনো কিছু জানায়নি। তবে শিগগির একটি সিদ্ধান্ত জানা যাবে।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার জানান, তিনি নিজ উদ্যোগে ২০১৮ সালের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তার কাছে ২০৭টি নয়, ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ার তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি কেন্দ্রে শতভাগের বেশি ভোট পড়ার খবরও গণমাধ্যমে এসেছে। এছাড়া এক হাজার ১৭৭ কেন্দ্রে বিএনপি ও দুটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ শূন্য ভোট পেয়েছে।

তিনি আরো জানান, বিতর্কিত ও নির্বাচন-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য তিনি নিজেই দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন কমিশনের বারান্দায় ধরনা দিয়েছেন। কিন্তু কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেননি। তথ্য অধিকার আইনে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করেও তথ্য পাননি। এমনকি সিইসির সঙ্গে দেখা করেও ভালো ব্যবহার পাননি তিনি। তার মতে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের ফলাফল ছিল পুরোটাই ভুয়া। রিটার্নিং কর্মকর্তারা ইচ্ছেমতো একটি সংখ্যা বসিয়ে প্রচার করেছেন মাত্র। আর এসব কাজে কারা জড়িত ছিলেন, তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য নির্বাচন কমিশন ও জেলা প্রশাসকদের কাছে থাকা বাধ্যতামূলক। যদি না থাকে, তবে এর দায় কেউ এড়াতে পারবেন না।

সূত্রঃ আমার দেশ

No comments:

Post a Comment

এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক: প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২৭ বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের অভ্যন্তরে ২০০৯ ...