BDC CRIME NEWS24
সন্তান নিয়ে অন্তহীন ভোগান্তিতে মনিরের স্ত্রীঃ
প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৫, ১০: ২৭
সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার তিন মাস আগেই ঘাতকের গুলিতে শহীদ হন মাদারীপুরের মনিরুজ্জামান মনির। এর পরের গল্পটা আরো করুণ। স্বামীর মৃত্যুর পর অপবাদ দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয় সন্তানসম্ভবা স্ত্রী ছামিরা ইসলামকে। পরে এক আত্মীয়র বাসায় সন্তান জন্ম দেন তিনি। কেউই তাদের খোঁজ-খবর, ভরণ-পোষণ না দেওয়ায় সন্তান নিয়ে অন্তহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন বিধবা ছামিরা ইসলাম।
জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট সকালে বৈষম্যবিরোধী
ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে নিজের মোটরসাইকেলে বন্ধু আলমকে নিয়ে ঢাকায় যান মনির। দুপুরে
রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে গেলে আন্দোলনকারীদের লক্ষ করে নির্বিচারে গুলি করে পুলিশ। এ
সময় মনিরের বুকে ও পেটে গুলি লাগে। পরে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়ার পর সন্ধ্যায়
তার মৃত্যু হয়। পরদিন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার শাখারপাড় এলাকায় তাকে দাফন করা হয়।
শহীদ মনিরের স্ত্রী ছামিরা ইসলাম বলেন, সন্তান
নিয়ে মাদারীপুর পৌর শহরের আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ে একটি ভাড়া বাসায় থাকি। আন্দোলনে মনির
মারা যাওয়ার কিছুদিন পর তার পরিবার থেকে অপবাদ দিয়ে বের করে দেওয়া হয় আমাকে। তখন আমি
সন্তানসম্ভবা। পরে এক আত্মীয়র বাসায় আশ্রয় নিই। সেখানে আমার ছেলেসন্তান হয়। বর্তমানে
কেউ আমাদের খোঁজ নেয় না। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে দুই লাখ টাকা পেয়েছি। আগামীতে
কীভাবে সন্তানকে লালন-পালন করব, সে চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারি না।
মনিরের স্ত্রী বলেন, এখন আমার সন্তানকে বাঁচিয়ে
রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। কেউ আমাদের খোঁজ-খবর নেয় না। বরং আমাকে অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে
তাড়িয়ে দিয়েছে। আমি মনিরের সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। মরার আগ দিন পর্যন্ত মনিরের
চিহ্ন আঁকড়ে বেঁচে থাকতে চাই।
মনিরের বন্ধু আলম হোসেন বলেন, আমরা একসঙ্গে
স্বৈরাচারমুক্ত আন্দোলনে গিয়েছিলাম। সেখানে আমিও গুলিবিদ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু আল্লাহর
রহমতে আমি বেঁচে আছি; আমার বন্ধু আর নেই। তার সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করাই এখন
আমাদের সবার দায়িত্ব। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিরের স্ত্রীকে যদি একটি চাকরি দেওয়া যেত,
তাহলে সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকতে পারত।
এ ব্যাপারে মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট
শাহ মো. সজীব বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সুযোগ-সুবিধা আছে, সেগুলো আমরা নিহতদের
পরিবারগুলোকে দিচ্ছি। আগামীতেও যদি কোনো সুযোগ আসে, তাহলে সহযোগিতা করা হবে। এ ছাড়া
যদি নিহতের পরিবারের কাউকে কোনো চাকরি দেওয়া যায়, সেটাও আমরা দেখব।
সূত্রঃ আমার দেশ

No comments:
Post a Comment