Thursday, May 1, 2025

ভিন্নমতের শিক্ষার্থীকে জঙ্গি ট্যাগ দিতেন শাবি শিক্ষক হিমাদ্রী। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

ভিন্নমতের শিক্ষার্থীকে জঙ্গি ট্যাগ দিতেন শাবি শিক্ষক হিমাদ্রী:

প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৯: ৫৯

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. হিমাদ্রী শেখর রায়ের বিরুদ্ধে ভিন্নমতের কিংবা নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শের বিপরীত শিক্ষার্থীদেরকে দমন-পীড়ন ও জঙ্গি ট্যাগ করতেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের এসব ট্যাগ দেয়াসহ পুলিশি হয়রানিও করান তিনি বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এসব বিষয় একাধিকবার সামাজিক মাধ্যমসহ নানান মাধ্যমে সামনে আসলেও যেন ধরাছোঁয়ার বাইরে আওয়ামীপন্থী এ শিক্ষক।

জানা যায়, ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন হিমাদ্রী শেখর রায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর থাকাকালীন সময়ে ভিন্নমতের অনুসারীদের বিভিন্ন সময়ে পুলিশি হয়রানি করেছেন বলে খবর সামনে এসেছে সম্প্রতি। এ সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগও রয়েছে আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ মুঠোফোনে বিগত সময়ের নানা অভিযোগ তুলে ধরছেন তার নিজের বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরাও। এমনকি তৎকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত একাধিক সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেও তার এসব বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এমনকি ওই শিক্ষকের অত্যধিক ছাত্রলীগ প্রীতি নিয়েও সেসময়ে সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিলেন হিমাদ্রী শেখর রায়।

জানা যায়, প্রক্টর থাকাকালীন সময়ে তিনি ভিন্ন মতাদর্শের শিক্ষার্থীদের দেখলেই বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি নানানভাবে অপমান করতেন। এমনকি শুধুমাত্র সন্দেহের বশে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকেও শিবির ট্যাগ দিয়ে পুলিশি হয়রানির মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ এসেছে। তবে এসব অভিযোগের বাইরেও গোপনে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করা, গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ, বিধিবহির্ভূত এমফিল ডিগ্রি প্রদানসহ নানান অভিযোগ থাকলেও কট্টর আওয়ামীপন্থী এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের হয়রানির বিষয়ে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে শাবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থী আফজাল ফয়সাল বলেন, ১৩-১৪ সেশনের ভর্তি পরীক্ষার দিন ছাত্রশিবিরের ১৪ জনকে বহিষ্কারের ঘটনায় আন্দোলনের জেরে ভর্তি পরীক্ষা কাঙ্ক্ষিত সময়ে হয়নি।

বরাবরের মতো ক্যাম্পাসে সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং নিষিদ্ধ থাকলেও ছাত্রলীগসহ কয়েকটি বাম এবং ডানপন্থি দল মিছিল করলেও প্রশাসন নির্বিকার ছিল। আমার এলাকা থেকে এবং বিভিন্ন রেফারেন্সে যেসব পরীক্ষার্থী আমার কাছে এসেছিল তাদেরকে যতটুকু পেরেছি বিভিন্ন প্রকার সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। পরীক্ষা চলমান থাকা অবস্থায় আমি ক্যাম্পাসে আসি এবং অ্যাকাডেমিক ভবন এ এর সামনে দাঁড়াই। সম্ভবত কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলছিলাম। কেউ ফোন নাম্বার নিচ্ছিলো, কেউ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিলো। এমতাবস্থায় পরীক্ষা শেষে যখন পরীক্ষার্থীরা বের হতে শুরু করে তখনই তৎকালীন প্রক্টর হিমাদ্রী শেখর রায় আমাকে ডেকে কাছে নেন, পরিচয় জানতে চান, আইডি কার্ড দেখেন। তারপর আমাকে দাঁড়াতে বলে একটু সরে গিয়ে সিইপি বিভাগের নিলয় স্যারের সাথে কথা বলেন, যিনি তখনকার সহকারী প্রক্টর এবং যার সাথে আমার বিভাগের দু’জন হিন্দু শিক্ষকের ভালো সম্পর্ক, কারণেই আমি তাকে আগে থেকে চিনতাম।

নিলয় স্যারকে দেখলাম কাকে যেন ফোন দিল, হয়ত পরিচয় নিশ্চিত করেছে আমি শিবিরের সাথে জড়িত কিনা। তিনি শুধুমাত্র সন্দেহ করেছিলেন আমি হয়ত শিবির করি। এরই প্রেক্ষিতে তিনি পুলিশকে ডাক দিয়ে আমাকে অ্যারেস্ট করতে বলেন। আগে থেকে কোনো মামলা না থাকায়, আর কোনো অপরাধের ক্লু না পাওয়ায় সন্ধ্যার আগে মুচলেকা নিয়ে থানা থেকে পুলিশ আমাকে ছেড়ে দেয়।

২০১৫-১৬ সেশনের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রিপন মাহমুদ বলেন, ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের সময় হিমাদ্রী শেখর রায় নিজে আমাকে বলেছিল, তোমাদের ১০০ জনের লিস্ট সরকারের কাছে গেছে। এইসব জঙ্গি কর্মকাণ্ড করলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হবে। অনেকের কাছে আমার নামে বলেছিল কেন আমি ইংরেজি বিভাগ থেকে কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছি।

এছাড়া তিনি আরও বলেন, এই পর্যন্ত যত ক্লাস পেয়েছি ওনার দেখেছি ওনি ১০-১৫ মিনিট দেরিতে আসেন আবার কোনো শিক্ষার্থী ওনার পরে ক্লাসে প্রবেশ করলে তাকে যেভাবে অপমান করতেন তা কোন সুস্থ মানুষ করতে পারে না। ভিন্ন মতের হলে তাকে রাজনীতি না করতে বললেও তিনি ঠিকই ক্লাসে রাজনীতির আলাপ করতেন বলেও জানান তিনি।

সায়মা নামের একজন শিক্ষার্থী তার বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে বলতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক গ্রুপে লেখেন, তিনি একইসাথে মুসলিম বিদ্বেষীও বলা যায়। উনার এক কোর্সে বিবিএ বিভাগের পুরো এক ব্যাচে যারা হিজাব নিকাব পড়তো তাদের কমবেশি সবাইকেই ভাইভাতে অপমান করা হয় এবং সি, বি এবং বি এর মত রেজাল্ট ধরিয়ে দেন।

তিনি আরো লেখেন, একই ব্যাচে অন্য ধর্মের শিক্ষার্থীর মাথার তিলক এইসব দেখে উনার মধ্যে অনেক আগ্রহ দেখা যায়, তার নাম্বার নেয়া, তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাওয়া, তার ধর্মীয় চর্চা নিয়ে স্যারকে প্রশংসা করতেও দেখা যায়। অথচ মুসলিম ধর্মীয় পোশাক বলে তিনি তা সহ্য করতে পারতেন নাই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. হিমাদ্রী শেখর রায় বলেন, আমি নিয়ম বহির্ভূত কোনো কাজ করিনি। ১৫ বছর আগের অভিযোগ এখন কেন? ১৫ বছর পর অভিযোগ দেয়ার কারণ কি বোঝ না? কয়েকদিন পর তো এদের বক্তব্য আবার পরিবর্তন হবে। আমি প্রক্টর থাকাকালীন কোনো নিয়ম বহির্ভূত কাজ করিনি। সব রেকর্ড প্রক্টর অফিসে রয়েছে।

সূত্র: আমার দেশ 

No comments:

Post a Comment

এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক: প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২৭ বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের অভ্যন্তরে ২০০৯ ...