Saturday, April 12, 2025

বারান্দায় দাঁড়ানো লিজার জীবন কেড়ে নেয় বুলেট। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

বারান্দায় দাঁড়ানো লিজার জীবন কেড়ে নেয় বুলেট:

প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৮: ৪০

মা-বাবার সংসারে উপার্জনক্ষম মেয়ে ছিলেন মোসাম্মৎ লিজা। সাত বছর সংসারের খরচ চালিয়েছেন। আবার নিজেও মাদরাসায় পড়াশোনা করেছেন। মেয়েকে হারিয়ে দিশাহারা অসুস্থ বাবা-মা। বিয়ে দেওয়ার জন্য কিছু খরচও জোগাড় করেছিলেন নির্মাণশ্রমিক বড় ভাই।

কিন্তু সব স্বপ্ন জিইয়ে রেখে চলে গেলেন লিজা। জুলাই বিপ্লবে শহীদ হওয়া লিজা ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে থেকেও ফ্যাসিবাদের বুলেট থেকে রেহাই পাননি। সেই থেকে পরিবারটিতে এখনো স্বজন হারানোর গভীর শোক।

জুলাই বিপ্লবে যুবলীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়ে চার ঘণ্টা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে মারা যান লিজা। গ্রামের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন থানার দেউলাশিবপুর গ্রামে। শহীদ লিজার লাশ দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে।

বড় ভাই মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘বোনটার বিয়ের বয়স হয়েছিল, তাই বাবা-মা কিছুদিন ধরেই তাকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছিলেন। লিজা বলতেন, কোরআনের ১৮ পারা মুখস্থ হইছে, হেফজ শেষ করতে আর তিন মাস লাগবে। হাফেজ হওয়ার পরই সে বাড়িতে যাবে। কিন্তু হেফজ শেষ হলো না, আর বিয়ের পিঁড়িতেও বসা হলো না লিজার।’

১৮ বছর বয়সি লিজা আর্থিক অনটনে বছর ছয়েক আগে বড় ভাই রাকিবের মাধ্যমে ঢাকায় কাজ করতে আসেন। রাজধানীর শান্তিনগরের একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেন লিজা। ওই বাসায় কাজ করার পাশাপাশি কাছের একটি মহিলা মাদরাসায় হাফেজি বিভাগে পড়তেন। শান্তিনগরের যে বাসায় কাজ করতেন সেই ভবনটি ছিল ১৪তলা। তারা থাকতেন সপ্তম তলায়।

২০২৪ সালের ১৮ জুলাই বিকেলে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ-ছাত্রলীগ-যুবলীগ গুলি চালায়। গোলাগুলির মধ্যে বাসা থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজে বারান্দায় গিয়ে দেখতে যান লিজা। বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার দৃশ্য দেখেন। এরই মধ্যে যুবলীগ সন্ত্রাসীদের একটি গুলি এসে লাগে তার মাথায়। মুহূর্তেই মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন লিজা।

লিজার চিৎকার শুনে দৌড়ে বারান্দায় আসেন বাসার লোকজন। উদ্ধার করে দ্রুত নিয়ে যান পাশের হাসপাতালে। এর মধ্যে বিকাল সাড়ে ৩টায় খবর পাঠানো হয় তার বড় ভাই রাকিবকে। রাকিব ছিলেন গাজীপুরে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে হতভম্ব হয়ে পড়েন ভাই। বাড়িতে কী বলবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। এর মধ্যে ভাই ঢাকায় আসতে চেষ্টা করলেও প্রতিটি পয়েন্টে বাধার সম্মুখীন হন। না আসতে পেরে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে থাকেন মেডিকেলে বোনের সঙ্গে থাকা মানুষদের সঙ্গে। তারা সবাই সান্ত্বনা দেন, পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে।

রাকিব আমার দেশকে বলেন, ‘২০ জুলাই ভেঙে ভেঙে রিকশায় ও হেঁটে শান্তিনগরে আসেন। ২১ জুলাই উন্নত চিকিৎসার জন্য লিজাকে নিয়ে যাওয়া হয় পপুলার হাসপাতালে। সেদিন রাত ৮টায় লিজার অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর একদিন পরে না ফেরার দেশে চলে যান লিজা।’

পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে লিজা ছিলেন চতুর্থ। মারা যাওয়ার আগের দিনগুলোতে ভাইয়ের সঙ্গে কথা হলে তাকে বোঝাতেন ভাই, ‘তুই বড় হয়ে গেছস। বাবা-মা তোর জন্য ছেলে দেখতেছে। তুই বাড়িতে চল বোন।’

বোন হারানোর আক্ষেপ জানিয়ে রাকিব বলেন, ‘সর্বশেষ কথোপকথনে লিজা বলেছিল, ‘আর তিন মাস, আমি এর মধ্যে হাফেজ হয়ে যাব। তখন একবারে বাড়িতে চলে যাব।’ তিন মাস হয়নি, তার আগেই লিজা একবারেই বাড়িতে চলে এলো। তবে জীবিত নয়, শহীদ হয়ে।’

সূত্র: আমার দেশ 

No comments:

Post a Comment

এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক: প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২৭ বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের অভ্যন্তরে ২০০৯ ...