BDC CRIME NEWS24
হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি লুটে খাচ্ছে আ.লীগের লোকেরা:
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৫, ১৩: ১৮
দেশের ওয়াক্ফ এস্টেটগুলোর সম্পত্তি দখল ও আয়ের বিপুল অর্থ ক্রমাগত আত্মসাৎ হয়ে যাচ্ছে। সারাদেশে নিবন্ধিত ২১ হাজার ৯৩৯টি এস্টেটের মধ্যে অধিকাংশ এখনো আওয়ামী লীগের দোসরদের দখলে। ফলে এখনো ওয়াক্ফ এস্টেটগুলোর হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি লুটপাট করে খাচ্ছে আওয়ামী লীগের লোকেরা। এসব সম্পত্তি রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়াকফ্ প্রশাসন ঘুষবাণিজ্যে ভক্ষকের ভূমিকায় রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৫ বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ওয়াক্ফ স্টেট মোতাওয়াল্লি নিয়োগ ও কমিটির মাধ্যমে দখলে নেয় আওয়ামী লীগের লোকেরা। তারা এখনো সেসব জায়গায় বহাল।
জুলাই বিপ্লবের পর রাজধানীর আজিমপুর নতুন পল্টন লাইনের হাজি দিল্লিওয়ালা ওয়াক্ফ এস্টেটের আলহেরা জামে মসজিদের সম্পত্তি নিয়ে মসজিদের মুসল্লি ও স্থানীয় বাসিন্দা সালাহউদ্দিন বলেন, ১৪১ জন মুসল্লি ছয়টি অভিযোগ দেন আওয়ামীপন্থি বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে।
চিঠি প্রাপ্তির পর ওয়াক্ফ স্টেটের পরিদর্শক আবু সাঈদ ও সহকারী পরিচালক মোতাহার হোসেন খান মুসল্লিদের জানান, আপনারা যেসব তথ্য দিয়েছেন এর চেয়েও অনেক ভয়াবহ অনিয়মের তথ্য আমরা পেয়েছি।
এভাবে ওয়াকফ প্রশাসন সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে নতুন কমিটি গঠনের আশ্বাস দিলেও পরবর্তী সময়ে পরিদর্শক আবু সাঈদ মুসল্লিদের প্রতিনিধি শোয়েব রহমানের কাছে নতুন কমিটি অনুমোদন করাতে অফিস খরচ হিসেবে তিন লাখ টাকা ঘুস দাবি করে। তারা ঘুস দিতে রাজি না হওয়ায় এ নিয়ে চলছে গড়িমসি।
অনেকেই বলছেন, ওয়াক্ফ প্রশাসনে ঘুষবাণিজ্য অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। এর আগে সহকারী প্রশাসক মোতাহার হোসেন খান ৫ নভেম্বর ২০১৭ সালে ঘুস নেওয়ার সময় দুদকের অভিযানে হাতেনাতে ধরা পড়েন। তার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে চার্জশিটও দেওয়া হয়। তবে তিনি এখনো স্বপদে বহাল।
তিনি উল্টো ওয়াক্ফ প্রশাসনে দুর্নীতির একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। অবৈধ কমিটি অনুমোদন, সারাদেশের ওয়াক্ফ সম্পত্তির তত্ত্বাবধান ও পরিচালনার নামে প্রতি মাসে মসজিদ কমিটি ও ওয়াক্ফ সম্পত্তির মোতাওয়াল্লিদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ ঘুস গ্রহণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তার এই অবৈধ বাণিজ্যের অন্যতম সহযোগী ওয়াক্ফ পরিদর্শক আবু সাঈদ। তার বিরুদ্ধে ধর্ম উপদেষ্টা ও ধর্ম সচিবের কাছেও অভিযোগ জানানো হয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ওয়াক্ফ প্রশাসনের পরিদর্শক আবু সাঈদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে ঘুস চাওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। হাজি দিল্লিওয়ালা ওয়াক্ফ এস্টেটের আলহেরা জামে মসজিদের কমিটি বিষয়টি নিয়ে ওয়াক্ফ প্রশাসক নিজে দুই পক্ষের বক্তব্য শুনেছেন এবং এ বিষয়ে তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন। ফলে এতে আমার কোনো হাত নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াক্ফ প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, এস্টেটগুলোর আয়ের অর্থ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করার সার্কুলার কমিটিগুলো মেনে চলছে না। তারা তাদের ইচ্ছামতো খরচ করছে।
এভাবে রাজধানীর আজিমপুর জামে (ছাপড়া) মসজিদ ও মাদরাসা ভবনের পূর্ব ও দক্ষিণ পাশে নির্মাণ করা হয়েছে ১৬টি দোকান। প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা ভাড়া আদায় হয়, যা ভাগবাঁটোয়ারা করে নেয় কমিটির লোকজন। মসজিদ ভবনের পশ্চিম পাশে ওয়াক্ফকৃত প্রায় ১০ কাঠা জমি নিয়েও চলছে বিরোধ।
রাজধানীর উত্তরার আজমপুর জামে মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার বরখাস্ত সাবেক মোতাওয়াল্লি নাসিরউদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ওয়াক্ফ প্রশাসন নাসিরউদ্দিনকে অপসারিত করে নতুন মোতাওয়াল্লি নিয়োগ ও কমিটি গঠন করেছে।
রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের জুমুর আলী ফকিরের মাজারের পাঁচ কাঠা জমির মধ্যে প্রায় তিন কাঠা অবৈধভাবে দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করে ব্যবসা করছেন স্থানীয় কয়েকজন। দোকানগুলো থেকে মাসে ভাড়া আসে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা, যা শিপন ও সেলিমের পকেটে যায়।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে পুলিশ বক্সসংলঘ্ন বাবুস সালাম মসজিদ-মাদরাসার পূর্ব ও উত্তর পাশের ১৭টি দোকান থেকে মাসে ভাড়া আদায় ১০ লাখের বেশি টাকা। মসজিদটির দখল নিয়ে স্থানীয় দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
ওয়াক্ফ প্রশাসক (অতিরিক্ত সচিব) ফখরুল ইসলাম বলেন, কারো বিরুদ্ধে ঘুসবাণিজ্যের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনবল সংকটের কারণে আমরা ইচ্ছা করলেই অনেক কাজ করতে পারছি না।
সারাদেশে বিভিন্ন ওয়াক্ফ এস্টেটের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র প্রায় একই রকমের। সংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০১৪ সালে ধর্ম মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিতে ওয়াক্ফ প্রশাসকের কার্যালয়ে নিবন্ধিত থাকা সম্পত্তির মধ্যে ৮৫ হাজার ৫৭২ একর ভূমি বেহাত হওয়ার একটি হিসাব এক প্রতিবেদনে দাখিল করা হয়েছিল। জমি উদ্ধার হওয়ার কোনো তথ্য পরবর্তী সময়ে আর জানা যায়নি।
বিভিন্ন বেসরকারি হিসাবে যত ওয়াক্ফ এস্টেট ও ভূসম্পত্তির কথা জানা যায়, তার আনুমানিক এক-তৃতীয়াংশের কম সরকারি ওয়াক্ফ প্রশাসকের অফিসে নিবন্ধিত। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে নিবন্ধিত এস্টেট সারাদেশে ২১ হাজার ৯৩৯টি। এগুলোর অধীনে জমি আছে চার লাখ ২৪ হাজার ৫৭১ দশমিক ৭৪ একর। তবে বেসরকারি সূত্রমতে, দেশে ১০ লাখ একরের মতো ওয়াক্ফ জমি আছে।
সূত্র: আমার দেশ
No comments:
Post a Comment