Thursday, March 6, 2025

বিএনপি-জামায়াত সংঘাত তীব্র হচ্ছে। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

বিএনপি-জামায়াত সংঘাত তীব্র হচ্ছে:

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৫, ১০: ৩৯

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে একসময় ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর যেন দল দুটির মধ্যে দূরত্ব বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে চলা কথার লড়াই এখন রূপ নিয়েছে সংঘর্ষে।

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি স্থানে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের মাঝে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। অনেক এলাকায় দল দুটির মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন ইস্যু ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন পদে নিয়োগ-পদায়ন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কমিটি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাদের মাঝে দ্বন্দ্ব-সংঘাত তীব্র হচ্ছে।

তবে এসব সংঘাতের জন্য একে অপরকে দায়ী করছে দল দুটি। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পরস্পরকে সংযত হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি-জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা। যদিও মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ন্ত্রণ করা দল দুটির জন্য বেশ চ্যালেঞ্জের বিষয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জামায়াতের সঙ্গে বর্তমানে সময়ে বিএনপির দূরত্ব নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আমার দেশকে বলেন, জামায়াত কখন কার সঙ্গে থাকে এটা ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন।

আলাল বলেন, জামায়াত প্রথমে আমাদের সঙ্গে ছিল; পরে ৮৬ সালে জাতীয় পার্টির সঙ্গে নির্বাচন করল। এরপর ৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন করল। পরে আবার আমাদের সঙ্গে এলো। জামায়াত কিছু সময় জলে, কিছু সময় স্থলে, আবার কিছু সময় আকাশপথে থাকে। ফলে তাদের নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন।

তবুও আমরা বলব, জামায়াত আমাদের সমভাবাপন্ন বন্ধু সংগঠন। তারা দূরে সরতে চাইলে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা তাদের শত্রু ও প্রতিপক্ষ মনে করি না। এখন যে দূরত্ব আছে, সেটা সামনে ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে দুই দলের চলমান সাংঘর্ষিক অবস্থানকে বিব্রতকর বলছে বিএনপি। দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আমার দেশকে বলেন, তৃণমূলে জামায়াত ও বিএনপির সঙ্গে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে, যা বিব্রতকর।

আমরা লক্ষ করছি, দেশে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। আমরা আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের বলে দিয়েছি, আমাদের বিরুদ্ধে কেউ যদি অপপ্রচার চালায় ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়, তাহলে তা সংযমের সঙ্গে যেন সমাধান করা হয়।

জামায়াতের উদ্দেশে প্রিন্স বলেন, হঠাৎ করে জামায়াত রহস্যজনক আচরণ করছে। এমন আচরণে আমরা বিস্মিত। দলটি বিভিন্ন সময় বিরূপ বক্তব্য উপস্থাপন করে রাজনৈতিক মাঠে দ্বন্দ্ব ও বিভেদ সৃষ্টি করছে, যা মোটেও কাম্য নয়। তাদের এমন কর্মকাণ্ড থেকে সরে এসে একটি সহনশীল রাজনীতি করার পরামর্শ দেন তিনি।

এদিকে জামায়াত নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতা ভোগ করতে চায় অভিযোগ করে প্রিন্স বলেন, জামায়াত ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। তারা ক্ষমতা ভোগ করতে চায়; কিন্তু নির্বাচন চায় না। নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য সংস্কারের খেলা খেলছে। আমরা বলব, নির্বাচনই হচ্ছে গণতন্ত্রের মুখ্য বিষয়।

তবে দুদলের বর্তমান সংঘাতময় অবস্থান সম্পর্কে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আমার দেশকে বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনায় দেখা যাচ্ছে তা বিএনপি দ্বারাই ঘটছে।

পাবনায় জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপি দুঃখ প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা একে অপরের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশে আমরা ঐক্যের মধ্যেই চলতে চাই। মাঝখানে বিভিন্ন স্থানে যেসব ঘটনা ঘটছে, তা বন্ধ করতে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংযত হওয়া দরকার। আমরা সংঘাত চাই না, ঐক্যবদ্ধভাবে চলতে চাই।’

জানা গেছে, সর্বশেষ গত ৪ মার্চ পাবনার সুজানগরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে বিএনপিতে। এ ঘটনা নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে বিএনপি হাইকমান্ডও। এরই মধ্যে জামায়াত নেতাকর্মীদের মারধরের অভিযোগে বিএনপি, যুব ও ছাত্রদলের চার নেতাকে শোকজ করা হয়েছে।

এর আগে ভোলার দৌলতখানে জামায়াতে ইসলামীর একটি কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। উপজেলার নূর মিয়ার হাট বাজারে ঘটনাটি ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক তোলপাড় হচ্ছে। এ নিয়ে দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যও দেখা গেছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর একটি বক্তব্য নিয়ে ক্ষুব্ধ হয় জামায়াত। একপর্যায়ে রিজভীর বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠায় জামায়াত।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রিজভী ‘জামায়াত যখনই সুযোগ পেয়েছে, বিএনপিকে পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করার চেষ্টা করেছে’ মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেনÑ তা ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। তার এ বক্তব্যের মধ্যে সত্যের লেশমাত্রও নেই। এমন বক্তব্য অন্যায়, অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। তার ওই বক্তব্য বিএনপির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য; জামায়াতে ইসলামীর ক্ষেত্রে নয়।

এর আগেও রিজভীসহ বিএনপির কয়েকজন নেতার বিভিন্ন বক্তব্যে জামায়াত নেতারা প্রতিবাদ জানান। আবার জামায়াত নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতারাও।

দুদলের প্রধান দ্বন্দ্ব যেখানে

জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের বর্তমান দ্বন্দ্বের পেছনে প্রধান ইস্যু হলো আগামী জাতীয় নির্বাচন। জামায়াতের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচন’ এবং পরে ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন’-এর দাবি তোলা হয়। অন্যদিকে বিএনপি যতটুকু সংস্কার সম্ভব, তা করে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের কথা বলে। এমনকি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করা যাবে না বলে কঠোর অবস্থানের কথা জানায় দলটি।

এ ছাড়া নতুন কোনো চাঁদাবাজকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না বলে বক্তব্য দেয় জামায়াত। এটি পরোক্ষভাবে বিএনপিকেই বলা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট মহল দাবি করে। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জামায়াত কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা জানায়। এ নিয়েও দল দুটির মধ্যে চাপা অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।

সূত্রমতে, সরকারি বিভিন্ন নিয়োগ-পদায়নে প্রভাব বিস্তার ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ-মাদরাসার কমিটি দখল নিয়েও বিএনপি-জামায়াতের দ্বন্দ্ব বাড়ছে। সম্প্রতি রাজধানীর কারওয়ান বাজার আম্বরশাহ মসজিদ কমিটি নিয়ে দল দুটির মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

সূত্র জানায়, মসজিদটিতে বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি দুটি কমিটি দেওয়া হয়েছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতে ওয়াকফ প্রশাসক একটি কমিটি দেয়। তবে সেটিও প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির আরেকটি পক্ষ থেকে নতুন একটি কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

একইভাবে বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াত অনেকটা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে ঝিনাইদহের একজন পেশাজীবী জানান, সম্প্রতি ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের একটি পদ নিয়ে স্থানীয় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের মাঝে অস্থিরতা দেখা দেয়। পরে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তা নিরসন হয়। একইভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে দল দুটির মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বিএনপি-জামায়াত সংঘাত প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী আমার দেশকে বলেন, ৫ আগস্টের পর জামায়াত অত্যন্ত কৌশলী পথ বেছে নিয়েছে, যেটা বিএনপি নিতে পারেনি। কৌশলগতভাবে বিএনপিকে পেছনে ফেলে দিয়েছে জামায়াত। যদিও বিগত সময়ে নির্যাতিত ও জিয়াউর রহমানের আদর্শের দল হিসেবে বিএনপিকেই সে জায়গা নেওয়ার কথা ছিল।

অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, বিএনপি মনে হয় কোনো ট্র্যাপে পড়ে গেছে। তারা ছাত্র-জনতার বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে পারছে না। বিএনপির বিরুদ্ধে আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির যে কথা শোনা যাচ্ছে, তাতে তাদের বদনাম হচ্ছে। অন্যদিকে কমিউনিস্ট পার্টির মতো জামায়াত সুদূরপ্রসারী প্ল্যান নিয়ে এগোচ্ছে।

তাদের চোখ রাষ্ট্রক্ষমতার দিকে। তারা কোনো চাঁদাবাজির মধ্যে নেই। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ইনস্টিটিউটে তারা বসে যাচ্ছে। বগুড়ার মতো বিএনপির ঘাঁটিতেও জামায়াতের উত্থান দেখা গেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সূত্র: আমার দেশ 

No comments:

Post a Comment

চিকিৎসকের যৌন নির্যাতনের শিকার ২৯৯ নারী-কিশোরী। (BDC CRIME NEWS24

BDC CRIME NEWS24 চিকিৎসকের যৌন নির্যাতনের শিকার ২৯৯ নারী-কিশোরী: প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০৫:৩৯  ফ্রান্সে সাবেক এক সার্জনের বিরুদ্ধে ২৯৯ রোগীক...