Friday, March 7, 2025

সাতকানিয়ায় মব তৈরি করে দুই জামায়াতকর্মী হত্যা- মূল হোতা আওয়ামী সন্ত্রাসী মানিক। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

সাতকানিয়ায় মব তৈরি করে দুই জামায়াতকর্মী হত্যা-

মূল হোতা আওয়ামী সন্ত্রাসী মানিক:

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৫, ১২: ০৩

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ডাকাতের গুজব ছড়িয়ে দুই জামায়াতকর্মীকে হত্যার মূল হোতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম মানিক ও তার সহযোগীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রশাসনে মানিকের প্রভাব এখনো এতটাই যে, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় এখনো হত্যা মামলা হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রসংক্রান্ত একটি মামলা করেই দায় সেরেছে পুলিশ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন মানিক। কিন্তু গোটা দক্ষিণ চট্টগ্রামজুড়ে আলোচনায় আসেন ২০১৫ সালে একটি হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে। ওই বছরের ৭ জানুয়ারি গভীর রাতে এওচিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান হাফেজ আহমদের বাড়িতে হামলা চালান মানিক ও তার সহযোগীরা। মানিক বাহিনীর গুলিতে হাফেজ আহমদ বেঁচে গেলেও নিহত হন তার নিকটাত্মীয় আনোয়ারা বেগম। ওই ঘটনায় হাফেজ আহমদ মানিককে প্রধান আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার এক আসামি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ওই জবানবন্দিতে উঠে আসে মানিকের নাম। ওই ঘটনায় মানিককে ধরতে তার বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। তখন তার ঘর থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গুলি ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনার পর আওয়ামী লীগে মানিকের কদর বাড়তে থাকে। সাতকানিয়ার সাবেক এমপি আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভীর ডান হাত হয়ে ওঠেন মানিক। নদভীর প্রত্যক্ষ মদতে ওই মামলা থেকে মানিকের নাম বাদ দেয় পুলিশ। ২০১৭ সালের ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্রে ব্যাপক সহিংসতার মাধ্যমে কেন্দ্র দখল করে প্রথমবারের মতো ইউপি চেয়ারম্যান হন তিনি। এরপর থেকেই মানিকের নামে বাঘে মহিষে এক ঘাটে পানি খাওয়ার অবস্থা তৈরি হয় সাতকানিয়ায়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সামান্য একজন নির্বাহী সদস্য হলেও তার দাপটে তটস্থ ছিলেন জেলাপর্যায়ের নেতারাও। সাধারণ একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়ে বনে যান কয়েকশ’ কোটি টাকার মালিক।

টাকার উৎস

বৈধ কোনো আয়ের উৎস না থাকা সত্ত্বেও সামান্য একজন ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। কেবিএম ও এইচবিএম ব্রিকস নামে তার মালিকানাধীন দুটি ইটভাটা রয়েছে এওচিয়া এলাকায়। দুটি ভাটার মাঝে মাছের প্রজেক্ট। গ্রামে একাধিক বাড়ির পাশাপাশি চট্টগ্রামের ফিনলে টাওয়ারে রয়েছে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। একাধিক গাড়ি ব্যবহার করতেন তিনি। অবৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি চারটি বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্সও ছিল তার নামে, ৫ আগস্টের পর যা বাতিল করে জেলা প্রশাসন। দেশের বাইরে দুবাইয়ে টাকা পাচার করে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়।

একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, সাতকানিয়া এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির পাশাপাশি কক্সবাজার থেকে ইয়াবা এনে চট্টগ্রামে বিক্রি ও দুবাইয়ের স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের এদেশীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন মানিক চেয়ারম্যান।

পুলিশের সঙ্গে সখ্য

চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ সুপার জেডএ মোর্শেদের হাত ধরে প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেন মানিক। ছনখোলা এলাকার ইটভাটাসংলগ্ন মাছের প্রজেক্টের পাশে রয়েছে তার বাংলো বাড়ি। স্থানীয়দের কাছে এটি মানিক চেয়ারম্যানের জলসাঘর হিসেবে পরিচিত। এখানে নিয়মিত যাতায়াত ছিল সাবেক পুলিশ সুপার জেডএ মোর্শেদ ও নুরে আলম মীনার। জেডএ মোর্শেদ ঢাকার একটি গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন আর নুরে আলম মীনা সবশেষ ৫ আগস্টের আগে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি ছিলেন। শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের যাতায়াত থাকার কারণে স্থানীয় সাতকানিয়া ও বাঁশখালী থানা ছিল মানিকের নিয়ন্ত্রণে। ৫ আগস্টের আগে বিভিন্ন সময় সাতকানিয়া ও বাঁশখালী থানায় তার বিরুদ্ধে তিনটি হত্যাসহ ১৮টি মামলা হয়। কিন্তু সবকটি মামলায় মানিককে বাদ দিয়ে চার্জশিট দেয় পুলিশ।

জলসাঘর-ইটভাটায় হামলা যে কারণে

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে মানিকের জলসাঘর খ্যাত বাগানবাড়ি ও ইটভাটা দুটিতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এওচিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যান জানান, মানিকের ইটভাটায় মাটির জোগান আসত মূলত সরকারি পাহাড় ও সাধারণ মানুষের ফসলি জমি থেকে। ভাটার পাশের বিএনপি-জামায়াতসহ কারো জমি বাদ পড়েনি মানিকের থাবা থেকে। ২০-২২ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী তার সাম্রাজ্য পাহারা দিত। অপকর্মের প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা, আকার-ইঙ্গিতে সমালোচনা করলেও তাকে ইটভাটায় ধরে এনে চালানো হতো নির্মম নির্যাতন। নির্যাতন শেষে অস্ত্রসহ বিভিন্ন মামলা দিয়ে তুলে দেওয়া হতো বাঁশখালী কিংবা সাতকানিয়া থানায়। মানিকের ইটভাটায় শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করা হচ্ছে-এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় ২০২১ সালে। পরবর্তীতে নির্যাতিত ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধেই একাধিক মামলা দায়ের করেন মানিক।

স্থানীয়রা জানান, জলসাঘরে মদ ও মেয়েদের নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ চলত প্রকাশ্যে। তাই মানিকের ভাটা আর বাংলোবাড়ির ওপর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ছিল আগে থেকেই। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর মানুষ সেখানে হামলা চালায়।

মানিক কোথায়

জুলাই বিপ্লবে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ দমনে সক্রিয় ছিলেন মানিক। বিশেষ করে নতুন ব্রিজ ও নিউ মার্কেট এলাকার সহিংসতায় তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বাঁশখালীর এক আত্মীয়র বাড়িতে অবস্থান নেন মানিক। ১২ থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে চট্টগ্রাম শহরের ষোলশহর এলাকার ফিনলে স্কয়ারের বাসায় অবস্থান নেন তিনি। আগস্টের শেষ সপ্তাহে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ঢাকা হয়ে দুবাই চলে যান তিনি।

সবশেষ জোড়া খুন

মানিকের ইটভাটা ও বাংলোবাড়িতে যখন নির্যাতিত মানুষেরা ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন, তখন হাজারো মানুষের ভিড়ে অংশ নিয়েছিলেন জামায়াতকর্মী আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনও। তখনই তাদের হত্যা করার পরিকল্পনা করেন তিনি। গত সোমবার রাতে কৌশলে বিচার করার কথা বলে নেজাম ও ছালেককে ডেকে আনেন মানিকের ভাই আক্কাস। নেজাম ও ছালেকের সিএনজি ছনখোলা এলাকায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে চারপাশের রাস্তায় গাছ ফেলে ব্যারিকেড দেয় মানিকের লোকজন। একপর্যায়ে মামুনের দোকানের সামনে থেকে নেজাম ও ছালেকের ওপর হামলা চালায় তারা। সাধারণ মানুষ জড়ো করতে মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে মব তৈরি করা হয় পরিকল্পিতভাবে।

মামুনের দোকানের পাশের এক পান-সিগারেটের দোকানের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ঘটনার দিন যখন নেজাম ও ছালেককে গণপিটুনি দেওয়া হচ্ছিল, তখন নুরু নামে স্থানীয় এক যুবকের মোবাইল ফোনে ভিডিও কলের মাধ্যমে মানিক ওই ঘটনা দেখেন এবং নির্দেশনা দেন।

চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনায় অনেকটা দায়সারা বক্তব্য দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম শানতু জানান, নিহত নেজাম ও ছালেকের গতিবিধিও ছিল সন্দেহজনক। ৫ আগস্টের পর তারা ওই এলাকায় মোট আটবার গেছে। এর মধ্যে সালিশের নামে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের স্ত্রীকে থাপ্পড়ও মেরেছে। সব মিলিয়ে নেজাম ও ছালেকের ওপরও স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ ছিল। ওই ঘটনাকে পুঁজি করে কেউ মব তৈরির সুযোগ নিয়েছে কি না, সব বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

সূত্র: আমার দেশ 

No comments:

Post a Comment

চিকিৎসকের যৌন নির্যাতনের শিকার ২৯৯ নারী-কিশোরী। (BDC CRIME NEWS24

BDC CRIME NEWS24 চিকিৎসকের যৌন নির্যাতনের শিকার ২৯৯ নারী-কিশোরী: প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০৫:৩৯  ফ্রান্সে সাবেক এক সার্জনের বিরুদ্ধে ২৯৯ রোগীক...