Friday, March 21, 2025

শহীদ বাসচালক মনোয়ার হোসেন চৌকিদার এর পিঠ দিয়ে বুলেট ঢুকে বুক ফেড়ে বেরিয়ে যায়। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

শহীদ বাসচালক মনোয়ার হোসেন চৌকিদার এর পিঠ দিয়ে বুলেট ঢুকে বুক ফেড়ে বেরিয়ে যায়:

প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৫, ১০: ১৮

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের এক দফা আন্দোলনে অংশ নিয়ে শহীদ হন বাসচালক মনোয়ার হোসেন চৌকিদার (৪৭)। গত বছরের ৫ আগস্ট দুপুরে হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে বিজয় উদযাপনে মেতে ওঠে গোটা দেশ। সেই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতেও শুরু হয় আনন্দ মিছিল। মনোয়ার সেই মিছিলে অংশ নেন। মিছিলটি বেলা সাড়ে ৩টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে আসার পর পুলিশ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীদের গোলাগুলির মাঝে পড়েন মনোয়ার। তখন থানার সামনে চলছিল গণহত্যা। জীবন বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে থাকলেও ফাঁকি দিতে পারেননি সন্ত্রাসীদের চোখ। যুবলীগের ক্যাডারদের ছোড়া একটি বুলেট তার পিঠ দিয়ে ঢুকে বুকের ডান পাঁজর ভেদ করে বের হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মনোয়ার।

মিছিলের শিক্ষার্থীরা তাকে যাত্রাবাড়ীর একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সেখানে মারা যান তিনি।

শহীদ মনোয়ারের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের শ্রীলংকর গ্রামে। স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৪০) ও তিন সন্তানকে নিয়ে ছিল মনোয়ারের পরিবার। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। স্বামীকে হারিয়ে শ্বাসকষ্টে ভোগা সুফিয়া তিন সন্তানকে নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। এখনো কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাননি তারা। সরকারি গেজেটে শহীদের তালিকায়ও রয়েছে মনোয়ার হোসেনের নাম। কিন্তু জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে বারবার যোগাযোগ করলেও মিলছে না কোনো সদুত্তর।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুফিয়া আমার দেশকে বলেন, ‘আমার স্বামী দেশের জন্য জীবন দিলেও গত ৬-৭ মাসে আমাদের কোনো খবর নেয়নি সরকার। এখন আমাদের দেখার মতো কেউ নেই। আমার স্বামীর স্বপ্ন ছিল ছেলেকে বিদেশ পাঠাবেন, বাড়িতে বিল্ডিং তুলবেন। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেছে আমার। আমার ছোট ছেলের বয়স মাত্র চার বছর। তাকে কীভাবে আমি মানুষ করব?’ চোখের পানি মুছতে মুছতে সুফিয়া আরো বলেন, ‘আমি একজন অসুস্থ মানুষ, ডাক্তার দেখাতে পারছি না। তিন-চার মাস ধরে বিছানায় পড়ে আছি। আমরা কী সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা পাব না?’

সুফিয়া বেগম বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে খবর দেখার জন্য সব সময় টিভির সামনে বসে থাকতেন তিনি। আন্দোলনে অংশ নিতে ঢাকা যেতে চাইতেন। ৩ আগস্ট আমাদের না জানিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ী গিয়ে আন্দোলনে অংশ নেন। ৫ আগস্ট বেলা ৩টার সময় আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, টিভি ছেড়ে দেখ শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়েছে। এরপর সেখানে বের হওয়া আনন্দ মিছিলে অংশ নিয়ে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে যাওয়ার পর পুলিশ আর যুবলীগের সন্ত্রাসীদের ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়েন তিনি। জীবন বাঁচানোর জন্য পালানোর চেষ্টা করেন। সে সময় ফোন দিয়ে আমাকে বলেন, দোয়া করো, আমি যেন এখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারি। এ কথা বলেই ফোন কেটে দেন। ১০ মিনিট পরে আমি তাকে ফোন দিলে আর ধরেননি। তার সঙ্গে ছিল এমন একজনকে ফোন দিয়ে জানতে পারি গুলি খেয়ে রাস্তায় পড়ে আছেন তিনি। শিক্ষার্থীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল নিয়ে গেলে রক্ত লাগবে বলে জানান চিকিৎসক। কিন্তু রক্ত দেওয়ার আগেই তিনি মারা যান। পরে লাশ গ্রামের বাড়ি এনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করি তাকে।

শহীদ মনোয়ারের বড় ছেলে ইমন হোসেন (২৪) বলেন, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাইনি আমরা। দুবার কাগজপত্র জমা দিলাম। শহীদের তালিকার সরকারি গেজেটে আব্বুর নাম থাকা সত্ত্বেও এ পর্যন্ত কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাইনি। সরকারের পক্ষ থেকেও আমাদের খোঁজ নেয়নি কেউ। আমার মায়ের মাসে ১৫ হাজার টাকার ওপরে ওষুধ লাগে। আব্বু মারা যাওয়ার পর থেকে মায়ের ওষুধ ঠিকমতো কিনতে পারছি না টাকার অভাবে।

সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে সুফিয়া বেগম বলেন, ‘সরকার যেন আমার সন্তানদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করে। অথবা কিছু টাকা দিয়ে ব্যবসা করার ব্যবস্থা করে দেয়, যাতে আমরা চলতে পারি। বাড়িতে ঘর না থাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতে হয় জানিয়ে তিনি একটি ঘর তুলে দেওয়ারও দাবি জানান। একই সঙ্গে তার স্বামীর হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিও জানান সুফিয়া।

সূত্র: আমার দেশ 

No comments:

Post a Comment

এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক: প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২৭ বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের অভ্যন্তরে ২০০৯ ...