BDC CRIME NEWS24
জহিরুলের হাতে-পাঁজরে গুলি করে পুলিশ:
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০: ০৯
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তখন এক দফার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। উত্তপ্ত সারা দেশ। ৪ আগস্ট সকাল থেকেই ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে এসেছে। বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর বংশালে আন্দোলনে অংশগ্রহণকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন জহিরুল ইসলাম সোহাগ।
জহিরুল কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার মহেশপুর গ্রামের মৃত শাহ আলম সরকারের ছেলে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সরেজমিনে কুমিল্লা দেবিদ্বার উপজেলা মহেশপুর গ্রামে গিয়ে জানা যায়, নিহত জহিরুল ইসলামের বাবা ২০০৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। বাবার মৃত্যুর পর তার মা মোর্শেদা বেগম দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে ছেলে জহিরকে বিয়ে করিয়ে সুখের সংসারে কাটাচ্ছিলেন।
৪ আগস্ট ওই সুখের সংসারে যেন অন্ধকার নেমে এলো, থমকে গেল নিহত জহিরুল ইসলামের তিন বছর বয়সি মেয়ে জাকিয়া সুলতানা ঝুমার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। ভিটেমাটি ছাড়া আর কোনো সম্পদ বা সম্পত্তি নেই যা দিয়ে নিশ্চিন্তে সংসার চলবে।
ঘরে একমাত্র সম্বল একটি সেলাই মেশিন। এই অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ মেনে নিয়ে চার চালা টিনশেড ঘরে শাশুড়ি ও কন্যাসন্তানকে নিয়ে বসবাস করছেন নিহত জহিরুল ইসলামের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস।
জান্নাতুল ফেরদৌস আমার দেশকে বলেন, আমার স্বামী জহিরুল ইসলাম সোহাগ (২৭) ঢাকার বংশাল এলাকায় একটি সোল্ড কোম্পানিতে চাকরি করতেন। গত ৪ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণকালে পুলিশের গুলিতে শহীদি মৃত্যুবরণ করেন।
সে দিন পুলিশ আমার স্বামীকে ডান হাতে ও তার ডান বুকের পাঁজরে খুব কাছ থেকে দুটি গুলি করে। মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ওই দিন আমার স্বামীর লাশ গ্রামে আনতে ব্যর্থ হই। পরে ৬ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল থেকে লাশ এলাকায় এনে ওই দিন সন্ধ্যায় দাফন করি। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই ও আমার মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য সরকারের আর্থিক সহযোগিতা চাই।
জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, একটি বাচ্চা রেখে স্বামী এভাবে চলে গেলেন, স্বামীর মৃত্যুতে সন্তান নিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলাম। পরিবারে উপার্জনের মানুষ না থাকায় আমি শাশুড়ি আর মেয়েকে নিয়ে অর্থ সংকট আর কষ্ট নিয়ে দিনপাত করছি। আজ আমার মাথায় ছায়া হয়ে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। এখন আমাদের সংসার চালানোর মতো আর কেউ রইল না।
তিনি আরো বলেন, আমার মেয়ে বারবার বাবা বাবা বলে এখনো কান্না করছে। মেয়ে তার বাবাকে নিয়ে অনেক কথাই আমাকে বলে, মেয়ে বলে আমার বাবা যদি আসে আমার বাবাকে আর যেতে দেব না। আমার সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় যখন আমার মেয়ে বলে আম্মু আমার বাবা কি আর আসবে না। তখন আমি কোনো উত্তর দিতে পারি না এবং ভাবি কোন আশা দিয়ে রাখব মেয়েকে। এখনো মেয়ে খেতে বসলে বলে আম্মু এই খাবারটা আমার বাবা খাবে ওইটা আমার বাবা খাবে। মেয়ে তার বাবার জন্য সব খাবার আলাদা করে রাখে।
নিহত জহিরুল ইসলামের মা মোর্শেদা বেগম আমার দেশকে বলেন, আমার একমাত্র ছেলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হলেও দেশ কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকারমুক্ত হয়েছে। ওরা আমার ছেলের লাশ গুম করতে চেয়েছিল কিন্তু দেশ ফ্যাসিস্টমুক্ত হওয়া আর গুম করতে পারেনি। ৪ আগস্ট নিহত হলেও আমরা ৬ আগস্ট আমার ছেলের লাশ বাড়ি এনে কবরস্থ করি। সরকার আমাকে অর্থনৈতিক সাহায্যের পাশাপাশি আমার ছেলের বউকে সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দিলে আমার ছেলের বউ ও নাতনির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতো।
দেবিদ্বার উপজেলা সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুফিয়া বেগম আমার দেশকে বলেন, ঢাকার বংশাল এলাকায় জহিরুল ইসলাম সোহাগকে পুলিশ গুলি করে হত্যার সংবাদ পেয়ে এলাকার লোকজন ৪ আগস্ট গ্রামে লাশ আনতে ব্যর্থ হয়। ৫ তারিখ ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় তার লাশ দেশে এনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
দেবিদ্বারের সাবেক এমপি মঞ্জুরুল আহসান মুন্সির নির্দেশে আমি সব সময় এই পরিবারের খোঁজখবর রাখছি সহযোগিতা করছি। নিহত সোহাগের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসকে একটি সরকারি চাকরি দিতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
সূত্র: আমার দেশ

No comments:
Post a Comment