BDC CRIME NEWS24
শহীদ সাদিকের পিঠ ভেদ করে নাভির পাশে আটকে যায় গুলি:
প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০: ৩৩
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হন হাফেজ মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সাদিক। স্বপ্ন ছিল ভবিষ্যতে মাওলানা হবেন। সে সঙ্গে মায়ের দুঃখ মোচন ও পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাবেন বলেও মাকে জানিয়েছেন। সেই লক্ষ্য নিয়ে মফস্বল থেকে রাজধানীতে আসেন পড়াশোনা করতে।
উচ্চশিক্ষা নেওয়ারও স্বপ্ন ছিল। কিন্তু এসব স্বপ্ন পূরণের অনেক আগেই মাত্র ২২ বছর বয়সে শহীদ হন তিনি। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার ক্ষমতার মোহে পুলিশের করা গুলিতে শহীদ হন হাফেজ সাদিক।
হাফেজ সাদিকের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে। সাগরদীঘি ইউনিয়নের পাহাড়ি পল্লি ফুলবাড়িয়ার করিমগঞ্জ ঘোনাপাড়া গ্রামের ছেলে সাদিক। বাবা কুয়েতপ্রবাসী লুৎফর রহমান লেবু। মায়ের নাম শাহনাজ বেগম। তিন ভাইয়ের মধ্যে সাদিক দ্বিতীয় সন্তান। সাদিকের বড় ভাই শামীম সিঙ্গাপুরপ্রবাসী। ছোট ভাই শাহেদ ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, করিমগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাদিকের লেখাপড়ার হাতেখড়ি। পরে বাবা-মায়ের ইচ্ছায় গ্রামের পার্শ্ববর্তী সখিপুরের আড়াইপাড়া মাদরাসায় হাফেজিতে ভর্তি হন। সেখানে পড়াশোনা করেন। সেখান থেকে ঢাকার মিরপুরের আরেক মাদরাসায় হাফেজি পড়া শেষ করেন সাদিক। পরে ঢাকার আব্দুল্লাহপুরের জামিয়া দ্বীনিয়া ইসলামিয়া মাদরাসায় হাদিস বিষয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করছিলেন সাদিক।
চাচা মো. মাসুদ আমার দেশকে জানান, গত বছরের ১৯ জুলাই ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজপথ তখন উত্তপ্ত। সেদিন জুমার নামাজ শেষ করে সহপাঠীদের সঙ্গে রাজপথের বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন সাদিক। এ সময় পুলিশ মিছিলে গুলিবর্ষণ করলে গুরুতর আহত হন সাদিক। তার পিঠে গুলি ভেদ করে নাভির পাশে এসে আটকে যায়। সেদিন অনেক চেষ্টা করেও তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন ২০ জুলাই জানা যায়, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি গুলিবিদ্ধ লাশের আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
মো. মাসুদ বলেন, লাশের শরীরের পোশাক ও চেহারা দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আশপাশের মাদরাসাগুলোতে খবর দেয়। খবর পেয়ে আব্দুল্লাহপুর উত্তরার জামিয়া দ্বীনিয়া ইসলামিয়া মাদরাসার সুপারিনটেনডেন্ট এসে সাদিকের লাশ শনাক্ত করেন।
সাদিকের চাচা মোশারফ, মৃণাল ও রাশেদ ওই হাসপাতাল থেকে সাদিকের লাশ ঘাটাইল ফুলবাড়িয়া করিমগঞ্জ নিয়ে আসেন। সেখানকার ঘোনাপাড়া গোরস্তানে দাফন করা হয় শহীদ সাদিককে।
মা শাহনাজ বেগম (৫০) আমার দেশকে বলেন, ‘সাদিক বড় হয়ে মাওলানা হয়ে মায়ের দুঃখ মোচন ও পরিবারের সচ্ছলতা আনতে চেয়েছিল। সে বলেছিল, তখন আর মাকে পরিশ্রম করতে হবে না। বাড়িতে টিনের ঘরের স্থলে পাঁচতলা ভবন বানিয়ে দেবে।’
শহীদ পরিবার হিসেবে সাহায্য-সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে শাহনাজ বেগম আরও বলেন, জুলাই ফাউন্ডেশন পাঁচ লাখ টাকা ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দুই লাখ টাকা আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছে তাদের পরিবারকে।
সূত্র: আমার দেশ
No comments:
Post a Comment