Tuesday, February 18, 2025

আ. লীগের সুবিধাভোগী আফতাব এখনো পরিচালক পদে বহাল। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

আ. লীগের সুবিধাভোগী আফতাব এখনো পরিচালক পদে বহাল:

প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০: ৪৬

জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু বড় পরিবর্তনেও পরিচালক পদে বহাল রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও পতিত শেখ হাসিনার অন্যতম ঘনিষ্ঠ আফতাব উল ইসলাম। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো তিন বছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক নিযুক্ত হন। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর ফের নিয়োগ পান এবং এখনো তিনি পরিচালক পদেই বহাল রয়েছেন। এ হিসাবে ৮ বছরের অধিক সময় ধরে আফতাব উল ইসলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ৫ আগস্ট ভারত পালিয়ে যান। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ১৩ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান ড. আহসান এইচ মনসুর। তার নিয়োগের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদেও পরিবর্তন আসে। কিন্তু এই পরিবর্তনেও আফতাব উল ইসলাম ঠিকই পর্ষদ সদস্য হিসেবে রয়ে গেছেন।

এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের মতামত চেয়ে ফোন করে এবং খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার সংস্কার কমিটির সদস্য আল আমিন আমার দেশকে বলেন, জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের যে আকাঙ্খা সে আকাঙ্খা ধারণ করে সবক্ষেত্রেই পরিবর্তন হওয়া উচিত। বাস্তবে আমরা তেমনটি দেখতে পাচ্ছি না। কিছু কিছু জায়গায় পরিবর্তন হলেও এখনও প্রশাসনের নানাস্তরে বিগত সরকারের সুবিধাভোগীরাই রয়ে গেছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় অতীতে অনেকে নিয়োগ পেয়েছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদেরকে বহাল রেখে বিপ্লবের যে স্পিরিট সেটি অর্জিত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠাই স্বাভাবিক।

আফতাব উল ইসলাম আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে ব্যবসায়ী নেতায় পরিচিত হলেও রাজনৈতিক নেতা হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৫-০৬ সালে তিনি কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা সদর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নও পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারিতে জরুরি অবস্থা জারি এবং পরে মইন-ফখরুদ্দিন সরকার সেই নির্বাচন স্থগিত করলে আফতাব উল ইসলাম নৌকা প্রতীক পেয়েও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে পারেননি। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও পাননি। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও ২০০৮ সালে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান তিনি। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ছিলেন।

আফতাব উল ইসলাম আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকা এবং ২০০৭ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি আমাদের কুমিল্লা জেলা (উত্তর) প্রতিনিধি এম হাসানকে নিশ্চিত করেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর উর রহমান তামিম।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গভর্নরসহ বাংলাদেশ ব্যাংকে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সংখ্যা ৯ জন। এর মধ্যে পদাধিকার বলে গভর্নর পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। গভর্নরের পাশাপাশি একজন ডেপুটি গভর্নরও পরিচালক মনোনীত হন। এ ছাড়া পর্ষদের সদস্য হিসেবে থাকেন উচ্চপদস্থ তিন সরকারি কর্মকর্তা। কর্মকর্তাদের মধ্যে সাধারণত অর্থ সচিব, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ সচিব ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব পদে যারা দায়িত্বে থাকেন পদাধিকারবলে তারাই বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাকি চারজন পরিচালককে বেসরকারি খাত থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

ব্যাংকিং, বাণিজ্য, ব্যবসায়, শিল্প ও কৃষি খাতে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্য থেকেই ওই চারজনকে নিয়োগ দেয় সরকার। আফতাব উল ইসলামকে ওই যোগ্যতায় বেসরকারি খাতের একজন হিসেবে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে তার নিয়োগের বিষয়টি কার্যকর হয় একই বছরের ১ জানুয়ারি থেকে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আরও দুই দফা তার মেয়াদ বাড়িয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালকের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে সিটিজেন ব্যাংক নামে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের অনুমোদন পায়। তার স্ত্রী তৌফিকা আফতাব তখন ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। এটিকে অনেকে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে বিবেচনা করছেন। যদিও পর্ষদ সভায় তিনি ব্যাংকটির অনুমোদনের সময় বৈঠক থেকে বেরিয়ে গেছেন বলে গণমাধ্যমকে তখন জানিয়েছিলেন।

এদিকে আফতাব উল ইসলাম আইওই (বাংলাদেশ) লিমিটেড নামে একটি আইটি কোম্পানির চেয়ারম্যান। সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে তার এই কোম্পানি হাসিনার আমলে মন্ত্রণালয়ের নানা কাজ বাগিয়ে নিয়েছে। কোম্পানির ওয়েবসাইটে গ্রাহক হিসেবে যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ রয়েছে সেগুলো হলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া মার্কিন দূতাবাস, ব্রিটিশ হাইকমিশন, কানাডিয়ান হাইকমিশন, ভারতীয় হাইকমিশন, সুইডেন দূতাবাস। পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রায় সব ক’টি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকও তাদের গ্রাহক হিসেবে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী সরকারের আমলে আফতাব উল ইসলামের আইটি কোম্পানি কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা পেয়েছে।

আফতাব উল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তার মোবাইল ফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠালে তাতেও সাড়া মেলেনি।

এদিকে শেখ হাসিনা পতনের পর বেসরকারি খাতের দুজন পরিচালককে ৩ বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এরা হলেন অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমির পরিচালক। গত বছরের ২৯ আগস্ট তিনি পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯ সেপ্টেম্বর পরিচালক পদে নিয়োগ পান বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা আকতার খাতুন।

সূত্র: আমার দেশ 

No comments:

Post a Comment

এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক: প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২৭ বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের অভ্যন্তরে ২০০৯ ...