Thursday, January 30, 2025

জালিয়াতির মহারানী তুহিন রসুল রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে বহাল। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

জালিয়াতির মহারানী তুহিন রসুল রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে বহাল:

প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬: ০০

বার্লিনে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত অবস্থায় জালিয়াতি এবং প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি করেছেন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের উপসচিব কাজী তুহিন রসুল। প্রকৃত বাড়ি ভাড়ার পরিমাণ গোপন করে ভুয়া চুক্তিপত্র বানিয়ে জাল স্বাক্ষর এবং সিল ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত ৪৬ মাসে ৭৯১৪৯ ইউরোর সমপরিমাণ ৯২ লাখ ৪৫ হাজার ৫৫৩ টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তা। শুধু আর্থিক দুর্নীতিই নয়, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, বেআইনিভাবে কূটনৈতিক পাসপোর্ট থেকে সাধারণ পাসপোর্টে পরিবর্তন, দূতাবাসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও নথি সংরক্ষণে অনিয়মসহ সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন আলোচিত এই কর্মকর্তা।

বার্লিনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মোশাররফ হোসেন ভূইয়ার ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট লেখা এক গোপন চিঠি এবং ২০২৩ সালে ৫ জুলাই দেওয়া দূতাবাসের কনস্যুলারবিষয়ক টাস্কফোর্সের অনুসন্ধানে বার্লিন দূতাবাসে কাউন্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কাজী তুহিন রসুলের এই দুর্নীতি এবং অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

উল্লেখ্য, কাজী তুহিন রসুল শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার প্রথম রায়দানকারী বিচারক কাজী গোলাম রসুলের মেয়ে। এই পরিচয়কে পুঁজি করেই কাজী তুহিন রসুল বার্লিনে বাংলাদেশ মিশনে ১০ বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বেপরোয়াভাবে দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন।

রাষ্ট্রদূতের লেখা চিঠির সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাজী তুহিন রসুল তার বসবাসকারী বাসার প্রোপার্টি ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিতে পরিবর্তন এবং বাসা ভাড়া প্রদানের জন্য নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য পরিবর্তনের জন্য ২০২৩ সালের ১২ জুলাই একটি নোট দেন। রাষ্ট্রদূত সেই নোট অনুমোদনের পর বাড়ি ভাড়া বাবদ ৩৪০০ ইউরো প্রদানের অনুরোধসহ দূতাবাসের অ্যাকাউন্ট রক্ষণাবেক্ষণকারী স্থানীয় দয়েশে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়। পরে ওই ব্যাংক থেকে দূতাবাসকে জানানো হয় যে, দূতাবাসের চিঠিতে প্রদত্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বেনিফিশিয়ারি কোম্পানির সঙ্গে প্রকৃত বেনিফিশিয়ারির তথ্য মিলছে না। কাজী তুহিন রসুলের দেওয়া নোট এবং চিঠি অনুযায়ী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বেনিফিশিয়ারির নাম হওয়ার কথা ZVK AEW কিন্তু তুহিন রসুলের দেওয়া নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট একটি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট এবং যার বেনিফিশিয়ারির নাম তানভীর মাহমুদ। আর এই তানভীর মাহমুদ হলেন কাজী তুহিন রসুলের স্বামী।

এ ব্যাপারে সন্দেহ তৈরি হওয়ায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রোপার্টি ম্যানেজমেন্ট SOKA BAU কোম্পানির প্রতিনিধি মারসেলের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা হয় এবং ব্যাংক নিশ্চিত হয় যে, কাজী তুহিন রসুল SOKA BAU কোম্পানির নামে যে চিঠি এবং ডকুমেন্টস ব্যাংকে জমা দিয়েছেন তা ভুয়া এবং জাল। ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে এই জালিয়াতির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করে। কাজী তুহিন রসুলের এ ধরনের জালিয়াতিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করে জানায়, এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনা তাদের ইতিহাসে নেই। SOKA BAU কোম্পানির পক্ষ থেকে দয়েশে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়, ২০২৩ সালের ১২ জুলাই কাজী তুহিন রসুল কর্তৃক প্রদত্ত চিঠি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও জাল। পরবর্তী সময়ে ওইসব জাল ডকুমেন্টস ব্যাংকের আর্থিক অপরাধ সংক্রান্ত বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

কাজী তুহিন রসুল বার্লিনে যে বাসায় থাকতেন তার মাসিক ভাড়া ৩ হাজার ৪০০ ইউরো নয়। প্রোপার্টি ম্যানেজমেন্ট SOKA BAU কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানায়, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে নির্ধারিত বাসা ভাড়ার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৯৫ ইউরো, সিকিউরিটি ডিপোজিট ছিল ৪ হাজার ১৭০ ইউরো। এখানে কাজী তুহিন রসুল ভুয়া এবং জাল চুক্তিপত্রের মাধ্যমে ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত বাসা ভাড়া বাবদ ৩ হাজার ৪০০ ইউরো এবং সিকিউরিটি ডিপোজিট বাবদ ৮ হাজার ৯৮৫ ইউরো অবৈধভাবে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে গ্রহণ করেন। সরকারি বিধান অনুযায়ী এটা গুরুতর অপরাধ। কাজী তুহিন রসুল ৪৬ মাসে শুধু বাড়ি ভাড়া বাবদ ৭৯ হাজার ১৪৯ ইউরো সমপরিমাণ ৯২ লাখ ৪৫ হাজার ৫৫৩ টাকা আত্মসাৎ করেন। দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তার জালিয়াতির পাশাপাশি বেআইনিভাবে SOKA BAU কোম্পানির সিল, লোগো ব্যবহার এবং জাল চুক্তিপত্র তৈরির কারণে বাসা ভাড়ার চুক্তিটি বাতিল করা হয়।

কাজী তুহিন রসুলের এই সীমাহীন জালিয়াতি ও আর্থিক অনিয়মের পাশাপাশি তার দাপ্তরিক কাজের ক্ষেত্রেও অনিয়মের যেন কোনো শেষ নেই। বার্লিনে বাংলাদেশ মিশনের কনস্যুলার বিভাগের টাস্কফোর্স-এর অনুসন্ধানে গুরুতর সব অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কনস্যুলার বিভাগে কর্মরত কাজী তুহিন রসুল নিয়মিত অফিস করতেন না বলে টাস্কফোর্সের অনুসন্ধানে প্রমাণ মিলেছে।

রাষ্ট্রদূত তথা মিশন প্রধান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া মিশনের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ৩৪টি কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্ট সাধারণ পাসপোর্টে পরিবর্তন করে হস্তান্তর করেছেন কাজী তুহিন রসুল। এ ব্যাপারে কোনো নথি বা অনুমোদনের কোনো ডকুমেন্টস খুঁজে পাওয়া যায়নি। এটা নিয়মের গুরুতর লঙ্ঘন।

সঠিক দালিলিক প্রমাণ বা রেজিস্টার ছাড়াই কনসুলারবিষয়ক আয় অধীনস্থ কর্মচারীর ব্যক্তি পর্যায়ে ও ব্যাংকে জমা রাখতেন কাজী তুহিন রসুল। এই বিষয়টি জবাবদিহিতার আওতায় আনা জরুরি বলে মতামত দিয়েছে টাস্কফোর্স। নিয়ম-বহির্ভূতভাবে ই-পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে যথাযথ ডকুমেন্টস যাচাই-বাছাই ছাড়াই আবেদনপত্র গ্রহণ, অনুমোদন এবং পাসপোর্ট সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া এসব আবেদনকারীদের মূল্যবান রেকর্ড ও ডকুমেন্টস সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। জার্মানির বাইরের দেশে বসবাসকারী বহু বাংলাদেশির কয়েক শত পাসপোর্টের আবেদন অবৈধ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে বলে টাস্কফোর্সের তদন্তে জানা গেছে।

এছাড়া দূতাবাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে কনসুলার সংক্রান্ত তথ্যাদি হালনাগাদ না করার কারণে সেবা প্রত্যাশীদের দুর্ভোগ বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছে টাস্কফোর্স।

কাজী তুহিন রসুলের এই জালিয়াতি এবং প্রতারণার মাধ্যমে আর্থিক দুর্নীত এবং দাপ্তরিক নানা অনিয়মের জন্য কেন বিধি মোতাবেক তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রাষ্ট্রদূতের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়ার পাশাপাশি গুরুতর এই অনিয়মের বিষয়টি তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনকে অবহিত করা হয়।

কাজী তুহিন রসুলের এই দুর্নীতির বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ২০২৩ সালের ২৮ আগস্ট জারি করা এক আদেশে তাকে বার্লিনে বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে ঢাকায় প্রত্যাহার করা হয়। তবে ঢাকায় ফেরার পর এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে বরং রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন করা হয়।

পররাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কাজী তুহিন রসুল তার বাবার পরিচয়কে ব্যবহার করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে পদস্থ আমলাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত ছিল তার অবাধ যোগাযোগ। আর এ জন্যই তাকে গুরুতর সব অনিয়মের পরও কোনো ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি। বরং রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন হয়েছে তার। রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের আপন বিভাগে উপসচিব হিসেবে কর্মরত এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা বিতাড়িত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবে ১০ কাঠার সরকারি প্লট পর্যন্ত বাগিয়ে নিয়েছেন। তার এই প্লট পাওয়া নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।

সূত্র: আমার দেশ 

No comments:

Post a Comment

এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক: প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২৭ বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের অভ্যন্তরে ২০০৯ ...