Thursday, January 16, 2025

সম্রাটের খানসামা ও শেখ হাসিনার জাহাঙ্গীর। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

সম্রাটের খানসামা ও শেখ হাসিনার জাহাঙ্গীর:

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫

মুঘল সম্রাটদের মধ্যে আওরঙ্গজেব ছিলেন ষষ্ঠ। শাহজাহানপুত্র আবুল মুজাফফর মুহি উদ-দিন মুহাম্মাদ আওরঙ্গজেব একটানা ৪৯ বছর রাজত্ব করেছেন। যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী আওরঙ্গজেব প্রায় গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের শাসক ছিলেন। পরম পরাক্রমশালী সম্রাট ইঙ্গ-মুঘল যুদ্ধে ইংরেজদের পরাজিত করেছিলেন।

তিনি কোরআনে হাফেজ ছিলেন এবং সম্রাট হওয়া সত্ত্বেও অত্যন্ত সাধারণভাবে জীবনযাপন করতেন। তিনি টুপি এবং নিজের হাতে লেখা কোরআন বিক্রি করতেন। রাজ্যের সম্পদ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন না। তাঁর মৃত্যুর পর ভারতে মধ্যযুগীয় শাসন শেষ হয় এবং ইউরোপীয় আক্রমণ শুরু হয়।

সম্রাট আওরঙ্গজেব ছিলেন অত্যন্ত নিয়মনিষ্ঠ মানুষ। সব কাজেই তিনি নিজস্ব নিয়ম অনুসরণ করতেন। তিনি বরাবরই পশ্চিমমুখী হয়ে অজু করতেন। একদিন কী কারণে যেন একটু আনমনা হয়ে দক্ষিণমুখী হয়ে অজু করতে বসেন।

বিষয়টি মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করল তাঁর বিশ্বস্ত খানসামা। সে সব সময়ই সম্রাটের আশপাশে থাকত এবং অজু করার পানি এগিয়ে দিত। সে কারণেই সম্রাটের সব নিয়মকানুন তার জানা। কখন সম্রাটের কী প্রয়োজন, সেটাও তার জানা ছিল। অজু করার জন্য সম্রাট মাত্র হাতে পানি নিয়েছেন, এমন সময় খানসামা বলল, ‘গোস্তাকি মার্জনা করবেন জাহাঁপনা।

অনুমতি দিলে একটা কথা বলতে চাই। ’ বিশ্বস্ত ও দীর্ঘদিনের পুরনো রাজদরবারের খানসামা একটা কথা বলবে এবং তার জন্য সে অনুমতি চাইছে- বিষয়টি সম্রাট খুব গুরুত্বসহকারে নিলেন। তিনি অজু বন্ধ করে অতি আগ্রহ নিয়ে চাকরের দিকে তাকালেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা?’ উত্তরে মাথা ঝুঁকে খানসামা বলল, ‘আজ্ঞে হ্যাঁ’। সম্রাট অনুমতি দিলেন। তখন খানসামা বলল, ‘সম্রাটের কি দাক্ষিণাত্য জয় করার অভিলাষ হয়েছে?’ বিশ্বস্ত খানসামার প্রশ্ন শুনে সম্রাট একটু বিস্মিত হলেন। তিনি অনেকটা বিচলিতও হলেন। নিজেকে সংযত করে খুব মোলায়েম কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমার দাক্ষিণাত্য জয় করার অভিলাষ হয়েছে, সেটা তুমি কীভাবে বুঝলে?’ খানসামা কাঁচুমাচু হয়ে বলল, ‘হুজুর আমি তো অনেক দিন আপনার কৃপায় আপনার সঙ্গে আছি। সুতরাং আমি বুঝতে পারি জাহাঁপনা কখন কী ভাবেন। অন্যদিন আপনি পশ্চিম দিকে মুখ করে অজু করেন। আজ আপনি দক্ষিণ দিকে মুখ করে অজু করতে বসেছেন। সে কারণেই আমার মনে হলো, জাহাঁপনার হয়তো দাক্ষিণাত্য বিজয়ের মনস্কামনা হয়েছে। ’

খানসামার কথা শুনে কতক্ষণ নির্বাক তাকিয়ে থাকলেন সম্রাট। কিছুক্ষণ পর বললেন, ‘সম্রাট কী ভাবছেন সেটা যখন খানসামা বুঝতে পারে, তখন এটা বুঝতে আমার বাকি নেই, মুঘল সাম্রাজ্যের পতন অবশ্যম্ভাবী। ’ তারপর তিনি আবার অজুতে মনোযোগী হলেন। এরপর তো সবই ইতিহাস। সত্যি সত্যি তাঁর মৃত্যুর পরই ভারতের মধ্যযুগীয় শাসন শেষ হয় এবং ইউরোপীয় আক্রমণ শুরু হয়। সম্রাট আওরঙ্গজেব দূরদর্শী ছিলেন বলেই সেদিন এটা বুঝতে পেরেছিলেন।

সম্রাটের খানসামা ও শেখ হাসিনার জাহাঙ্গীরগত বছরের ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল সে, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। ’ সেদিন তিনি তাঁর পিয়নের সেই (কীর্তি!) নামটি বলেননি। তবে যারা বোঝার বুঝেছিলেন। সেই পিয়নটির নাম জাহাঙ্গীর। শেখ হাসিনা যখন বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন, তখন থেকেই এই জাহাঙ্গীর তাঁর বিশ্বস্ত চাকরদের একজন ছিল। এই জাহাঙ্গীর সব সময় তাঁর নেত্রীর পানির পাত্রটি বহন করত। নেত্রী যেন নিরাপদ পানি পান করেন, সে জন্য জাহাঙ্গীর সব সময় পানির পাত্রটি একটি ব্যাগে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে থাকত। সেই থেকে তার নাম হয়ে গিয়েছিল পানি জাহাঙ্গীর। পানি জাহাঙ্গীরকে নিয়ে সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই স্বগতোক্তিতে সারা দেশের মানুষের মধ্যে বিস্ময়ের জন্ম নেয়। দেশবাসী তখন দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে নেন। তাহলে এত দিন দেশবাসী যে লুটপাটের কথা নানাভাবে শুনেছে, সেটাই সত্য। সেই সঙ্গে দেশবাসীর মনে একটি প্রশ্নই জাগে, চাকর যদি ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়, তাহলে মনিব কত টাকার মালিক? দেশবাসীর অনেকেই মনিবের টাকার হিসাব মেলাতে মাথা আউলে ফেলেন। অনেকে আন্দাজ করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন। যা হোক, দেশবাসী যা বোঝার বুঝেছিল। সেদিন দেশবাসী অনেক কিছুই বুঝেছিল; কিন্তু শেখ হাসিনা বুঝতে পারেননি। চাকরের অনুমান দেখে সম্রাট আওরঙ্গজেব বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর সাম্রাজ্যের পতন হবে। কিন্তু চাকরের অধঃপতন, নৈতিক স্খলন হাতেনাতে ধরা পড়ার পরও শেখ হাসিনা বুঝতে পারলেন না, তাঁর দ্রুত পতন কেউ ঠেকাতে পারবে না। মূলত তাঁর পতনের কফিনে শেষ পেরেকটি তিনি নিজেই মেরেছিলেন। তাঁর পতনের আগাম বার্তা দেশবাসীর বুঝতে অসুবিধা হয়নি। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি। সেদিন তিনি বরং দম্ভোক্তি করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা পালায় না। ’ শেষ পর্যন্ত যা হলো তা দেখল বিশ্ববাসী।

বর্তমানে আমরা আছি অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থাৎ মাঝামাঝি সরকারের অধীনে। মাঝামাঝি মানে হলো, দুটি রাজনৈতিক সরকারের মাঝে একটি অরাজনৈতিক সরকার। একটি রাজনৈতিক সরকার ভোটের নাটক করে দেশবাসীকে সাময়িক বোকা বানিয়ে টানা ১৫ বছরের বেশি ক্ষমতায় ছিল। কৃতকর্মের কারণেই পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে তারা। এরপর দেশবাসী ও ছাত্র-জনতার নিরঙ্কুশ সমর্থনে গঠিত হয় বর্তমান মাঝামাঝি বা অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকার এখন পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে। ক্লিন ইমেজের এই সরকার দায়িত্ব নিয়ে অতীত সরকারের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দুর্নীতির হিসাবের খাতা খুলেছে। ওই খাতায় এখন এক এক করে সব দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, দখলদার, অত্যাচারী, আয়নাঘরের কারিগর, দলদাসদের নাম লেখা হচ্ছে। গঠিত হয়েছে নতুন দুর্নীতি দমন কমিশন। শুরু হয়েছে ডাইরেক্ট অ্যাকশন। এটা দেশের জন্য একটি অতীব শুভবার্তা। যদি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ লুটেরা দলদাসদের বিচার হয়, তাহলে তা দেশের জন্য মঙ্গল।

এখন পর্যন্ত গত সাড়ে পাঁচ মাসে এই সরকার অনেক দাবিদাওয়া মোকাবিলা করেছে। এত দিন যারা নিজেদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারেনি, তারা সবাই একযোগে দাবি নিয়ে মাঠে নেমে গেল। সরকার এক এক করে অনেকের দাবিই মেনে নিয়েছে এবং অনেককে আশ্বাস দিয়েছে। যারা নানা দাবি নিয়ে মাঠে, তাদের দাবিগুলো কোনো কোনোটি সমষ্টিগত, কোনো কোনোটি ব্যক্তিগত। সফলতা যে এই সরকারের নেই, তা বলা যাবে না। কিন্তু বারবার কেন জানি শঙ্কা জাগছে। নানা প্রশ্ন উঠছে। নানা মহল থেকেও কথাবার্তা শুরু হয়ে গেছে। যে আস্থা ও বিশ্বাসে ভরপুর ছিল এই সরকার, সেই আস্থা ও বিশ্বাসের পাত্র পূর্ণ করে কি তারা তাদের কঠিন যাত্রার শুভ সমাপ্তি টানতে পারবে? দেশের অনেক সেক্টরের মধ্যে ব্যবসায়ী সেক্টর অন্যতম। দেশের অর্থনীতি গতিশীল করতে সরকারের প্রতি ব্যবসায়ীদের পূর্ণ আস্থার বিকল্প নেই। কারণ সরকারের সহযোগিতা ছাড়া দেশের কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারে না। তেমনি ব্যবসায়ীদের পূর্ণ সহযোগিতা ছাড়া সরকারের পক্ষেও দেশ পরিচালনা দুরূহ। সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেছে, তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তারা আর ব্যবসা করতে চায় না। তারা তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে নিরাপদে চলে যেতে চায়। এটা দেশের জন্য শুভসংকেত নয়। এই অশুভসংকেত যত তাড়াতাড়ি সরকার বুঝতে পারবে, ততই দেশ ও সরকারের জন্য মঙ্গল।

সরকারের বয়স এখন সাড়ে পাঁচ মাস হলেও যেসব কাজে ইতোমধ্যে হাত দিয়েছে তা রীতিমতো মহা কর্মযজ্ঞ। এই কর্মযজ্ঞের সঙ্গে জুলাই বিপ্লবের সাহসী বিপ্লবীদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত সক্রিয়। রাজনৈতিক দলগুলোও অনেক দিন পর শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার মুক্ত পরিবেশ পেয়েছে। সবাই যার যার সুবিধামতো মাঠ গোছাচ্ছে। উদ্দেশ্য হলো মাঝামাঝি সরকার যেন পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের কাছে রিলে রেসের জিয়নকাঠিটি তুলে দিয়ে সগৌরবে বিদায় নিতে পারে।

এখন সময়টা এলোমেলো বাতাসের মতো। দেশ যখন একটি বৈষম্যমুক্ত পরিবেশে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য কসরত করছে, ঠিক সে সময়ে কিছু সুবিধাবাদী চাকরের দৌরাত্ম্য টের পাওয়া যাচ্ছে। এই চাকররা সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়ও ছিল। পতিত শেখ হাসিনার আমলেও ছিল। এসব চাকরের ব্যাপারে সরকারকে ও বিপ্লবীদের সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে সামনের দিনগুলোতে বিপদ বাড়বে।

ছাত্র-জনতার এই সরকার দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, দখলবাজ ও দেশবিরোধী অপশক্তিকে কঠোরহস্তে দমন করতে যে খাতা খুলেছে, সেই খাতায় কোনো একদিন যদি এসব চাকরের কারণে মনিবদের নাম ওঠে, তা হলে খুবই বিপদ হবে। সে কারণে শেখ হাসিনার মতো বোকা-দলকানা, গোঁয়ার গোবিন্দ হয়ে থাকলে হবে না। চাকরদের কারণে যেন ভবিষ্যতে জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে না হয়, সে জন্য আওরঙ্গজেবের মতো দূরদর্শী হতে হবে। মনে রাখতে হবে, যে খাতা এবার খোলা হয়েছে, সেই খাতা ইচ্ছে করলেই কেউ আর বন্ধ করতে পারবে না। সুতরাং সাধু সাবধান।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন 

No comments:

Post a Comment

গণজাগরণ মঞ্চের সেই লাকি আক্তারকে গ্রেফতার দাবিতে মধ্যরাতে উত্তাল শাহবাগ। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 গণজাগরণ মঞ্চের সেই লাকি আক্তারকে গ্রেফতার দাবিতে মধ্যরাতে উত্তাল শাহবাগ: প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ০২:৩৩ এএম স্বৈরাচার হাসিনার...