Saturday, January 25, 2025

মাওলানা আরিফুল ইসলাম এর প্লায়ার্স দিয়ে নখ তুলে ফেলেছে, দাড়ি ছিঁড়েছে। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

মাওলানা আরিফুল ইসলাম এর প্লায়ার্স দিয়ে নখ তুলে ফেলেছে, দাড়ি ছিঁড়েছে:

প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯: ০২

পুরানা পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে একদিন দুপুরে আকস্মিক অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের নেতা মাওলানা আরিফুল ইসলামসহ পাঁচজনকে। পরে অফিসারের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা বলে র‌্যাব-৩ কার্যালয়ে নিয়ে চলে দফায় দফায় নির্যাতন।

বিবস্ত্র করে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয় তাদের। জ্ঞান হারালেও থামেনি নির্যাতন। নামাজ পড়তেও বাধা দেওয়া হয় তাদের। এমনকি ‘আল্লাহ’ শব্দ নিয়ে ব্যঙ্গ করেন র‌্যাব অফিসাররা। আইসিটি আইনের বানোয়াট একটি মামলায় রিমান্ডে নির্যাতন ছাড়াও ২৬ দিন জেলের কষ্ট সহ্য করতে হয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তরের এই সেক্রেটারিকে।

মাওলানা আরিফুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার শুধু নির্দিষ্ট কোনো ওলামায়ে কেরাম বা কোনো দলের নেতাদের ওপর নির্যাতন চালায়নি। ইসলামপন্থি বলতে যাদের বোঝায়, সেই ওলামায়ে কেরাম বা ইসলামী দলের নেতাকর্মী সবার ওপরেই তারা নির্যাতন চালিয়েছে।

তারই ধারাবাহিকতায় নির্যাতনের শিকার হন তিনি। একইসঙ্গে আরও পাঁচজনকে নির্যাতন করা হয়। তারা হলেন—আব্দুল রহমান গিলমান, এমদাদুল্লাহ ফাহাদ, রহমতুল্লাহ বিন হাবিব, শেখ মুহাম্মাদ মারুফ ও সিরাজুল ইসলাম।

২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সাংগঠনিক কাজে পুরানা পল্টনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন মাওলানা আরিফুল ইসলাম। হঠাৎ সেখানে সাদা ও র‌্যাবের পোশাকে বেশ কয়েকজন সদস্য প্রবেশ করেন। তারা মাওলানা আরিফের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে কিছু কথা বলতে চাইলেন।

তারা সংগঠনটির ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের তথ্য-সংবলিত কিছু প্রিন্ট করা কাগজ দেখিয়ে জানতে চাইলেন, এগুলো তাদের কি না। তিনি তাদের হ্যাঁ-সূচক জবাব দিয়ে দেখলেন, কাগজে তাদের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য-বিবৃতি এবং সরকারের গঠনমূলক সমালোচনার বিষয়গুলো আছে। এর সঙ্গে আরও কিছু কাগজ দেওয়া ছিল, যেগুলো তাদের নয়।

এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে র‌্যাব সদস্যরা তাদের আটক করে র‌্যাব-৩ কার্যালয়ে নিয়ে যান। এ সময় তাদের অফিসের কম্পিউটার এবং সবার মোবাইল-আইপ্যাড জব্দ করা হয়।

মাওলানা আরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের আটক করে নিচে নেওয়ার পর দেখলাম, অফিসের নিচের রাস্তা থেকে শুরু করে অফিস বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন তলায় র‌্যাব সদস্যরা যেন রণসাজে সজ্জিত। আমাদের সাদা একটি মাইক্রোবাসে নিয়ে টিকাটুলিতে র‌্যাব-৩ কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে সবার তথ্য সংগ্রহ করেন র‌্যাব সদস্যরা। এরই মধ্যে আছরের ওয়াক্ত হলে নামাজ পড়তে চাই। নামাজের সুযোগ দিলে অজু করার জন্য একটি রুমে গিয়ে দেখি ভয়ংকর অবস্থা। সেখানে ছিল ইলেকট্রিক চেয়ার ও বহু প্রকারের লাঠি।

তিনি বলেন, অজু করে নামাজের প্রস্তুতি নিতেই বাইরে থেকে একজন আওয়াজ দিয়ে বললেন, হুজুরেরা কোথায়? ‘নামাজে গেছেন’ বলায় তিনি র‌্যাবের এক সদস্যের ওপর রেগে চরম গালি দিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এদের চোখ খোলা কেন? নামাজের জন্য চোখ খোলা হয়েছে বলে জানালে তিনি বললেন, কীসের নামাজ? নামাজ পড়া যাবে না বলেই তাদের চোখ বেঁধে ফেললেন।

জামা-টুপিও খুলে ফেলা হয়। তাদের ছোট একটি রুমে নিয়ে যায়। মাওলানা আরিফ বলেন, আয়নাঘরের কথা শুনেছি, আমি নিজেও সেই আয়নাঘরে ছিলাম। দুই ফুটের মতো চওড়া রুমটিতে শুলে পা ধরে না, দাঁড়ালেও মাথা বেধে যায়। সেই রুমে চোখবাঁধা অবস্থায় পশ্চিম দিক অনুমান করে বসেই নামাজ পড়েন তারা।

আরিফুল ইসলাম বলেন, নামাজের পর সেই অফিসারের রুমে তাদের ডেকে পাঠানো হয়। একজন করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় পাশের রুমে নির্যাতনের চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। একপর্যায়ে আমাকে সেই রুমে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের সোজা কথা—‘গেঞ্জি খোল।’ গেঞ্জি খোলার পর পায়জামাও খুলতে বলেন। তখন গালাগালি করে সেটিও খুলতে বাধ্য করেন।

এসময় তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। দেয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়ান তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে মোটা লাঠি দিয়ে পেঠানো শুরু করে র‌্যাব। আরিফুল বলেন, আমাকে এমনভাবে পেটায় তা বলার ভাষা নেই। যতক্ষণ মনে চেয়েছে ততক্ষণ পিটিয়েছে। আমাদের সাথী ভাইদের মধ্যে এমদাদুল্লাহ ফাহাদ ও শেখ মারুফের হাতের আঙুলের নখগুলো প্লায়ার্স দিয়ে উঠিয়েছে। একপর্যায়ে তাদের দাড়িগুলো টেনে টেনে উঠিয়েছে।

সব নির্যাতন শেষ করে তার কাছে তারা জানতে চাইলেন, এর সঙ্গে কারা কারা জড়িত। ফেসবুক কে চালায়, প্রচার সম্পাদক কে প্রভৃতি। এর আগে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা না করেই বেদম পেটানো হয় তাদের। পেটানো শেষে তাদের হাতে তারা জামা-কাপড় দিয়ে দেন। তাদের প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধও দেন।

একজনের এই ছবি তোলার কাজ শেষ হওয়ার আগেই আবার আগের অফিসারের রুমে ডাক পড়ে। সেখানে সিভিলে ও পোশাকে আরও ১০-১২ জন ছিলেন। তাদের একজনের হাতে ডিজিটাল ক্যামেরা ছিল। এ সময় মাওলানা আরিফের চোখ খোলা দেখে আবার রেগে যান সেই অফিসার। পরে তাদের সেই টর্চার রুমে নিতে বলেন। এ সময় ‘আজরাইল’ নামে একজনকে ডাকা হয় সেখানে। সম্ভবত তিনি র‌্যাব ৩-এর নির্যাতক।

মাওলানা আরিফুল বলেন, আমাকে নিয়ে সেখানে কাপড় দিয়ে হাতদুটো শক্ত করে বাঁধা হয়। গেঞ্জি খুলে ফেলা হয়। সুইচ টেপার সঙ্গে সঙ্গে ছাদ থেকে নেমে আসে একটি অটোমেটিক রশি। সেটা হাতের সঙ্গে বাঁধা হয়। মেশিনে চাপ দিতেই তিনি ওপরের দিকে উঠে যান। তাকে বিবস্ত্র করা হয়। সাধ্যমতো চেষ্টায় লজ্জাস্থান ঢাকতে তিনি ডান পা বাঁ পায়ের ওপর উঠিয়ে দিলেন।

এই সুযোগে তার পেছনে ও সামনে থেকে ব্যাপকভাবে পেটানো হয়। অনেকটা জ্ঞান হারানোর কারণে কতক্ষণ পেটানো হয়েছে, তা তিনি স্মরণে রাখতে পারেননি। তিনি বলেন, যত নির্যাতনই হোক সহ্য করার মানসিক শক্তি আমার ছিল। আমি শুধু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার কাবির শব্দ বলতে থাকি। এই আল্লাহু আকবার শব্দ নিয়ে তারা ব্যঙ্গ করে সর্বশক্তি দিয়ে পেটান। এরপর পায়ের তলায় পেটানোর নির্দেশ দেন অফিসার। তাদের মনমতো নির্যাতন শেষ করেন। একইসঙ্গে ছবি তোলার ফ্লাশ লাইট পড়ে সেখানে। ভিডিও করতে বলা হয় তখন।

আরিফুল ইসলাম বলেন, আমাকে যেসব প্রশ্ন করেছে, তার স্বাভাবিক উত্তর দিয়েছি। আমার ওপর নির্যাতনের শব্দ পাশের রুমে থাকা অন্য সাথিরাও শুনেছেন। একপর্যায়ে আমাকে ছেড়ে দিলে দাঁড়াতে পারছিলাম না। তাদের দুজনের কাঁধে ভর করে রুমে আসি। এসময় হাতে কাপড় দেওয়া হয়। সেগুলো পরার পর রুমের বাইরে বের হই। একইভাবে বাকি পাঁচজনকেও বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে। অনেকের জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। নির্যাতন শেষে সেই ছোট রুমে দুজন করে আমাদের রাখা হয়।

এদিকে র‌্যাব অফিসে আনার পর থেকে আর কোনো খবর দলীয় কার্যালয়ে দেওয়া হয়নি। খবর নিতে এলেও কোনো তথ্য না দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। সারা রাত সেই রুমে রেখে পরদিন মিডিয়ার সামনে হাজির করা হয়। তখন তাদের জঙ্গি হিসেবে এবং দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে তারা জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ দেওয়া হয়।

ওই র‌্যাব সদস্য কারও সঙ্গে কথা বলে পাশে পুলিশ লাইনস হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানকার ডাক্তার ভীষণভাবে রেগে গিয়ে র‌্যাব অফিসারকে বললেন, এভাবে তো কোনো মানুষ কাউকে মারতে পারে না।

মাওলানা আরিফ জানান, ২৬ দিন জেলে থাকা অবস্থায় অনেকবার কোর্টে তোলা হয় তাদের। এর মধ্যে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তবে পল্টনে না নিয়ে কারাগার থেকে সোজা এয়ারপোর্টের পেছনে র‌্যাব ১-এ নিয়ে গেলেন। প্রিজনভ্যানের পাহারায় থাকা পুলিশকে জিজ্ঞাসা করলে র‌্যাব ১-এর কথা বলা হয়। এতে আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়।

একটি ফাঁকা জায়গায় গাড়ি থামানো হয়। সেখানে র‌্যাবের একটি গাড়ি আসে। সবাইকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে পেছনে হ্যান্ডকাফ দিয়ে মাথা নিচু করে বসতে বলা হয়। মাথা ওঠালে গুলি করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। পরে একটি ভবনে ছোট রুমে নেওয়া হয়। একজন করে ডেকে ব্যক্তিগত তথ্য নেওয়া হয়। সেখানে চোখ সবসময় বাঁধা থাকত। খাওয়ার সময় হাত এবং বাথরুমে যাওয়ার সময় চোখ-হাত খোলা হতো।

সেই রাত সেখানে কাটিয়ে পরদিন আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সব মিলিয়ে পাঁচ ঘণ্টার মতো জিজ্ঞাসাবাদ করেন তারা। পল্টন থানার এসআই ও অন্যরা সাদা পোশাকে ছিলেন। সেখানেও একই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে দুই দিনের মাথায় পল্টন থানায় নেওয়া হয়। সেখান থেকে প্রথমে কেন্দ্রীয় কারাগারে, পরে কাশিমপুরে নেওয়া হয়। অন্তত ১০ বার জামিন চেষ্টার পর ২৩ অক্টোবর জামিনে মুক্তি পান তিনি।

সূত্র: আমার দেশ 

No comments:

Post a Comment

এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক: প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২৭ বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের অভ্যন্তরে ২০০৯ ...