BDC CRIME NEWS24
প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ০০:০০
দুর্নীতির টাকায় তিন জেলায় হেনরীর ৫০ বিঘা জমি!
► ১৯টি ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার অবরুদ্ধ, ১৬টি গাড়ি জব্দ।
দুর্নীতি ও ঘুষের অভিযোগে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও পটুয়াখালী জেলায় তাঁর নামে ৫০ বিঘা জমি পাওয়া গেছে। এসব সম্পদ তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। তদন্তের স্বার্থে এসব জমি জব্দ এবং তাঁর ১৯টি ব্যাংক হিসাব ও কম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া তাঁর মালিকানাধীন ১৬টি গাড়ি জব্দের আদেশও দেওয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
জব্দ করা স্থাবর সম্পদের মধ্যে সিরাজগঞ্জে সাততলা ভবনসহ জমি রয়েছে। যার প্রদর্শিত মূল্য দুই কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সিরাজগঞ্জে জমিসহ ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট, মিরপুরের রজনীগন্ধা কমপ্লেক্সে ৫০ লাখ টাকা মূল্যের দুটি ফ্ল্যাট, সিরাজগঞ্জে ৮২ লাখ টাকা মূল্যের .৬৩৭ ডিসি জমিসহ ভবন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ৪৪ লাখ টাকা মূল্যের ৯ কাঠা জমি, সিরাজগঞ্জে চার হাজার বর্গফুট বা ৯৮ শতাংশ জমির ওপর দোতলা ভবন, যার প্রদর্শিত মূল্য এক কোটি ৩০ লাখ টাকা। সিরাজগঞ্জের ভূতেরদিয়ায় দুই কোটি ২২ লাখ টাকা মূল্যের সাত শতাংশ জমি, সিরাজগঞ্জের রতনকান্দিতে ১৪৫ শতাংশ জমি, যার প্রদর্শিত মূল্য ২৪ লাখ টাকা। পটুয়াখালীতে এক কোটি ১০ লাখ টাকা মূল্যের ২৫০ শতাংশ জমি, সিরাজগঞ্জের পূর্ব মোহনপুরে ১৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা মূল্যের ৬১ শতাংশ জমি, সিরাজগঞ্জের বাহুকায় ছয় লাখ ৯২ হাজার টাকা মূল্যের ৪৩ শতাংশ জমি। সিরাজগঞ্জের নান্দিনায় ২৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকা মূল্যের ১৩২ শতাংশ জমি, সিরাজগঞ্জের ভারাঙ্গায় এক কোটি ১১ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের ৩৮৮ শতাংশ জমি, সিরাজগঞ্জের শামগোপে ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ২১৮ শতাংশ জমি।
সিরাজগঞ্জের শিলন্দায় তিন কোটি ৩২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা মূল্যের ২১০ শতাংশ জমি, সিরাজগঞ্জের বনবাড়িয়ায় ৭৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের ৩৪ শতাংশ জমি। সিরাজগঞ্জের সদানন্দপুরে ৭৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকা মূল্যের ৬০ শতাংশ জমি। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ৪৪ লাখ টাকা মূল্যের ১০০ শতাংশ জমি রয়েছে।
এ ছাড়া চারটি কম্পানিতে বিনিয়োগ করা এক কোটি ৩৪ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে হেনরী অপ্টফাইবার লিমিটেডে ৩৫ হাজার, এনআরএল ইকো ব্রিকস লিমিটেডে ৫০ হাজার, জেসমিন কনস্টেক লিমিটেডে ৩৪ হাজার ও ইআরএলএ লিমিটেডে দেড় হাজার শেয়ার রয়েছে।
এ ছাড়া জান্নাত আরা হেনরীর ১৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে যমুনা ব্যাংক লিমিটেডে ১০টি, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডে ছয়টি এবং ব্যাংক এশিয়ায় তিনটি হিসাব রয়েছে। এসব হিসাবে ৫৬ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার টাকা রয়েছে।
জানা গেছে, দুদকের সহকারী পরিচালক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসিফ আল মাহমুদ জান্নাত আরা হেনরীর ব্যাংক হিসাব, কম্পানিতে বিনিয়োগ অবরুদ্ধকরণ ও সব স্থাবর/অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ চেয়ে আবেদন করেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রেজাউল করিম রেজা এই আবেদনের শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন। আবেদনে বলা হয়, জান্নাত আরা হেনরীর বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপরাধমূলক অসদাচরণের মাধ্যমে ৫৭ কোটি ১৩ লাখ সাত হাজার ২০৩ টাকা জ্ঞাত আয়ের উৎসর সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন ও নিজ ভোগ দখলে রাখায় এবং ৩৫টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দুই হাজার দুই কোটি ৬৬ লাখ ৬৬ হাজার ৫৭৭ টাকা এবং ১৩ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলারের সন্দেহজনক লেনদেন করা হয়েছে, যা অর্থপাচার সম্পৃক্ত অপরাধ ‘দুর্নীতি ও ঘুষ’ সংঘটনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশ্যে রূপান্তর, স্থানান্তর, হস্তান্তর করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৭(১), দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫(২) এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় মামলা হয়েছে। আসামি হেনরী তাঁর নিজ ও যৌথ নামে অর্জিত সম্পদসমূহ যাতে হস্তান্তর করতে না পারেন সে জন্য তাঁর স্থাবর/অস্থাবর সম্পদ ক্রোক করা প্রয়োজন।
গত ২২ ডিসেম্বর জান্নাত আরা হেনরী ও তাঁর স্বামী সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শামীম তালুকদারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের সহকারী পরিচালক আসিফ আল-মাহমুদ ও শাহ আলম সেখ বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন। এর আগে গত ২৫ নভেম্বর জান্নাত আরা হেনরী, তাঁর স্বামী শামীম তালুকদার ও মেয়ে মুনতাহা রিদায়ী লামের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
গত বছর ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-২ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়ে জয়ী হন হেনরী। ২০০৮ সালে সিরাজগঞ্জের সবুজ কানন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা পদ থেকে সরাসরি সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন হেনরী। তবে ওই নির্বাচনে তিনি বিএনপির রুমানা মাহমুদের কাছে পরাজিত হন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হন জান্নাত আরা হেনরী। তখন ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারিসহ নানা ঘটনায় তাঁর নাম আলোচনায় আসে।
সূত্র: কালের কণ্ঠ
No comments:
Post a Comment