Wednesday, January 22, 2025

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সমিতি- কয়েক হাজার কোটি টাকার প্লট ও ফ্ল্যাট দখল। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সমিতি-

কয়েক হাজার কোটি টাকার প্লট ও ফ্ল্যাট দখল:

প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩: ১৭

‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ দাবিতে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সমিতিতে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বসিয়ে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও আমলারা বাগিয়ে নিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকা, প্লট, ফ্ল্যাট ও রাজধানীতে থাকা সরকারি খাসজমি।

এসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা অবৈধভাবে ক্ষমতা পেয়ে তার সঙ্গে আরও ১০০ জনকে মুক্তিযোদ্ধা সাজিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বঞ্চিত করে হাতিয়ে নিয়েছেন রাজধানীর বিলাসবহুল প্লট, ফ্ল্যাট ছাড়াও নামিদামি আবাসন প্রকল্পের জমি, যা বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন হাজার কোটি টাকারও বেশি।

সরকারি গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের এসব অভিযোগ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদুল আলম ও কোষাধ্যক্ষ মো. রায়হান উদ্দিনের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তারা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে বাগিয়ে নেওয়া তাদের প্লট, ফ্ল্যাট ফেরত চেয়েছেন দেশের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা।

তারা প্রায় ৮১ জন মন্ত্রী-সচিব ও পুলিশ কর্মকর্তার বাগিয়ে নেওয়া প্লট-ফ্ল্যাটের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে আবেদন করেছেন। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা প্লট-ফ্ল্যাট ও জমি ফেরত চেয়ে আবেদন করেছেন জাতীয় গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ে। সে সঙ্গে সমিতির নতুন কমিটির অনুমোদন চেয়েও আবেদন করেছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরে।

সংগঠনটি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বঞ্চিত করে অবৈধভাবে নেওয়া মন্ত্রী-আমলাদের ৮১ জনের তালিকা আমার দেশ-এর কাছে তুলে ধরেছে। যারা মিরপুর-১৩ নম্বরে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের জন্য বরাদ্দ হওয়া রাকিন সিটিতে একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাট নিয়েছেন অবৈধভাবে।

তালিকায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ও তার স্ত্রীর নামে ৪টি, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের নামে ৪টি, আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম. বাহাউদ্দিন নাছিমের নামে দুটি, শেখ সেলিমের নামে ৮টি, সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খানের নামে দুটি ফ্ল্যাট এবং পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম আহমেদুল হকসহ সাবেক আইজিপি, অতিরিক্ত আইজিপি, সাবেক ডিআইজি, সচিবসহ ভিআইপিদের নামে-বেনামে এসব প্লট অবৈধভাবে দেওয়া হয়েছে।

সাবেক মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রী নিজেও অর্ধডজন ফ্ল্যাটের অবৈধ মালিকানা নিয়েছেন। এছাড়াও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা মোর্শেদুল আলম নিজেই তার এক পরিবারের নামে ৭২টি ফ্ল্যাট বাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বর্তমান আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নঈম জাহাঙ্গীর।

সংগঠনের সদস্য সচিব বেলায়েত হোসেন বলেন, বছরের পর বছর পতিত হাসিনার মদতপুষ্ট হয়ে আদালতে রিট করে সংগঠনকে করায়ত্ত রেখেছেন মোর্শেদুল আলমরা। তারা কোনো নির্বাচন করতে দেননি। আর এজন্য মন্ত্রী-আমলাদের সুযোগ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পদ লুট করেছেন।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, দুর্নীতি করে তারা লুটে নিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সমিতির হাজার কোটি টাকা এবং নামে-বেনামে প্রায় ৭০টি ফ্ল্যাট। এখন হত্যামামলায় (১৯/২৭৫) গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসছে মোর্শেদুল আলম ও মো. রায়হান উদ্দিন গংয়ের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রতারণার কথা।

সরকারি গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম না থাকলেও আওয়ামী লীগ আমলে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সমিতির (রেজি. নং ৮- ০৩৮১/৯৭) সাধারণ সম্পাদক হন মোর্শেদ আর কোষাধ্যক্ষ হন মো. রায়হান উদ্দিন। জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসনের জন্য মিরপুর-১৩তে ১৯৯৭ সালে ১৬.৩১ একর জমির বরাদ্দ দেয় সরকার।

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া জমি (যা বিজয় রাকিং সিটি নামে পরিচিত) নিয়ম লংঘন করে ডেভেলপারদের দিয়ে উন্নয়ন করে যেখানে প্রকৃত ১০০ মুক্তিযোদ্ধাকে বাদ দিয়ে অ-মুক্তিযোদ্ধা ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে ১৬ একর জমির ওপর অবৈধ ভবন নির্মাণ করেছে এবং অ-মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে বিক্রি করে হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভুয়া পরিচয় দিয়ে বিগত সরকারের আমলে বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন এবং আত্মীয়-স্বজনদের সমিতির সদস্যপদ দিয়ে নামে-বেনামে প্লট/ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া; পরে বরাদ্দ পাওয়া ফ্ল্যাটগুলো বাজারমূল্যে বিক্রি করে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। ওইসব অর্থ দিয়ে মোর্শেদুল আলম কানাডায় বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন এবং পরিবারের সব সদস্যকে সেখানে স্থানান্তরিত করেন। রাজধানীর ধানমন্ডি, সেগুনবাগিচা ও রামপুরায় কোটি টাকা মূল্যের একাধিক ফ্ল্যাট, বিজয় রাকিং সিটির মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে নামে-বেনামে অন্তত ৭২টি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

রাকিন টাওয়ার থেকে কিনেছেন ৮৫০০ বর্গফুটের কমার্শিয়াল স্পেস। গুলশান-২-এ অবস্থিত ‘দ্য রয়েল প্যারাডাইস’-এর কিছু অংশ ‘দ্য ফাইভ ট্রেডিং লিমিটেড’ নামে ভাড়া নিয়েছেন। ভাড়া নেওয়ার পর থেকে ওই অ্যাপার্টমেন্টে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।

সমিতির সদস্য আব্দুস সাত্তার বলেন, মোর্শেদুল আলম ও এটিএম আহমাদুল হকের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে আমরা সাধারণ সদস্যরা কোনো কথা বলতে পারিনি, তাই তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন ও আর্মি ক্যাম্প কাফরুল থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

মোর্শেদুল আলম ও মো. রায়হান উদ্দিন গংয়ের সমিতির সভাপতি ও পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম আহমেদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো ধরনের বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। কাফরুল থানার হত্যামামলায় মোর্শেদুল আলম গত ২৩ ডিসেম্বর এবং মো. রায়হান উদ্দিন আহমেদ গত ১৪ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হন।

গ্রেপ্তারের বিষয়ে কাফরুল থানার ওসি তৈয়বুর রহমান আমার দেশকে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যামামলায় তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সূত্র: আমার দেশ 

No comments:

Post a Comment

এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক: প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২৭ বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের অভ্যন্তরে ২০০৯ ...