বিডিসি ক্রাইম নিউজ২৪:
ড. মো. জাফর উদ্দিন সাহেব বাণিজ্য উপদেষ্টা হচ্ছেন।
ড. মো. জাফর উদ্দিন সাহেব বাণিজ্য উপদেষ্টা হচ্ছেন। বিষয়টি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি, কিন্তু পরবর্তীতে একাধিক সূত্র হতে জানতে পেরেছি; তাঁকে বাণিজ্য উপদেষ্টা করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মরত অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুর রহিম ও যুগ্মসচিব এবং সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশির পিএস মো. মাসুকুর রহমান সিকদারের তৎপরতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে; তাঁর সাথে সহযোগী হিসেবে রয়েছেন জাফর উদ্দিনের সাবেক পিএস বর্তমানে মালয়েশিয়ায় কমার্শিয়াল কাউন্সিলর হিসেবে কর্মরত জনাব প্রনব কুমার ঘোষ। তিনি ফেইসবুক এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাফর উদ্দিনের গুন কীর্তন করে ব্যতি-ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি যদি বাণিজ্য উপদেষ্টা হন তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্যে বারোটা বাজতে সময় লাগবে না; কারণ একজন ড. মো. জাফর উদ্দিন বিসিএস (অডিট) ক্যাডারের ১৯৮৫ ব্যাচের সদস্য। ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক বাণিজ্য সচিব এবং তাঁর পূর্বে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। লোকটা অনেক লম্বা, দীর্ঘকায়, চুল নকল, হাত-পা সচল। একসময় নাকি বাস্কেটবল খেলোয়াড় হিসেবে জাতীয় দলে খেলেছিলেন। সেই কোটায় অনেক-কে পায়ে ধরে হাসিনার কাছাকাছি গিয়ে তাঁকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেছিলেন। পরবর্তীতে অনেক মায়া-কান্না করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়েন সচিব হয়েছিলেন। পরে শেখ রেহানার কোটায় মাত্র কয়েক বস্তা টাকা উপহার দিয়ে বাণিজ্য সচিব হিসেবে প্রমোশন পান। তারপর বদলে যায় তাঁর জীবন এবং কর্মকাল। প্রত্যক্ষদর্শী একজন রপ্তানিকারক বলেন, জাফর সাহেব ইলিশ রপ্তানির অনুমতির জন্য ঘুশ নিতেন কেস প্রতি মাত্র ১০ (দশ) লক্ষ টাকা। আবার পরিমাণ বেশি হলে এ হার ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ পর্যন্ত লাগতো। এ টাকা নিতেন তাঁর পিএস (বর্তমানে মালয়শিয়ায় কমার্শিয়াল কাউন্সিলর হিসেবে কর্মরত) বাবু প্রনব কুমার ঘুস-এর মাধ্যমে। এর একটি ভাগ সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশির পিএস মাসুকুর রহমান সিকদার লইতেন। সিকদার সাহেব তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ওবায়দুল আজমকে ম্যানেজ করে এ কাজ করতেন।
বিদেশে বিভিন্ন দূতাবাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন কমার্শিয়াল কাউন্সিলর এবং তাঁদের অফিস সহকারী (এও/ পিও/ অন্যান্য ষ্টাফ) পদায়নে ছিলো রেকর্ড। কমার্শিয়াল কাউন্সিলর নিয়োগে মহাদেশ অনুযায়ী রেট ছিলো অনন্য। যেমনঃ এশিয়ান দেশ হলে ২৫ লক্ষ থেকে ১ (এক) কোটি। ইউরোপ হলে ২-৩ কোটি। অ্যামেরিকা হলে ৫-৬ কোটি টাকা। অফিস সহকারী (এও/ পিও/ অন্যান্য ষ্টাফ দের জন্য এ হার ছিলো ৫০% কম। সকল কালেকশন দুই পিএস মাসুক সিকদার সাহেব ও প্রনব কুমার ঘুস তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ওবায়দুল আজম এবং আবদুর রহিম সাহেবকে ম্যানেজ করে এ কাজ করতেন।
ট্রেড ওর্গানাইজেশন (টিও) শাখার একটি লাইসেন্স পেতে হলে বড় একটি সিন্ডিকেট মিলে করতেন। কেউ এই সিন্ডিকেট ম্যানেজ করতে না পারলে লাইসেন্স মিলতো না। লাইসেন্স পেতে হলে বাণিজ্য সংগঠন আইন অনুযায়ী এফবিসিসিআই-এর মতামত লাগতো। ড. মো. জাফর উদ্দিন সাহেব এফবিসিসিআই-এ পাঠাতে চাইতেন না। তবে ১০ লক্ষ মিললে পাঠাতেন। আবার বাণিজ্য সংগঠন আইন অনুযায়ী এফবিসিসিআই থেকে ৬০ দিনের মধ্যে মতামত পাওয়া না গেলে ধরে নেয়া হতো তাঁদের কোনো আপত্তি নেই (এটি ঐ আইনেই পরিষ্কার বলা আছে)। কিন্তু সচিব সাহেব তবুও এ আইন তোয়াক্কা করতেন না। তবে যদি আরো অতিরিক্ত ১০ লক্ষ কোনো পার্টি অফার করতো তাহলে তিনি সেভাবেই ফাইল দিতে বলতেন এবং তাঁর লাইসেন্স মিলতো। বাণিজ্য সংগঠনের সাথে জড়িত এ রকম কোনো সংগঠনের কোন নেতাকে জিজ্ঞাসা করলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে।
চামড়ার সিন্ডিকেট ড. মো. জাফর উদ্দিন সাহেব নিজেই ম্যানেজ করতেন। তিনি গর্ব করে বলতেন তাঁর চেয়ে এই অভিজ্ঞতা অন্য কারো নেই। আইআরসি/ ইআরসি লাইসেন্স ‘আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর’ প্রদান করলেও তাঁর ইশারা ছাড়া কোন লাইসেন্স দেয়া হতো না।
সচিব থাকাকালীন খুব অহংকার করে বলতেন, সচিব থেকে রিটায়ার্ড হওয়ার পর কখনোই সে মন্ত্রণালয়ের অধীন কোনো দপ্তর/ সংস্থায় তোমরা চাকুরি করিওনা। আমি জীবনেও করবো না। পরে তিনি চাকরি থেকে অবসরের পর একই মন্ত্রণালয়ে অধীন বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইন্সষ্টিটিউট (বিএফটিআই)-এর সিইও পদে টিপু মুনশির পায়ে ধরে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান (দুই দফায়)।
বেচারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে আরো এক বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তৎকালীন মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেনের দাবার গুটির কাছে হেরে যান। পরে ফেয়ার অয়েলের দিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সকলের সামনে শিশুর মত কান্না করতে থাকেন। এ কান্না প্রায় ৪ মিনিট স্থায়ী ছিলো। উপস্থিত সকলে একজন সিনিয়র সচিবের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না হওয়ার এ রকম কান্না দেখে হাসবেন না কাঁদবেন কিছুই বুঝতে পারছিলেন না।
ফাইল ওয়ার্কে তিনি খুবই দুর্বল ছিলেন। তাঁর পিএস বাবু প্রনব কুমার ঘোষ এবং প্রতিদিন সকালে টিপু মুনশির পিএস মাসুক সিকদার এসে প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারনী দিক নির্দেশণা প্রদান করতেন।
এই লোক যদি বাণিজ্য উপদেষ্টা হয় তাহলে দেশের কি অবস্থা হবে একবার কল্পনা করুন তো।
No comments:
Post a Comment