Monday, October 14, 2024

এক রাতেই বদনা মোরশেদ থেকে আরটিভির চেয়ারম্যান।

 এক রাতেই বদনা মোরশেদ থেকে আরটিভির চেয়ারম্যানঃ

প্রকাশঃ ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:২৯

ন্যাশনাল টেলিভিশন লিমিটেড আরটিভি যেভাবে রাতের আঁধারে বল প্রয়োগ করে ষোলো আনা শেয়ার নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছিলেন মোরশেদ আলম ও তার পরিবার সেই ইতিহাস এখন সবারই জানা। তবে কেমন করে আজ এবং আগামীর স্লোগানে যাত্রা করার টেলিভিশন মালিকদের কন্ঠ চেপে ধরেছিলেন সে কথা অনেকেরই অজানা।

২০০৭ সালে আরটিভি দখলের ইতিহাস শুনলে যে কারো মনে হবে আরব্য উপন্যাসের লোমহর্ষ কাহিনী।

তখন দেশে ওয়ান ইলেভেনের সেনা সমর্থিত সরকারের শাষন কাল। ২০০৭ সালের ৩ আগস্ট, আরটিভির পরিচালকদের চোখ বেঁধে রাতের আধাঁরে নিয়ে যাওয়া হয় অন্ধকার ঘরে। মালিকানা বুঝিয়ে দিতে কাগজে দস্তখত না করা পর্যন্ত চালানো হয় অমানুষিক অত্যাচার। জীবন বাঁচাতে কেমন করে আরটিভির শোয়ার লিখে দিয়েছিলেন সে কাহিনী শুনলে যে কারো গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালকের বর্ণনায় রয়েছে সেই ইতিহাস।

টেলিভিশনটি হাতছাড়া হওয়ার পর সেই সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দাঁতে দাঁত কামড়ে সহ্য করেছেন আরটিভির প্রতিটি পরিচালক। পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতার গ্রহণের পর, সরকারের নানা মহলে ধরনা দিয়েছেন টেলিভিশনটি ফিরে পেতে। ব্যর্থ হয়েছেন মোরশেদ আলমের চাতুরতায়।

টেলিভিশনটির বিভিন্নভাবে নিজেদের করতে মোরশেদ আলম পরিবার জালজালিয়াতির আশ্রয় নিতে শুরু করেন তখন থেকেই। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ধন্য দেন একটি বিশেষ বাহিনীর নাম ভাঙ্গিয়ে।

‘কথায় আছে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’ ঠিক সেভাবেই টেলিভিশনটি অপদখলের জালজালিয়াতিতে নথিগত প্রমাণ মুছতে পারেনি বদনা মোরশেদ।

অনুসন্ধানে দেখা যায় ২০০৬ সালের ২৭ এপ্রিল ন্যাশনাল টেলিভিশন লিমিটেড আরটিভির পরিচালনা পর্ষদের একটি মিটিং এর রেজুলেশনে নয় পরিচালক স্বাক্ষর করেছিলেন সিন্ধান্ত গ্রহনে। যেখানে চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোসাদ্দেক আলীসহ এনায়েতুর রহমান, আকলিমা বেগম, গুলসানা আহমেদ. মো. আবু মোহাম্মদ সাঈদ, মো. হুসাইন আল মাসুম, মিসেস মাহবুবা সুলতানা, মো. লুৎফুর রহমান। এছাড়াও অন্য একটি গ্রুপের প্রতিনিধি হিসেবে লোকমান হোসেনের নাম লেখা আছে।

এই পরিচালনা পর্ষদ আরটিভি ফিরে পেতে নির্বাচিত সরকারের সময় যে লাড়াই করেছে তার ও প্রমাণ রয়েছে। সেখানে দেখা যায় ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন মোরশেদের বিরুদ্ধে। আরটিভির একজন পরিচালক যিনি ২০০৬ সালের ২৭ এপ্রিল মিঠিং এ উপস্থিত ছিলেন। তেজগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরিতে তিনি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেন কেমন করে মোরশেদ আলম দখল করে নিয়েছিলেন আরটিভি একটি বাহিনীর ভয় দেখিয়ে। জিডিতে স্পষ্ট লেখা আছে “বিনামূল্যে বেঙ্গল গ্রুপের অনুকূলে হস্তান্তর করতে এবং উক্ত মর্মের সৃজিত বোর্ড রেজুলেশন ও শেয়ার হস্তান্তর দলিল ইতোমধ্যেই নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হই”।

এই পরিচালনা পর্ষদ এরপর আবার জয়েন্ট স্টকে লিখিত অভিযোগ করেন মোর্শেদ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৯ তারিখে। এখানে তারা পরিষ্কার বলেছেন, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকা কালীন প্রাণভয়ে জীবন বাঁচাতে আরটিভি লিখে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে নির্বাচিত সরকারের কাছে তারা এর প্রতিকার চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে সুবিধা করতে পারেননি মোরশেদের চাতুরির কাছে।

আরও প্রমাণ রয়েছে মোরশেদ পরিবারের কুকীর্তির। বিনিয়োগ বোর্ডে নিবন্ধন শাখায় নিজেদের নাম নিবন্ধনের আবেদনে স্পষ্ট প্রমাণ জাল জালিয়াতির। ২০১৪ সালের পহেলা জুলাইও পূর্বের উদ্যোক্তাদের পরিবর্তে মোরশেদ পরিবারের নাম নিবন্ধসেনর আবেদন পত্রে আবেদনকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সই থাকলেও নাম ছিলোনা নির্দিষ্ট কলামে। কারন মূল মালিকদের মাঠ ছাড়া করেছিলেন বহু আগেই।

আমরা এর আগেই দেখিয়েছিলাম আরটিভির মূল মালিকানায় ৯ জনের নাম রয়েছে। তবে বিনিয়োগ বোর্ড থেকে নিবন্ধনের আবেদন কেবলমাত্র তিনজনকে দেখানো হয় পূর্বের উদ্যোক্তাদের নামের ঘরে। চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েতুর রহমান এবং পরিচালক দেখানো হয়েছে সাবিনা রহমানকে যার পুরোটাই মনগড়া।

এই তিনজন পরিচালক কে বাদ দিয়ে সংশোধিত পরিচালকের মধ্যে চেয়ারম্যান মোর্শেদ আলম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোরশেদের বড় ছেলে হুমায়ুন কবির বাবলু, ছাড়াও পরিচালক হিসেবে নাম থাকে তার ভাই জসীমউদ্দীন, স্ত্রী মিসেস বিলকিস নাহারসহ অন্য তিন ছেলে ফিরোজ আলম টিপু, শামসুল আলম সুমন, সাইফুল আলম দীপুর। পরিবারের বাইরে লুৎফর রহমান ও ফিরোজ আলম নামে দুই জনকে পরিচালক করা হয় এই আবেদনে।

এভাবেই মোরশেদ পরিবার টানা ১৭ বছর আরটিভি জবরদখল করে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেন বিভিন্ন মহলে। ভোটার বিহীন নির্বাচনে তিনবার সংসদ সদস্য পদ বাগিয়ে সরকারের প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে।

আরটিভির মূল মালিকদের দাবি সরকার পরিবর্তনের ফলে মোরশোদ পরিবারের নৈরাজ্যের বিচার হওয়া প্রয়োজন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার সুবাতাস যেন লাগে আরটিভিতে।

সূত্রঃ দেশ টিভি

No comments:

Post a Comment

এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক: প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২৭ বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের অভ্যন্তরে ২০০৯ ...