Wednesday, June 4, 2025

হাসিনার বিচার শুরু। ( BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

হাসিনার বিচার শুরুঃ

প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৫, ০৯: ২৩

 


 গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়েছে। গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর চালানো গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে চার্জ গঠনের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া শুরু হলো। এর আগে গতকাল রোববার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের কাছে ফর্মাল চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে শেখ হাসিনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিরা। পুরো প্রক্রিয়াটি সরাসরি বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পেজে সরাসরি প্রচার করা হয়। আদালত থেকে বিচারের লাইভ টেলিকাস্ট দেশের ইতিহাসে এই প্রথম।

৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার ফর্মাল এ চার্জশিটে মুক্তিযুদ্ধের বায়বীয় চেতনার মাধ্যমে হাসিনা তথা শেখ পরিবারের স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ভয়াবহ কাহিনি এবং শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠে হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যার পর ভারতে পলায়নের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগপত্রে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৫টি প্রধান অভিযোগ আনা হয়। সাক্ষী রাখা হয়েছে ৮১ জনকে। জুলাই গণহত্যায় দেড় হাজার শহীদ আর আড়াই সহস্রাধিক আহতের দায় হাসিনা ও তার সহযোগীদের দেওয়া হয়।

হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগনামা

অভিযোগ-১ : ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আসামি শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাদের অধীনস্থ এবং নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক ব্যাপক মাত্রায় এবং পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, নির্যাতন এবং অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার অপরাধগুলো সংঘটনের প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে ব্যর্থতা, অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি না দেওয়া এবং ষড়যন্ত্র করার অপরাধ।

অভিযোগ-২ : আসামি শেখ হাসিনা কর্তৃক ছাত্র-জনতার ওপর হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন কর্তৃক শেখ হাসিনার ওই নির্দেশ বাস্তবায়নে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং অধীনস্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দিয়ে কার্যকর করার মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ প্রদান, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে, যা তাদের জ্ঞাতসারে কার্যকর করা হয়েছে।

অভিযোগ-৩ : শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা এবং সম্পৃক্ততায় তাদের অধীনস্থ ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে স্বল্পদূরত্ব থেকে সরাসরি নিরীহ-নিরস্ত্র আন্দোলনকারী ছাত্র আবু সাঈদের বুক লক্ষ করে বিনা উসকানিতে একাধিক গুলি চালিয়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করার মাধ্যমে উল্লিখিত আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাদের কর্তৃক অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন।

অভিযোগ-৪ : শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাদের অধীনস্থ ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ২০২৪-এর ৫ আগস্ট ঢাকা মহানগরীর চাঁনখারপুল এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের আনাসসহ নিরীহ-নিরস্ত্র ৬ ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করার মাধ্যমে উল্লিখিত আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাদের কর্তৃক হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা ও ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

অভিযোগ-৫ : শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা এবং সম্পৃক্ততায় তাদের অধীনস্থ ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ৫ আগস্ট ২০২৪ ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার সামনে এবং আশপাশ এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের কর্তৃক নিরীহ-নিরস্ত্র ৬ ছাত্র-জনতাকে গুলি করে তাদের মধ্যে ৫ জনের মরদেহ এবং একজনকে জীবিত ও গুরুতর আহত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার অপরাধ সংঘটিত হয়। এ ধরনের হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

১৬ জুন হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার গতকাল আনুষ্ঠানিক চার্জ হাতে পাওয়ার পর শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের আগামী ১৬ জুন ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। ওইদিন আসামিরা হাজির হলে সেদিন থেকেই পরবর্তী আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হবে। আর যদি আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থনে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত না হন, তাহলে আইন অনুযায়ী তাদের অনুপস্থিত হিসেবে ঘোষণা করার একটি প্রক্রিয়া থাকবে। সেদিন আদালত সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে। গতকাল চিফ প্রসিকিউটর আসামিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে হতাহতদের মাঝে বণ্টন করে দেওয়ার আবেদন জানান।

শেখ পরিবারের স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ফর্মাল চার্জশিটে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে ধীরে ধীরে শেখ মুজিব এবং তার পরিবারের স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ভয়াবহ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী ৭৩-এর প্রথম সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোতে হারাতে আওয়ামী লীগের ব্যাপক কারচুপি। বিশেষ করে মেজর জলিলকে হারাতে আওয়ামী লীগের ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ড বাংলার মানুষ আজও ভোলেনি বলে তিনি উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে রক্ষীবাহিনী গঠন এবং তাদের অপকর্মের দায়মুক্তি, ৭৪-এর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, বাকশাল প্রতিষ্ঠাসহ তিনটি বাদে সব মিডিয়া নিষিদ্ধের মাধ্যমে শেখ মুজিবের স্বৈরশাসক হওয়ার ধারাবারিক ঘটনা বর্ণনা করেন।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মাধ্যমে ঘৃণার রাজনীতির প্রচলন

ট্রাইব্যুনালের ফর্মাল চার্জের বর্ণনায় চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আওয়ামী লীগ ৭১-এর পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের সোল এজেন্ট দাবি করে প্রথম থেকেই বায়বীয় এ চেতনাকে ইসলামবিরোধী হিসেবে প্রতিপন্ন করে। কথায় কথায় প্রতিপক্ষ বিরোধী দলগুলোকে রাজাকারসহ নানা ঘৃণাবাচক উক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ঘৃণার রাজনীতির মাধ্যমে দেশে বিভাজনের প্রচলন তৈরি করেন।

‘গ্যাং অব ফোর’ পর্ষদ ছিল হাসিনার

ট্রাইব্যুনালের তদন্তে হাসিনার চার বরকন্দাজের ‘গ্যাং অব ফোর’ হয়ে ওঠার কাহিনি উঠে এসেছে। হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট বানানোর পেছনে তাদের ছিল মূল ভূমিকা। কুখ্যাত এই চার ব্যক্তি হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বেসরকারি বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তাদের প্রত্যক্ষ মদতে হাসিনা হয়ে ওঠেন ফ্যাসিস্ট। তাদের পরামর্শে দেশজুড়ে শেখ মুজিবের মূর্তি তৈরি, মুজিব কর্নার, স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট সবকিছুতেই মুজিব ও শেখ পরিবারের নাম যুক্ত করা হয়।

সূত্রঃ আমার দেশ

No comments:

Post a Comment

এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক: প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২৭ বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের অভ্যন্তরে ২০০৯ ...