BDC CRIME NEWS24
জুলাই গণহত্যায় জড়িতদের বিচার দেখতে চায় ইইউ:
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৫, ০৮: ৩৫
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ডেলিগেশন প্রধান ও রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেছেন, জুলাই গণহত্যায় জড়িতদের বিচার দেখতে চায় ইইউ। গত বছর জুলাই-আগস্টে অনুষ্ঠিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময়ে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল তাদের অবশ্যই বিচারের মাধ্যমে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’
গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ কূটনৈতিক সংবাদদাতা সমিতি (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টকে’ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এই মন্তব্য করেন। ইউরোপের ২৭ রাষ্ট্রের জোটটি জুলাই গণহত্যা, সরকারের সংস্কার কার্যক্রম, আগামী নির্বাচন, রোহিঙ্গা সমস্যা, বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর সম্পর্কসহ সমসাময়িক নানা বিষয়ে কথা বলে।
জুলাই গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস কমিটির রিপোর্ট এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময়ে বাংলাদেশে নারকীয় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘ যে কাজ করেছে সেখানে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। জাতিসংঘের সুপারিশগুলোকেও আমরা সমর্থন করি। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে, যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত হয়েছিল বিচারের মাধ্যমে তাদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। তবে, এখানে বিচার-প্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয় সেই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমরা আশা করি বাংলাদেশের বিচার বিভাগ তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করবে।
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইইউর রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে কখন পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিতÑ সে বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কোনো পক্ষের ওপর কোনো চাপ নেই। তবে নির্বাচনের আগে প্রয়োজন সংস্কারগুলো সম্পন্ন করা। সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পর্যাপ্ত সময়ের প্রয়োজন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে।
রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সংস্কারের জন্য এখন বড় সুযোগ এনে দিয়েছে উল্লেখ করে এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে বলেও মন্তব্য করেন মিলার।
অপর প্রশ্নের উত্তরে ইইউ দূত বলেন, তারা বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সমর্থন করে। এমন কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনে সহায়তা দিতে আগ্রহী ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছি।
রাখাইনে মানবিক করিডোরকে ইতিবাচক উদ্যোগ আখ্যায়িত করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত বলেন, এই করিডোরকে সমর্থন করছে ইইউ। উভয় পাশেই ভুক্তভোগীদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। সবাই যেন সমানভাবে ত্রাণ সহায়তা পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, করিডোর স্থাপন হোক বা না হোক, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক ও খাদ্য সহায়তা দিতে পাশে থাকবে ইইউ। প্রয়োজনমাফিক আর্থিক সহায়তা বাড়াতে কাজ করছে ইইউ। এ সময় রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে ইইউ ও বাংলাদেশ সরকার একমত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ নেতারাসহ অন্যরাও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে। এই অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, এ নিয়ে রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যথাযথ তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যোগাযোগ করতে হবে। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াটি শেষ হতে ৩ থেকে ৪ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
তৃতীয় দেশ থেকেই ইইউভুক্ত বেশকিছু দেশের ভিসা নেওয়ার জটিলতা প্রশ্নে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, যেসব দেশের ভিসা তৃতীয় দেশ থেকে নিতে হয়, সেগুলো নিয়ে সমস্যার কথা শুনেছি। এটা কীভাবে সমাধান করা যায় সেই চেষ্টা করছি।
ইইউর আমন্ত্রণে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বাধীন দলটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের ব্রাসেলস সফর বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, দলটির আগ্রহে আমরা জামায়াতের প্রতিনিধিদলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আমরা চাই বিভিন্ন পক্ষের কথা শুনতে। অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ইস্যু সম্পর্কে আমরা বোঝার চেষ্টা করি। বিএনপি, এনসিপি বা অন্য যে কোনো রাজনৈতিক দলকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্বাগত জানায়।
নারী সংস্কার কমিশন নিয়ে চলমান বিতর্কের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মিলার বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের বিষয়। তবে হ্যাঁ, আমরা নারী-পুরুষ সমান অধিকারে বিশ্বাসী এবং এটা আমাদের মূল্যবোধ। দুনিয়াজুড়ে এটি আমরা প্রমোট করি। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে এগিয়ে নেওয়া উচিত বলে মনে করি। নারী উন্নয়নের বিষয়টি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।’
বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক ও কৌশলগত সহযোগিতার ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহের কথা জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, সন্ত্রাস দমনসহ অন্যান্য নিরাপত্তা ইস্যুতে আমাদের সহযোগিতা রয়েছে। নিরাপত্তা ইস্যুতে পারস্পরিক সহযোগিতা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্র নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী ইইউ। বাংলাদেশের কোস্টগার্ডকে প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত।
বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অব্যাহতভাবে সহযোগিতা দিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন ইইউ দূত। তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক সমাজে স্বাধীন গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডিকাব সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুন। অনুষ্ঠানে ডিকাবের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: আমার দেশ
No comments:
Post a Comment