Thursday, March 20, 2025

যাত্রাবাড়ীতে শহীদ ওমরের বুকে গুলি করে পুলিশ। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

যাত্রাবাড়ীতে শহীদ ওমরের বুকে গুলি করে পুলিশ:

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৫, ১১: ১৭

জুলাই বিপ্লবে মিরপুর, শাহবাগ, আদালত প্রাঙ্গণ ও জাতীয় শহীদ মিনারসহ আন্দোলনের প্রতিটি পয়েন্টে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রায় সব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের (বিইউপি) শিক্ষার্থী জোবায়ের ওমর খান। গত বছরের ৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ থেকে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাত্রাবাড়ীতে এসে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তিনি।

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বিচারক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন ওমর। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার পরই ওমর রাজপথে নেমে আসেন। নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান। স্কুল-কলেজ জীবনের বন্ধুদেরও আন্দোলনে যুক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করেন। তার আহ্বানে সাড়া দেওয়া বন্ধুদের একজন মো. জাকারিয়া। গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বলেন, ‘ঢাকায় এসে আন্দোলনে যুক্ত হতে ওমরই আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। এভাবে বন্ধু ও পরিচিতদের নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন ওমর।’

‘৩৬ জুলাই’ (৫ আগস্ট) সকালে নাশতার সময় বাবা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহাঙ্গীর আহমেদ খান ওমরকে বলেন, ‘আন্দোলনে যাবা ঠিকই, কিন্তু রিস্কি কিছু কইরো না। অবস্থা খুব খারাপ। না গেলে ভালো হয়।’ উত্তরে ওমর বলেন, ‘আমার এত ভাইয়েরা শহীদ হইতেছে, আমি যদি ঘরে বসে থাকি, শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে’। এরপর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের নয়াপাড়ার বাসা থেকে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে বের হন।

অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও বন্ধু জাকারিয়াকে ফোন দেন ওমর। জাকারিয়া বলেন, ওমরের ডাকে সাড়া দিয়ে বন্ধু ফয়সালকে সঙ্গে নিয়ে বের হই। শনির আখড়ায় আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন ওমর। সেখান থেকে রায়েরবাগ ও পরে যাত্রাবাড়ী এলাকায় যাই। এ সময় যাত্রাবাড়ীতে ভবনের ওপর থেকে স্নাইপাররা গুলি করছিল। ফলে সামনে এগোতে পারছিল না কেউই। শনিরআখড়া থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত আসতে অনেক মানুষকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। এরই মাঝে খবর ছড়িয়ে পড়ে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।

এরপর ‘মার্চ টু ঢাকা’ রূপ নেয় বিজয় মিছিলে। সেই মিছিলে থেকেই ওমররা সিদ্ধান্ত নেন গণভবনে যাবেন। গোলাগুলিও কিছুটা কমে যায়। হাঁটতে হাঁটতে যাত্রাবাড়ী থানার সামনের সড়কে আসেন তারা। সেখানে থানার ভেতরে রাখা শহীদদের লাশ ও আহত সহযোদ্ধাদের উদ্ধার করতে বিক্ষুব্ধ জনতা থানার সামনে অবস্থান নেন।

জাকারিয়া বলেন, বেলা ২টার দিকে আমরা দূর থেকে দেখছিলাম কী হচ্ছে সেখানে। হঠাৎ পুলিশ গুলি শুরু করে। আমরা দৌড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী (একচোখ অন্ধ) রিকশাচালক করিম হাওলাদার আন্দোলনকারীদের মাঝে পানি বিতরণ করার সময় দেখেন থানার কাছের তিন রাস্তার সংযোগস্থলে কয়েকজন গুলি খেয়ে পড়ে গেছে। তাদের মধ্যে ওমরও ছিলেন। তার বুকে গুলি লাগে। করিম সেখানে গিয়ে ওমরকে রিকশায় তোলার চেষ্টা করেন।

করিম বলেন, ‘আমার দিকে চোখ পড়তেই পুলিশ এসে আমার বুকে বন্দুক দিয়ে আঘাত করে হাড় ভেঙে দেয়। ওমর ও আমি দুজনই নিচে পড়ে যাই। পুলিশ সদস্যরা আমাদের পদদলিত করে চলে যায়।’

এরপর কয়েকজন আন্দোলনকারী এসে ওমরসহ গুলিবিদ্ধ তিনজনকে করিমের রিকশায় তোলেন। কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (মিটফোর্ড) দিকে রওনা দেন করিম। এ সময় ওমর বেঁচে থাকলেও অন্য দুজন শাহাদাত বরণ করেন। করিম তবুও রিকশা না থামিয়ে চালাতে থাকেন। হাসপাতালের সামনে গিয়ে দেখতে পান সেখানে অস্ত্রসজ্জিত ও হেলমেট পরিহিত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা দাঁড়িয়ে আছে। তারা কাউকেই ঢুকতে দিচ্ছে না হাসপাতালে। এ সময় চিকিৎসক ও সন্ত্রাসীদের অনুরোধ করে ওমরকে ভেতরে নিতে বলেন করিম। অক্সিজেন নেই জানিয়ে ওমরকে রাখতে চাচ্ছিলেন না চিকিৎসকরা। অক্সিজেনের জন্য ৯০০ টাকা দিয়ে এরপর ওমরকে সেখানে রেখে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান করিম।

এদিকে ওমরের বন্ধুরা তাকে খুঁজছিলেন। মোবাইলে কল দিয়েও তাকে পাচ্ছিলেন না। হঠাৎ অপরিচিত নম্বর থেকে কল করে বলা হয়, ওমর মিটফোর্ড হাসপাতালে আছেন। বন্ধুরা সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, বিকাল ৬টার দিকে ওমর শাহাদাত বরণ করেছেন। তাৎক্ষণিক ওমরের পরিবারকে বিষয়টি জানান তারা। ওই রাতেই শহীদ ওমরের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গ্রামের বাড়িতে। পরদিন সকাল ৯টায় সৈয়দাবাদ মাদরাসা মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।

ছেলে খুনের বিচার চেয়ে বাবা জাহাঙ্গীর আহমেদ খান বলেন, ‘যারা দেড় দশক ধরে মানুষ হত্যা করে ক্ষমতা দখল করেছিল এবং ক্ষমতা স্থায়ী করতে গণহত্যা চালাল, তাদের বিচার সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। এমন বিচার হোক যেন আর কেউ স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার সাহস না দেখায়। বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশ এমনভাবে গঠিত হোক, যেন দেশের প্রত্যেক মানুষের অধিকার নিশ্চিত হয়।’

সূত্র: আমার দেশ 

No comments:

Post a Comment

এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক: প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২৭ বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের অভ্যন্তরে ২০০৯ ...