Thursday, January 23, 2025

মাওলানা এহতেশামুল হক সাখীকে হ্যান্ডকাফ ও জমটুপি পরিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

মাওলানা এহতেশামুল হক সাখীকে হ্যান্ডকাফ ও জমটুপি পরিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ:

প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯: ৪৭

দেশের সর্বত্রই আলেম-ওলামা গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লেও নিজেকে নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত ছিলেন না মাওলানা এহতেশামুল হক সাখী। একদিন মসজিদে হাদিসের একটি ক্লাস নিচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ সেখানে ডিবি পুলিশের হানায় উদ্বিগ্ন হন মসজিদটির ইমাম।

একপর্যায়ে তাকে আটক করা হয়। স্থানীয়রা বাধা দিয়ে আটকের কারণ জানতে চাইলে ডিবি অফিসারের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। এরপর একের পর এক মামলা সাজিয়ে নেওয়া হয় রিমান্ডে। মিথ্যা স্বীকারোক্তির জন্য নির্যাতনও করা হয় তাকে। কোনো তথ্য না পেলেও নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই মেলেনি তার। দীর্ঘ ছয় মাস কারাগারে জঙ্গি-সন্ত্রাসী আসামিদের মতো কাটাতে হয় আরমানিটোলা মসজিদের সাবেক এই ইমামকে।

একজন তরুণ আলেম হিসেবে সুপরিচিত মাওলানা এহতেশামুল হক সাখী। হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের সহকারী দপ্তর সম্পাদকের পাশাপাশি ইসলামী ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। পতিত সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যুতে সোচ্চার ছিলেন এই আলেম। তার এই তৎপরতা থামাতেই মূলত আওয়ামী সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তার ওপর নির্যাতনের পথ বেছে নেয় বলে তার অভিমত।

মাওলানা সাখী বলেন, আওয়ামী শাসনামলে আলেম-ওলামাদের ওপর যে নির্বাতন করা হয়েছে, তা বর্ণনাতীত। সেই নির্যাতনের কথা বলতে গেলে দীর্ঘ সময় লাগবে। ধর্মীয় কর্মসূচি পালন করতে গেলেই পুলিশি হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটত। শাপলা চত্বরে আলেমদের ওপর নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি রিমান্ডে গিয়ে আলেম নির্যাতনের ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে পেয়েছি। ছোট একটা রুমে তাদের রাখা হয়েছে। সেখানে আসলে কোনো মানুষ থাকতে পারে না। বয়স্ক আলেমদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল আর তরুণদের প্রচণ্ড মারধর করত। বিশেষ করে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য আদায়ের জন্য হাঁটুতে লাঠি দিয়ে জোরে জোরে বাড়ি দিত পুলিশ। যখন কোনো অফিসারের কাছে নিয়ে যেত, তখন হাত পেছনে দিয়ে হ্যান্ডকাফ ও মাথায় জমটুপি পরিয়ে নিয়ে যেত।

পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে মসজিদ-মাদরাসায় পুলিশ আর গোয়েন্দা হয়রানি ছিল একটি স্বাভাবিক বিষয়। এ প্রসঙ্গে মাওলানা এহতেশামুল হক সাখী বলেন, আমি একটি মসজিদের দায়িত্বে ছিলাম, বিভিন্ন সময় গোয়েন্দারা সেখানে গিয়ে খোঁজখবর নিত। আমাকে ধরে নিয়ে আসাও হয়েছে মসজিদ থেকে।

মামলা দিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এভাবে কোনো ওলামায়ে কেরামের মসজিদে বা মাদরাসায় শান্তিতে থাকার সুযোগ ছিল না। বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হতো। মাদরাসার ছাত্ররাও ছুটিতে এলাকায় গেলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুন্ডারা তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে। তারা শিক্ষকদের কাছে বিষয়গুলো জানালেও আমাদের পক্ষে কিছুই করার ছিল না। তাদের ধৈর্যধারণের জন্য বলতাম।

একইভাবে মাদরাসার মুহতামিমরাও স্থানীয় আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের হয়রানির শিকার হয়েছেন। মিরপুরের একটি মাদরাসার একজন মুহতামিমকে জোর করে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এর কারণ ছিল তার ছাত্রদের তিনি ইসলামি ইস্যুতে বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে আসার জন্য বলতেন।

তিনি বলেন, জেলখানায় গিয়ে এক ছোট ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়। সে জানায়, যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ তাকে নির্মমভাবে পিটিয়েছে। লাথির আঘাতে জেলে গিয়েও তার বমি হয়, রক্ত বের হয়।

২০২১ সালের ২২ এপ্রিল আরমানিটোলা মসজিদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মাওলানা সাখীকে। তখন ছিল রমজান মাস। ওই রমজানেই বাংলাদেশের অনেক ওলামায়ে কেরামকে গ্রেপ্তার করা হয়। হেফাজতের ঢাকা মহানগর নেতা হিসেবে তাকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার হওয়ার পাঁচ মিনিট আগেই তাকে হেফাজতের নায়েবে আমির বর্তমানে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন ফোন করে কয়েকজন আলেমের খোঁজ নেন এবং আমাকে সাবধানে থাকতে বলেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আরমানিটোলা মসজিদে হাজির হয় ডিবি পুলিশ। ওই মসজিদের ইমাম ছিলাম আমি। জোহরের পর মসজিদে হাদিসের ক্লাস নিচ্ছিলাম।

ডিবিতে নিয়ে নাম-তথ্য এন্ট্রি করেই ঢোকানো হয় লকআপে। ছোট একটা রুমে আরও অনেক আলেমকে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ওই রুমে আসলে কোনো মানুষ থাকতে পারে না। অথচ মাওলানা মামুনুল হকসহ অনেককেই সেখানে রাখা হয়।

আসরের সময় তাকে সেখানে ঢোকানো হয়। ইফতারের পর তাকে ডাকা হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। এসময় লকআপ থেকে বের করার সময় হাত দুটি পেছনে দিয়ে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। হাতিরঝিল জোনের দায়িত্বে থাকা এক অফিসার কিছু কথাবার্তা বলার পর আবার ডাকা হবে বলে জানান। পরদিন পল্টন থানায় সহিংসতার একটি মামলা দেওয়া হয়।

মাওলানা সাখী জানান, ওই মামলার অভিযোগ লেখার সময় তাকে সহিংসতার নির্দেশদাতা হিসেবে জুনাইদ বাবুনগরীর নাম বলতে বলা হয়। বাবুনগরী পাকিস্তান গিয়েছেন, তিনি রাজাকার ছিলেন—এ ধরনের স্বীকারোক্তি আদায়ে বেশ চাপাচাপি করেন। এ সময় পাশের রুমে একজনকে মারা হচ্ছিল, তা দেখিয়ে তাকেও হুমকি দেওয়া হয়। তাদের কথা না শুনলে নির্যাতনের ভয় দেখায়, কিন্তু তাতে রাজি না হওয়ায় আদালতে পাঠিয়ে দেয়। আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। তাকে আবার ডিবিতে নেওয়া হয়।

রিমান্ডে নিয়ে মাওলানা হাসান জামিল সম্পর্কে তথ্য জানতে চায় পুলিশ। তাকে ধরিয়ে দিতে পারলে মাওলানা সাখীকে ছেড়ে দেওয়ারও আশ্বাস দেওয়া হয়। তিনি তার অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য জানাতে না পারায় হাঁটুতে বারবার লাঠি দিয়ে বাড়ি দেয়। এরপর ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে সহিংসতার সঙ্গেও সম্পৃক্ততার চেষ্টা করে পুলিশ। এসময় সাখী বলেন, আমি তো খতিব।

অন্য মসজিদে জুমা পড়িয়েছি। আমি কীভাবে বায়তুল মোকাররমে সহিংসতা করব। তখন তারা বলেন, তাদের কাছে তথ্য আছে। এভাবে মিথ্যা তথ্য স্বীকার না করলে হাঁটুতে জোরে জোরে বাড়ি দেয়। ওই আঘাত ব্রেইনে গিয়ে লাগত। এসময় তারা অশ্রাব্য গালাগালও করে।

প্রথম দফায় চার দিনের রিমান্ড শেষে মাওলানা সাখীকে নেওয়া হয় পল্টন থানায়। সেখানে নতুন মামলা দিয়ে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। সেখানেও ডিবির মতো একই রকম আচরণ করা হয়। চাহিদামতো তথ্য না দিলে পরিবারের লোকদের উঠিয়ে আনারও হুমকি দেওয়া হয়।

ঈদের আগের দিন মাওলানা সাখীকে নেওয়া হয় কাশিমপুরের হাইসিকিউরিটি কারাগারে। সেখানে জেল সুপার খুব সাবধানে থাকার জন্য নির্দেশনা দেন। সাখী বলেন, যে রুমে তাকে রাখা হয় সেখানে পানি নেই, মশার উৎপাত। যে ফাঁসির সেলে একজন থাকার কথা, সেখানে তাদের রাখা হয় আট-দশজনকে। এভাবে নির্মম নির্যাতনের মধ্যে ১০ দিন রাখার পর আরেকটি রুমে রাখা হয়।

ওই ভবনটি ছিল সবচেয়ে সিকিউরড। সেদিকে নাকি অন্য কোনো আসামির তাকানোও নিষেধ। সেখানে গিয়ে দেখেন কথিত জঙ্গিরা সব সেখানে। আমরা বললাম, আমরা তো জঙ্গি নই। আমাদের এখানে কেন আনা হয়েছে। তবে সরকার চেয়েছে হেফাজতে ইসলামকে একটি সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সংগঠন হিসেবে দেখাতে।

মাওলানা সাখী বলেন, কারাগারের অন্য ভবনের আসামিদের সঙ্গে তাদের পরিবারের যোগাযোগ হলেও এখানকার আসামিদের সেই সুযোগ নেই। এতে মামলা পরিচালনা ও উকিল ধরার মতো কোনো সুযোগ পায়নি পরিবার। প্রায় চার মাস পর ওই ভবন থেকে বের হন তিনি।

তারপর মামলার জামিন নেওয়ারও প্রক্রিয়া শুরু হয়। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর তার পরিবারে হতাশা নেমে আসে। তবে আলেম পরিবার হওয়ায় তারা ধৈর্যের সঙ্গেই তা মোকাবিলা করেন। তারা আমাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ডিবিতে গিয়ে বড় ভাই আমার সঙ্গে দেখা করেন। এরপর আবার যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। আমাকে কোন কারাগারে রেখেছে, তা কেউ জানতে পারেনি। প্রায় দুই মাস পর পরিবার জানতে পারে আমি গাজীপুরে আছি।

জামিনে মুক্তির পর সংশ্লিষ্ট মসজিদে আর দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়নি এই ইমামকে। তিনি বলেন, আমাকে বলা হয়, আমাদের ওপর চাপ আছে, আমরা আর আপনাকে রাখতে পারব না। পাশে একটি মাদরাসার শিক্ষা সচিব ছিলেন, সেখান থেকেও তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, ডিবিতে দেখেছি অনেক সাধারণ মাদরাসা শিক্ষককে ধরে এনে দীর্ঘদিন আটকে রাখা হয়। ছোট রুমে নির্মম কষ্ট দেওয়া হয়। এরপর বাইরে নিয়ে গিয়ে গ্রেপ্তার নাটক সাজিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়। জঙ্গি বলে স্বীকারের জন্য নির্যাতন করা হয় তাকে।

তিনি বলেন, আমরা এখন মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি চাই। কারণ বারবার হাজিরা দেওয়াও মানসিক চাপের বিষয়। এছাড়া শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ যাদের নির্দেশে আলেম-ওলামাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে, তাদের বিচার দাবি করেন তিনি।

সূত্র: আমার দেশ 

No comments:

Post a Comment

এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক: প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২৭ বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের অভ্যন্তরে ২০০৯ ...