Wednesday, December 18, 2024

তত্ত্বাবধায়ক বাতিল অবৈধ, এলো গণভোট। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

তত্ত্বাবধায়ক বাতিল অবৈধ, এলো গণভোট:

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০০:০০

উচ্চ আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফেরার পথ সুগম হলো। গতকাল মঙ্গলবার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর দুটি রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন। রায়ে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল আংশিকভাবে যথাযথ ঘোষণা করা হয়। রায়ে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিধান অবৈধ ঘোষণা করায় সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরার পথ সুগম হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

এক যুগ আগে আওয়ামী লীগ সরকার গণভোট ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বাদ দিতে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী এনেছিল। গতকাল তার কিছু অংশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আদালত রায়ে বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে তা বাতিল ঘোষণা করা হলো।

রায়ে বলা হয়েছে, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো হিসেবে ধারা দুটি গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে।

পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার ১৪২ অনুচ্ছেদ থেকে ‘গণভোটের’ বিধান বাদ দিয়েছিল। এই গণভোটের বিধান বাদ দেওয়াকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এর ফলে সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান পুনঃস্থাপিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে ‘পঞ্চদশ সংশোধনী আইন’ নামে পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনসংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়; সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়। এ ছাড়া পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধানও যুক্ত করা হয়। আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিধান থাকলেও পঞ্চদশ সংশোধনীতে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান সংযোজন করা হয়।

এসব সংশোধনী বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্য চার আবেদনকারী হলেন তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। এই রিটে প্রাথমিক শুনানির পর গত ১৯ আগস্ট হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন, ২০১১ কেন অসাংবিধানিক এবং বাতিল ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। পরে এই রুল সমর্থন করে সহায়তাকারী (ইন্টারভেনার) হিসেবে যুক্ত হন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দল হিসেবে যুক্ত করা হয় গণফোরাম ও ইনসানিয়াত বিপ্লব নামের দুটি রাজনৈতিক দলকে। এ ছাড়া মোফাজ্জল হোসেন নামের এক মুক্তিযোদ্ধা পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। দুটি রিটে একসঙ্গে রায় দিলেন উচ্চ আদালত।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন। রিটকারী সুজনের বদিউল আলমের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী শরিফ ভূঁইয়া। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল।

জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন মোহাম্মদ শিশির মনির, এহসান সিদ্দিকী। ইনসানিয়াত বিপ্লবের পক্ষে শুনানি করেন ইশরাত হাসান। এ ছাড়া শুনানি করেন আইনজীবী জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী। এ ছাড়া ইন্টারভেনার (সহায়তাকারী) হিসেবে শুনানি করেন আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ।

পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৫৪টি ক্ষেত্রে সংযোজন, পরিমার্জন ও প্রতিস্থাপন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। রায়ে আদালত বলেছেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পুরোটা বাতিল করা হচ্ছে না। নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে একটি রিট মামলা হাইকোর্টে বিচারাধীন, যে কারণে এই অনুচ্ছেদে আমরা হাত দিইনি। যখন এই অনুচ্ছেদের বৈধতা প্রশ্নে রুল শুনানি হবে, তখন আমরা বিষয়টি দেখব। ১১৬ অনুচ্ছেদেও সংশোধনী আনা হয়েছিল পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে।’

বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার জাতীয় সংসদের হাতে ছেড়ে দিয়ে হাইকোর্ট রায়ে বলেন, সংসদ আইন অনুসারে জনগণের মতামত নিয়ে বিধানগুলো সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করতে পারবে।

যে কারণে যেসব বিধান বাতিল করলেন হাইকোর্ট : তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত ৫৮ক অনুচ্ছেদ নিয়ে রায়ে বলা হয়েছে, পঞ্চদশ সংশোধনী আইন, ২০১১-এর ২০ ও ২১ ধারার মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত সংবিধানের ৫৮ক অনুচ্ছেদ বিলোপ করা হয়। এর মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো অর্থাৎ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। ফলে এই দুটি ধারা অসাংবিধানিক হওয়ায় তা বাতিল ঘোষণা করা হলো।

গণভোটের বিধান নিয়ে রায়ে বলা হয়েছে, ১৯৯১ সালে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী মাধ্যমে সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান যুক্ত করা হয়েছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এই বিধান বাদ দেওয়া হয়। এ ছাড়া জনমত বা জন-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৮, ৪৮ ও ৫৬ অনুচ্ছেদ অসংশোধনযোগ্য ঘোষণা করা হয়, যা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোবিরোধী এবং অসংগতিপূর্ণ। তাই পঞ্চদশ সংশোধনী আইন, ২০১১-এর ৪৭ ধারার মাধ্যমে ১৪২ অনুচ্ছেদ থেকে গণভোটের বিধান বাতিল করাকে বাতিল ঘোষণা করা হলো। ফলে দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৪২ অনুচ্ছেদে যুক্ত করা গণভোটের বিধান পুনরুদ্ধার হলো।

পঞ্চদশ সংশোধনীর ৭ক ও ৭খ অনুচ্ছেদ বাতিলের বিষয়ে রায়ে আদালত বলেন, সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। জনগণের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা এবং চিন্তার স্বাধীনতা, অভিব্যক্তিকে সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা দেয় সংবিধান। কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে ৭ক ও ৭খ উপ-অনুচ্ছেদ যুক্ত করে সেই নিশ্চয়তাকে খর্ব করা হয়েছে, যা ৭ অনুচ্ছেদের বিধানের সম্পূর্ণ বিপরীত এবং চরম সংবিধানবিরোধী। এ কারণে ৭ অনুচ্ছেদ থেকে ৭ক ও ৭খ উপ-অনুচ্ছেদ বাতিল ঘোষণা করা হলো।

হাইকোর্টের ক্ষমতাসংক্রান্ত ৪৪(২) অনুচ্ছেদ বাতিলের বিষয়ে আদালত রায়ে বলেন, সংবিধান নিয়ে নির্বাহী বিভাগ এমনকি আইনসভার অপ্রীতিকর পদক্ষেপের বিচারিক পর্যালোচনার সম্পূর্ণ ক্ষমতা হাইকোর্টের রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে স্পর্শ করে এমন সংশোধন বাতিল ঘোষণা করার ক্ষমতাও হাইকোর্টের রয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগ সংবিধানের অভিভাবক।

রায়ে আদালত বলেন, আইনসভা (সংসদ) পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদে ২ উপ-অনুচ্ছেদ যুক্ত করে হাইকোর্ট বিভাগের কথিত ক্ষমতা অধস্তন আদালত দ্বারা প্রয়োগ করার অনুমতি দিয়েছিল। সুতরাং, এটি সংবিধানের ৪৪(১) ও ১০২(১) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। ফলে ৪৪(২) অনুচ্ছেদ বাতিল করা হলো।

পঞ্চদশ সংশোধনী গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে : রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, সংবিধান হচ্ছে একটি দেশের সর্বোচ্চ আইন। অন্য সব আইনই সংবিধানের নিরিখে হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট হচ্ছে সংবিধানের অভিভাবক। যেকোনো আইনের বৈধতা-অবৈধতা নিরূপণ করার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে উচ্চ আদালত আরো বলেন, সংবিধান শুধু অতীত ও বর্তমানকে নিরূপণ করে না, এটা ভবিষ্যতেরও দিশারি। একইভাবে সংবিধান শুধু একটি দালিলিক বিষয় নয়, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সংবিধান একটি জাতির ভিত্তি এবং মৌলিক নির্দেশকও। একই সঙ্গে তা বিকাশমান ও পরিবর্তনশীল।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, সাংবিধানিক ও আইনগত পরিবর্তন সংবিধানের মৌলিক কাঠামো অনুযায়ী করতে হবে। সে জন্য আইন বিভাগকে অবারিত ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর মাধ্যমে আইন বিভাগ বা সংসদের ক্ষমতাকে সীমিত করা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করা হয়েছিল।

রায়ে আদালত বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী আপিল বিভাগের ত্রয়োদশ সংশোধনীর সংক্ষিপ্ত রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একমাত্র গণভোটের মাধ্যমে সংবিধানের প্রস্তাব এবং মৌলিক কাঠামোয় পরিবর্তন আনা যায়। গণতন্ত্র হচ্ছে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। গণতন্ত্র বিকশিত হয় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মূল সংবিধানে না থাকলেও একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচনের অভিপ্রায়ে ১৯৯৬ সালে তা সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছিল। ফলে এই ব্যবস্থা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোরই অংশে পরিণত হয়েছে। কারণ এই ব্যবস্থা বিলুপ্তির পর বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) জনগণের আস্থার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এই তিনটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার পাশাপাশি জনগণের আস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, যে কারণে সর্বশেষ সরকারকে জনগণের আন্দোলনের মুখে বিতাড়িত হতে হয়েছে। সরকারকে বিতাড়িত করতে গিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। শুধু তা-ই নয়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জনগণের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে একটি নতুন গণতন্ত্র, নতুন স্বাধীনতা, নতুন বাংলাদেশ, যা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। পঞ্চদশ সংশোধনী জনগণের এসব আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকার হতে পারে—অ্যাটর্নি জেনারেল : বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে নামান্তরিত (রিনেমড) হতে পারে বলে রায়ের পর অভিমত ব্যক্ত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই (অন্তর্বর্তী) সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রিনেমড হতে পারে। যেমন—একই ব্যক্তি (বিচারক) যখন সিভিল মামলা করেন তখন তাকে বলা হয় জেলা জজ, আবার ওই একই ব্যক্তি (বিচারক) যখন ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করেন তখন তিনি হয়ে যান দায়রা জজ। তেমনি এই অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যক্তিরা যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় চলে যাবেন, তখন উনারাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হবেন। এটাতে সাংবিধানিক সাংঘর্ষিকতার কোনো জায়গা নেই।’

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আপিল বিভাগে (ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার) যে রিভিউ বিচারাধীন, তা পাশ কাটিয়ে হাইকোর্টের এই রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কেন আছে? কারণ তত্ত্বাবধায়কের ত্রয়োদশ সংশোধনীতে দুটি পার্ট। এক হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বৈধ নাকি অবৈধ। এই পার্টে চারজন বলেছেন অবৈধ, তিনজন বলেছেন বৈধ। আবার দ্বিতীয় পার্টে সব বিচারপতি বলেছেন, পরবর্তী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে হবে। এই যে পরবর্তী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে হবে—এটা বলার আগেই পঞ্চদশ সংশোধনী চলে এসেছে। তাহলে ধরে নেওয়া হবে, আপিল বিভাগের ওই রায়ের কার্যকারিতা এখনো আছে। আগামী দুটি নির্বাচন করতে আপিল বিভাগের রিভিউ রায়ের অপেক্ষায় থাকতে হবে না।’

রিট আবেদনকারী আইনজীবী শরীফ ভূইয়া বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার মধ্য দিয়ে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহির প্রয়োজনীয়তা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল। একই সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থাও ধ্বংস করা হয়েছিল। নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করার ফলে দেশে কর্তৃত্ববাদী সরকার চালু হয়েছিল। সেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।’

আদালত রায়ে বলেছেন, যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গণতন্ত্র ও নির্বাচনকে সুসংহত করে, সেহেতু তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংবিধানের একটি মূল কাঠামো। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এখনই ফিরে এসেছে বলা যাবে না। কারণ এই ব্যবস্থাকে দুইভাবে বাতিল করা হয়েছিল। প্রথমত, তৎকালীন বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে একটি রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। পরবর্তী সময়ে সংসদ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। আপিল বিভাগের রায়ের পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন এখনো বিচারাধীন। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফেরার বিষয়টি আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের ওপরও নির্ভর করছে বলে জানান এই আইনজীবী।

সূত্র: কালের কণ্ঠ 

No comments:

Post a Comment

ধর্ষণ থামছে না, ফেব্রুয়ারিতে দিনে গড়ে ১২টি মামলা। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 ধর্ষণ থামছে না, ফেব্রুয়ারিতে দিনে গড়ে ১২টি মামলা: (নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা: ২০২৪: জানুয়ারি–জুলাই ১০,৭০৪টি, ২০২৪: আগস্ট...