Monday, December 16, 2024

বদলে যাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা! (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

বদলে যাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা!

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০০:০০

(সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীরাই হবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্নভাবে সহায়তাকারীদের ‘যুদ্ধ সহায়ক’ করার প্রস্তাব ► মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন বয়স ১২ বছর ৬ মাসের বদলে ১৩ ► বয়সের ভিত্তি ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বরের বদলে ২৬ মার্চ)

বদলে যাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা

মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর আরেকবার পরিবর্তন আসতে পারে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞায়। প্রস্তাবিত নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারীরাই হবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। অন্যদিকে বিশ্ব জনমত গঠনে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিরা, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী, শিল্পীসমাজসহ যারা মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন তাদের ‘যুদ্ধ সহায়ক’ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সর্বনিম্ন বয়সেও পরিবর্তন আসতে পারে।

মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন বয়স হতে পারে ১৩ বছর।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) সূত্র জানিয়েছে, ২০২২ সালের জামুকা আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ২০ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজমকে চেয়ারম্যান করে পরবর্তী তিন বছরের জন্য ১১ সদস্যবিশিষ্ট জামুকা কাউন্সিল পুনর্গঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠনের পর গত ২৪ নভেম্বর জামুকার ৯১তম সভা এবং ২ ডিসেম্বরের মুলতবি সভায় এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, স্বাধীনতার পর অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় পার হলেও এখনো মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি নির্ভুল ও বিতর্কমুক্ত তালিকা হয়নি। একাধিকবার বদলানো হয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাও। এ অবস্থাকে জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অসম্মানজনক বলছেন তাঁরা।

সূত্র বলছে, জামুকা আইন সংস্কার ও বিধিমালা প্রণয়ন করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নতুন করে সংস্কার করা হবে।

জামুকার ৯১তম সভার আলোচ্যসূচিতে জামুকার আইন বদলে অধ্যাদেশ করার বিষয়টিও ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবর্তিত সংজ্ঞাসহ একটি সংশোধিত খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। তবে এখনো কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। সংশোধিত খসড়া ও সংজ্ঞা নিয়ে আরো যাচাই-বাছাই ও বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে এটি উপদেষ্টা পরিষদে যাবে।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জামুকার আইনে অ্যাবসুলেটলি কিছু দলীয় ন্যারেটিভ আছে।

এটা নৈর্ব্যক্তিক একটা অবস্থান থেকে হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। রণাঙ্গনে সরাসরি সশস্ত্র যুদ্ধ করেছেন যারা, তাঁরা চান মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে খ্যাত হতে। আর মুক্তিযুদ্ধে নানান সহায়ক শক্তি ছিল। ওখানে (মুক্তিযোদ্ধার বিদ্যমান সংজ্ঞায়) ঢালাওভাবে সবাইকে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় নিয়ে আসা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠনগুলোর সঙ্গে আমি কথা বলেছি। এটা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সে জন্য আমরা যারা যেভাবে ভূমিকা রেখেছেন ওইভাবেই উল্লেখ করতে চাই। তাদের ভাতা নিয়েও কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, আমরা রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছি, আমরা সেই মর্যাদা চাচ্ছি। এই পরিবর্তনগুলো হবে। আমরা সেভাবেই প্রস্তাব দেব। পরে উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নেবে।’

জামুকা আইন সংশোধনের পর অধ্যাদেশ করে এর জন্য বিধিও প্রস্তুত করা হবে জানিয়ে উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘জামুকা আইন হয়েছে, আইন প্রয়োগের বিধি হয়নি। বিধি না হওয়ার ফলে জামুকায় তুঘলকি কাজগুলো হয়েছে। বিধি থাকলে তো কোনো না কোনোভাবে কেউ কারো প্রতি দায়ী থাকত। জামুকা কি করে? তারা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই করে সরকারকে সুপারিশ করে। সরকার সুপারিশকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট করবে ও ভাতা দেবে। তাহলে মন্ত্রণালয়ের কাজ কী? তাদের কোনো কাজ নেই গেজেট করা ছাড়া। ফলে বিধিবদ্ধ থাকলে এই নৈরাজ্য হতে পারত না।’

বিদ্যমান সংজ্ঞার সঙ্গে প্রস্তাবিত সংজ্ঞার তুলনা

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রথম মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠনের সময় করা সেই সংজ্ঞায় মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সদস্য হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদেরই মুক্তিযোদ্ধা বলা হয়েছে। পরে ২০১৬ সালে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এক গেজেটের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী ২০১৮ সালে ‘মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন’ যুগোপযোগী করার পর জাতীয় সংসদে পাস করা হয়।

২০২২ সালে হওয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিল (জামুকা) আইনেও মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা যুক্ত করা হয়। সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে গ্রামেগঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে দখলদার ও হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন এবং যাদের বয়স সরকার নির্ধারিত বয়সসীমার মধ্যে তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন।

সংজ্ঞায় রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের পাশাপাশি বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী বাংলাদেশি নাগরিক, মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারী-দূত, মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ (মেম্বার অব ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) বা এমপিএ (মেম্বার অব প্রভিনশিয়াল অ্যাসেম্বলি) যারা পরে গণপরিষদ সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছেন, তারাও মুক্তিযোদ্ধা গণ্য হবেন।

এ ছাড়া দখলদার ও হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগী কর্তৃক নির্যাতিতা সব নারী (বীরাঙ্গনা), স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলা-কুশলী, দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশি সাংবাদিক, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড় এবং মুক্তিযুদ্ধকালে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া মেডিক্যাল টিমের ডাক্তার, নার্স ও সহকারীদেরও মুক্তিযোদ্ধা বলা হয়েছে।

এদিকে সূত্র মতে, প্রস্তাবিত খসড়ার সংজ্ঞায় মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী এবং বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্নভাবে ভূমিকা রাখা অন্যদের ‘যুদ্ধ-সহায়ক’ নাম দিয়ে শ্রেণিভুক্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধার বর্তমান সংজ্ঞায় থাকা ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়ে’ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার বিষয়টিও বাদ যেতে পারে নতুন সংজ্ঞায়।

সাড়ে ১২ নয়, ১৩ হতে পারে মুক্তিযোদ্ধার বয়স

বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন বয়স ১২ বছর ছয় মাস। ২০১৮ সালের এক পরিপত্রের মাধ্যমে এই বয়স নির্ধারণ করা হয়। সেখানে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর যেসব মুক্তিযোদ্ধার বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ছয় মাস, ছিল তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন। তবে নতুন সংজ্ঞায় মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন বয়স ১৩ করা হতে পারে এবং বয়সের ভিত্তি ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বরের বদলে ২৬ মার্চ হতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। তবে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত নির্যাতিতা নারী বা বীরাঙ্গনার ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বয়সসীমা প্রযোজ্য হবে না।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংজ্ঞা নির্ধারণ

প্রস্তাবিত খসড়ায় ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ শব্দদ্বয়কেও সংঘায়িত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত বাংলাদেশের জনগণের সমতা, মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিতের যে চেতনা তাই হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

যা বলছেন মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্টজনরা

স্বাধীনতার এত বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও তালিকা চূড়ান্ত না করতে পারায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্টজনরা। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক লেখক ও সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পরও একটা পরিপূর্ণ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হয়নি। একইভাবে এটাও দুর্ভাগ্যজনক যে ৫৩ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এই তালিকা পরিপূর্ণ করার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রচেষ্টা নিয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, মুক্তিযোদ্ধা যারা বেঁচে আছেন সবাই সত্তরোর্ধ্ব, বয়োবৃদ্ধ। এর আগেও বিভিন্ন সরকারের আমলে যাচাই-বাছাই হয়েছে, এতে করে তারা হয়রানির শিকার হয়েছেন। আমি আশা করব, নতুন করে যাচাই-বাছাইয়ের নামে মুক্তিযোদ্ধারা যেন আবারও হয়রানির শিকার না হন তা নিশ্চিত করতে হবে।’

মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জেড আই খান পান্না বলেন, ‘আমি আইনটা দেখে পরে এ সম্পর্কে বিস্তারিত মন্তব্য করতে চাই, এখনই নয়। তবে আমি বিশ্বাস করি, রাজাকারসহ স্বাধীনতাবিরোধীরা ছাড়া সবাই মুক্তিযোদ্ধা। অস্ত্র ছিল না। তা না হলে সাড়ে চার কোটি মানুষই হাতে অস্ত্র তুলে নিত। যুদ্ধ সহায়করাও মুক্তিযোদ্ধা।’

সূত্র: কালের কণ্ঠ 

No comments:

Post a Comment

ধর্ষণ থামছে না, ফেব্রুয়ারিতে দিনে গড়ে ১২টি মামলা। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 ধর্ষণ থামছে না, ফেব্রুয়ারিতে দিনে গড়ে ১২টি মামলা: (নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা: ২০২৪: জানুয়ারি–জুলাই ১০,৭০৪টি, ২০২৪: আগস্ট...