Tuesday, November 12, 2024

কক্সবাজারে ৪,৮০৩ কোটি টাকার জমি প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছিল এক লাখ টাকায়।

BDC CRIME NEWS24

কক্সবাজারে ৪,৮০৩ কোটি টাকার জমি প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছিল এক লাখ টাকায়:

(৭০০ একর ‘রক্ষিত’ বনভূমির বরাদ্দ বাতিল)

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর, ২০২৪ ০২:৪৫

কক্সবাজারে সাগরঘেঁষা মেরিন ড্রাইভের পূর্বপাশজুড়ে ঘন সবুজে ঘেরা বনভূমি। যেখানে রয়েছে নানা জাতের প্রাকৃতিক বৃক্ষ আর বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী। পাখির চোখে (ড্রোন) দেখলে যেখানে সবুজ ছাড়া পাহাড়ের মাটির দৃশ্য চোখে পড়ে না। ‘রক্ষিত’ সেই বনভূমিই (৭০০ একর) প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমি করার নামে বরাদ্দ নেওয়া হয়েছিল।

নাম দেওয়া হয়েছিল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ব্যবহার করে তত্কালীন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে ওই বনভূমি বাগিয়ে নিয়েছিলেন। তখন পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রতিবাদ উঠলেও সেই প্রতিবাদে কান না দিয়ে প্রশাসনকে খুশি করার জন্য সরকার ‘প্রতিবেশ সংকটাপন্ন’ ওই বনভূমি বন্দোবস্তের আদেশ দিয়েছিল। ২০২১ সালে বরাদ্দ দেওয়া বন বিভাগের ‘রক্ষিত’ সেই বনভূমির বরাদ্দ অবশেষে বাতিল করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

সূত্র মতে, সরকার নির্ধারিত যে জমির মূল্য চার হাজার ৮০৩ কোটি টাকা, সেই জমি ‘খাস’ দেখিয়ে মাত্র এক লাখ টাকায় প্রশাসন ক্যাডারকে দিয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার।

ওই জমি বরাদ্দের প্রতিবাদকারীদের একজন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি প্রশাসনের ৭০০ একর বনভূমি বরাদ্দ বাতিলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফকে চিঠি দিয়েছিলেন। তাঁর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতেই বনভূমির ওই বরাদ্দ বাতিল করা হলো।

গতকাল সোমবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমিনুর রহমান স্বাক্ষরিত ১০ নভেম্বর প্রেরিত পত্রের মাধ্যমে উল্লিখিত বিষয়ে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণপূর্বক ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সূত্র মতে, রেকর্ডে ‘রক্ষিত বন’ উল্লেখ না থাকায় বন বিভাগ এ বিষয়ে মামলা করে। পাশাপাশি, ভূমির বন্দোবস্ত বাতিল চেয়ে একটি রিট মামলাও হাইকোর্টে দায়ের করা হয়। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ এই বন্দোবস্তের বিষয়ে স্থগিতাদেশ প্রদান করেন, যা আপিল বিভাগে বহাল রয়েছে।

বনভূমি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অন্যতম সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ ওই বনভূমিতে মূলত প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছপালা রয়েছে। বন্য প্রাণীদের অন্যতম নিরাপদ আবাসও ওই এলাকা। বিশেষ করে পৃথিবীর অন্যতম মহাবিপন্ন প্রজাতির প্রাণী এশীয় বন্য হাতির একটি দল নিয়মিতই ওই অঞ্চল দিয়ে বিচরণ করে। বিশেষ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য—যেমন নরম মাটি, ছড়া ও মিঠা পানির আধার ও সমুদ্র উপকূলবর্তী আবহাওয়ার কারণে সেখানে বৈচিত্র্যপূর্ণ বৃক্ষরাজি জন্মেছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, ১৯৯৯ সালে কক্সবাজারের ঝিলংজা মৌজার বনভূমিসহ কক্সবাজার সদর ও সাগরসৈকতকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ অনুসারে ইসিএ এলাকায় কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ, প্রতিবেশ-পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো তত্পরতা চালানো নিষেধ। কিন্তু ২০২১ সালে ওই বনভূমিকে খাসজমি দেখিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তা প্রশাসন কর্মকর্তাদের একাডেমি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।

সূত্র: কালের কণ্ঠ 

No comments:

Post a Comment

গুমের পর চালানো হতো ১৭ ধরনের নির্যাতন। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 গুমের পর চালানো হতো ১৭ ধরনের নির্যাতন: (ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নির্যাতনের কথা জানালেও তা উপেক্ষা) প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৫ দেশ...