ছাত্রলীগের পদ পেয়ে শূন্য থেকে কোটিপতি আতিক:
প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১৫:৩৫
কয়েক বছরের মধ্যে বনে যান কোটি কোটি টাকার মালিক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জমি দখল, বাড়ি থেকে উচ্ছেদ, জাল দলিল, অবৈধভাবে একচেটিয়া ঠিকাদারি ব্যবসা, ফুটপাত থেকে শুরু করে শিল্পপতির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি, ডিশ ব্যবসা, মার্কেট দখলসহ নানা উপায়ে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। ঘুরতেন অবৈধ অস্ত্র নিয়ে। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে নিজস্ব বাহিনী দিয়ে প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে মারধর করতেন।
সাভার ছাত্রলীগ সভাপতি পদ পাওয়ার পর বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময় সংবাদ প্রচারিত হলেও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগ পর্যন্ত বহাল তবিয়তে ছিলেন তিনি। চালিয়ে গেছেন অপকর্ম। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা অপরাধে আতিকের ছাত্রলীগের পদ-পদবি একবার স্থগিত করা হয়।
পরবর্তী সময়ে তা প্রত্যাহার না করিয়ে পুনরায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর মাধ্যমে তাকে স্বপদে বহাল করা হয় বলে অভিযোগ আছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-১৯ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান ও উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজিবের হাত ধরে মূলত সাভারের রাজনীতিতে আতিকের নাটকীয় উত্থান। ২০১৬ সালের আগে সাভারের ভাইবোন ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছোট্ট একটি ঘুপচি টিনশেড ঘরে থাকলেও বর্তমানে সাভারের রেডিও কলোনি থেকে শুরু করে নামে-বেনামে বহুতল একাধিক বাড়ি রয়েছে আতিকের। আগ্নেয়াস্ত্রের জন্য আবেদনপত্রে নিজের কোটি টাকা আয় দেখিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দলীয় নেতাকর্মীদের নির্যাতন, মারধর, ডিশ ব্যবসা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট, জমি দখল, জাল দলিল করে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ, চাঁদাবাজি, লুটপাট, পদ বাণিজ্য, অস্ত্রবাজি ছিল তার নেশা।
এভাবেই সাভারে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছিলেন। অবৈধভাবে আয় করেছেন শতশত কোটি টাকা। তবে ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পায়নি কেউ।
আতিকের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার তেওতা গ্রামে। নদী ভাঙনে বসতবাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়ায় প্রায় ২০ বছর আগে কাজের সন্ধানে ২ ছেলে, দুই মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে সাভারে আসেন আতিকের বাবা ইউসুফ মিয়া। শেষ সম্বল জমানো টাকা দিয়ে বাড্ডা-ভাটপাড়া এলাকায় এক খণ্ড জমি কিনে টিনশেড ঘরে বসবাস শুরু করেন। ৬ জনের সংসারে ৩ বেলা খাবার জোগাড় করা কষ্টসাধ্য ছিল ইউসুফ মিয়ার। স্থানীয় এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির ভাইয়ের সুপারিশে যোগ্য ও মেধাবীদের ডিঙিয়ে ২০১৬ সালে ছাত্রলীগের সভাপতির পদ বাগিয়ে নেন আতিক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের এক নেতা জানান, পৌর এলাকার ভাটপাড়া মৌজায় ২০১৬ সালে সাড়ে ৫ শতাংশ জমি কেনেন আতিক। জমিটির বর্তমান বাজারমূল্য কয়েক কোটি টাকা। ২০২১ সালে সাভারের অগ্রণী সোসাইটিতে প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের আরেকটি প্লট কেনেন তিনি। এ জমিতে বর্তমানে তার আলিশান অফিস। মানিকগঞ্জ জেলায় তিনি অন্তত ২০ বিঘা জমি করেছেন।
সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে থাকায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আতিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সূত্র: কালের কণ্ঠ
No comments:
Post a Comment