Tuesday, August 19, 2025

এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক:

প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২৭

বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের অভ্যন্তরে ২০০৯ থেকে ২০২৪-এ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। গত কয়েক বছরে সংস্থাটিতে ছাত্রলীগ ক্যাডার, আওয়ামী পরিবারের সদস্য এবং ভারত অনুগতদের ব্যাপকভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে যে কোনো সময় রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বড় ধরনের হুমকির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মেজর জেনারেল (অব.) এম মনজুর আহমেদ, লে. জেনারেল (অব.) শামসুল হক এবং মেজর জেনারেল (অব.) টিএম জোবায়ের এনএসআইকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর ঘাঁটি হিসেবে তৈরি এবং আওয়ামীকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকারে এসে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম মনজুর আহমদকে বিশেষ বিবেচনায় সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে মেজর জেনারেল পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেন। মনজুর আহমেদ ছিলেন শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকের কোর্সমেট ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি ‘র’-এরও বিশ্বস্ত বলে জানা গেছে। এ কারণে ‘র’-এর পরামর্শে তাকে এনএসআই পুনর্গঠনের নামে সংস্থার মহাপরিচালক করা হয়। এ পদে তিনি পাঁচ বছর ছিলেন। এ সময় এনএসআইকে তিনি বিরোধী মত দমনের কাজে ব্যবহারের পাশাপাশি ‘র’-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়ার সুযোগ করে দেন। মেজর জেনারেল মনজুর ও পরবর্তী ডিজিরাও এনএসআইকে এতটাই ‘র’ ঘনিষ্ঠ ও আওয়ামীকরণ করেন যে, বলা হচ্ছে ‘আওয়ামী লীগ ফেরত এলে শেখ হাসিনার নামে প্রথম মিছিল বের হবে এনএসআই হেডকোয়ার্টার থেকে।’ এনএসআইয়ে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে যে জালিয়াতি হয়েছে তাও সবকিছুকে হার মানিয়েছে। নিয়োগ কমিটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কর্নেল জাকির হোসেন (পরিচালক প্রশাসন), আফজালুন নাহার (অতিরিক্ত পরিচালক) ও নাসির মাহমুদ গাজী (যুগ্ম পরিচালক)। এই নিয়োগ কমিটি নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে আরো জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর অনুপ্রবেশ শুরু হয়। দ্বিতীয়বার ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর গত পনেরো বছরে এনএসআই বলতে গেলে প্রায় পুরোপুরি ‘র’-এর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সূত্র জানায়, ‘র’-এর এনএসআই দখলের প্রত্যক্ষ কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৬-২০০১ সালে শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদের শাসনামলের শেষের দিকে। এ সময় ছাত্রলীগের (ডিবি হারুনের সমসাময়িক) একটি গ্রুপকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় এনএসআইর সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০১ সালে শিক্ষানবিশ হিসেবে মৌলিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী এই ব্যাচের ১৩ জন সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় পরবর্তী নতুন সরকারের (২০০১-২০০৬) সময় সরকারি চাকরি বিধি মোতাবেক তাদের চাকরির অবসান (সার্ভিস ডিসপেনসড উইথ) ঘটানো হয়। পরে এই ১৩ জন সরকারের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করলে তা খারিজ হয়ে যায়। তারা আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করলে তাও খারিজ হয়। এরপর প্রধান বিচারপতি বরাবর রিভিউ পিটিশন করলে সেটিও খারিজ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলে তার উপদেষ্টা এইচটি ইমাম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রশাসনিক আদেশ বলে ভূতাপেক্ষ জ্যেষ্ঠতা, পদোন্নতি ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধাসহ ওই ১৩ জনকে এনএসআইয়ের চাকরিতে পুনর্বহাল করেন এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়। এই ১৩ জনের মধ্যে বর্তমানে ১২ জন রয়েছেন। এরা যোগদানের পর এনএসআইতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়। এই ১২ জন এখন যুগ্মপরিচালক। তাদের মাধ্যমে পুনরায় শুরু হয় ‘র’-এর এনএসআই দখলের পরিবর্তিত কার্যক্রম। ‘র’-এর পক্ষে এনএসআইর ভেতর থেকে শক্তিশালী ভূমিকা পালন শুরু হয় ২০০০-২০০১ ব্যাচের কর্মকর্তাদের কেন্দ্র করেই। অথচ এই ১৩ জনকে পুনর্বহালের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জারি করা প্রশাসনিক আদেশটি ছিল এখতিয়ারবহির্ভূত এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালত অবমাননার শামিল। এই ১৩ কর্মকর্তার মধ্যে আফজালুন নাহার ছাড়াও কর্মকর্তা ‘জহির’ চোরাচালন ও অর্থপাচারের মামলায় বিচারের সম্মুখীন। এছাড়া পুলিশের পলাতক এসপি প্রলয় কুমার জোয়ার্দারের (‘র’-এর চিহ্নিত বড় এজেন্ট) স্ত্রী প্রয়াত বিপ্লবী রানী দাসকেও এনএসআইতে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। বিপ্লবী রানী দাসের আরেক আত্মীয়কেও চাকরি দেওয়া হয়। এদের মাধ্যমে ‘র’ খোলাখুলিভাবে তাদের কার্যক্রম চালায়।

২০০০-২০০১ ব্যাচের ১৩ কর্মকর্তার সরাসরি নিয়ন্ত্রণে ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) মনজুরের সহযোগিতায় চলতে থাকে ‘র’-এর পছন্দমতো লোক নিয়োগ। নিয়োগের পর এসব কর্মকর্তার মধ্য থেকে ‘র’-এর বাছাই করা কিছু কর্মকর্তাকে ভারত থেকে বিশেষ গোয়েন্দা ট্রেনিং করিয়ে আনা হয়। এ প্রক্রিয়ায় বিপুলসংখ্যক এনএসআই কর্মকর্তাকে কয়েক দফায় ‘র’ ভারতে প্রশিক্ষণ করিয়ে এনে এনএসআইর গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন নিশ্চিত করে। ‘র’ এনএসআইর মাধ্যমে তাদের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মনজুর আহমেদের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী বিটিভির সংবাদ পাঠিকা শিরিন শিলা ও ডিজির যৌথ মালিকানায় একটি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে এবং টিঅ্যান্ডটি বোর্ড থেকে ‘আইজিডব্লিউ’ লাইসেন্স নেয়।

এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের আড়ালে ‘র’-কে সুবিধা দেওয়া হয় এবং অবৈধ কার্যকলাপ আড়ালের লক্ষ্যে গুলশান টেলিফোন এক্সচেঞ্জের সুইচিং ও মিটারিং সিস্টেম বাইপাস করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে দায়সারা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় যার কার্যক্রম আজ পর্যন্ত অজানাই রয়ে গেছে। জানা গেছে, নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি ও কার্যকরী তথা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে টিঅ্যান্ডটির বেশিরভাগ টেকনিক্যাল স্থাপনা গোপনে সংযুক্ত করে তা ‘র’-এর গোপন অপারেশনের কাজে ব্যবহার করা হয়। সামগ্রিক বিষয়টির গোপনীয়তার স্বার্থে এনএসআইর সিনিয়র পদে সশস্ত্র বাহিনী থেকে ‘র’-এর পছন্দ ও মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের প্রেষণে কিংবা সরকারি চুক্তিতে এবং বিধিবহির্ভূত বা সম্পূর্ণ অবৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়া হয়। এই দুইয়ের সমন্বয়ে এনএসআই চলে যায় ‘র’-এর পুরোপুরি দখলে। বিষয়টি কার্যকর করার জন্য মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মনজুর আহমেদকে প্রথমে দুই বছরের চুক্তিতে এবং পরে তার চুক্তি পুনরায় একসঙ্গে তিন বছরের জন্য নবায়ন করা হয় অর্থাৎ তাকে এক নাগাড়ে পাঁচ বছর চুক্তিতে মহাপরিচালক রাখা হয় যা এনএসআইর ইতিহাসে নেই। এটা ‘র’-এর এনএসআই দখল ও তাদের অবস্থান সুসংহত করার নীলনকশার অংশ।

এনএসআইর ভেতরে ‘র’ নিয়ন্ত্রিত আরো একটি গোপন এনএসআই সৃষ্টি করা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। ‘র’-এর অনুগত জনবল সময়ের বিবর্তনে এমন এক অবস্থানে এসেছে যে, বর্তমানে তারা এনএসআইর অতিরিক্ত পরিচালক পদ থেকে শুরু করে সব পদ ও গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য পদে দাপটের সঙ্গে পদায়িত। তাদের প্রোটেকশন দেওয়ার জন্য নিয়োজিত আছে সশস্ত্র বাহিনী থেকে প্রেষণে, সরকারি ও বেসরকারি চুক্তি এবং অবৈধ পন্থায় তথাকথিত নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের বেতন-ভাতাদি ‘সোর্স মানি’ থেকে মেটানোর পাশাপাশি তাদের জন্য গাড়ি, ড্রাইভার নিয়োগ ও সিকিউরিটি গার্ডও সোর্স মানি থেকে দেওয়া হচ্ছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে এনএসআই সিকিউরিটি গার্ড সংক্ষেপে ভারতের সঙ্গে মিল রেখে বলা হয় ‘এনএসজি’।

এনএসআইতে ২০০০-২০০১ ব্যাচের ১৩ কর্মকর্তা, যারা এইচটি ইমামের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রশাসনিক আদেশে নিয়োগপ্রাপ্ত তারা এবং ২০১২ সালে নিয়োগপ্রাপ্তদের ব্যাপারে ‘র’ সব সময় তৎপর ছিল এবং এখনো রয়েছে। ২০১২ সালের ব্যাচটি নেওয়ার পর এনএসআইতে ২০১৪, ২০১৬, ২০১৭, ২০২২ ও ২০২৩ মোট পাঁচটি ব্যাচ যোগদান করে। এদের বেশিরভাগই ছাত্রলীগের পদধারী ক্যাডার এবং আওয়ামী লীগ নেতা ও বিভিন্ন বাহিনীতে আওয়ামী কর্মকর্তাদের আত্মীয়-স্বজন। ২০০০-২০০১ ব্যাচের চিহ্নিত ‘র’-এর এজেন্ট হিসেবে পরিচিত দুজন যুগ্ম পরিচালক পরবর্তী সময়ে তাদের ভাই-ভাতিজাসহ মোট ১৪২ জন আত্মীয়-স্বজনকে এনএসআইতে চাকরির ব্যবস্থা করিয়েছেন।

পলাতক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ভাতিজি নাহরিন চৌধুরী ২০২২ সালে লিখিত পরীক্ষায় ফেল করা সত্ত্বেও তাকে এনএসআইর সহকারী পরিচালক পদে চাকরিতে নেওয়া হয়। একই বছর তার স্বামী রুবাইয়েত ইমাম শোভনকেও সহকারী পরিচালক পদে চাকরি দেওয়া হয়। এই দুজনকেই স্ট্র্যাটেজিক শাখায় পদায়ন করা হয়। তার আরেক ভাতিজি তাহসিনা নাহলিন খানকে ২০২২ সালে এনএসআইতে চাকরি দেওয়া হয়। ২০২০ সালে এনএসআই নিয়োগ পরীক্ষায় পলাতক লে. জেনারেল (অব.) মুজিবের ভাতিজি ফারিয়া জামান মিশিতা মুজিবের গাড়িতে করে এসে বিকেলের পরীক্ষা সকালে দিয়ে চাকরি পান। মিশিতার স্বামী আসিফ ইবনে রশীদকেও একই বছর একই পদে চাকরি দেওয়া হয়। রশীদ ঢাকা বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে কর্মরত ছিলেন।

আমার দেশ-এ জেনারেল মুজিবের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পরপরই তড়িঘড়ি করে তাকে নিরাপদ স্থান হিসেবে ফেনীতে বদলি করা হয়। নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজের (২০১৪) ছেলে আবিদ রাব্বি মো. মুতাসিম বিল্লাহ ২০১৮ সালে এনএসআইতে উপপরিচালক হিসেবে চাকরি পান। তিনি স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালাইসিস বিভাগে কর্মরত। নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে এখন মামলা চলমান রয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর মেয়ে ফারাহ ফয়েজকে ২০২৩ সালে সহকারী পরিচালক পদে চাকরি দেওয়া হয়। এখন ফারাহ প্রশাসনিক বিভাগে কাজ করছেন। তাকে ২০২২ সালে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। পরে ২০২৩ সালে তাকে স্থায়ী করা হয়। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজের চাচাতো ভাই আল আমিনকে ২০২০ সালে সহকারী পরিচালক পদে চাকরি দেওয়া হয়। তাকে সাতক্ষীরার দায়িত্ব দেওয়া হয়। জেনারেল আজিজের অনুরোধে সে সময় তার আত্মীয় আরো ১১ জনকে এনএসআইয়ের চাকরিতে নেওয়া হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নাতি অনিক কামাল ও কামরুল হাসান ২০২০ সালে সহকারী পরিচালক পদে যোগদান করেন।

এনএসআইর নিয়োগ প্রক্রিয়া ধ্বংস হয় শেখ হাসিনার প্রথম আমলের শেষ সময় ২০০১ সালে। তখন থেকেই ছাত্রলীগ ক্যাডারদের ঢোকানো শুরু হয়।

এনএসআইয়ের ওপর যেভাবে ‘র’-এর নজর পড়ে

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা বা এনএসআই ৫৪ বছরের প্রতিষ্ঠান। ১৯৭২ সালের ২৯ ডিসেম্বর এনএসআইর যাত্রা শুরু করে। ১৯৮২ সালের দিকে কালিদাস বৈদ্য ও চিত্তরঞ্জন সুতারের নেতৃত্বে ‘স্বাধীন বঙ্গভূমি’ নামে বাংলাদেশবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। প্রকাশ্যেই তারা খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, বরিশাল ও পটুয়াখালী নিয়ে ‘বঙ্গভূমি’ নামে হিন্দুদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের চক্রান্ত করেন। ভারতে আশ্রিতদের নিয়ে ‘বঙ্গসেনা’ নামে একটি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলেন। কালিদাস বৈদ্য ও চিত্তরঞ্জন সুতারকে দিয়ে এই ষড়যন্ত্র করানোর পেছনে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ জড়িত ছিল। পরবর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার জন্যও ‘র’ সেখানে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। ‘র’-এর এই ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই সফলভাবে ভণ্ডুল করে দেয়। এরপর থেকেই ‘র’ নীলনকশা প্রণয়ন করে কীভাবে এনএসআইকে কবজা করা যায়। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সেই সুযোগটি তারা লাভ করে এবং ২০০৯ সালের পর থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে এনএসআই অনেকটা তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

মেজর জেনারেল (অব.) মনজুর যেভাবে এনএসআই সাজান এবং তার নিয়োগ জালিয়াতি

২০০৯ সালে মেজর জেনারেল (অব.) মনজুর আহমেদ এনএসআইর মহাপরিচালক পদে আসীন হয়ে তিনটি কাজ করেন। সেগুলো হলো- বিগত সরকারের সময় যারা ভারতবিরোধী অবস্থান নিয়েছিল তাদের বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে জেলে প্রেরণ (যেমন- দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা), নিরপেক্ষ, সৎ ও দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাদের কোণঠাসা করা,

কেউ যাতে ভারত বা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে না পারে তার ব্যবস্থা, সংস্থার সব পদে ও নতুন পদ সৃষ্টি করে ছাত্রলীগের ক্যাডার, আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য ও ভারতের অনুগত ব্যক্তিদের নিয়োগের ব্যবস্থা করা।

মহাপরিচালক মনজুর আহমেদ ২০১১ সালে প্রায় ১০০০ এনএসআই সদস্য নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও ভারতীয় দূতাবাস থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। নিয়োগ প্রক্রিয়া তদারকির জন্য তখন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা থেকে কমপক্ষে দুই সদস্যের স্পেশাল টিম ঢাকায় অবস্থান করছিল। প্রাথমিকভাবে ৩৬ জনকে সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত থাকলেও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরামর্শে ২০১৪ সালের নির্বাচন ও যুদ্ধাপরাধী বিচারের গোপন অপারেশন বাস্তবায়নের জন্য অগ্রিম ব্যবস্থা হিসেবে ১৪২ জন সহকারী পরিচালক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এই নিয়োগের জন্য একটি সার্কুলার জারির পর সাধারণ ছাত্ররা আবেদন করলেও ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ কারো সুপারিশ ছাড়া অন্য নামে কারো প্রবেশপত্র (অ্যাডমিট কার্ড) বিতরণ করা হয়নি। তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সুপারিশেও প্রবেশপত্র দেওয়া হয়।

এনএসআইর নিয়োগের আগে প্রার্থীদের তালিকা করা হয় পাঁচটি স্থান থেকে। সেই পাঁচটি স্থান হচ্ছে- মধুর ক্যান্টিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ভারতীয় দূতাবাস ও ভারতপন্থি সেনা কর্মকর্তা। সেই পাঁচ স্থানের কোনো একটি স্থান থেকে যদি নিয়োগে আগ্রহীরা ছাড়পত্র না পেতেন তাহলে তাদের এনএসআইয়ে নিয়োগ দেওয়া হতো না। জনকণ্ঠ, কালেরকণ্ঠ, ইত্তেফাক, ডেইলি সানসহ চিহ্নিত পত্রিকায় এই চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগের রাতেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতির হাতে যায় চলে যায় এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।

সূত্র জানায়, নিয়োগের আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের সিভি সংগ্রহ করা হয় এবং তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সেক্রেটারি সিদ্দিকী নাজমুল আলম নির্বাচিত প্রার্থীদের ভাইভা নেন এবং সুপারিশপত্রসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে তালিকা করেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, শেখ সেলিম ও মির্জা আজম। ক্যান্টনমেন্টে ‘র’-এর পক্ষে কাজ করা সামরিক কর্মকর্তাদের সুপারিশে একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এর সঙ্গে শেখ হাসিনা ও ভারতীয় দূতাবাসের সুপারিশ যোগ করে সম্পূর্ণ তালিকা প্রস্তুত করে মনোনীত ব্যক্তিদের প্রবেশপত্র প্রদান করা হয়। মনোনীত ব্যক্তিদের শুধু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও ভাইভাতে আহ্বান করা হয়। এভাবেই ২০১১ সালে প্রায় ১০০০ সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ ও বিবিএ ফ্যাকাল্টির মাধ্যমে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। যাদের সুপারিশ আছে, তারাই এই পরীক্ষা দিতে পারেন। তাদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল এসএমএস-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই প্রিলি পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ করা হয় যাতে আগেই নির্বাচিত করে রাখা প্রার্থীরা যেন বাদ না যায়। লিখিত পরীক্ষার বিষয়টি বিইউপি বা এমআইএসটি’র অধীনে রাখা হয় যাতে এই নিয়োগ পরীক্ষার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন করতে না পারে।

নিয়োগ জালিয়াতিতে চারটি বিষয়ে গুরুত্ব

সূত্র জানায়, এনএসআই নিয়োগের আগে চারটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেগুলো হলোÑচাহিদা নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রার্থী নির্ধারণ ও নিয়োগ প্রদান। চাহিদা নির্ধারণে গুরুত্ব দেওয়া হয় ‘র’ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও নীলনকশা বাস্তবায়নের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে জনবল নিয়োগ।

পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়, জনপ্রশাসন থেকে জনবলের চাহিদা অনুমোদন, নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণের জন্য সব পক্ষকে নির্দেশনা প্রদান যা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক- ১২ সমন্বয় করেন। প্রার্থী নির্ধারণে যেসব কাজ করা হয় তা হলোÑ মধুর ক্যান্টিন, আওয়ামী লীগের কার্যালয়, ভারতপন্থি কর্মকর্তাদের সুপারিশ, ভারতীয় দূতাবাসের সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একত্রিতকরণ, চাকরির সার্কুলার প্রধান ও সুপারিশপ্রাপ্ত মনোনীত ব্যক্তিদের প্রবেশপত্র প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ। নিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বশেষ যে কাজটি করা হয় তা হলো, কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে মনোনীত ব্যক্তিদের ভাইভাতে আহ্বান করা এবং মনোনীতদের থেকে সর্বশেষ চাকরির যোগদানপত্র দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, সবচেয়ে দুর্নীতিপরায়ণ, বাজে, অস্বচ্ছ ও প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১১ সালের পর একইভাবে ২০১৪ সালে ৫৪ জন সহকারী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হলেও ৫৩ জন যোগদান করে। এছাড়াও এই পদসহ এ সময় প্রায় ৫০০ জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগের উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা ও সরকারবিরোধী আন্দোলন দমন করা।

এনএসআই ডিজি (লে. জে.) শামসুল হকের আমলে আত্মীয়-স্বজন নিয়োগ

সূত্র জানায়, মেজর জেনারেল শামসুল হক এনএসআই ডিজি হওয়ার পর লে. জেনারেল হিসেবে সেনাবাহিনীর কিউএমজি (কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল) হন। এনএসআই থাকাকালীন ২০১৪ সালের আগস্টে মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। তিনি ২০১৬ ও ২০১৭ সালে দুটি ব্যাচ নিয়োগ দেন। সেখানে তিনি আগের মতো নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখেন। তিনি এই সুপারিশের তালিকায় নিজের আত্মীয়-স্বজনকে অন্তর্ভুক্ত করেন। সরকারি চাকরির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আত্মীয়-স্বজন নিয়োগের রেকর্ড করেন তিনি। কমপক্ষে ১০০ জন আত্মীয় নিয়োগ দেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) শামসুল হক।

মে. জেনারেল টিএম জোবায়েরের আমলে ব্যাপক নিয়োগ জালিয়াতি

জানা গেছে, ২০১৮ সালে মেজর জেনারেল (অব.) টি এম জোবায়েরকে এনএসআইর মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। জোবায়ের মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকের খুবই আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। ‘র’-এর সঙ্গে তার কানেকশন এবং অজিত দোভালের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় তারিক সিদ্দিকের মাধ্যমেই। তিনি এনএসআইর ইতিহাসে কালো অধ্যায় রচনা করেন। তিনি সরাসরি ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের পরামর্শে ও মদতে কাজ করতেন। তার সময়ে এনএসআইর প্রধান কার্যালয় ‘র’-এর অফিসে পরিণত হয়।

তিনি ভারতীয় কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ মদতে ২০১৮ সালের রাতের নির্বাচন বাস্তবায়ন করেন। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে অজিত দোভাল কমপক্ষে ২ হাজার ৫০০ জনবল নিয়োগের পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শ অনুযায়ী ২০২০, ২০২২, ২০২৩ সালে ২ হাজার ৪০০ জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নতুন জনবলের একটা অংশ ভারতের এজেন্ট ও ছাত্রলীগের ক্যাডার। এদের কারণেই আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিল।

সূত্র জানায়, যে কোনো আন্দোলন শুরু হওয়ার আগেই তা নস্যাৎ করে দিত এনএসআই সদস্যরা। মেজর জেনারেল (অব.) টিএম জোবায়ের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এনএসআইর কঠোর নজরদারির আওতায় নিয়ে আসেন। তিনি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেন সব ক্যাম্পাসের হল ও ফ্যাকাল্টিসহ ছাত্র-জমায়েতের প্রতিটি স্থানে এনএসআইর এজেন্ট নিয়োজিত করে।

সূত্র জানায়, এনএসআইর প্রতিটি পদে ভারতীয় এজেন্ট ও আওয়ামী লীগের সমর্থকরা এখনো বহাল তবিয়তে অবস্থান করছে। কোনো এক অদৃশ্য কারণে এই নিয়োগ নিয়ে ছাত্র-সমন্বয়ক, উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টা কাউকে অবগত করা হয়নি। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে এনএসআইর কর্মকর্তা যারা সক্রিয় ভূমিকা রাখে তাদের পদচ্যুত না করে বরং ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে। ২০২০, ২০২২ ও ২০২৩ সালের নিয়োগ জালিয়াতির মাধ্যমে যে এদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, এনএসআইর প্রধান কার্যালয়ে এর প্রমাণ সংরক্ষিত আছে যা অনুসন্ধান করলে জানা যাবে।

এনএসআইর নিয়োগ কমিটির সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তারা হলেনÑএনএসআইর পরিচালক (প্রশাসন) কর্নেল জাকির হোসেন (পরিচয় নম্বর-বিএ-৩৬৫৯), এনএসআইর যুগ্ম-পরিচালক নাসির মাহমুদ গাজী (পরিচয় নম্বর-এ-০১৪৯) ও এনএসআইর অতিরিক্ত পরিচালক আফজালুন নাহার (পরিচয় নম্বর- এ-০০৪৩)। এই তিনজন গণহারে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেন।

সূত্র জানায়, প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভায় জালিয়াতির মাধ্যমে এনএসআইয়ে নিয়োগ সম্পন্ন করা হতো। অনেক প্রার্থী বৈধ শিক্ষা সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াই নিয়োগ পেয়েছেন। অবৈধ নিয়োগের মাধ্যমে যারা এনএসআইতে কর্মরত আছেন তারা ভারত ও আওয়ামী লীগের প্রতি অনুগত।

সূত্র জানায়, এনএসআই নিয়োগে মোটা অংকের টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সেক্রেটারি সিদ্দিকী নাজমুল আলম। তারা ছাত্রলীগের ছাড়পত্রের জন্য প্রতি নিয়োগকারীর কাছ থেকে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে নিত। যারা টাকা দিত না তারা ছাত্রলীগের কেউ না বলে এনএসআই সদর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হতো।

এ বিষয়ে এনএসআইয়ের যুগ্ম-পরিচালক নাসির মাহমুদ গাজী (পরিচয় নম্বর-এ-০১৪৯) আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে ফোন করে, ‘এনএসআইয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়োগে আপনি মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন’ প্রশ্ন করা হলে তিনি উষ্মা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমার কি নিয়োগে সেই ক্ষমতা আছে? এসব অভিযোগ বানোয়াট।’

তিনি ৫ আগস্টের পর খাগড়াছড়িতে বদলি হন। বর্তমানে তিনি সেখানেই কর্মরত আছেন।

এ বিষয়ে এনএসআইর অতিরিক্ত পরিচালক আফজালুন নাহার ফোন করলে তিনি প্রশ্ন শুনে উত্তেজিত কণ্ঠে জানান, ‘যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসা করেন তাদের কে নিয়োগ দিয়েছে। তারা কী বলবে তখন আমাকে জানান? আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করছেন। আরো একটি প্রশ্ন করার আগেই তিনি উত্তেজিত কণ্ঠে কলটি কেটে দেন।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর তিনি চিটাগং শাহ আমানত বিমানবন্দরে কর্মরত রয়েছেন। এনএসআইর পরিচালক কর্নেল জাকির হোসেন (পরিচয় নম্বর-বিএ-৩৬৫৯) বিষয়ে জানা গেছে, তিনি বাহিনী থেকে অবসরে গেছেন। তার ব্যক্তিগত একটি নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। টানা তিনদিন ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি। সূত্র জানিয়েছে, তিনি দেশ ত্যাগ করেছেন। ধানমন্ডি ও মিরপুর ডিওএইচএসে দুটি বাড়িতে যোগাযোগ করা হলে তাকে ওই ঠিকানায় পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনএসআইয়ে নিয়োগ পাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক শিক্ষার্থী আমার দেশকে জানান, ‘তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হল ছাত্রলীগের কমিটির সদস্য ছিলেন। সব সুপারিশের পরও তার ছাত্রলীগের এক নেতাকে ৭ লাখ টাকা দিতে হয়েছে।

জোবায়েরের স্বর্ণ চোরাচালান ও ‘র’ পৃষ্ঠপোষকতা

সুদর্শন কুমার ভৌমিক যুগ্ম পরিচালক হিসেবে এনএসআইয়ে ২০১২ সালে যোগদান করেন। তিনি চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। বর্তমান কাউন্টার ইনটেলিজেন্সে কর্মরত আছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিয়মিত ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ রাখেন। তাকে গুলশানের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

মাসুদুর রহমান ২০১২ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত। তিনি চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি আ.জ.ম নাছিরের বাসায় থাকতেন। তিনি এনএসআই সচিবালয়ে কর্মরত।

মো. আশিকুর রহমান যুগ্ম পরিচালক হিসেবে এন্ট্রি ট্রাফিকিং শাখায় যোগদান করেন। ছাত্রলীগ করা এই আশিকুর মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি হয়েছিলেন। তার বাবা মতিউর রহমান এনএসআইর জনবল কাঠামোতে আত্মীকৃত হন। পরে তার বাবা সহকারী পরিচালক হন এবং অবসরে যান।

ডেপুটেশনে আসা মেজর (অব.) রায়হানকে চড় মারার কারণে প্রধান কার্যালয় কারিগরি শাখা থেকে মোহাম্মদ আশিকুর রহমানকে পঞ্চগড় জেলায় বদলি করা হয়। তিনি সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। ২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচনে সেই সুযোগকে কাজে লাগান। ২০১৮ সালের তৎকালীন জেলা কর্মকর্তা উপ-পরিচালক পরে যুগ্ম-পরিচালক গানিউল ইসলামকে বিএনপিপন্থি ট্যাগ দিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার বর্তমান যুগ্ম পরিচালক আশিকুর রহমান লাইম লাইটে চলে আসেন। ২০১৮ সালে রাতের ভোটের সময় পঞ্চগড় জেলায় এনএসআইয়ের পক্ষ থেকে ভোট জালিয়াতি ও দক্ষতার পরিচয় দেন। তিনি পঞ্চগড়ে অন্যতম কুশীলবে পরিচিত হন।

এ ঘটনায় ডিজি মেজর টিএম জোবায়েরের দৃষ্টিতে আসেন এবং আস্থাভাজনে পরিণত হন। জুবায়ের আশিককে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে বদলি করেন। আশিকের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

জুবায়ের তার স্বর্ণ চোরাচালানে মানিলন্ডারিং নিজ ভায়রাভাই কাইয়ুমকে দিয়ে করাতেন। কাইয়ুম বিমানবন্দর ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে প্রাধিকারপ্রাপ্ত না হলেও এনএসআইর সাবেক ডিজি জুবায়েরের ভায়রাভাই হিসেবে এনএসআই প্রটোকল নিয়ে যাতায়াত করেন। কাইয়ুমের এই যাতায়াতের সব ব্যবস্থা আশিক করতেন। এ সময় মালামালের কোনো স্ক্যানিং হতো না। এ কারণে উপ-পরিচালক আশিক যুগ্ম-পরিচালক পদে দ্রুতই পদোন্নতি পান। তাকে প্রধান কার্যালয়ে এন্ট্রি ট্রাফিকিং শাখায় দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই শাখায় কর্মরত অবস্থায় টিএম জোবায়ের ১৪টি সুটকেস হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে আশিকের উপস্থিতিতে কোনো স্ক্যানিং ছাড়াই পার করে দেন। সুটকেসগুলো সিঙ্গাপুরে যায়।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি করা আশিক কোটা সংস্কারের বিরোধী ছিলেন। ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর আশিককে খাগড়াছড়িতে বদলি করা হয়। কিন্তু দুই দফায় তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও ফ্যাসিস্টের দোসর আশিক অজানা রহস্যে এনএসআইর প্রধান কার্যালয়ে বহাল তবিয়তে অবস্থান করছেন।

২০১২ ব্যাচের নিয়োগে ‘র’ ও আওয়ামীকরণ

ইকবাল হোসেন (যুগ্ম পরিচালক) ও সাজুহা ইসলাম (উপপরিচালক), এইচটি ইমামের আত্মীয়। প্রদীপ কুমার অধিকারী (উপপরিচালক), ‘র’-এর অনুগত ও এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক বিপ্লবী রানীর আত্মীয়। নাছির উদ্দিন (যুগ্মপরিচালক), সলিমুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও দিপু মনির আত্মীয়। সামিনা সুলতানা (যুগ্মপরিচালক), এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি টিএম জুবায়েরের আত্মীয়। মো. জাকির হোসেন (যুগ্মপরিচালক), সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। ইয়াসিন সুহাইল (উপপরিচালক), পুলিশের সাবেক ডিআইজি ও এনএসআইয়ের ডাইরেক্টর ইন্টারনাল শফিকুল ইসলামের ভাতিজা। এইচএম ফয়সাল আহমেদ (উপপরিচালক), ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। মো. রুবেল আলম (উপপরিচালক), সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মাসুদ আলমের ভাই। রাসেল জমাদার (যুগ্মপরিচালক), আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সোবহান গোলাপের ভাতিজা। আতিকা খানম (যুগ্মপরিচালক), মহসিন হলের ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুনের স্ত্রী। মো. আশিকুর রহমান (যুগ্মপরিচালক), এনএসআই কর্মকর্তার ছেলে। তৈয়বুল মাওলা (যুবলীগ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মাজহারের সুপারিশে চাকরি)। মো. আল আমিন (যুগ্মপরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধ গবেষকবিষয়ক সম্পাদক। মো. আবদুল্লাহ আল মামুন (উপপরিচালক), শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের নেতা। মো. আশরাফুল ইসলাম, (যুগ্মপরিচালক), এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক আজিজুর রহমানের ভাগিনা। ফরহাদ হোসেন (উপপরিচালক), শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি। মো. আবদুল্লাহ আল মারুফ (যুগ্মপরিচালক), বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি। আফরোজা আনজুম ফেন্সী (উপপরিচালক), স্বামী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি। মো. ওয়াসীম উদ্দীন (উপপরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি।

শারমিন আক্তা রুপা (উপপরিচালক), এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি ব্রি. জে. (অব.) এম মনজুর আহমদের সুপারিশে চাকরি। এস কে সাইলক হোসেন (উপপরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক। কেএম আরিফ হোসেন (যুগ্মপরিচালক), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। সাইফ আহমেদ শাকিল (উপপরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি। মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন (যুগ্মপরিচালক), মহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। মো. ফয়েজ উদ্দিন (যুগ্মপরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি। মো. আল আমিন চৌধুরী (যুগ্মপরিচালক), জসীম উদ্দিন হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মো. সাইফুল ইসলাম (উপপরিচালক), ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসম্পাদক। দেওয়ান মনোয়ার হোসেন (উপপরিচালক), কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক। মো. নাজমুল হক (যুগ্মপরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। শেখ শাফিনুল হক (যুগ্মপরিচালক), শেখ মুজিব পরিবারের সদস্য। আখি আখতার (উপপরিচালক), মেজর ফয়সালের সুপারিশে চাকরিপ্রাপ্ত। মো. রেজাউল করিম (উপপরিচালক), ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিকল্পনা সম্পাদক। সাইদ মাহমুদ (উপপরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি। মুন্সী তানিয়া আফসার (উপপরিচালক), স্বামী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। শরীফুল ইসলাম (যুগ্মপরিচালক), শেখ সেলিমের সুপারিশে চাকরিপ্রাপ্ত। সাইফুল ইসলাম (উপপরিচালক), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক। মো. খালিদ হাসান (উপপরিচালক), পিতা ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান। বদরুল আহমেদ (যুগ্মপরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। মো. মেরাজুল ইসলাম (উপপরিচালক), জসীম উদ্দিন হল শাখা ছাত্রলীগের নির্বাহী সদস্য। লতিফা পারভীন (যুগ্মপরিচালক), ছাত্রলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য। ফারজানা ইয়াসমিন তানিয়া (উপপরিচালক), ইডেন ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদক। মো. আজিজুর রহমান (উপপরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। দেবব্রত দাশ (উপপরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপপ্রচার সম্পাদক। সুরভী শারমিন (উপপরিচালক), পিতা শেখ মুজিবর রহমানের ড্রাইভার ছিলেন। রাশেদ হাসান (উপপরিচালক), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

২০১৪ ব্যাচের নিয়োগে ‘র’ ও আওয়ামীকরণ

মো. আব্দুল বাতেন (উপপরিচালক), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মো. তাহাজ্জত হোসেন (উপপরিচালক), এনএসআই অতিরিক্ত পরিচালক আজিজুর রহমানের আত্মীয়। লতিফা আহমেদ (উপপরিচালক), কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তারের বোন। শেখ মুহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম (উপপরিচালক), বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপসম্পাদক। প্রলয় সরকার (উপপরিচালক), এনএসআই-এর অতিরিক্ত পরিচালক অসিত বরণ সরকারের আত্মীয়। নির্ঝর আলম (উপপরিচালক), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ড. ফখরুল ইসলাম (উপপরিচালক), আওয়ামী লীগ নেতা ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ছেলে। আমিনুল হক পলাশ (উপপরিচালক), বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। মো. শওকত ইসলাম (উপপরিচালক), মহসীন হলের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মেজবাহ উদ্দিন (উপপরিচালক), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি। মো. এলাহী মঞ্জুর (উপপরিচালক), জিয়া হলের ছাত্রলীগের সহসভাপতি। রেফায়েত উল্লাহ (উপপরিচালক), স্যার এফ রহমান হলের ছাত্রলীগের সহসম্পাদক। নিশাত ফারদিন (উপপরিচালক), এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি ও পলাতক মেজর টিএম জুবায়েরের সুপারিশে চাকরিপ্রাপ্ত। আনিসুজ্জামান (উপপরিচালক), সাবেক এমপি আবদুস সোবহান গোলাপের ভাতিজা। কামরুল হাসান (উপপরিচালক), সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নাতি। মো. এবি সিদ্দিকী রাহাত (উপপরিচালক), কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মো. রফিকুল ইসলাম (উপপরিচালক), এসএম হল ছাত্রলীগের নেতা। রাহমাত নাওয়াজ ফাহমী (উপপরিচালক), পিতা এনএসআইয়ের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক।

২০১৬ ও ২০১৭ ব্যাচের নিয়োগে ‘র’ ও আওয়ামীকরণ

নাহারীন চৌধুরী (উপপরিচালক), এনএসআইয়ের ডিজি জেনারেল শামসুল হকের সুপারিশে চাকরি। শেখ মাহাবুব মোর্শেদ (উপপরিচালক), মামা এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. বশির উদ্দিন। মো. ফজলে রাব্বী (উপপরিচালক), এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি লে. জেনারেল শামসুল হকের আত্মীয়। ফয়সাল মিয়া (উপপরিচালক), সাবেক এনএসআইয়ের ডিজি জেনারেল শামসুল হকের আত্মীয়। আতিফ ইয়াসির (উপপরিচালক), শেখ মুজিব পরিবারের সদস্য। আবু সাদাত মো. ফজলুল হক (উপপরিচালক), সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের আত্মীয়। শামীম আহমেদ (উপপরিচালক), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-১২ আজিমুদ্দিন বিশ্বাসের ভাই। মো. আদনান (উপপরিচালক), পিতা গোপালগঞ্জ শ্রমিক লীগের সভাপতি। সম্রাট আকাহিতু (উপপরিচালক), শহীদুল্লাহ হলের ছাত্রলীগের সহসম্পাদক। মো. অনিক কামাল (উপপরিচালক), সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নাতি। তানভীর আহমেদ খান (উপপরিচালক), সাবেক এনএসআইয়ের ডিজি জেনারেল শামসুল হকের আত্মীয়। লুৎফুন্নাহার লুৎফা (উপপরিচালক), সাবেক এনএসআইয়ের ডিজি জেনারেল শামসুল হকের আত্মীয়। মিলি আক্তার (উপপরিচালক), সাবেক এনএসআইয়ে অতিরিক্ত পরিচালক মনসুর আহমেদের ভাতিজি। কায়সার বরকত (উপপরিচালক), সাবেক এনএসআইয়ের ডিজি জেনারেল শামসুল হকের আত্মীয়। মো. ইমতিয়াজ হক (উপপরিচালক), সাবেক এনএসআইয়ের ডিজি জেনারেল শামসুল হকের আত্মীয়।

২০২০ ব্যাচের নিয়োগে ‘র’ ও আওয়ামীকরণ

মো. মাহদী হাসান (সহকারী পরিচালক), শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মো. মঞ্জুর এ খোদা (সহকারী পরিচালক), পিতা সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী। আজমেরী জাহান (সহকারী পরিচালক), সাবেক ডিরেক্টর ব্রিগেডিয়ার রাকিব উল্লাহের ভাতিজি। মুজিবর রহমান (সহকারী পরিচালক), সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আত্মীয়। নাজনীন জাহান (সহকারী পরিচালক), আওয়ামীপন্থি শিক্ষক এমরান কবির চৌধুরীর আত্মীয়। মোহাম্মদ রিফাতুল হক (সহকারী পরিচালক), বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের আত্মীয়। ফারিয়া জামান মিশিতা (সহকারী পরিচালক), সাবেক এসএসএফের ডিজি জেনারেল মুজিবের ভাতিজি। মো. শামীম হোসেন (সহকারী পরিচালক), সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। এসকে সাব্বির হোসেন (সহকারী পরিচালক), শেখ মুজিব পরিবারের সদস্য। আশিক ইকবাল (সহকারী পরিচালক), বুটেক্স শাখা ছাত্রলীগের যুগ্মসম্পাদক। শাশ্বত মুজিব অরোরা (সহকারী পরিচালক), সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নাতি। শারমিন আকতার (সহকারী পরিচালক), পিতা আওয়ামী লীগ নেতা ও চাচা আওয়ামী লীগের এমপি। রাজীব হোসেন (সহকারী পরিচালক), সলিমুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। মো. সাইফুল ইসলাম (সহকারী পরিচালক), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পলাতক তারিক সিদ্দিক আহমেদের সুপারিশপ্রাপ্ত। শাহেদা আলী (সহকারী পরিচালক), এনএসআইয়ের উপপরিচালক মেজবাহ উদ্দিনের স্ত্রী। মো. আসাদুজ্জামান মিয়া (সহকারী পরিচালক), কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। মো. তানভীর আহমেদ নাঈম (সহকারী পরিচালক), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মো. আল আমিন সরকার (সহকারী পরিচালক), সাবেক সেনাপ্রধান ও পলাতক জেনারেল আজিজের চাচাতো ভাই। অনিক দাস (সহকারী পরিচালক), জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। শামীম (সহকারী পরিচালক), বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

২০২২ ব্যাচের নিয়োগে ‘র’ ও আওয়ামীকরণ

শরফুদ্দিন আহমেদ খান (সহকারী পরিচালক), কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। মো. আশরাফুল ইসলাম (সহকারী পরিচালক), বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সাবরিনা মনজুর (সহকারী পরিচালক), এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল টিএম জুবায়েরের শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়। শেখ আলিফ উদ্দিন (সহকারী পরিচালক), শেখ মুজিবুর রহমান পরিবারের সদস্য। আবিদা তাসকীন ঐশী (সহকারী পরিচালক), পিতা এনএসআইয়ের সাবেক উপপরিচালক ডিএম ইউসুফ। এসএম শাহরিয়ার জামান (সহকারী পরিচালক), পিতা আওয়ামীপন্থি সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুজ্জামান। হাসান আহমেদ শোভন (সহকারী পরিচালক), সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ভাতিজি জামাই। নীলাঞ্জনা পুরাকায়স্থ (সহকারী পরিচালক), ভারতীয় দূতাবাসের সুপারিশে চাকরিপ্রাপ্ত। সামী ইকবাল (সহকারী পরিচালক), পিতা এনএসআইয়ের কর্মকর্তা আবদুস সামাদ সরকার। শেখ আব্দুর রহমান (সহকারী পরিচালক), এএসআইয়ের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। আব্দুল্লাহ হাসান রাকিব (সহকারী পরিচালক), পিতা এনএসআইয়ের সাবেক যুগ্মপরিচালক। আব্দুল্লাহ আল নোমান (সহকারী পরিচালক), আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সুপারিশে চাকরিপ্রাপ্ত। আকিব আল নোমান (সহকারী পরিচালক), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহসম্পাদক। তাহমিদা খাতুন চাদনী (সহকারী পরিচালক), এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি টিএম জুবায়েরের আত্মীয়। কাকুলী আক্তার (সহকারী পরিচালক), বাহাউদ্দিন নাসিমের ভাতিজি। সাদমান সাকিব হাসান (সহকারী পরিচালক), পিতা আওয়ামী লীগ নেতা ও চাচা খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য। মো. তানভীর হোসেন (সহকারী পরিচালক), পিতা এনএসআইয়ের সহকারী পরিচালক মো. আকরাম হোসেন। মো. শরীফুল ইসলাম তালুকদার (সহকারী পরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি। মো. মাসনুন হক মাহি (সহকারী পরিচালক), পিতা আওয়ামীপন্থি সামরিক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোজাম্মেল হক। ফারাহ হাবীব (সহকারী পরিচালক), পিতা এনএসআইয়ের যুগ্মপরিচালক হাবিবুর রহমান। গাজী আহানাফ সাকিব (সহকারী পরিচালক), মাতা আফরোজা বিনতে মনসুর শেখ হাসিনার এসাইনমেন্ট অফিসার ছিলেন। নাজমুন নাহার তিথি (সহকারী পরিচালক), নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সুপারিশে চাকরিপ্রাপ্ত। তাহসীনা নাহলীন খান (সহকারী পরিচালক), সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ভাতিজি। মো. রাসেল মুন্সী (সহকারী পরিচালক), গোপালগঞ্জে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। আদনান আরেফিন প্রীতম (সহকারী পরিচালক), সাবেক এসএসএফের সাবেক ডিজি পলাতক জেনারেল মুজিবুর রহমানের সুপারিশে চাকরিপ্রাপ্ত। মো. ফরহাদ পারভেজ (সহকারী পরিচালক), এনএসআইয়ের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন।

২০২৩ ব্যাচের নিয়োগে ‘র’ ও আওয়ামীকরণ

ফারহা ফয়েজ (সহকারী পরিচালক), পিতা সাবেক প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। মো. খায়রুল ইসলাম (সহকারী পরিচালক), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ছিলেন। মো. মুফাসসীর রশীদ (সহকারী পরিচালক), এনএসআইয়ের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন এবং সাবেক ডিজি টিএম জোবায়েরের আত্মীয়। নোশিন নওয়াল (সহকারী পরিচালক), মাতা শাহনাজ সুলতানা এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক। নিফাত ইসলাম (সহকারী পরিচালক), সাবেক ডিরেক্টর এডমিন কর্নেল জাকির হোসেনের সুপারিশে চাকরিপ্রাপ্ত। মোছা. জান্নাতুল ফেরদৌস (সহকারী পরিচালক), পিতা মো. নূর আলম যাদু, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। এম তানভীর হোসেন (সহকারী পরিচালক), পিতা র‌্যাবের সাবেক ডিজি ও পলাতক এম খুরশীদ হোসেন। মো. ইমতিয়াজ রহমান (সহকারী পরিচালক), এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি ও পলাতক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম মনজুর আহমেদের শালা।

সূত্র: আমার দেশ 

Monday, August 18, 2025

‘ফরমায়েশি রায়ে’ আল্লামা সাঈদীর ফাঁসি ট্রাইব্যুনালে। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

‘ফরমায়েশি রায়ে’ আল্লামা সাঈদীর ফাঁসি ট্রাইব্যুনালে:

প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৫

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে বিচারিক (জুডিশিয়াল) হত্যাকাণ্ডের নির্দেশনা দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)। ট্রাইব্যুনালে আল্লামা সাঈদীকে জুডিশিয়াল কিলিং নিশ্চিত করতে রায় দিয়েছিলেন এটিএম ফজলে কবীর, জাহাঙ্গীর হোসেন ও আনোয়ারুল হক। এই তিন বিচারকের দেওয়া রায়ে আল্লামা সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

জনরোষের ভয়ে পরে আপিল বিভাগে বিভক্ত রায়ের মাধ্যমে আজীবন কারাগারে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল ফ্যাসিবাদী সরকার। কারণ, ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিল সারা দেশ। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনী তখন নির্বিচারে গুলি চালিয়ে একদিনে দেড় শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছিল। সরকার আপিল বিভাগের ফরমায়েশি রায়ে আল্লামা সাঈদীকে আজীবন কারাগারে রাখার ব্যবস্থা করে।

আপিল শুনানি করে চূড়ান্ত রায় দেওয়া হয় ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ আজীবন কারাগারে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করে। বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি হলেনÑসুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা, মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বিভক্ত রায়ে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীকে বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন। শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।

পরে আল্লামা সাঈদীর পক্ষ থেকে রিভিউ পিটিশন করা হয়েছিল। রিভিউ পিটিশন যখন শুনানি হয়, তখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেনÑমো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং মির্জা হোসাইন হায়দার। শামসুদ্দিন মানিক তখন অবসরে চলে যান।

আল্লামা সাঈদীর পক্ষে আপিল ও রিভিউ পিটিশন শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম শাজাহান। তিনি আমার দেশকে জানান, মামলাটি যে সাজানো হয়েছিল, সে বিষয়গুলো আপিল ও রিভিউÑউভয় শুনানিতে স্পষ্ট করা হয়েছিল। কিন্তু আসামিপক্ষের কোনো তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তিকেই গ্রাহ্য করা হয়নি। এমনকি ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা মামলায় তার স্ত্রীর করা মামলাটি আপিল বিভাগের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল। তখন তদন্তের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল নিজে পিরোজপুর আদালতে গিয়ে পরীক্ষা করেন, তারপরও কোনো কাজ হয়নি।

পরিকল্পিতভাবে সাজানো মামলায় সাক্ষীদের বয়স, অভিযোগে উল্লিখিত ঘটনার স্থান ও সময় নিয়ে ছিল বিভ্রান্তি। যদিও বিচারের চিরন্তন নীতি অনুযায়ী অভিযোগ সন্দেহাতীত প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত দণ্ড দেওয়া যায় না। আল্লামা সাঈদীর মামলায় ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ড ও আপিল বিভাগের আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া দুটি অভিযোগের কেস স্টাডি পর্যালোচনা এবং স্কাইপ কেলেঙ্কারিতে প্রকাশিত নিজামুল হক নাসিমের বক্তব্য পর্যালোচনা করলেই ‘জুডিশিয়াল কিলিংয়ের’ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়।

পরিকল্পিতভাবে সাজানো মামলায় ২০টি অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনাল শুধু প্রসিকিউশনের বক্তব্যকে আমলে নিয়ে আটটি অভিযোগ প্রমাণিত দেখিয়ে রায় দেয়। দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি ছয়টি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় রায়ে। আপিল বিভাগও এ দুটি অভিযোগ আমলে নিয়ে আজীবন কারাগারে রাখার নির্দেশ দেয়। মৃত্যুদণ্ড দেওয়া দুটি অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করলেই স্পষ্ট হয়ে যায় বিচারটি ছিল সাজানো। স্কাইপ কেলেঙ্কারিতে প্রকাশিত নিজামুল হক নাসিমের বক্তব্য অনুযায়ী, রায় ছিল পূর্বনির্ধারিত। এমনকি আল্লামা সাঈদীর মামলাটি সবার আগে রায় দেওয়ার প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত করেছিলেন নিজামুল হক নাসিম। রায়ের একটি খসড়া বেলজিয়াম থেকে আহমদ জিয়াউদ্দিনের টিম লিখে পাঠিয়ে দিয়েছিল।

কী ছিল মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে

৮ নম্বর অভিযোগের বর্ণনায় প্রসিকিউশনের সাজানো বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, ‘১৯৭১ সালের ৮ মে, বেলা ৩টার ঘটনা। ঘটনাস্থল পিরোজপুরের সদর থানার চিতলিয়া গ্রামে মানিক পশারীর বাড়ি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা চিতলিয়া গ্রামে মানিক পশারীর বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখানে নেতৃত্ব দেন আল্লামা সাঈদী। ঘটনাস্থল থেকে মফিজউদ্দিন ও ইব্রাহিম কুট্টিসহ দুজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পাঁচটি বাড়ি।’

প্রসিকিউশনের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘মফিজ উদ্দিন ও ইব্রাহিম কুট্টিকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় আল্লামা সাঈদী প্ররোচনা দেন পাকিস্তানি সেনাদের। ঘটনাস্থল থেকে সেনারা ক্যাম্পে ফেরার পথে ব্রিজের কাছে ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডেও আল্লামা সাঈদীর প্ররোচনা ছিল। মফিজ উদ্দিনকে ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। একই দিনে পারেরহাট বন্দরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।’ এই হচ্ছে ৮ নম্বর অভিযোগের সারসংক্ষেপ।

১০ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ‘১৯৭১ সালের ২ জুন, সকাল ১০টার ঘটনা। ইন্দুরকানি থানার উমেদপুর গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের ২৫টির মতো ঘর জ্বালিয়ে দেয় হামলাকারীরা। এই ঘটনায়ও নেতৃত্ব দেন আল্লামা সাঈদী। এ সময় হিন্দুপাড়ার বিশা বালীকে বাড়ির পেছনে নারকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়।’ অভিযোগের বর্ণনা অনুযায়ী, ‘বিশা বালীকে নির্যাতনেও আল্লামা সাঈদীর প্ররোচনা ছিল।’

ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা, স্ত্রীর ও মানিক পাসারির মামলা

আল্লামা সাঈদীকে অভিযুক্ত করে ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা মামলা করা হয় ২০১০ সালে। মামলার বাদী মানিক পশারী। এ মামলায় ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত প্রসিকিউশনের সাক্ষী তালিকায় (পিডব্লিউ) তার নাম ছিল ৬ নম্বরে। মানিক পশারী এজাহার করেন পিরোজপুর থানায়। ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বর্ণিত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দাবি করেন মানিক পশারী। অথচ প্রসিকিউশনের সাক্ষী পিডব্লিউ-১০ এবং পিডব্লিউ-১১ জেরার জবাবে জানান, ঘটনার সময় মানিক পশারী বাড়িতে ছিলেন না। ঘটনার আগেই তিনি তার পরিবারের সদস্যসহ বাড়ি ছেড়ে চলে যান।

এখানে একটি বিষয় স্পষ্টÑএজাহারের বাদী মানিক পশারী নিজেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করছেন। অথচ, সরকারপক্ষের ১০ ও ১১ নম্বর সাক্ষীর দাবি করেছেন, মানিক পশারী প্রত্যক্ষদর্শী নন।

ঘটনার সময় নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। এই চার্জ বা অভিযোগে বর্ণনা করা হয়, ঘটনাটি সংঘটিত হয় বেলা ৩টায়। অথচ (সরকারপক্ষের সাক্ষী) পিডব্লিউ-২ এবং পিডব্লিউ-৭-এর বর্ণনায় বলা হয়, ঘটনা ঘটেছিল সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে। মানিক পশারী (এজাহারকারী) ইব্রাহিম কুট্টির নিকটাত্মীয়ও নন।

স্ত্রীর করা মামলা

মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণ করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার অভিযোগে ১৯৭২ সালে একটি মামলা হয়। মামলার বাদী ছিলেন ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম। ইব্রাহিম কুট্টির অনাত্মীয় মানিক পশারী, এজাহার করেন ২০১০ সালে। অথচ ১৯৭২ সালেই খোদ ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম এজাহার করেছিলেন। দুটি এজাহারে সময়ের ব্যবধান প্রায় ৪০ বছর। আইনজীবীদের প্রশ্নÑএর মধ্যে কোনটা সঠিক এজাহার? ৪০ বছর পর ভিকটিমের অনাত্মীয় মানিক পশারীর করা এজাহার নাকি ঘটনার এক বছর পর ভিকটিমের স্ত্রীর করা এজাহার?

ইব্রাহিম কুট্টির (ভিকটিম) স্ত্রী মমতাজ বেগমের এজাহারের বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়, ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর ঘটেছিল এই ঘটনা। স্ত্রীর মামলায় বর্ণনায় উঠে আসে, ওই দিন এজাহারে উল্লেখিত আসামিরা নলবুনিয়ার বাড়িতে হামলা চালায়। ঘটনার সময় নলবুনিয়ার বাড়িতেই হত্যা করা হয় ইব্রাহিম কুট্টিকে। হত্যাকারীরা যাওয়ার সময় লাশ পারেরহাটে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে ইব্রাহিম কুট্টির ভাই সাহেব আলী ওরফে সিরাজ এবং তার মাকে আটক করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। তাদের নেওয়া হয় পিরোজপুরে পাকিস্তান আর্মি ক্যাম্পে। একপর্যায়ে ক্যাম্প থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় ইব্রাহিম কুট্টির মাকে। কিন্তু সাহেব আলীর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রীর করা মামলার এজাহারে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তারা সবাই স্থানীয় রাজাকার বা পাকিস্তান আর্মির সহযোগী। ১৯৭২ সালের শেখ মুজিব আমলে এজাহারটি গ্রহণের পর ঘটনার তদন্ত করে থানা কর্তৃপক্ষ। এই তদন্ত করেছে স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশ। এটা বলার সুযোগ নেই, তখন ক্ষমতায় ছিল বৈরী সরকার। তাই সঠিক তদন্ত সম্ভব হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের গঠিত ও শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে তখন। শেখ মুজিব আমলে তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দাখিল করা হয়। কিন্তু ওই এজাহার বা অভিযোগপত্রে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নাম তো ছিলই না, বরং তার প্রতি ইঙ্গিতপূর্ণ কোনো শব্দও নেই। আল্লামা সাঈদীর কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার স্পর্শও পাওয়া যায় না এজাহার বা তদন্ত প্রতিবেদনে।

এখানে দুটি বিষয় স্পষ্ট, একটি ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রীর এজাহারে বলা হয়েছে, নলবুনিয়ার বাড়িতেই হত্যাকাণ্ড ঘটে। হামলাকারীরা লাশ নিয়ে যায় পারেরহাটে। অন্যটিতে মানিক পশারীর এজাহারে বর্ণিত ঘটনায় বলা হয়, ইব্রাহিম কুট্টিসহ দুই ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তান আর্মিরা। ক্যাম্পে যাওয়ার পথে ব্রিজের নিচে হত্যা করা হয় তাকে। এ হামলা ও হত্যাকাণ্ডে আল্লামা সাঈদী নেতৃত্ব দেন। ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার ঘটনাস্থল কোনটি সত্য?

আল্লামা সাঈদীর পক্ষ থেকে কি বিষয়গুলো ট্রাইব্যুনাল বা আপিল বিভাগে উপস্থাপন করা হয়েছিল। ১৯৭২ সালের এজাহার, চার্জশিট এবং মমতাজ বেগমের করা মামলার নথির সার্টিফাইড কপি আল্লামা সাঈদীর পক্ষে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল এগুলোকে পাত্তা দেয়নি। পরে আপিল বিভাগে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছিল। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজে পিরোজপুর আদালতে গিয়ে সার্টিফায়েড কপিগুলোর সত্যতা যাচাই করেছিলেন। তারপরও পূর্বনির্ধারিত সরকারি ফরমায়েশি রায়ে এই অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। পরে আপিল বিভাগের অনুগত বিচারকরাও আজীবন কারাদণ্ড দেন।

চার্জ ১০, বিশা বালী হত্যাকাণ্ড

এই মামলার পিডবব্লিউ-১ মাহবুবুল আলম হাওলাদারের জবানবন্দিতে দাবি করা হয়, জনৈক খলিলুর রহমানের মাধ্যমে একটি খবর পান তিনি। ২ জুন পাকিস্তান আর্মিরা পিডব্লিউ-১-এর বাড়িতে যাবে। বিষয়টি তাকে সকালবেলায় অবহিত করা হয়। অথচ সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং আদালতে উপস্থাপন করা ডকুমেন্টসে দেখা যায়, ওই খলিলুর রহমানের জন্ম ১৯৭২ সালে। তিনি হাসিনা একাডেমিতে চাকরি করেন। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল ১৯৭২ সালে যার জন্ম তাকে ১৯৭১ সালের ২ জুন কীভাবে অবহিত করা হয়েছিল? প্রসিকিউশনের বর্ণনায় মুক্তিযুদ্ধের সময় মাহবুবুল আলম হাওলাদারের বয়স ১৯ বা ২০ ছিল মর্মে উল্লেখ করা হয়। আবার পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড অনুযায়ী মাহবুবুল আলম হাওলাদারের বয়স ওই সময় ছিল ১০ বা ১১ বছর। তার জেরার সময়ও স্বীকার করেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় (১৯৭১ সালে) ছাত্র ছিলেন। কিন্তু, কোন ক্লাসের ছাত্র ছিলেন, সেটা সঠিকভাবে বলতে পারেননি। আদালতে উপস্থাপন করা প্রদর্শনী হতে দেখা যায়, তার বড় বোন মাতোয়ারা বেগমের জন্ম ১৯৫৭ সালে। সে ক্ষেত্রে মাহবুবের জন্ম তার বড় বোনের আগে হওয়ার কোনো কারণ নেই। তার সার্টিফিকেট অনুযায়ী ১৯৭৬ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স কত ছিল এতেই অনুমান করা যায়।

পিডব্লিউ-৫ মাহতাবের ক্ষেত্রেও আদালতে উপস্থাপন করা প্রদর্শনী অনুযায়ী জন্ম তারিখ এ রকমই দেখা যায়। সুতরাং ১৯৭১ সালে তাদের বয়স ছিল সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১১ বছর।

হত্যাকাণ্ডের স্থান নিয়ে ছিল ভিন্নমত

মামলার অভিযোগে বলা হয়, বিশা বালীকে হত্যা করা হয় উমেদপুরে। অথচ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নিহত বিশা বালীকে উমেদপুর থেকে কয়েক মাইল দূরে বলেশ্বর নদীর ঘাটে হত্যা করা হয়েছিল। এ বিষয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একটি প্রতিবেদন রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হচ্ছে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন। তাদের রিপোর্ট বিশ্বাসযোগ্য নাকি ঘটনার ৪০ বছর পর সাজানো মামলায় বর্ণিত বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য? এই চার্জের পক্ষে প্রসিকিউশনের সাক্ষী পিডব্লিউ-১ এবং পিডব্লিউ-২৮ জেরায় আদালতে স্বীকারও করেছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রতিবেদনের বিষয়টি।

উল্লেখ্য, এজাহারে দাবি করা হয়, বিশা বালী হত্যার ঘটনা ছিল উমেদপুরে। কিন্তু উমেদপুরের কোনো ব্যক্তিকে উক্ত ঘটনার সমর্থনে সাক্ষী হিসেবে প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হয়নি।

কেন অপহরণ করা হয়েছিল সুখরঞ্জন বালীকে

বিশা বালী হত্যার সমর্থনে প্রসিকিউশনের তালিকায় অন্যতম সাক্ষী ছিলেন সুখরঞ্জন বালী। তিনি বিশা বালীর আপন ভাই। প্রসিকিউশন সাক্ষীর তালিকায় তার নামও অন্তর্ভুক্ত করেছিল। কিন্তু মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় প্রসিকিউশন তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালকে জানানো হয়েছিল এ সাক্ষী পালিয়ে গেছেন। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরই সুখরঞ্জন বালী ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়েছিলেন সত্য ঘটনা বলার জন্য।

ট্রাইব্যুনালকে জানাতে চেয়েছিলেন সে সময়ে তার চোখে দেখা সত্য ঘটনা। আল্লামা সাঈদীর আইনজীবীরা তাকে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেন ট্রাইব্যুনালে। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেছিলেন আগে দরখাস্ত দিয়ে আগামীকাল নিয়ে আসেন। পরের দিন ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার পথে নিজমুল হক নাসিম, এটিএম ফজলে কবীর ও জাহাঙ্গীর হোসেনের ষড়যন্ত্রে তাকে অপহরণ করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে তাকে অপহরণ করে ডিবি। পরে সুখরঞ্জন বালীকে ডিবি ভারতে পাচার করে। দীর্ঘদিন পর ভারত থেকে ফিরে আসেন তিনি। অপহরণের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন এ প্রতিবেদকের কাছেই।

সেফ হাউস কেলেঙ্কারি

ট্রাইব্যুনালের সাক্ষীদের প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকার গোলাপবাগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল সেফ হাউস নামে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। বিভিন্ন মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য টার্গেট ব্যক্তিদের এনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। আল্লামা সাঈদীর মামলায় অন্তত ১৩ জন সাক্ষী সেফ হাউসে এসে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে অস্বীকার করেন। এমনকি এর মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ট্রাইব্যুনাল পর্যন্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রসিকিউশন নিশ্চিত হতে না পেরে আর এজলাসের সামনে নেওয়া হয়নি তাদের।

এসব সাক্ষীর বিষয়ে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে একটি আবেদন দিয়ে বলা হয়, তারা পালিয়ে গেছেন। বর্তমানে নিখোঁজ। তাদের নামে তদন্ত কর্মকর্তার তৈরি করা বয়ান সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণের জন্য আবেদন করেন প্রসিকিউশন। নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে গঠিত ট্রাইব্যুনাল সেটা অকপটে গ্রহণ করেন ও আমলে নেন।

আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে তখন উঠে আসে এই সাক্ষীরা ‘সেফ হাউসে’ দিনের পর দিন ছিলেন। তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর আল্লামা সাঈদীর পক্ষ থেকে এসব সাক্ষীর বিষয়ে একটি আবেদন করা হয়। নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনাল তখন আবেদনটি খারিজ করে দেয়। বলা হয়, বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বাধাগ্রস্ত করতেই এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আমার দেশ। স্কাইপ কেলেঙ্কারিতে উঠে এসেছে পরে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ তাকে ডেকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর রেখে মন্ত্রণালয় থেকে বিদায় দেন।

কারাগারে নিপীড়ন ও হত্যার অভিযোগ

বয়োবৃদ্ধ আল্লামা সাঈদীকে কারাগারে নানা ধরনের নিপীড়নের মধ্যে রাখা হয়েছিল। অসুস্থ অবস্থায় বিভিন্ন মামলার অজুহাতে গাজীপুর থেকে ঢাকায় যাতায়াত করানো হতো প্রিজনভ্যানে। যেখানে বসার ব্যবস্থা নেই। হঠাৎ করে বুকে ব্যথার চিকিৎসার জন্য কারাগার থেকে বর্তমান বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক পিজি হাসপাতাল) পাঠানো হয়। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তাকে সরাসরি পিজিতে না এনে প্রথমে নিয়ে যায় কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখান থেকে পাঠানো হয় পিজিতে। মাত্র দুদিন চিকিৎসার পর আল্লামা সাঈদীর মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।

আল্লামা সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী বলেন, ‘দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করি বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কারাগারে আটক রেখে পরিকল্পিতভাবে তাকে শারীরিকভাবে দুর্বল করা হয়েছিল দিনে দিনে।’

সূত্র: আমার দেশ 

শেখ হাসিনার নির্দেশে বিচারের নামে হত্যা। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

শেখ হাসিনার নির্দেশে বিচারের নামে হত্যা:

প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ৪৮

শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বিচারবহির্ভূত হত্যার পাশাপাশি বিচারিক হত্যাকাণ্ডও ঘটেছে। পরিকল্পিতভাবে অভিযোগ সাজিয়ে, সাক্ষী তৈরি করে, অনুগত আদালতের মাধ্যমে রায় নিয়ে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে।

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কুশীলবের ভূমিকায় ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ, অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, খায়রুল হক, মোজাম্মেল হোসেন, সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, পদচ্যুত প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহিন, বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির ও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম গং।

তাদের সহযোগী ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মরহুম মাহবুবে আলম, গোলাম আরিফ টিপু, সৈয়দ হায়দাল আলী, রানা দাশগুপ্ত, জিয়াদ আল মালুমসহ প্রসিকিউটশন টিম। এদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জুডিশিয়াল কিলিং মিশন বাস্তবায়ন করেন শেখ হাসিনা। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ‘অ্যা ব্রোকেন ড্রিম’ নামের আত্মজীবনীতে স্বীকার করেন, ‘রায়গুলো গণভবন থেকে আসত।’

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান ওই বিচার সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘বিচার হলেই তো মন্তব্য করার প্রসঙ্গ আসে। ওই সময় যেটা হয়েছে, সেটাকে বিচার বলা মুশকিল। সরকার একটা নির্দেশনা দিয়েছিল আর ট্রাইব্যুনাল সেটি বাস্তবায়ন করেছে।

শেখ হাসিনার জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার নেতাদের মধ্যে ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা।

এছাড়া আওয়ামী ‘টার্গেটেড’ জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার হয়ে কারাগারে অন্তরীণ অবস্থায় ইন্তেকাল করেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম, দলটির নায়েবে আমির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, বিএনপি নেতা আবদুল আলীম, জামায়াতে ইসলামীর নেতা মাওলানা আবদুস সোবহান ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার। তারা পিজি হাসপাতালের প্রিজন সেলে বন্দি অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।

যেভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে জুডিশিয়াল কিলিং

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি আইন জারির মাধ্যমে জেনারেল মঈন উদ্দিনের সহযোগিতায় ভারতের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয় বাংলাদেশকে। ভারতের পরিকল্পনা অনুযায়ী জেনারেল মঈনের তত্ত্বাবধানে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় নির্বাচন। ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি তার আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেন, কীভাবে সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে বিজয়ী করা হয়েছিল।

এর আগেই ভারতের অনুগতদের মাধ্যমে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম গঠন করা হয়েছিল জরুরি আইনের সময়। তাদের এজেন্ডা ছিল জুডিশিয়াল কিলিংয়ের রাজনৈতিক আবহ তৈরি করা। নির্বাচনের আগে ভারতের পরিকল্পনা ও প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী আওয়ামী লীগের ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ‘বিজয়ী হলে যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হবে’। কিন্তু ক্ষমতায় এসে এই বিচারের নামে রীতিমত জুডিশিয়াল কিলিংয়ের আয়োজন ছিল স্পষ্ট।

সে সময় বিচার চলাকালীন ‘সেফ হাউস কেলেঙ্কারি’ ও ‘স্কাইপ কেলেঙ্কারি’ প্রকাশের মাধ্যমে জুডিশিয়াল কিলিং মিশনের চিত্র প্রকাশ পেয়েছিল দৈনিক আমার দেশ-এ। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের অনুগত গণমাধ্যমগুলো এ বিষয় ধামাচাপা দিতেই ছিল ব্যস্ত। বরং উল্টো জুডিশিয়াল কিলিংয়ের পক্ষে জনমত তৈরি করতে মিডিয়া ট্রায়ালে ব্যস্ত ছিল তারা।

সেফ হাউস ও স্কাইপ কেলেঙ্কারি

আল্লামা সাঈদীর মামলায় সেফ হাউসে প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার নিয়ন্ত্রণে থাকা সাক্ষীদের বিষয়ে আদালতে লিখিত ‘অ্যাফিডেভিট’ দিয়ে বলা হয়েছিল এসব সাক্ষীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে আমার দেশ প্রমাণ করেছিল সাক্ষীরা সবাই ছিল সরকারের নিয়ন্ত্রিতসেফ হাউসে।

মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও মাওলানা আবুল কালাম আজাদের মামলার সাক্ষীরাও আমার দেশ-এর এই প্রতিবেদকের কাছে অকপটে স্বীকার করেছেন, তাদেরসেফ হাউসে নিয়ে জোরপূর্বক সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। এমনকি কেউ কেউসেফ হাউসে শেখানো সাক্ষ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন। যদিওসেফ হাউস কেলেঙ্কারি প্রকাশের পর তৎকালীন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিম ও জাহাঙ্গীর হোসেন এক আদেশেসেফ হাউসের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছিলেন। তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করতে অস্বীকার করলে বিচারকের পদ ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় এ কে এম জহিরকে।

স্কাইপ কেলেঙ্কারির পুরোটাই ছিল কিলিং মিশনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা। নিজামুল হক নাসিম ও তার বন্ধু আহমদ জিয়াউদ্দিনের কথোপকথনে উঠে এসেছিল আদালতের প্রতিটি আদেশ লিখে দিতেন জিয়াউদ্দিনের টিম। সেগুলো শুধু পাঠ করা হতো এজলাসে। এছাড়া স্কাইপ কেলেঙ্কারির বিখ্যাত একটি উক্তি রয়েছে। ‘আপনি দাঁড়াইয়া যাইবেন, আমি বসাইয়া দিমু। লোকে বুঝবে আমাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক নাই’। এই উক্তির মাধ্যমেও স্পষ্ট হয়েছিল কীভাবে সাজানো হয়েছে জুডিশিয়াল কিলিং মিশন।

চিহ্নিত রাজনৈতিক নেতৃত্বকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে হত্যা করার পরিকল্পনার বিষয়টি মূলত স্কাইপ কেলেঙ্কারিতে প্রকাশিত কথোপকথনে উঠে এসেছে।

আত্মজীবনীতে সুরেন্দ্র কুমারের স্বীকারোক্তি

সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ভূমিকা শুধু আপিল বিভাগের এজলাসেই নয়। পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন তিনি। একজন বিচারক পরিকল্পনা থেকে শুরু করে মিশন বাস্তবায়ন পর্যন্ত কীভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তা বর্ণনা করেছেন নিজেই। ‘অ্যা ব্রোকেন ড্রিম’ নামে লেখা বইয়ে ‘রোল ইন দ্য ফরমেশন অব আইসিটি’ শিরোনামে একটি পৃথক অধ্যায় রয়েছে। সুরেন্দ্র কুমারের আত্মজীবনীমূলক বইয়ের এই অধ্যায়ে স্পষ্ট করেছেনÑ জুডিশিয়াল কিলিং মিশনে কীভাবে পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। ট্রাইব্যুনাল গঠন প্রক্রিয়া, বিচারক নিয়োগ, প্রসিকিউশন নিয়োগে তার সংশ্লিষ্টতার কথা অকপটে বর্ণনা করেছেন।

দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠনে ব্যারিস্টার শফিক আহমদ শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর সুরেন্দ্র কুমার শেখ হাসিনাকে রাজি করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এ কথা তিনি নিজেই বইয়ে অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বর্ণনা করেছেন। কিলিং মিশন বাস্তবায়নের টার্গেট নিয়েই তিনি পরিকল্পনা থেকে শুরু করে রায় লেখা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ছিলেন। আপিল বিভাগে প্রায় সব ফাঁসির রায় তার হাতেই লেখা। যদিও পরবর্তী সময়ে তিনি নিজেই বিভিন্ন ইন্টারভিউতে স্বীকার করেছেন, রায়গুলো গণভবন থেকে আসত।

এটিএম আজহারের বিচার ছিল‘গ্রস মিসকারেজ অব জাস্টিস’

২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করে। এই রায় বহাল রেখেছিল সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগ। পরে শেখ হাসিনার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে রিভিউ পিটিশন শুনানির অপেক্ষায় থাকাবস্থায় সুরেন্দ্র কুমার বিদায় নিতে বাধ্য হন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এটিএম আজহারের রিভিউ পিটিশনের পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয় আপিল বিভাগে। বর্তমান প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগ শুনানির পর সংক্ষিপ্ত রায়ে তিনি উল্লেখ করেন, সে সময় ‘বিচারের নামে বড় অবিচার’ করা হয়েছিল।

সংক্ষিপ্ত রায়ে উল্লেখ করা হয়, উপস্থাপিত প্রমাণাদি ও আইনি উপস্থাপনার পূর্ণাঙ্গ পুনর্মূল্যায়নের পর আপিল বিভাগ মনে করে, ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার মৌলিক নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের মাধ্যমে আপিলকারীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে গুরুতর বিচারিক বিভ্রাট ঘটেছে।

এছাড়া উল্লেখ করা হয়, পূর্ববর্তী রায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়নি এবং এই গুরুতর বিচ্যুতি বিচারব্যবস্থায় এক চরম বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।

এই বিভাগ গভীর দায়িত্ববোধ থেকে আরো স্বীকার করে, পূর্ববর্তী রায়ে মামলার প্রমাণের দুর্বলতা ও প্রেক্ষাপটকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, যা বিচারিক নিরপেক্ষতা ও সততার মানদণ্ড থেকে পিছিয়ে ছিল। এই কারণে, ন্যায়বিচারের স্বার্থে আপিলকারীর দণ্ড ও রায় বহাল রাখা যায় না।

রায়ে বলা হয়, এই আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক আইনের প্রাসঙ্গিক দিকগুলোকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দেয়নি, যা বিচার বিভাগের একটি গুরুতর কর্তব্য ছিল। এই ব্যর্থতা বিচার বিভাগের দায়িত্বে এক প্রকার অবহেলার পরিচয় বহন করে।

আইনজ্ঞরা মনে করেন, ফ্যাসিবাদ প্রভাবমুক্ত বর্তমান আপিল বিভাগের রায় থেকে এটা স্পষ্ট যে, তৎকালীন ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগ শেখ হাসিনার অভিপ্রায় বাস্তবায়নে জুডিশিয়াল কিলিংয়ে মেতে উঠেছিল।

ব্রিটিশ সুপ্রিমকোর্টেও উঠে এসেছে বিচারের নামে অবিচারের কথা

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রইব্যুনালে চৌধুরী মুহাম্মদ মঈন উদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটেনে বসবাসরত মঈন উদ্দিনকে মানবতাবিরোধী অপরাধী উল্লেখ করে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। এটাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন চৌধুরী মুহাম্মদ মঈন উদ্দিন। এই ঘটনাটি ব্রিটিশ হাইকোর্ট, কোর্ট অব আপিল এবং সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্টে গড়িয়েছিল। গত বছরের ২০ জুন সুপ্রিমকোর্ট চূড়ান্ত রায় দিয়েছে। পাঁচজন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত আদালতের রায়েও বাংলাদেশের আইসিটির বিচারিক প্রক্রিয়াকে ‘বিচারিক ক্ষমতার অপব্যবহার’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে রায়ের সামারিতে স্পষ্ট করেই উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে আইসিটির ন্যূনতম ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থতা নিয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ব্যাপক সমালোচনা করেছিল। শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রিত ট্রাইব্যুনাল ন্যূনতম ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতেও ব্যর্থ হয়েছিলÑএটা ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টও স্বীকার করে নিয়েছে এই রায়ের মাধ্যমে।

কেস স্টাডি : আবদুল কাদের মোল্লা

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে প্রথম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছিল। এই রায় ঘোষণার দিনেই ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে শুরু হয় ইতিহাসের জঘন্যতম ‘রাজনৈতিক মব’। কয়েক স্তরের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতই শুধু নয়, নিয়মিত বিরিয়ানি ও খাবার-দাবার সরবরাহ করে দিনের পর দিন চলতে থাকে ফাঁসির দাবিতে স্লোগান।

এই রাজনৈতিক মবকে সামনে রেখেই আইনে পরিবর্তন এনে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের এখতিয়ার নিশ্চিত করা হয়। শাহবাগের ফ্যাসিবাদী স্লোগান ও রাজনৈতিক মবের দাবি অনুযায়ী মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগ একজন মাত্র বিতর্কিত সাক্ষীর বক্তব্যকে আমলে নিয়ে ফাঁসির দণ্ড ঘোষণা করে। রায়ে আপিল আদালতের বিচারক আবদুল ওয়াহাব মিঞা ভিন্নমত পোষণ করে যাবজ্জীবন বহাল রেখেছিলেন। বাকি সবাই ফাঁসির পক্ষে একমত হন।

আবদুল কাদের মোল্লার মামলায় মিরপুরের হযরত আলীকে হত্যার ঘটনায় একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী বানানো হয়েছিল তার মেয়ে মোমেনা বেগমকে। এই মোমেনা বেগমের তিনটি বক্তব্য রয়েছে ঘটনা প্রসঙ্গে, যা একটির সঙ্গে আরেকটির কোনো মিল নেই। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত মোমেনার বক্তব্য এক রকম। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের তদন্ত সংস্থার কাছে দেওয়া বক্তব্য এক রকম। আবার আদালতে উপস্থাপিত বিতর্কিত মোমেনার বক্তব্য আরেক রকম। আপিলে শুনানির সময় তিন বক্তব্যের মধ্যে কোনটাকে গ্রহণযোগ্য মানদণ্ডে নেওয়া হবেÑ এমন প্রশ্ন উঠেছিল। আইনজীবীর প্রশ্নের জবাবে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছিলেন, ‘এর মধ্যে আমরা যেটা বিশ্বাস করব সেটা গ্রহণ করব।’

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত মোমেনার বক্তব্য হচ্ছে, ঘটনার দিনে তিনি শ্বশুরবাড়ি ছিলেন। পরে মানুষের মুখে শুনেছেন বিহারিরা পাকিস্তান আর্মিকে সঙ্গে নিয়ে এসে তার বাবা ও পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছেন।

আইসিটির তদন্ত সংস্থার উপস্থাপিত প্রতিবেদনে দেখা যায়Ñ মোমেনা বলেছেন, তার বয়স তখন ১২। তার বাবা হযরত আলীকে হত্যার উদ্দেশে বাড়িতে আক্রমণের সময় ছোট বোনকে নিয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে ছিলেন। বিহারি আক্তার গুণ্ডার বাহিনী ও পাকিস্তান আর্মি তাদের বাড়িতে আক্রমণ চালিয়েছিল। খাটের নিচে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় দেখেছেন কীভাবে তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে। বিহারি যারা ছিলেন তাদের তিনি চিনতেনÑ এটাও উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু আবদুল কাদের মোল্লার বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই তদন্ত সংস্থার উপস্থাপিত প্রতিবেদনে।

পরে মোমেনা নামে একজনকে নেকাবে আবৃত অবস্থায় ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় সাক্ষ্য দিতে। ক্যামেরা ট্রায়ালে তার সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল। সে দিন তিনি বলেছেন, ‘আবদুল কাদের মোল্লাকে চিনতেন এবং চিহ্নিত করেছেন।’

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে দেওয়া মোমেনার বক্তব্য অনুযায়ী, ঘটনার সময় তিনি শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। তদন্ত সংস্থার কাছে দেওয়া বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ‘বয়স তখন ১২ বছর। খাটের নিচে লুকিয়ে ঘটনা দেখেছেন। আবদুল কাদের মোল্লাকে দেখেন সেটা উল্লেখ নেই তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনে। আদালতে নেকাবে আবৃত মোমেনা সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেছেন, আবদুল কাদের মোল্লাকে চিনতেন এবং চিহ্নিত করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে যখন বক্তব্য দেন, তখন ১৯৯৬ সাল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। ২০১০ সালে তদন্ত সংস্থার কাছে যখন বক্তব্য দেন, তখনো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। কোনো রকমের বৈরিতা ছিল না। তারপরও মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ তিন বিতর্কিত বক্তব্যের একটি গ্রহণ করে আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।

বিচারের নীতি হচ্ছেÑকাউকে চূড়ান্ত দণ্ড হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দিতে হলে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা সন্দেহাতীত প্রমাণ হতে হবে। কিন্তু মোমেনার তিন রকমের বক্তব্যের ফলে আবদুল কাদের মোল্লার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি কোনো মানদণ্ডেই সন্দেহাতীত ছিল না। মূলত জুডিশিয়াল কিলিংয়ের উদ্দেশেই আবদুল কাদের মোল্লার মামলায় মোমেনাকে সাক্ষী সাজানো হয়েছিল।

কেস স্টাডি : সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী

বিএনপি নেতা ও দলের তৎকালীন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলায়ও সাক্ষীদের বক্তব্যে নানা রকমের বৈপরিত্য রয়েছে। সালাউদ্দিন কাদের দাবি করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। এ নিয়ে তার সহপাঠী ও তৎকালীন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শামিম হাসনাইন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে আদালতে অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন তাকে সাক্ষ্য দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার শিক্ষা সনদও উপস্থাপন করা হয়েছিল। সার্টিফিকেট পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর, রেজিস্ট্রার এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধানের প্রতিস্বাক্ষরে সত্যায়িত করা হয়। এছাড়া পাকিস্তানের লাহোর শিক্ষা কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও এটি সত্যায়িত করে দেন। সাধারণ কোনো গেজেটেড অফিসার দ্বারা সত্যায়িত নয়। কিন্তু এসব কিছুই গ্রাহ্য করেনি ট্রাইব্যুনাল এবং সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগ। সঙ্গে ছিলেন নাজমুন আরা সুলতানা, সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তাদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তেই এ আদেশ হয়।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দাবি অনুযায়ী, তখন তিনি আসলেই পাকিস্তানে অধ্যয়নরত ছিলেন নাকি দেশেই ছিলেনÑএই বিতর্ক নিরসনে সত্যতা যাছাইয়ের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগ। বরং শুনানিতে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান বৈরী রাষ্ট্র। তাদের কোনো কথা গ্রহণযোগ্য নয়।’ তখনই প্রশ্ন উঠেছিল হাইকোর্ট বিভাগে তৎকালীন সিটিং বিচারপতি শামীম হাসনাইনের কথাও কী তাহলে গ্রহণযোগ্য নয়? তাকে সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হলো না কেন?

মূলত এভাবেই একের পর এক একরতফাভাবে বিচারিক হত্যাকাণ্ডের নির্দেশনা দেওয়া হয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে।

কেস স্টাডি : মতিউর রহমান নিজামী

এ মামলা চলাকালীন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী পাবনার অ্যাডভোকেট নান্নুর একটি ভিডিও বক্তব্য ছড়িয়ে পড়েছিল। ভিডিও বক্তব্যে তিনি স্পষ্ট করেই উল্লেখ করেছিলেন, কীভাবে তাকে সাক্ষ্য বানানো হয়েছিল। কোন পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বানোয়াট সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন।

৫ আগস্টের পর আরো চারজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা প্রত্যেকেই স্বীকার করেনÑজোর করে তাদেরসেফ হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বানোয়াট সাক্ষ্য দিতে রাজি না হলে তাদের নানামুখী চাপ দেওয়া হয়। মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী তোফাজ্জল মাস্টার প্রাইমারি স্কুলে মতিউর রহমান নিজামীর সহপাঠী ছিলেন।

তোফাজ্জল জানান, মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে তাকে চাপ দেওয়া হলে পালিয়ে ঢাকায় গিয়ে মেয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। সেখানে র‌্যাব ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে নিয়ে যায়সেফ হাউসে।সেফ হাউসে চাপের মুখে তিনি শেখানো সাক্ষ্য দিতে রাজি না হলে তার গায়েও হাত তোলা হয়।

আরেক সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা আবু শ্যামা। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মতিউর রহমান নিজামীর নামও শুনেননি তিনি। ১৯৯১ সালে নির্বাচনের সময় তিনি নিজামীকে দেখেছেন। এর আগে কখনো দেখেননি। তাকে যে ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী বানানো হয়েছিল ওই ঘটনাও তিনি দেখেননি এবং মতিউর রহমান নিজামীর নামও শোনেননি তখন। জোর করে তাকে দিয়ে এই ঘটনার কথা বলানো হয়েছিল বলে দাবি তার।

অন্যদিকে স্কাইপ কেলেঙ্কারিতে প্রকাশিত আলোচনায় বিচারক নিজামুল হক নাসিম বলেছিলেন, ‘গভর্নমেন্ট গেছে পাগল হইয়া, একটা রায় চায়’, ‘আমি দাঁড়াইয়া যামু, আপনি বসাইয়া দেবেন, লোকে বুঝবে আমাদের মাঝে সম্পর্ক নাই’Ñ এই উক্তিগুলোর মাঝেই স্পষ্ট জুডিশিয়াল কিলিংয়ের টার্গেট নিয়েই সাজানো হয়েছিল বিচারের নাটক। যেমনটা নিজামুল হক নাসিম তার বন্ধু আহমদ জিয়াউদ্দিনকে স্কাইপ কথোপকথনে বলেছিলেন, ‘আজো ট্রাইব্যুনালে নাটক ভালোই হয়েছে। আমি হলাম এই নাটকের অভিনেতা।’

সাবেক বিচারপতি ও আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া : বিচার ছিল ডিক্টেটেড

আওয়ামী লীগ আমলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ডিক্টেটেড বিচার হয়েছিল বলে মনে করেন বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান।

শাহ আবু নাঈম আমার দেশকে বলেন, ‘ওই সময় তো আর আইন ও বিধিবিধান দেখে বিচার করা হয়নি। সরকার একটি নির্দেশনা দিয়েছিল আর ট্রাইব্যুনাল সেটা বাস্তবায়ন করেছে, যার প্রতিবেদন দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যমেও এসেছে। সে সময় যে বিচার হয়েছে, সেটা নিয়ে মন্তব্য করার মতো নয়। কারণ বিচার হলেই তো মন্তব্য করার প্রসঙ্গ আসবে। ওই সময় যেটা হয়েছে, সেটাকে বিচার বলা মুশকিল। এখন সেসব ঘটনা অতীত হয়ে গেছে। যারা প্রাণ দিয়েছেন ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের আত্মীয়রা চাইলে সেটার বিষয়ে উচ্চ আদালতে এখন প্রতিকার চাইতে পারেন। অন্তত প্রকৃত সত্যটি বের করার জন্য হলেও।’

বিগত আওয়ামী লীগের সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমকে বিচার বলতে নারাজ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, ‘ওই সময় শেখ হাসিনার ইচ্ছে হয়েছে কিছু লোককে হত্যা করতে হবে, সেটা তিনি বিভিন্ন উপায়ে করেছেন। কাউকে গুম করে হত্যা করেছেন। আবার কাউকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছেন। সবকিছুই তার ইচ্ছেমাফিক হয়েছে। বিচারের নামে তিনি প্রতারণা করেছেন জাতির সঙ্গে। তার ওই বিচারিক প্রতারণার শিকার হয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ।’

ভুক্তভোগীদের পক্ষের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী বলেন, বিচারিক হত্যাকাণ্ডের প্রথম শিকার হয়েছিলেন আবদুল কাদের মোল্লা। এটি ছিল আপিল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকদের দ্বারা সংঘটিত প্রথম হত্যাকাণ্ড। তারা আইন পরিবর্তন করেছিল শুধু হত্যাকাণ্ড সম্পাদনের জন্য। আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগ করতে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করেছিলেন। এর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেওয়া।

এহসান এ সিদ্দিকী আরো বলেন, ‘তারা সাক্ষ্য আইনের এমনভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন, যাতে সাক্ষীদের পূর্ববর্তী অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্য অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। ফলে আদালতের বাইরে দেওয়া সাক্ষীদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য ব্যবহার করে প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের জেরা করা সম্ভব হয়নি।

আবদুল কাদের মোল্লার মামলার রায় ব্যবহার করা হয়েছিল জামায়াত ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের ফাঁসি কার্যকর করার জন্য। এমনকি যখন দণ্ড দেওয়ার মতো কোনো প্রমাণই ছিল না, তখনও আপিল বিভাগ নিজেরাই প্রমাণ সৃষ্টি করেছিল। এ রকমই ঘটেছিল মাওলানা নিজামীর মামলায়। সেখানে সাক্ষীরা দাবি করেছিলেন যে, তারা চাঁদের আলোয় মাওলানা নিজামীকে দেখেছে, অথচ সেই রাতে কোনো চাঁদই ছিল না। বিচারপতি নাজমুন আরা রায়ে উল্লেখ করেছিলেন যে, সাক্ষী নাকি প্রদীপের আলোতে মাওলানা নিজামীকে দেখেছিল।

সূত্র: আমার দেশ 

Sunday, August 17, 2025

গুম কমিশনের প্রতিবেদন- গুম-খুনে জড়িত জিয়াউলসহ ২৩ কমান্ডার চিহ্নিত। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

গুম কমিশনের প্রতিবেদন-

গুম-খুনে জড়িত জিয়াউলসহ ২৩ কমান্ডার চিহ্নিত:

প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ২৫

গত পনেরো বছরে বিপুলসংখ্যক মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। এই গুমের সঙ্গে রাষ্ট্রের পাঁচটি বাহিনীর চিহ্নিত কিছু কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে র‌্যাবের কর্মকর্তারা ৬০ শতাংশ গুমে জড়িত ছিলেন। গত ৬ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গুমে জড়িত ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ছয়জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

পাঁচজনই ডিজিএফআইর সাবেক মহাপরিচালক ও পরিচালক। তারা হলেন- লে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লে. জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) তৌহিদুল ইসলাম।

অন্তর্বর্তী সরকার গুমের ঘটনাগুলো তদন্তের জন্য বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটি গঠন করে গত বছরের ২৭ আগস্ট। কমিশনকে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কমিশন ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ : অ্যা স্ট্রাকচারাল ডায়াগনসিস অব এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে দুটি অন্তর্বর্তী রিপোর্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান বিচার গুম কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে গুম করা হতো তিনটি ধাপে। প্রথম ধাপে ছিল ‘কৌশলগত নেতৃত্ব’। এরা হলেন- ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিক এবং পলাতক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। দ্বিতীয় ধাপে ছিলেন- বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার চিহ্নিত কর্মকর্তারা।

তৃতীয় ধাপে বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার সদস্যরা ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতেন। গুম কমিশন গুমের এক হাজার ৮৫০টি অভিযোগ পেয়েছে। এই অভিযোগগুলোর মধ্যে এখনো ৩৪৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গুম কমিশনে যারা অভিযোগ দায়ের করেছেন, এখনো তাদের অনেককে হুমকি বা ‘থ্রেট’ করা হচ্ছে। ভিকটিমরা ভয়ে আছে। এসব থ্রেট করার প্রমাণ গুম কমিশনে রয়েছে। কমিশন গুম-খুনের জন্য জিয়াউল আহসানসহ ২৩ জন কমান্ডারকে চিহ্নিত করেছে।

সূত্র: আমার দেশ 

জিয়াউল সম্পর্কে যে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

জিয়াউল সম্পর্কে যে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল:

প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১০: ৪৮

র‌্যাবে কর্মরত থাকাকালে মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান কীভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছিলেন, সে সম্পর্কে লিখেছেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া।

তিনি তার ফেসবুক পোস্টে ‘বিজিবি, র‌্যাব, এসএসএফ ও আনসার নিয়ে আমার যত অভিজ্ঞতা’ বিষয়ে জিয়াউল আহসানকে নিয়ে লেখেন: ‘যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি পীড়া দিত, তা ছিল র‍্যাব-এ প্রেষণে থাকা আমাদের অফিসারদের দ্বারা সাধারণ নাগরিক, রাজনৈতিক কর্মী বা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের অপহরণ ও হত্যা।

তরুণ, ক্যারিয়ারমুখী অফিসারদের র‍্যাবে পাঠানো হতো, সেখানে কিছুদিন কাজ করে তারা এমন এক চরিত্র নিয়ে ফিরত, যেন তারা পেশাদার খুনি। একই প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছিল জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (জেসিও), নন-কমিশন্ড অফিসার (এনসিও) এবং সৈনিকদের মধ্যেও। আমি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই চাইছিলাম তাদের সেনাবাহিনীতে ফিরিয়ে আনা হোক। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানালে তিনি আমার কথায় সম্মতিসূচক ইঙ্গিত দিলেন, এমনকি বললেন জাতীয় রক্ষীবাহিনী থেকেও র‍্যাব খারাপ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই বাস্তবে রূপ নেয়নি।

কয়েক দিন পর আমি কর্নেল (পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও ডিজি এসএসএফ) মুজিবকে—যিনি তখন র‍্যাবের এডিজি (ADG) ছিলেন—ডেকে বলি যেন তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল (এখন মেজর জেনারেল) জিয়াউল আহসানকে নিয়ন্ত্রণে রাখেন এবং আর যেন কোনো ‘ক্রসফায়ার’ না ঘটে। কর্নেল মুজিব এ ব্যাপারে আমাকে কথা দেন এবং বিদায় নেওয়ার সময় তাকে বেশ উদ্বিগ্ন মনে হয়। পরের কয়েক দিন পত্র-পত্রিকা লক্ষ করলাম, নতুন কোনো ক্রসফায়ারের খবর নেই—এতে মানসিকভাবে কিছুটা স্বস্তি পেলাম।

এরপর কর্নেল মুজিব একাধিকবার আমাকে এসে জানিয়েছিলেন, সত্যিই ক্রসফায়ারের ঘটনা বন্ধ হয়েছে। কিছুদিন পর আমি বুঝতে পারি ঘটনা ঠিকই ঘটছে কিন্তু সেগুলোর খবর চাপা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে যখন কর্নেল মুজিব র‍্যাব ছেড়ে অন্যত্র বদলি হয়ে যান, আর কর্নেল জিয়াউল আহসানÑযিনি আগে র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার দায়িত্বে ছিলেনÑনতুন ডিজি বেনজীর আসার সঙ্গে সঙ্গে এডিজি র‍্যাব হিসেবে দায়িত্ব নেন।

এরপর আর্মি নিরাপত্তা ইউনিট (ASU) সূত্রে খবর পাই যে, কর্নেল জিয়া নিজের আবাসিক টাওয়ারে একজন গার্ড রেখেছেন, বাসায় অস্ত্র রাখছেন এবং পুরো ফ্ল্যাটে সিসিটিভি বসিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে বলা হয় গার্ড সরিয়ে নিতে, ক্যামেরাগুলো খুলে ফেলতে, বাসায় অস্ত্র রাখা থেকে বিরত থাকতে এবং অফিসিয়াল কোয়ার্টারে যে সামরিক নিয়মকানুন আছে, সেগুলো মেনে চলতে।

পরবর্তীকালে তার আচরণ আরো উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠে। ডাইরেক্টর মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স (DMI) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জগলুল তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন কিন্তু তাতে কর্নেল জিয়া কোনো কর্ণপাত করেননি। পরে আর্মি নিরাপত্তা ইউনিটের (ASU) কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজল তাকে আলাপের জন্য ডাকেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজল আমাকে জানান, জিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মনে হয়েছে যেন সে এমন একজনের সঙ্গে কথা বলছে যার মস্তিষ্ক পাথর বা ইটের টুকরো দিয়ে ঠাসা—বোঝানোর কোনো উপায় নেই।’

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিমের লেখা থেকে আরো জানা যায়, ঢাকা সেনানিবাসের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জিয়াউল আহসানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিলেন তিনি। তিনি এও লেখেন, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল তারিক সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রী মিলিটারি সেক্রেটারি ও অ্যাসিসট্যান্ট মিলিটারি সেক্রেটারির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগে জিয়াউল আহসান তার নির্দেশকে তখন চ্যালেঞ্জ করা শুরু করেন।

কে এই মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান?

জিয়াউলের চাকরিজীবন সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি সেনাবাহিনীর ২৪তম লং কোর্সের কর্মকর্তা। পরিচিতি নম্বর বিএ-৪০৬০। ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে যেকোনো বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, আয়নাঘর, টেলিমনিটরিং ইত্যাদি সব অপরাধের চিহ্নিত অন্যতম প্রধান ব্যক্তি এই জিয়াউল আহসান। তারিক সিদ্দিকই তার প্রধান বস। তিনিই তাকে ‘মনস্টার’ বা দানব বানিয়েছেন।

জিয়াউল আহসান ২০০৯ সালে এলিট ফোর্স হিসেবে পরিচিত র‌্যাব-২ এর টুআইসি হিসেবে যোগদান করেন। লে. কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে র‌্যাব সদর দপ্তরে গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হন। ওই বছরের মে মাসে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যায় তিনি র‌্যাবের অভিযান পরিচালনা করেন। ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের ঘটনাও তার নির্দেশনায় ঘটে। ২০১৫ সালে তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি পান। তাকে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইর পরিচালক (প্রশিক্ষণ) পদে পদায়ন করা হয়। এক বছর পর তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) পরিচালক করা হয়। ২০২১ সালে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতির পর তিনি এনটিএমসির মহাপরিচালক হন।

জিয়াউল আহসানের গুম সংক্রান্ত অপরাধ সম্পর্কে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে গুম কমিশনের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, কমিশন নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে নয়, সামগ্রিক গুমের তদন্ত করছে। গুম কমিশনের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে জানা গেছে, কীভাবে গুম করা হতো, গুমের পর খুন করা হতো এবং লোমহর্ষক নির্যাতন করা হতো। গুমে ‘সুপিরিয়র কমান্ড’ ছিলেন শেখ হাসিনা। তিনি তারেক সিদ্দিকের মাধ্যমে গুমের কিংবা খুন করার নির্দেশগুলো দিতেন। কমিশনের রিপোর্টে বিভিন্ন কেস স্টাডি তুলে ধরা হয়েছে। সাদা পোশাকে এক বাহিনীর সদস্যরা গুম করত, প্রচার করা হতো অন্য বাহিনীর নাম। এক বাহিনীর সাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়ে আসত টার্গেট মানুষটিকে, হস্তান্তর করত অন্য বাহিনীর হাতে। যত গুম হয়েছে তার মধ্যে জিয়াউল আহসানের টিমই বেশি করেছে। গুমের শিকার হওয়া মানুষদের মধ্যে জিয়াউল আহসান ও তার টিম হত্যাই করেছে এক হাজার ৩০ জনকে। এজন্য বুড়িগঙ্গার পোস্তগোলা ঘাট নীরব সাক্ষী হয়ে আছে। কত মানুষকে তিনি গুম করেছেন এ পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায়।

বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান শেখ হাসিনার পনেরো বছরের শাসনকালে এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। শেখ হাসিনা ও তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক সিদ্দিক বড় বড় যত অপকর্ম করিয়েছেন, তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন জিয়াউল আহসান। অপহরণ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ফোনে আড়ি পেতে কল রেকর্ড করা সবকিছুতেই তার সংশ্লিষ্টতা ছিল। জুলাই-আগস্টের গণহত্যায়ও অভিযুক্ত হয়েছেন এই কর্মকর্তা। সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়ার (আইকেবি) লেখাতেও জিয়াউল আহসানের অপরাধের বর্ণনা রয়েছে। জিয়াউল আহসান তাকে মেরে ফেলতে পারেন এমন তথ্যে তিনি আতঙ্কিত ছিলেন। একদিন সেনাপ্রধানের কার্যালয়ে বোমা আতঙ্কও দেখা দেয়।

সূত্র: আমার দেশ 

বিশ্ব সিরিয়াল কিলার জিয়াউলের শিকার ১০৩০ জন। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

বিশ্ব সিরিয়াল কিলার জিয়াউলের শিকার ১০৩০ জন:

প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২২

‘একজন আসামি আছে যার ব্যাপারে তদন্ত করে পেয়েছি সে মাথায় গুলি করে এক হাজার ৩০ জন মানুষকে হত্যা করেছে। গুম করে মানুষদের আয়নাঘরে রাখা হয়েছিল। তার একটা নেশা ছিল এই গুম ব্যক্তিদের হাত-পা-চোখ বেঁধে নৌকায় করে মাঝ বুড়িগঙ্গায় নিয়ে যেত। গুলি করে লাশটা নদীতে ফেলত। গুলিটা ভিকটিমের মাথার কাছে নিয়ে করত। আমি জিজ্ঞাসা করলাম-সেটা কেন? তার জবাব-গুলি করার পর নিহত ব্যক্তির মগজ ও রক্তের গরম ছিটা হাতে লাগলে দারুণ ফিলিংস অনুভব হতো।’

কে এই ভয়ানক খুনি, কে এই সিরিয়াল কিলার? আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের এ বক্তব্যের সূত্র ধরে আমার দেশ অনুসন্ধান চালায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই হিংস্র খুনি বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত র‌্যাবের বিভিন্ন পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় নিজের টিম নিয়ে এই খুনগুলো করেছেন তিনি। গুম করা ব্যক্তিকে খুন করতে তিনি বলতেন-‘গলফ করো’।

অর্থাৎ ওকে খুন করো। জিয়াউল আহসান এখন কেরানীগঞ্জ বিশেষ কারাগারের ধলেশ্বরী ভবনে ডিভিশনপ্রাপ্ত সেলে বন্দি আছেন। টেলিফোনে জানতে চাইলে বিশেষ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার সায়েফ উদ্দিন নয়ন জানান, সুনির্দিষ্ট কী অপরাধে তিনি কারাগারে আছেন বলতে পারছি না। তবে তিনি ১৫টি মামলায় (ধারা ৩০২, ৩০৭, ১০৯, ৩২৬) বন্দি আছেন।

এ সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জিয়াউল আহসানের নৃশংসতার অসংখ্য কাহিনি জানা গেছে। পলাতক শেখ হাসিনা এবং তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকের নির্দেশেই বেশি মানুষকে গুম-খুন করেছেন জিয়াউল আহসান। তিনি হাসিনা ও তারিক সিদ্দিকের একান্ত অনুগত ও বিশ্বস্ত ছিলেন। তাদের নির্দেশে গুম করে আয়নাঘরে রাখতেন ভিকটিমদের। সেখান থেকে বিভিন্ন কায়দায় খুন করে লাশ গুম করে দেওয়া হতো। জিয়াউল আহসান গুম হওয়া ব্যক্তিদের যমটুপি পরিয়ে মাইক্রোবাসে করে পোস্তগোলা ব্রিজ, কাঞ্চন ব্রিজ কিংবা কাঁচপুর ব্রিজে নিয়ে গিয়ে গুলি করে লাশ ফেলে দিতেন শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে। একদিনে একজনকে দিয়ে ১১টি এবং আরেকজনকে দিয়ে ১৩টি খুন করারও রেকর্ড আছে। কখনো মাইক্রোবাসেই ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হতো। এরপর লাশ রেললাইনের ওপর শুইয়ে দিতেন। ট্রেন এসে লাশ দ্বিখণ্ডিত, ত্রিখণ্ডিত করত।

২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সময়ে কমলাপুর থেকে টঙ্গি পর্যন্ত ট্রেনে কাটা যত অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ পাওয়া যেত, তা সবই জিয়াউল আহসানের খুন করা। বেশিরভাগ খুন করা হয়েছে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীতে। একটি নির্দিষ্ট নৌকা ছিল। সেই নৌকায় করে যমটুপি পরা ব্যক্তিদের মাঝনদীতে নিয়ে টুপি খুলতেন। চোখ বাঁধা অবস্থায়ই থাকত। মাথার একেবারে কাছে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করতেন। ফিনকি দিয়ে রক্ত ও মগজ এসে পড়ত জিয়াউল আহসানের হাতে। তখন তিনি উল্লাস করতেন। কখনো আবার দেখা যেত আগেই হত্যা করা লাশ নৌকায় তুলে নিচে ও উপরে সিমেন্টভর্তি বস্তার সঙ্গে বেঁধে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিতেন, যাতে লাশ পানির নিচে তলিয়ে যায়। হতভাগ্য বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর শেষ পরিণতিও ঘটে জিয়াউলের হাতে।

শুধু তা-ই নয়, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যক্তিকে ধরে সীমান্তের ওপারে তাদের হাতে তুলে দেওয়ারও অনেক ঘটনা আছে। সিলেট সীমান্তে এমন ৭ জনকে তুলে দেওয়ার নজির একটি রেকর্ডে উল্লেখ আছে। একবার মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকের ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে ৫০ কেজিরও বেশি ওজনের একটি বস্তা পাঠানো হয় জিয়াউল আহসানের বাসায়। গাড়িতে করে যিনি এই বস্তা জিয়াউলের বাসায় নিয়ে যান, তার বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়, ‘এটি ছিল টাকার বস্তা’।

কে এই মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান? তার চাকরিজীবন সম্পর্কে খোঁজ করে জানা গেছে, তিনি সেনাবাহিনীর ২৪তম লং কোর্সের কর্মকর্তা। পরিচিতি নম্বর বিএ-৪০৬০। ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে যেকোনো বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, আয়নাঘর, টেলিমনিটরিং ইত্যাদি সব অপরাধের চিহ্নিত অন্যতম প্রধান ব্যক্তি এই জিয়াউল আহসান। তারিক সিদ্দিকই তার প্রধান বস। তিনিই তাকে ‘মনস্টার’ বা দানব বানিয়েছেন।

জিয়াউল আহসান ২০০৯ সালে এলিট ফোর্স হিসেবে পরিচিত র‌্যাব-২ এর টুআইসি হিসেবে যোগদান করেন। লে. কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে র‌্যাব সদর দপ্তরে গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হন। ওই বছরের মে মাসে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যায় তিনি র‌্যাবের অভিযান পরিচালনা করেন। ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের ঘটনাও তার নির্দেশনায় ঘটে। ২০১৫ সালে তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি পান। তাকে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইর পরিচালক (প্রশিক্ষণ) পদে পদায়ন করা হয়। এক বছর পর তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) পরিচালক করা হয়। ২০২১ সালে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতির পর তিনি এনটিএমসির মহাপরিচালক হন।

জিয়াউল আহসানের গুম সংক্রান্ত অপরাধ সম্পর্কে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে গুম কমিশনের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, কমিশন নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে নয়, সামগ্রিক গুমের তদন্ত করছে। গুম কমিশনের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে জানা গেছে, কীভাবে গুম করা হতো, গুমের পর খুন করা হতো এবং লোমহর্ষক নির্যাতন করা হতো। গুমে ‘সুপিরিয়র কমান্ড’ ছিলেন শেখ হাসিনা। তিনি তারেক সিদ্দিকের মাধ্যমে গুমের কিংবা খুন করার নির্দেশগুলো দিতেন। কমিশনের রিপোর্টে বিভিন্ন কেস স্টাডি তুলে ধরা হয়েছে। সাদা পোশাকে এক বাহিনীর সদস্যরা গুম করত, প্রচার করা হতো অন্য বাহিনীর নাম। এক বাহিনীর সাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়ে আসত টার্গেট মানুষটিকে, হস্তান্তর করত অন্য বাহিনীর হাতে। যত গুম হয়েছে তার মধ্যে জিয়াউল আহসানের টিমই বেশি করেছে। গুমের শিকার হওয়া মানুষদের মধ্যে জিয়াউল আহসান ও তার টিম হত্যাই করেছে এক হাজার ৩০ জনকে। এজন্য বুড়িগঙ্গার পোস্তগোলা ঘাট নীরব সাক্ষী হয়ে আছে। কত মানুষকে তিনি গুম করেছেন এ পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায়।

বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান শেখ হাসিনার পনেরো বছরের শাসনকালে এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। শেখ হাসিনা ও তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক সিদ্দিক বড় বড় যত অপকর্ম করিয়েছেন, তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন জিয়াউল আহসান। অপহরণ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ফোনে আড়ি পেতে কল রেকর্ড করা সবকিছুতেই তার সংশ্লিষ্টতা ছিল। জুলাই-আগস্টের গণহত্যায়ও অভিযুক্ত হয়েছেন এই কর্মকর্তা। সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়ার (আইকেবি) লেখাতেও জিয়াউল আহসানের অপরাধের বর্ণনা রয়েছে। জিয়াউল আহসান তাকে মেরে ফেলতে পারেনÑএমন তথ্যে তিনি আতঙ্কিত ছিলেন। একদিন সেনাপ্রধানের কার্যালয়ে বোমা আতঙ্কও দেখা দেয়।

গুম-খুনে জড়িত জিয়াউলসহ বিভিন্ন বাহিনীর ২৩ কমান্ডারকে চিহ্নিত গুম কমিশনের

গত পনেরো বছরে বিপুলসংখ্যক মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। এই গুমের সঙ্গে রাষ্ট্রের পাঁচটি বাহিনীর চিহ্নিত কিছু কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে র‌্যাবের কর্মকর্তারা ৬০ শতাংশ গুমে জড়িত ছিলেন। গত ৬ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গুমে জড়িত ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ছয়জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। পাঁচজনই ডিজিএফআইর সাবেক মহাপরিচালক ও পরিচালক। তারা হলেন- লে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লে. জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) তৌহিদুল ইসলাম। অন্তর্বর্তী সরকার গুমের ঘটনাগুলো তদন্তের জন্য বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটি গঠন করে গত বছরের ২৭ আগস্ট। কমিশনকে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কমিশন ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ : অ্যা স্ট্রাকচারাল ডায়াগনসিস অব এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে দুটি অন্তর্বর্তী রিপোর্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মইনুল ইসলাম আমার দেশকে জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরে কমিশন গুমসংক্রান্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট সরকারের কাছে পেশ করবে।

গুম কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে গুম করা হতো তিনটি ধাপে। প্রথম ধাপে ছিল ‘কৌশলগত নেতৃত্ব’। এরা হলেন- ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিক এবং পলাতক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। দ্বিতীয় ধাপে ছিলেন- বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার চিহ্নিত কর্মকর্তারা। তৃতীয় ধাপে বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার সদস্যরা ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতেন। গুম কমিশন গুমের এক হাজার ৮৫০টি অভিযোগ পেয়েছে। এই অভিযোগগুলোর মধ্যে এখনো ৩৪৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গুম কমিশনে যারা অভিযোগ দায়ের করেছেন, এখনো তাদের অনেককে হুমকি বা ‘থ্রেট’ করা হচ্ছে। ভিকটিমরা ভয়ে আছে। এসব থ্রেট করার প্রমাণ গুম কমিশনে রয়েছে। কমিশন গুম-খুনের জন্য জিয়াউল আহসানসহ ২৩ জন কমান্ডারকে চিহ্নিত করেছে।

জিয়াউল আহসান সম্পর্কে সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া

র‌্যাবে কর্মরত থাকাকালে জিয়াউল আহসান কীভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছিলেন, সে সম্পর্কে লিখেছেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া। তিনি তার ফেসবুক পোস্টে ‘বিজিবি, র‌্যাব, এসএসএফ ও আনসার নিয়ে আমার যত অভিজ্ঞতা’ বিষয়ে জিয়াউল আহসানকে নিয়ে লেখেন : “যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি পীড়া দিত, তা ছিল র‍্যাব-এ প্রেষণে থাকা আমাদের অফিসারদের দ্বারা সাধারণ নাগরিক, রাজনৈতিক কর্মী বা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের অপহরণ ও হত্যা।

তরুণ, ক্যারিয়ারমুখী অফিসারদের র‍্যাবে পাঠানো হতো, সেখানে কিছুদিন কাজ করে তারা এমন এক চরিত্র নিয়ে ফিরত, যেন তারা পেশাদার খুনি। একই প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছিল জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (জেসিও), নন-কমিশন্ড অফিসার (এনসিও) এবং সৈনিকদের মধ্যেও। আমি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই চাইছিলাম তাদের সেনাবাহিনীতে ফিরিয়ে আনা হোক। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানালে তিনি আমার কথায় সম্মতিসূচক ইঙ্গিত দিলেন, এমনকি বললেন জাতীয় রক্ষীবাহিনী থেকেও র‍্যাব খারাপ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই বাস্তবে রূপ নেয়নি।

কয়েক দিন পর আমি কর্নেল (পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও ডিজি এসএসএফ) মুজিবকে—যিনি তখন র‍্যাবের এডিজি (ADG) ছিলেন—ডেকে বলি যেন তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল (এখন মেজর জেনারেল) জিয়াউল আহসানকে নিয়ন্ত্রণে রাখেন এবং আর যেন কোনো ‘ক্রসফায়ার’ না ঘটে। কর্নেল মুজিব এ ব্যাপারে আমাকে কথা দেন এবং বিদায় নেওয়ার সময় তাকে বেশ উদ্বিগ্ন মনে হয়। পরের কয়েক দিন পত্র-পত্রিকা লক্ষ করলাম, নতুন কোনো ক্রসফায়ারের খবর নেই—এতে মানসিকভাবে কিছুটা স্বস্তি পেলাম।

এরপর কর্নেল মুজিব একাধিকবার আমাকে এসে জানিয়েছিলেন, সত্যিই ক্রসফায়ারের ঘটনা বন্ধ হয়েছে। কিছুদিন পর আমি বুঝতে পারি ঘটনা ঠিকই ঘটছে কিন্তু সেগুলোর খবর চাপা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে যখন কর্নেল মুজিব র‍্যাব ছেড়ে অন্যত্র বদলি হয়ে যান, আর কর্নেল জিয়াউল আহসানÑযিনি আগে র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার দায়িত্বে ছিলেনÑনতুন ডিজি বেনজীর আসার সঙ্গে সঙ্গে এডিজি র‍্যাব হিসেবে দায়িত্ব নেন।

এরপর আর্মি নিরাপত্তা ইউনিট (ASU) সূত্রে খবর পাই যে, কর্নেল জিয়া নিজের আবাসিক টাওয়ারে একজন গার্ড রেখেছেন, বাসায় অস্ত্র রাখছেন এবং পুরো ফ্ল্যাটে সিসিটিভি বসিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে বলা হয় গার্ড সরিয়ে নিতে, ক্যামেরাগুলো খুলে ফেলতে, বাসায় অস্ত্র রাখা থেকে বিরত থাকতে এবং অফিসিয়াল কোয়ার্টারে যে সামরিক নিয়মকানুন আছে, সেগুলো মেনে চলতে।

পরবর্তীকালে তার আচরণ আরো উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠে। ডাইরেক্টর মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স (DMI) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জগলুল তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন কিন্তু তাতে কর্নেল জিয়া কোনো কর্ণপাত করেননি। পরে আর্মি নিরাপত্তা ইউনিটের (ASU) কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজল তাকে আলাপের জন্য ডাকেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজল আমাকে জানান, জিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মনে হয়েছে যেন সে এমন একজনের সঙ্গে কথা বলছে যার মস্তিষ্ক পাথর বা ইটের টুকরো দিয়ে ঠাসা—বোঝানোর কোনো উপায় নেই।”

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিমের লেখা থেকে আরো জানা যায়, ঢাকা সেনানিবাসের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জিয়াউল আহসানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিলেন তিনি। তিনি এও লেখেন, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল তারিক সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রী মিলিটারি সেক্রেটারি ও অ্যাসিসট্যান্ট মিলিটারি সেক্রেটারির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগে জিয়াউল আহসান তার নির্দেশকে তখন চ্যালেঞ্জ করা শুরু করেন।

এত বড় সিরিয়াল কিলার বিশ্বে নেই

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে কুখ্যাত ১৫ জন সিরিয়াল কিলারের কাহিনি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩০০ জনকে পর্যন্ত খুন করার ইতিহাস রয়েছে। যিনি তিন বা ততোধিক ব্যক্তিকে হত্যা করে অস্বাভাবিক মানসিক তৃপ্তিলাভ করেন, পুলিশের ভাষায় সেই ব্যক্তি ‘সিরিয়াল কিলার’। অর্থাৎ, যে ধারাবাহিক বা একের পর এক মানুষ হত্যা করে, তাকেই সিরিয়াল কিলার বলা হয়।।

খুনের নেশায় মত্ত থাকে সিরিয়াল কিলাররা। বিশ্বের কুখ্যাত এই সিরিয়াল কিলারদের ভয়ংকর কাহিনিকে ম্লান করে দিয়েছেন জিয়াউল আহসান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিপ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের বক্তব্যে এসেছে, জিয়াউল আহসান ১ হাজার ৩০ জনকে গুম-খুন করেছেন অত্যন্ত নৃশংস বীভৎসতায়। এর আগে বাংলাদেশে সিরিয়াল কিলার হিসেবে খুলনার এরশাদ শিকদার ও চাঁদপুরের রসুখাঁর কাহিনি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি, দুদকের মামলা

শুধু গুম-খুন, নৃশংসতাই নয়, মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসানের নামে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুস নেওয়ার মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। একটি সূত্রে জানা গেছে, স্ত্রী নুসরাত জাহান ও জিয়াউল আহসানের নামে-বেনামে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের নামে ২৪ জানুয়ারি মামলা করেছে। তাদের ১২টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৩৪২ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

দুদক অনুসন্ধান করে জানিয়েছে, জিয়াউল আহসান অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডার নাগরিকত্ব নিয়ে সেদেশে বিপুল টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তিনি দুবাই, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রেও বিপুল টাকা পাচার করেছেন। দুদক সূত্র জানায়, স্পেস ইনোভেশন লিমিটেড নামে জিয়াউল আহসানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ব্যাংক হিসাবেও ২৭ কোটি ১০ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া তার দুটি প্রতিষ্ঠান এআই ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও এআই ল্যান্ডস্কেপ লিমিটেডের নামে ২৫ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য রয়েছে।

সূত্র: আমার দেশ 

বাংলাদেশের বামপন্থিরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজ করছে: মাহমুদুর রহমান (BDC CRIME NEWS 24)

BDC CRIME NEWS 24

বাংলাদেশের বামপন্থিরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজ করছে: মাহমুদুর রহমান

প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৫

আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের বামপন্থি রাজনীতিবিদরা ১৯৪৭ সাল থেকে বাঙালি মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। এই বামপন্থিরা ভারতের দালাল। বাঙালি ও মুসলমান এ দুইয়ের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। অথচ সেক্যুলাররা বাঙালি ও মুসলমানদের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে বিরোধ ঢুকিয়ে দিয়েছে। বাঙালি মুসলমানদের আইডেনটিটি ক্রাইসিস, এটা আমরা করতে পারিনি। বাঙালি মুসলমানদের রেনেসাঁর জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।

শনিবার সন্ধ্যায় সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্সের আয়োজনে ‘সিলেট গণভোট ও মুসলিম ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহমুদুর রহমান বলেন, স্বাধীনতা ধরে রাখতে নিজেদের ইতিহাস নিজেরাই লিখতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে অবশ্যই ইতিহাস চর্চা করতে হবে। এটা আমাদের আইডেনটিটি। স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে হলে বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, আল্লাহর অসীম রহমত ও সিলেটের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা, যারা ভোট দিয়ে সিলেটকে পাকিস্তানে এনেছিলেন। পাকিস্তানে না এলে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পারতাম না। তিনি বলেন, ইতিহাস আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে লেখার সুযোগ নেই। ইতিহাস সাহিত্য নয়, সাহিত্য মনের মাধুরী মিশিয়ে লেখা যায়।

তিনি আরো বলেন, ভারত প্রথম যে অন্যায় করেছে, সেটা হচ্ছে গুরুদাসপুর নিয়ে নিয়েছে। এটা পাকিস্তানের পাওয়া উচিত ছিল। গুরদাসপুর পাকিস্তানকে দিলে কাশ্মীর এতদিন স্বাধীন হয়ে যেত। দ্বিতীয় যে অন্যায় করা হয়েছে, করিমগঞ্জকে পাকিস্তানকে দেওয়া হয়নি। ভারতের স্বার্থেই করিমগঞ্জকে পাকিস্তানকে দেওয়া হয়নি। করিমগঞ্জকে নিয়ে তারা দ্বিতীয় অন্যায় করেছে।

আমার দেশ সম্পাদক বলেন, স্বদেশি আন্দোলন মূলত ছিল মুসলমানদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ের চর্চা কম। সেক্যুলার মিডিয়ার কারণে আমরা সে ইতিহাস চর্চা করি না মৌলবাদী ও হিন্দুবিদ্বেষী বলবে এই ভয়ে। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার সোনার বাংলা রচনা করেছেন বাংলার বিরোধিতা করে। তাদের চিন্তা শুধু নিজেদের সুবিধার জন্য। তারা বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে আন্দোলন করল আবার ’৪৭ সালে ভারত ভাগের জন্য আন্দোলন করল। কলকাতার বাবুরা সব সময় নিজেদের স্বার্থ দেখেছে। নিজেদের কৃষ্টি-কালচার মুসলমনাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। আর ভারতপন্থি এ দেশের বুদ্ধিজীবীরা সেটাকে এ দেশে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

মাহমুদুর রহমান বলেন, আজ থেকে এক হাজার বছর পেছনের ইতিহাসে ফিরে যাই, তখন বাংলা নামে কোনো অঞ্চল ছিল না। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক অঞ্চল ছিল। বাংলা খুঁজতে হলে শামসুদ্দিন ইলিয়াসকে খুঁজতে হবে। একজন মুসলমান শাসক এই বাংলা গঠন করেন। নীহাররঞ্জন রায় বলেছেন, হিন্দুরা হাজার বছরেও বাংলা গঠন করতে পারেনি। আবহমান বাংলা খুঁজতে হলে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ ও বাদশাহ আকবরের ইতিহাসে ফিরে যেতে হবে। সেক্যুলার বুদ্ধিজীবীরা আবহমান বাংলার যে কথা বলেন, কাজেই এই আবহমান বাংলা খুঁজতে হলে মুসলমানদের কাছ থেকে শিখতে হবে। বাংলার কনসেপ্ট কলকাতা থেকে ধার করে নেওয়ার প্রয়োজন নেই।

গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর মোহাম্মাদ আবু তাহেরের সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন লেখক-গবেষক ডা. ফাহমিদ-উর-রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন শিক্ষাবিদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ, অধ্যাপক ড. রাবেয়া খাতুন।

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে লেখক-গবেষক ডা. ফাহমিদ-উর-রহমান বলেন, ইতিহাসে সিলেট গণভোট খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইতিহাসকে খণ্ড খণ্ড করে দেখলে হবে না, ইতিহাসকে সামগ্রিকভাবে দেখতে হয়। সিলেট গণভোট ইতিহাস থেকে হারিয়ে গেছে। কায় কাউস সে ইতিহাসকে তুলে ধরেছে। যদি জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে দাঁড় করাতে চান, তাহলে নিজেদের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে।

তিনি বলেন, দ্বিজাতিতত্ত্ব কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার থেকে আসেনি? অথচ দোষ দেওয়া হয় মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে। আমরা এখনো ঘুরেফিরে কলকাতার আধিপত্যবাদের মধ্যেই আছি। নিজেদের ইতিহাস চর্চা করা না গেলে আধিপত্যবাদ থেকে বের হয়ে আসা যাবে না। কলকাতার বয়ান আমাদের বুদ্ধিজীবীরা প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি আরো বলেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ দিয়ে জাতি রিফর্ম হবে না। ’৪৭ সালকে বৈধতা দিতে হবে। ’৪৭ সাল থেকে ’৭১ পর্যন্ত ২৩ বছরের ইতিহাস; এটা ইতিহাস নয়, ফিকশন শেখানো হয়েছে। ফিকশনের হাত থেকে মুক্তির প্রয়োজন। ঢাকা হবে আমাদের নতুন রেনেসাঁর ঠিকানা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ১৯৪৭ সালকে ক্রিমিনালাইজ করা হয়েছে। বাংলা বইগুলোয় পরিকল্পিতভাবে শেখানো হয়েছে দেশভাগ। অথচ এটা দেশভাগ হয়নি, ভারত থেকে ভাগ হয়নি, এটা ছিল আমাদের ভূখণ্ড। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হওয়া ছিল অনিবার্য। এটাই আমাদের ইতিহাস। ১৯৪৭ না থাকলে ১৯৭১ হতো না। সিলেট গণভোট ছিল একটি ষড়যন্ত্র। ষড়যন্ত্র করে করিমগঞ্জকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, মুসলমানরা ভারতকে ভাগ করতে চায়নি। মুসলমানরা ভারতকে প্রতিষ্ঠা করেছে। ভারতের কেন্দ্র শাসন করেছে। অথচ আওয়ামী ন্যারেটিভ শিখিয়েছে ভারত ভাগের জন্য মুসলমানরা দায়ী। ভারতীয় লেখকরাও বলেছেন, হিন্দুরাই ভারত ভাগ চেয়েছে।

সেমিনারে কায় কাউস-এর ‘ঐতিহাসিক সিলেট গণভোট : পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির সংগ্রাম’ শীর্ষক গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়। এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

সূত্র: আমার দেশ 

Saturday, August 16, 2025

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে শঙ্কায় অধিকাংশ দল। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে শঙ্কায় অধিকাংশ দল:

প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ১২

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। এজন্য সব মহলে শুরু হয়েছে জোর প্রস্তুতি। সরকারের ডেডলাইনকে স্বাগত জানিয়ে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।

চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী আওয়ামী ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে এবারকার নির্বাচনকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে সবাই। বিষয়টি নিয়ে অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে ভর করেছে বিভিন্ন অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা। তরুণদের দল এনসিপির নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ইতোমধ্যে বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না এনসিপি।

নির্বাচনের আগে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা, সব দলের জন্য সমান পরিবেশ তথা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হবে কি না, সেসব বিষয় নিয়েই দলগুলো বেশি চিন্তিত। সরকারের জুলাই ঘোষণাপত্রে অসন্তোষ এবং সনদের আইনি ভিত্তি নিয়ে অধিকাংশ দলে হতাশা রয়েছে।

গত ৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ভাষণে এবারকার নির্বাচন যেন উৎসবমুখর এবং দেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়, সে উদ্যোগের কথা জানান। পরে ৭ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সরকারের চেষ্টা থাকবে সবচেয়ে ভালো একটি নির্বাচন উপহার দেওয়ার। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন তাদের কাজ শুরু করেছে। প্রশাসনও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।

এছাড়া আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠতম নির্বাচন হবেÑএমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, আগামী সপ্তাহে নির্বাচনের রোডম্যাপ বা পথনকশা ঘোষণা করবে ইসি।

তবে নির্বাচন নিয়ে কোথায় যেন একটি সন্দেহ-সংশয় রয়ে গেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আদৌ তাদের এ উদ্যোগ সফল করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্ট মহল। তাদের মতে, এখন পর্যন্ত প্রশাসনকে ফ্যাসিবাদমুক্ত এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি করতে পারেনি সরকার। সংস্কার ও গণহত্যার বিচার কার্যক্রম নিয়েও সন্তুষ্ট নয় অধিকাংশ দল। ড. মুহাম্মদ ইউনূসও কুয়ালালামপুরে সিঙ্গাপুরভিত্তিক চ্যানেল নিউজ এশিয়া (সিএনএ)-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে পুরোনো সমস্যাগুলো ফিরে আসবে। তবে তিনি এও বলেন, বিচার ও সংস্কার সঠিক পথেই এগিয়ে চলেছে। সংস্কার বিষয়ে বেশিরভাগ প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়ে গেছে। দুয়েকটি বিষয়ে মতভেদ থাকলেও সেগুলোর ব্যাপারেও দলগুলো একমত হবে আশা করা যায়।

নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির কার্যকর কোনো সম্ভাবনাও সরকার দেখাতে পারছে না। বরং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের অনৈক্য ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রশাসনকেও একটি দলের প্রতি ঝুঁকে পড়তে দেখা যাচ্ছে। এজন্য নির্বাচনের সময় কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব এমনকি কেন্দ্র দখলের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শঙ্কা রয়েই গেছে। তবে সরকার দৃঢ়ভাবে বলেছে, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট লাখের বেশি সদস্য নিয়োজিত থাকবে। সেনাবাহিনী নিয়োজিত থাকবে ৮০ হাজারের বেশি। ড. ইউনূস বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনটি হবে ইতিহাসসেরা সুন্দর নির্বাচন। এ ধরনের একটি নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা অপরিহার্য। গত তিনটি ভুয়া নির্বাচনের জন্য দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে গেছে। ফলে গণঅভ্যুত্থানের পর সে ধরনের সুষ্ঠু নির্বাচনই অনুষ্ঠিত হতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে নির্বাচনের ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিÑসবাই এ ব্যাপারে একমত।

ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার এ ব্যাপারে আন্তরিক। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে দেশে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান অবশ্যই সম্ভব হবে বলে অনেকেরই অভিমত। বিশ্লেষকরা বলেন, নির্বাচনের এত আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে মন্তব্য করার যুক্তি নেই। নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু হয়ে গেলে বিষয়টি সামনে আসবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে বেশি অনিশ্চয়তায় আছে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন ইসলামী ও ভিন্ন মতাদর্শের দল। এ বিষয়ে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বলেছে, তারা আশা করে সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী আমার দেশকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তার মধ্যে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি কীভাবে দেবে, ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছেÑএটা সবাই মানবে কি না, সে প্রশ্নও আছে। তাছাড়া নির্বাচনের পরিবেশের জন্য যেসব কাজ, যেমন পুলিশ ও আমলাদের ঠিক করা উচিত। সরকারের হাতেই রাষ্ট্রের সবকিছু। তারা ইচ্ছা করলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে।

আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে সবচেয়ে বেশি শঙ্কা প্রকাশ করে সোচ্চার জামায়াত। এ বিষয়ে দলটি সরকার ও নির্বাচন কমিশনে বিভিন্ন দাবিও জানাচ্ছে। সর্বশেষ গত ৬ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী ও সংস্থার কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার ও প্রশাসনকে স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের সব স্তরে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হওয়া জরুরি। এছাড়া গত ১০ আগস্ট সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার আহ্বান জানান ডা. তাহের। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা রাখতে চাই।


লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে উদ্বেগের কারণ জানতে চাইলে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, এটি নির্বাচনের অপরিহার্য শর্ত। ভোটে যেন কালো টাকা ও পেশিশক্তি না থাকে, তা নিশ্চিত করতে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। কোনো দল বা প্রার্থী যেন বিপদে না পড়ে, এজন্য যা যা করা দরকার করতে হবে। সম্প্রতি যেসব খবর প্রকাশ হচ্ছে, তাতে আমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। এসব বিষয়ে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।


তবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে এখনই কিছু বলার সময় আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্বশর্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। আমরা সবাই এটা চাই। আমরা আশা করি, সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যা যা করার তা করবে। কারণ ড. ইউনূস একটি ইতিহাসসেরা সুন্দর নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।


তিনি আরো বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে যারা শঙ্কা প্রকাশ করছেন, তারাই তার কারণ ভালো বলতে পারবেন। এতে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, সেটাও প্রশ্নের বিষয়।


নির্বাচনের সময় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ বলেন, আমরা মনে করি বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। মাঠপ্রশাসনে নিরপেক্ষতা বলতে কিছুই নেই। এই প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ, এখন আটকের পর আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। তাহলে নির্বাচনের সময় পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তার কারণ আছে।


লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার কথা জানাচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও। দলটির মুখপাত্র ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে পরিবেশ দরকারÑআইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং সবার জন্য সমান সুযোগ, তা দেখা যাচ্ছে না। কারণ, সরকার একটি পক্ষের সঙ্গে কথা বলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। প্রশাসনও মনে করছে একটি দল ক্ষমতায় যাবে। আর আমাদের দেশের ট্র্যাডিশন ক্ষমতায় যাবে তাদের পক্ষে সবাই চলে যায়। এখন সেটাই দেখা যাচ্ছে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এখনই কীসের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড? এখনো তো নির্বাচন কমিশন ভোটের মাঠেই নামেনি। তবে আমরা চাই একটি গুণগত ও মানসম্পন্ন নির্বাচন যাতে হয়, সে উদ্যোগ নেওয়া। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আশা-নিরাশার মাঝে আছি। সরকার ইচ্ছা করলে সবকিছু করতে পারবে।

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়ে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যদের কেউ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতাও কম। তাই শ্রেষ্ঠ নির্বাচন করার কথা বললেই হবে না, এটা বাস্তবায়ন করা কঠিন। কোনো কোনো দল ভোটকেন্দ্র দখল করতে পারে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। এটা ছাড়া নির্বাচন ফেয়ার ও গ্রহণযোগ্য হবে না। এটা খুব জরুরি বিষয়। সরকার ও ইসির জন্য মস্তবড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। তবে সরকারের এতটুকু কনফিডেন্স না থাকলে তারা নির্বাচনের রোডম্যাপ সামনে আনত না। এটা ওভারকাম করতে সক্ষম হবে, এ কনফিডেন্স তাদের আছে। এটা সময়সাপেক্ষ হলেও ধীরে ধীরে তা দৃশ্যমান হতে পারে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে গ্রহণ করার জন্য যে পরিবেশÑলেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, সন্ত্রাস, কালো টাকা ও পেশিশক্তিমুক্ত দেখতে চাই, বর্তমান পরিস্থিতিতে তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, গত এক বছরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বলতে যা দেখেছি, এভাবে চলতে থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে মনে হয় না। অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে আওয়ামী দোসরদের সরিয়ে দেশপ্রেমিকদের নিয়োগ দিতে হবে।

জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বড় ভূমিকা থাকে। কিন্তু বর্তমানে পুলিশ বাহিনীর অবস্থা ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’র মতো। সবকিছু মিলিয়ে একটি অনিশ্চয়তা আছে। তাছাড়া যে জুলাই ঘোষণাপত্র দিয়েছে, তাতেও মনে হচ্ছে কোনোভাবে একটি দলকে ক্ষমতায় বসাতে পারলেই হয়। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাই মুশকিল হয়ে যাবে।

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ভোটের ডেডলাইন দিয়েছেন, সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এ নির্বাচন হবে। এতে বড় কোনো সমস্যা দেখতে পাচ্ছি না।

নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা জানিয়ে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় আমরা খুশি কিন্তু ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের অসহিষ্ণু আচরণ লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রশাসন ও পুলিশের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব আছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগ ও তার দোসর দলগুলোর বিষয়ে সরকারের করণীয় স্পষ্ট নয়।

ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী বলেন, নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে খুব বেশি শঙ্কা আছে বলে মনে হয় না।

খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, সাধারণত আগের নির্বাচনগুলোয় দেখা গেছেÑপ্রশাসন সরকারি দল প্রভাবিত আর বিরোধী দলকে চাপিয়ে রাখত। এ ধরনের আচরণ যেন আগামী নির্বাচনে না হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, এক রাজনৈতিক দল আরেক দলকে নিয়ে যেভাবে মন্তব্য করে, তা দুঃখজনক। তাদের এ ধরনের গোলযোগে লাভবান হবে আওয়ামী লীগ ও ভারত।

তিনি বলেন, নিবাচনের তো এখনো অনেক সময় বাকি আছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে এত আগাম মন্তব্য করা ঠিক নয়। এতে দূরত্ব বাড়ে এবং যে কোনো সময় বিপদের আশঙ্কা থাকে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে যারাই মন্তব্য করছে, কেন করছে, তা পরিষ্কার করা উচিত। তাহলেই আমাদের বুঝতে সহজ হবে।

সূত্র: আমার দেশ 

এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক। (BDC CRIME NEWS24)

BDC CRIME NEWS24 এনএসআইয়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক: প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২৭ বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের অভ্যন্তরে ২০০৯ ...